নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- আজকের খবর

২৩ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৬

আমজাদ মিয়া সোফায় বসে আজকের পত্রিকা পড়ছেন। মূলত আজকের পত্রিকায় আজকের খবর বলতে কিচ্ছু থাকে না। যা থাকে গতকালকের খবর। এখন ইন্টারনেটের যুগ। অনলাইনে আজকের খবর আজকেই ব্রেকিং নিউজ আকারে পড়া যায়। তবুও পত্রিকার বড় বড় পৃষ্টা ওলটপালট না করলে আমজাদ মিয়ার দিন কাটে না। নতুন বইয়ে যেমন নতুন নতুন একটা গন্ধ আছে, প্রতিদিনের পত্রিকায়ও আজকের খবরের একটা গন্ধ আছে যেটা অনলাইন নিউজে মিলে না। পত্রিকা খুলতেই দেখলেন প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে লিখা "
বনানীর একটা রেস্টুরেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী এক ধনকুবের ছেলে কতৃক ধর্ষিত হয়েছে"

আমজাদ সাহেব যথেষ্ট বিরক্ত হলেন। এইসব ছাইপাঁশ পত্রিকায় লিখার কি আছে?? সম্পাদক, সাংবাদিকের কি আর কোনো কাজ নাই নাকি?? দেশে কি আর কোনো নিউজ নাই?? যত্তসব ফালতু নিউজ দিয়ে পত্রিকার কাগজ ভারী করছে।
আমজাদ সাহেব বিরক্ত হয়ে পাতা উল্টালেন। দ্বিতীয় পাতায় রাজনীতি নিয়ে যতসব উদ্ভট লিখা ছেপেছে। মনে মনে বললেন, নাহ এই দেশের পত্রিকা গুলোর মান দিন কে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আমজাদ সাহেব একা একা বিড়বিড় করছেন এমন সময় শায়েলা বেগম টেবিলের উপর খরচের ব্যাগ রেখে বললেন, এই নাও ব্যাগ। তাড়াতাড়ি বাজারে গিয়ে খরচ করে নিয়ে আসো। তিন্নি এসে খাবে কি? ফ্রিজে কিচ্ছু নেই। তিন্নি গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ভালবাসে। তুমি কয়েক কেজি ভাল দেখে গরুর মাংস আনবে। দেখো আবার সব চর্বি নিয়ে এসো না। তিন্নি একদম চর্বিযুক্ত মাংস খায় না।'

আমজাদ সাহেব পত্রিকার পাতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে শায়েলা বেগমের দিকে মুখ করে বিরক্ত স্বরে বললেন, আহ! এখন বাজারে যেতে পারব না...। দেখছ না পত্রিকা পড়ছি??

' যাবেনা মানে কি?? তিন্নি এসে খাবে কি?? '

' ঈদের এখনো সাত-আটদিন বাকি। তিন্নি আসবে ঈদের দু-তিন দিন আগে। আর তুমি এক্ষণি বাজারের জন্য পাগল করে ফেলছ? '

' সাত-আট দিন দেখতে দেখতে চলে যাবে '

' তিন্নি ফোন দিয়েছিল?? '

' না। দু'দিন কথা হয় নি। তিন্নি ফোন দেয় নি আর আমিও বিভিন্ন কাজে এমন মনভুলা হয়েছি যে দিব দিব করেও ফোন দেওয়া হয় নি। দ্যাখি আজকে একবার ঠিক মনে করে ফোন দিব'
.
আমজাদ সাহেব কোমর মোড়া দিয়ে একটু গড়িমসি করে সোফা থেকে উঠে খরচের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারে গেলেন।
শায়েলা বেগম খরচের লিস্ট দিয়েছিলেন। লিস্ট দেখে একটা একটা করে সব খরচ ব্যাগে ভরেছেন। এখন যেতে হবে খসাই খানার দিকে। গরুর মাংস কিনতে হবে। গরুর মাংস না নিয়ে গেলে শায়েলা বেগম রেগে আগুন হয়ে যাবেন। রেগে-মেগে সাপের মত ফুসফুস করে আবার বাজারে পাঠাবে মাংসের জন্য।
.
আমজাদ মিয়া মাংস কিনতে গিয়ে দেখলেন বাজারে একদল তরুণ দল পাকিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করছে। আমজাদ সাহেব মনে মনে বললেন, দলে দেখছি নবীনের সাথে কয়েকটা ছেঁচড়া বুইড়াও দল পাকিয়েছি।

