নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারদিকে নদী বেষ্টিত বৃত্তাকৃতির দ্বীপের মত, চির সবুজের সমারোহ বিকেল বেলায় পশ্চিমা আকাশে রুদ্রের লুকোচুরি খেলা এক অজপাড়া গাঁয়ের নাম নিজ ছেংগার চর।জনম দুঃখিনী মায়ের অন্ধেরযষ্টি এলএলবি সমাপ্ত করে সম্মান জনক পদে অধিষ্টিত থাকায় নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত।।

আমি সম্মানের পাত্র নই

যুগ্মসাধারন সম্পাদক (রায়াব)

আমি সম্মানের পাত্র নই › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলিম দর্শনে কোন মতবাদকে সমর্থন করবেন???

৩১ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৫৫

মুসলিম দর্শন
মুর্জিয়া, কাদারিয়া, জাবারিয়া এবং সিফাতিয়া
এস.এম সারফুদ্দিন শাওন


খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে ইসলাম ধর্মে চারটি ধর্মতাত্তি্বক চিন্তক সম্প্রদায় (Theological School of thought) গড়ে ওঠে, যা মুসলিম দর্শনে মুর্জিয়া, কাদারিয়া, জাবারিয়া এবং সিফাতিয়া হিসেবে পরিচিত। এই ধর্মতাত্তি্বক চিন্তাধারার সম্প্রদায়গুলো রাজনৈতিক চিন্তাধারার সম্প্রদায় তথা খারিজি, শিয়া ও সুনি্নদের মতো সুসংহত ছিল না। ক্রমান্বয়ে এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে যায়। মূলত মুর্জিয়ারা বিশ্বাসের স্বরূপ, কাদারিয়ারা ইচ্ছা বা কর্মের ক্ষমতা বা স্বাধীনতা, জাবারিয়ারা নিয়তিবাদ বা পূর্বনির্ধারণবাদ এবং সিফাতিয়ারা আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দার্শনিক চিন্তাধারার মুতাজিলা ও মুতাকালি্লমরাও এ বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন। আরবি 'ইরজা' (Irja) শব্দ থেকে 'মুর্জিয়া' শব্দটির উৎপত্তি। উৎপত্তিগত দিক থেকে 'মুর্জিয়া' শব্দটির অর্থ হচ্ছে আশা করা এবং স্থগিত রাখা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী আশা করা? এবং কী স্থগিত রাখা? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর মুর্জিয়াদের ধর্মতাত্তি্বক মত থেকে জানা যাবে। ধর্মতত্ত্বে মুর্জিয়াদের মত হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে বিশ্বাস করেন, তবে তিনি অনন্তকাল দোজখের বা নরকের শাস্তি ভোগ করবেন না। অর্থাৎ শাস্তি ভোগ করার পর বেহেশতে যাওয়ার আশা আছে। খারিজিদের ধর্মতাত্তি্বক মতামতের প্রতিক্রিয়ায় মুর্জিয়ারা এ আশার ও স্বস্তির বাণী প্রচার করেন। খারিজিদের মত হচ্ছে, ইসলামে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি তওবা না করে বা অনুতপ্ত না হয়ে গুনাহগার বা পাপী হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সে ব্যক্তি অনন্তকাল দোজখে বা নরকের শাস্তি ভোগ করবে। কিন্তু মুর্জিয়াদের মতে, সব মুসলমান ইসলামের সদস্য। তাঁদের অবিশ্বাসী বলা উচিত নয়। একমাত্র আল্লাহই শাস্তি এবং পুরস্কার সম্পর্কে রায় ঘোষণা করবেন। সন্দেহজনক প্রশ্নগুলো ঐশী রায়ের জন্য অবশ্যই রেখে দিতে হবে। এখানে স্থগিত রাখার বিষয়টি জড়িত। তদুপরি খারিজিয়ারা তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.) এবং চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা)-এর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু মুর্জিয়ারা চার খলিফার সবাইকেই ভালো বলে গণ্য করেন। তাঁদের মতে, রাসুলুল্লাহর সাহাবাদের মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টি অবশ্যই ঐশী রায়ের জন্য রেখে দিতে হবে। মুর্জিয়াদের কারো কারো মতে, সর্বসমক্ষে বা প্রকাশ্যে বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি এবং বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান পালন আবশ্যকীয় নয়। বিশ্বাসের বিষয়টি আল্লাহ বা বিধাতার সঙ্গে মানুষের অন্তরের বা ভেতরের গোপন সংযোগ। আবার মুর্জিয়াদের কারো কারো মতে, অন্তর ও কাজ উভয় দিক থেকে বিশ্বাসের বিষয়টি বিবেচ্য। