নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হান্‌নান

হান্‌নান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণে

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২০

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বিশ্বসাহিত্যে যে ক'জন লেখকের লেখায় বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দোপাধ্যায় তাঁদের উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষ্যবস্তু মধ্যবিত্ত সমাজের, বাস্তবতা, কৃত্রিমতা, অসহায়ত্ব, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেনিসংগ্রাম তত্ত্বের প্রভাব রয়েছে তাঁর রচনায়।

মানিকসাহিত্যে বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষনীয়। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদের জয়গানই তাঁর সাহিত্যের মুল উপজীব্য বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙ্গাগড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। পুঁজিপতিদের দ্বারা দরিদ্র সমাজের শোষন বঞ্চনার স্বরুপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চড়িত্রের আড়ালে।

জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও ২০০'র অধিক ছোটগল্প। পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস এবং অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাঁর রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। আসল নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পিতার দেওয়া নাম প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক। মানিকের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি অষ্টম। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদনীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার। পিতার বদলিসূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে।

তাঁর জন্ম ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ) বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে। কিন্তু পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ঐ সকল মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা ছিল মানিকের। সেই অঞ্চলের সাধারন মানুষের জীবন চিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। বিচিত্র সব মানুষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন লেখক। তার এই সকল অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন বিচিত্র সব চরিত্রের আড়ালে। পদ্মার তীরবর্তি জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি।

তাঁর মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।

সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তার একাডেমিক পড়াশুনার ব্যাপক ক্ষতি হয়। শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। সাহিত্য রচনাকেই তিনি তার মূল পেশা হিসেবে বেছে নেন।

তিনি স্বল্পকাল 'নবারুণ' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তিতে 'বঙ্গশ্রী' পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ।১৯৪৩ সালে মানিক কয়েকমাস একটি সরকারী পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।

১৯৩৮ সালে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গেবিয়ে হয় তার। ১৯৪৪ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তথন থেকে তাঁর লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

১৯৪৬ সালে ভারতের দাঙ্গা-বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

ব্যাক্তিগতভাবে মানিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তার প্রথম গল্পগুচ্ছ 'অতসী মামি ও অন্যান্য ' সংকলনে সব ক'টি গল্প এবং প্রথম উপন্যাস 'দিবারাত্তির কাব্য' মধ্যবিত্ত জীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে গড়া। এছাড়া গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের জীবন চিত্রও তার লেখায় ফুটে ওঠে।

জীবনবাদী মানিক বন্দোপাধ্যায়ের জীবৎকাল ও লেখালেখির সময়কাল স্বল্পপরিসরের। ১৯৩৫ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং তখন থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত হন। তিনি মাত্র একুশ বছর লিখতে পারেন। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে ৪৮ বছর বয়সে মৃত্যু ঘটে তাঁর।

বাংলা সাহিত্যানুরাগী ও সাহিত্যকর্মীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য একটি নাম মানিক বন্দোপাধ্যায়। অথচ কী আশ্চর্য, আজ যে তাঁর জন্মদিন এই খবরই রাখি না আমরা অনেকেই। সব ধরনের প্রচার মাধ্যমও এ ব্যাপারে প্রায় নীরব। কার্যকারণের যোগসূত্র খোঁজে পাচ্ছি না।

যাই হোক, আগ্রহী বন্ধুদের জন্য মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গ্রন্থতালিকা প্রদান করে বিদায় নিচ্ছি।

উপন্যাস

• জননী (১৯৩৫)

• দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫)

• পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬)

• পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬)

• জীবনের জটিলতা (১৯৩৬)

• অমৃতস্য পুত্রাঃ (১৯৩৮)

• অহিংসা (১৯৪১)

• ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১)

• চতুষ্কোণ (১৯৪২)

• প্রতিবিম্ব (১৯৪৩)

• দর্পণ (১৯৪৫)

• চিন্তামণি (১৯৪৬)

• চিহ্ন (১৯৪৭)

• আদায়ের ইতিহাস (১৯৪৭)

• জীয়ন্ত (১৯৫০)

• পেশা (১৯৫১)

• স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১)

• সোনার চেয়ে দামী (প্রথম খন্ড) (১৯৫১)

• সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খন্ড) (১৯৫২)

• ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২)

• পাশাপাশি (১৯৫২)

• সার্বজনীন (১৯৫২)

• নাগপাশ (১৯৫৩)

• ফেরিওয়ালা (১৯৫৩)

• আরোগ্য (১৯৫৩)

• চালচনন (১৯৫৩)

• তেইশ বছর আগে পরে (১৯৫৩)

• হরফ (১৯৫৪)

• শুভাশুভ (১৯৫৪)

• পরাধীন প্রেম (১৯৫৫)

• হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬)

• মাশুল (১৯৫৬)



ছোটগল্প

• অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫)

• প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭)

• মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮)

• সরীসৃপ (১৯৩৯)

• বৌ (১৯৪০)

• সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩)

• ভেজাল (১৯৪৪)

• হলুদপোড়া (১৯৪৫)

• আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬)

• পরিস্থিতি (১৯৪৬)

• খতিয়ান (১৯৪৭)

• মাটির মাশুল (১৯৪৮)

• ছোট বড় (১৯৪৮)

• ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯)

• ফেরিওলা (১৯৫৩)

• লাজুকলতা (১৯৫৪)



নাটক

• ভিটেমাটি (১৯৪৬)







মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৩৮

েসাহাগ২৫কগগ বলেছেন: মানিক এর বই ডায়নলোড এর লিঙ্ক দেন।

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ২:১৫

হান্‌নান বলেছেন: লিঙ্কগুলো পেতে মানিক বন্দোপাধ্যায় লিখে সার্চ দিন। পেয়ে যাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.