আমজাদ সাহেব পাশ ফিরিয়ে দেখলেন উনার অফিসের এক কলিগ ফিরোজ সাহেব সেই মিছিলের দিকে যাচ্ছেন। আমজাদ সাহেব, ফিরোজ সাহেব কে ডাক দিলেন..
ফিরোজ সাহেব আমজাদ সাহেবকে দেখে বললেন, আর এ আমজাদ সাহেব যে?? কি ব্যাপার, কোথায় যাচ্ছেন, মিছিলে যোগ দিতে নাকি??

আমজাদ সাহেব বিরক্তি নিয়ে বললেন, না ভাই, আমার ওসবে মনোযোগ নেই। তা আপনি কোথায় যাচ্ছেন?? মিছিলে??

' হ্যা ভাই। এইতো দেশে যা অরাজকতা চলছে এই দেশে থাকাটাই এখন সময়ের দাবি'

' তা কি নিয়ে এই বিক্ষোভ মিছিল?? '

' সে কি! আপনি জানেন না?? বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো কিন্তু শুনেছি পুলিশ নাকি এই কেস টা হাতে নিতেই চাচ্ছে না। আমরা ত এর প্রতিবাদ করতেই মাঠে নেমেছি'

আমজাদ সাহেব ঠোঁট মেলিয়ে বললেন, 'ও আচ্ছা ধর্ষণ?? পত্রিকায় দেখেছিলাম এই রকম কি যেন একটা নিউজ দিয়েছে। পড়ি নি। এসব ফালতু খবরে আমার ইন্টারেস্ট নাই ভাই। আমি হলাম ভাই নির্ভেজাল মানুষ'

' ভাই এমন একটা খবর নিয়ে আপনি এত ছোট করে দেখছেন?? So sad year :-( '

' আর এ ভাই ছোট করে দেখলাম কই?? দেখেন মেয়েগুলাও কিছু একটা করছে?? আজকালকের মেয়ে কাপড় পরাও জানেনা। পেট ডাকলে পিঠ বের করে রাখে, পিঠ ডাকলে পেট বের করে রাখে। এভাবে চললে ত ছেলেরা ক্রেজি হবেই। এক হাতে ত তালি বাজে না'

' মানছি কিছু মেয়েরা এমন কিন্তু ভাই সাহেব হিজাব পরা মেয়েও কিন্তু ধর্ষিত হচ্ছে, আড়াই বছর, তিন বছরের মেয়েও কিন্তু ধর্ষিত হচ্ছে কয়েকদিন আগে পাঁচ বছরে পূজা দাশও ধর্ষিত হয়েছিল। এই কচি কচি বাচ্চা শিশু গুলো কিভাবে তালি বাজিয়েছিল?? এসবের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে অপরাধ আরও বাড়বে। আজ অই মেয়ে গুলোর এমন হয়েছে ভবিষ্যতে আপনার, আমার মেয়ের এমন হবে না, কে বলতে পারে?? '

' দেখেন ফিরোজ ভাই, আমাদেরো মেয়ে ছেলে আছে। কই আমার মেয়ে ত একটা ঢাকা শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ওর ত এইরকম কিছু শুনি নি। সব হলো বাবা মায়ের খেয়াল আর শিক্ষা। যে মেয়ে গুলোর এই অবস্থা হয়েছে তাদের অতীত ঘাটালে দেখবেন যে মেয়ে গুলোর হয়তো অই ছেলে গুলোর সাথে একটা রিলেশন ছিল। তা না হলে মেয়ে গুলো ছেলেদের কাছে যেচে যেচে যাবে কেন?? বলুন।'

' তারপরো অপরাধ ত অপরাধ ই। তাই না? দিনের পর দিন একটা অপরাধকে ত আর সায় দিয়ে এর লতা-পাতা গুলোকে বাড়তে দেওয়া যেতে পারে না। আচ্ছা ভাই আমি যাচ্ছি। যার যার ভাবনা যার যার কাছে '