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন এবং রীতি-নীতি বাহ্যিকভাবে মান্য করা অন্তরের বিশ্বাসকে সমৃদ্ধ করে বলে তাঁরা মনে করেন। ধর্মতাত্তি্বক চিন্তাধারা হিসেবে মুর্জিয়া সম্প্রদায়ের উত্থান বহুলাংশে উমাইয়াদের রাজনৈতিক দাবিকে সমর্থেনর জন্য বলে অভিযোগ করা হয়। এ জন্য তাদের রাজনৈতিক মান্যকারী বা রাজনৈতিকভাবে আপসকামী (Political Conformist) হিসেবে গণ্য করা হয়। খারিজি এবং শিয়াদের কাছে উমাইয়ারা মূলত অধার্মিক (heathens or non Muslims), যদিও ইসলামকে তারা প্রকাশ্যে স্বীকার করে। অন্যদিকে মুর্জিয়ারা সহনশীলতার একটা তত্ত্ব উদ্ভাবন করে বলেন যে যেহেতু উমাইয়ারা ইসলামে বিশ্বাসী, সেহেতু তাঁদের অধার্মিক হিসেবে নিন্দা করা ঠিক নয়। কিয়ামতের দিন বিধাতা কর্তৃক শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সহ্য করা উচিত। মুর্জিয়াদের মতবাদ উমাইয়াদের পক্ষে গেলেও অনেক বিশিষ্ট মুর্জিয়াকে উমাইয়া শাসকরা হত্যা ও নিগৃহীত করে। মুর্জিয়াদের পার্থিব মন-মানসিকতাসম্পন্ন শৈথিল্য প্রদর্শনকারী (laxists) হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাঁদের মতে, ভয়ংকর পাপীরাও বিশ্বাসী। অবশ্য এর দ্বারা এটা বোঝায় না যে তারা পাপকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। কবিরা এবং ছগিরা গুনাহর মধ্যে পার্থক্য করার বিষয়টিও মুর্জিয়াদের অবদান বলে অনেকে মনে করেন। পরিশেষে উদারনীতিই হচ্ছে মুর্জিয়াবাদের নির্যাস। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার (freedom of will) পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণকারী হিসেবে ইসলামে কাদারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। তাঁদের কাদারিয়া বলা হয় এ কারণে যে তাঁরা এই মত পোষণ করেন_মানুষের কাজ করার 'কাদর' বা শক্তি আছে। এই সম্প্রদায়ের যাত্রা শুরু মা'বদ আল-জুহানি (মৃত্যু ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ)-কে দিয়ে। এই মতবাদের প্রবক্তারা মানুষের ইচ্ছা বা কর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কাদারিয়াদের মতে, আল্লাহ বা বিধাতা কাজের জন্য সরাসরি দায়ী হতে পারেন না। কারণ কাজ ভালো বা মন্দ উভয়ই হতে পারে। মানুষ তার নিজের কাজের মালিক। কিন্তু তার কাজ করার ক্ষমতা বিধাতা কর্তৃক প্রদত্ত। এই অর্থে বিধাতা চূড়ান্তভাবে কাজের কর্তা বা মালিক। কোনো বহিঃশক্তি দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে মানুষ তার নিজের কাজের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে তার নিজস্ব শক্তি আছে। এই সম্প্রদায়ের কেউ কেউ দাবি করেন যে মানুষের কাছে কিছু ঐশী ক্ষমতা হস্তান্তর বা অর্পণ করা হয়েছে এবং মানুষের যেটা সঠিক এবং যেটা ভুল তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিঃশর্ত বিবেচনামূলক ক্ষমতা আছে। তারা তাদের মতের পক্ষে আল-কোরআনের (iv. iii), (vii. 24), (xiii. ii) প্রভৃতি আয়াতের উল্লেখ করেন। কাদারিয়াদের এই মতবাদ আল্লাহ সর্বশক্তিমান_এই বিশ্বাসের সঙ্গে এবং নিয়তিবাদ বা পূর্বনির্ধারণবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মুতাজিলারাও মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। 