' হু। যাই। আমারো টাইম নাই। শহর থেকে ঈদের ছুটিতে আমার মেয়ে আসছে। তোমার ভাবি বলে দিয়েছে টাটকা দেখে কয়েল কিলো গরুর মাংস কিনে নিয়ে যেতে। মেয়ে গরুর মাংসের বিরিয়ানি পছন্দ করে কিনা '

' ও আচ্ছা। যান। তাড়াতাড়ি যান। দেখা হবে অফিসে'

' অবশ্যই '
.
ফিরোজ সাহেব চলে গেলেন মিছিলের ভিড়ে। মিছিলে এক সুরে সুর উঠেছে, "ধর্ষকের সাজা চাই, মা-বোন দের সম্মান চাই"
কেউ কেউ ধর্ষকের ফাসির প্রতিবাদ জানিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাত উচুঁ করে মিছিল দিচ্ছে।

আমজাদ সাহেব মাংস কিনে বাড়িতে ফিরলেন।
বাড়িতে ফিরে দেখলেন ঘরের অবস্থা থমথমে। শায়েলা বেগম সোফায় বসে শাড়ির আচল মুখে দিয়ে কান্না করছেন। আমজাদ সাহেব কে দেখেই মুখ থেকে শারীর আচল সরিয়ে জোরে জোরে কান্না করতে বললেন, এ কি হলো আমার মেয়েটার, কি সর্বনাশ হয়ে গেল।

আমজাদ সাহেব কিছুই বুঝলেন না। তিনি শায়েলা বেগমকে ধমক দিয়ে বললেন, কান্না থামিয়ে কি হয়েছে আগে বলবে ত।

শায়েলা বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললেন, 'কিছুক্ষণ আগে তিন্নিকে ফোন দিয়েছিলাম। তিন্নি প্রথমে ফোন ধরে নি। তারপর অনেকক্ষণ ধরে আমি ফোন দেওয়ার পর ওর বান্ধবী ফোন ধরেছে। '

' হয়তো ও ব্যস্ত ছিল তাই ধরে নি। এখন কি হয়েছে? ফোন ধরে কি বলেছে?? '

' গতকাল রাতে নাকি তিন্নি আর ওর এক বান্ধবী মিলে ওর এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। আর সেখানে... '

শায়েলা বেগম আবার কান্না শুরু করে দিয়ে বলতে লাগলেন, কি সর্বনাশ হলো রে আমার মেয়েটার '

আমজাদ সাবেব, শায়েলা বেগমকে আবার ধমক দিয়ে বললেন, আহ, কি সর্বনাশ হয়েছে সেটা বলবে ত '

' সেখানে নাকি কিছু ছেলেরা মিলে তিন্নি আর ওর এক বান্ধবীকে জোর করে ধর্ষণ করেছে'

আমজাদ সাহেব কয়েক সেকেন্ডের জন্য বোবা হয়ে গেলেন। মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর খবরের কাগজের পাতাটা বের করে পুরো লিখাটা পড়ে দেখলেন, আজকের পত্রিকায় উনার মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার কথাই প্রকাশ পেয়েছে।
.
কিছুক্ষণ পর আমজাদ সাহেবকে মিছিলে দেখা গেলো। তিনি মিছিলে গিয়ে কেঁদে কেঁদে স্লোগান দিচ্ছেন, "ধর্ষকের ফাঁসি চাই, মেয়েদের রক্ষা চাই"।
কয়েকটা টিভি রিপোর্টারকে ইত্যিমধ্যে ইন্টার্ভিউ দিয়ে বলেছেন, এই রকম অবস্থা যাতে কোন মেয়ের না হয়। কোনো বাবার যেন মেয়ের ইজ্জত যাওয়ার প্রতিবাদে এভাবে রাস্তায় কেঁদে কেঁদে মিছিল করতে না হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

বিজন রয় বলেছেন: কয়েকদিন আগে গুলশানে তো এরকম ঘটনা ঘটেছে।

২| ২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১

হাবিব শুভ বলেছেন: জ্বি। এই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে এই গল্প সাজিয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.