'জাবর' (Jabor) বা নিয়তিবাদ (Fatalism) বা পূর্বনির্ধারণবাদ (Predestinationism) চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জাহম ইবনে সাফওয়ান (Jahm ibn Safwan) (মৃত্যু ৭৪৫ খ্রি)। তাঁর মতে, বিধাতা সর্বশক্তিমান। সুতরাং মানুষের কোনো শক্তি থাকতে পারে না। মানুষ যদি তাঁর কর্মের কর্তা হয়, তবে যত মানুষ ততসংখ্যক কর্মকর্তা (creative agents) আছেন। এর অর্থ হচ্ছে, বিধাতার ক্ষমতা সীমিত বা খর্ব করা। সুতরাং তিনি ঘোষণা করেন, মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা বা সংকল্পের স্বাধীনতা বা কর্মের স্বাধীনতা নেই। তাঁর মতে, বিধাতা মানুষের মধ্যে কাজ সৃষ্টি করেন। সম্পূর্ণভাবে সে অসহায়। সে যন্ত্রের মতো কাজ করে। সাধারণ জাবারিয়াদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়_খাঁটি জাবারিয়া এবং উদারপন্থী জাবারিয়া। খাঁটি জাবারিয়ারা মনে করেন, মানুষ কোনো কাজ করে না বা মানুষের কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই। উদারপন্থী জাবারিয়ারা মনে করেন, মানুষের শক্তি আছে যার কোনো রকম প্রভাব নেই। জাবারিয়ারা তাঁদের মতবাদের সমর্থনে আল কোরআনের (II, 284), (III, 26), (XIII, 31), (XXV, 2), (1XV, 3) প্রভৃতি আয়াতের উল্লেখ করেন। 'জাবর' মতবাদটি 'কাদর' মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। মানুষের যদি ইচ্ছার বা কর্মের স্বাধীনতা না থাকে, তবে তাকে তার কর্মের জন্য দায়ী করা ঐশী ন্যায়পরায়ণতার পরিপন্থী। ইসলাম ধর্মে যে 'তাওয়াক্কালতু আ'লাল্লাহ'-এর ওপর জোর দেওয়া হয়, তা 'জাবর' মতবাদেরই প্রভাব। অন্যান্য একেশ্বরবাদী ধর্মের মতো ইসলাম ধর্মেও 'কাদর' বনাম 'জাবর' একটা হতবুদ্ধিকর এবং মীমাংসার অযোগ্য একটা বিষয়। সিফাতিয়ারা বিধাতার সার বা মূল থেকে পৃথক কিছু গুণ তাঁর ওপর আরোপ করে। এই গুণগুলো হচ্ছে_জ্ঞান, শক্তি, জীবন, ইচ্ছা, শোনা, দেখা, বলা, মর্যাদা, মহানুভবতা বা উদারতা, বদান্যতা, দয়া, যশ, মহত্ত্ব ইত্যাদি। সিফাতিয়াদের কেউ কেউ আল্লাহর গুণাবলির সঙ্গে মানুষের গুণাবলির সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং বিধাতাকে নিজেদের অনুরূপে রূপান্তরিত করেন। তাঁরা সাদৃশ্যকারী (Mushabbishas) হিসেবে পরিচিত। আল কোরআনে আল্লাহর গুণাবলিকে নিঃসন্দেহে রূপকার্যর্ নয় শাব্দিক অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন। সিফাতিয়াদের এই দলটি দেহধারীবাদী (Mujssima) বা কাররামিয়া হিসেবেও পরিচিত। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে কাররাম এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মতে, বিধাতা হচ্ছেন সত্তা (substance) এবং স্থায়ীভাবে সিংহাসনে বা আরশে অধিষ্ঠিত। বিধাতার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনকে তিনি স্বীকার করেন। সিফাতিয়ারা মূলের গুণাবলি এবং কাজের গুণাবলির মধ্যে কোনো পার্থক্য নির্দেশ করেনি। তারা বিধাতার হাত ও মুখের কথা বলে, কিন্তু তার কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা নেই। মুতাজিলারা আল্লাহকে 'নির্গুণ' ঘোষণা করে এবং সাদৃশ্যকরণকে (আল্লাহর গুণাবলির সঙ্গে মানুষের গুণাবলির সাদৃশ্য খোঁজা এবং তাঁকে নিজেদের অনুরূপে রূপান্তরিত করাকে) সরাসরি পৌত্তলিকতা হিসেবে গণ্য করে। আল-আশারি এবং আল-গাজ্জালি আল্লাহর সিফাতে বিশ্বাস করেন। তাঁরা বলেন যে এই গুণাবলি আল কোরআনে অবতীর্ণ আল্লাহর বর্ণনা। সুতরাং এগুলোকে সেভাবেই গ্রহণ করা উচিত। আল-গাজ্জালি মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বলে অন্য অনেক প্রশ্নের মতো সিফাত প্রশ্নে এক ধরনের অজ্ঞেয়বাদের অবতারণা করেন। কৃতজ্ঞায়: সহযোগী অধ্যাপক (অব.)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪২

জাহিদ হাসান বলেছেন: মুতাজিলাদের কথাও লিখবেন আশা করি।

২| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: থাক এখন তর্কে যাবো না।
দেশের অবস্থা ভালো না। করোনা দূর হোক তারপর আলোচনায় যাবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.