নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধ্যাপক ফজলে হোসাইন মৃত্যু; একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০


আমাদের দেশের বরেণ্য অনেক মানুষের অধ্যাপক ফজলে হাসান স্যার মারা গেছেন। উনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাথমেটিকস পড়াতেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উনি ভিসি ছিলেন। যারা উনার সরাসরি ছাত্র ছিলেন তাদের অনেকেই সাথেই আমার পরিচয় আছে। বন্ধুত্ব আছে। সেই সুবাদে উনার ব্যাপারে অনেক কথা জানতাম। ছাত্র জীবনের রাজনীতি করতেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৫৭ সালে ডাকসুর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদেন। কর্মময় জীবনে অধ্যাপক পদে উন্নিত হন। বিভাগীয় প্রধান, ফেকাল্টির ডীন, সিনেট সদস্য এবং সর্বশেষ ভিসি ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ভিসি ছিলেন উনি। ২০০১-২০০২ পর্যন্ত। সম্ভবত বি এনপি ক্ষমতায় আসলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যাল্যয়ের ভিসি পদে রদ বদলের মত এখানে রদ বদল করেছিল। কাজেই মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই উনাকে পদ ছেড়ে দিতে হয়।
আমার নিজের ক্যাম্পাস জীবনে (১৯৮৯-১৯৯৬), বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তায় উনাকে হাটতে দেখেছি। সহজ সরল একজন মানুষ ছিলেন। উচ্চাবিলাস ছিল না বললেই চলে। সাদা মাটা জীবনেই অভ্যস্তছিলেন। উনার পোশাক ছিল সাদা মাটা। কথা বলার বাচন ভঙ্গি, চলাফেরা, সালাম দিতে উত্তর দেয়া, জিজ্ঞেস করা কেমন আছ ? এই সব ছিল উনার সরলতার প্রমাণ। অনেক উনাকে এইভাবে বিকালের হাটাপথে উনার সাথে আমার দেখা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্বাসবোধেও সরলতা ছিল।
উনার মৃত্যুতে আমার স্মৃতির ভান্ডারে জমে থাকা নানান ঘটনার মাঝে একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল। এতদিন সুপ্তছিল, ধুলিবালি মাখা ছিল। কর্ম জীবনের ঘানিতে পিষতে ছিল। মাঝে- মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের দেখা হলে, আড্ড হলে তা মনে আসত। কিন্তু তা নিয়ে লেখার মত কোন উৎসাহ পেতাম। কখনও হয়ত মজা করে বন্ধুদের সাথে বলেছি। হাসাহাসি করেছি। কিন্তু যে মানুষটির কারণে আমার সেই অভিজ্ঞতাটা পোক্ত হয়েছে, সেই মানুষটিই আজ মারা গেছে, কাজেই ভাবলাম ঘটনাটি বন্ধুদের সাথে, সবার সাথে শেয়ার করি। সেই কারণেই আজকের এই লেখা। আমার এই স্মৃতিচারণের একটি তাৎপর্য আছে। তাৎপর্যটি রাজনৈতিক।কোন ঘটনাকে সামাল দেয়া, ব্যাখ্যা করা, উপলব্দি করা, তাকে নিজের মত করে পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করার একটা আলাদা পরিবেশ তৈরি করার মত ক্ষমতা থাকা; এই সব তাৎপর্য আছে এই স্মৃতিচারণে। আর দক্ষতার সাথে সেইদিন যিনি কাজটি করেছিলেন, তিনি হলেন এই ফজলে হোসাইন স্যার। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার ছাত্র জীবনে প্রথম উনার সাথে সাক্ষাৎ। প্রথমবার কথা। তাও অল্প কয়েকটি কথা। কিন্তু ঘটনার তাৎপর্যের কারনে আজও মনে আছে। ঘটনাটি ঘটেছিল সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে। আজ এখানে সেই ঘটনার বর্ণনাই দিব। অনেকের স্মৃতিতেই থেকে থাকবে সেই ঘটনা। আমি নিজে ঘটনার পূর্বাপর পারস্পারিকতার প্রত্যক্ষ করেছি।কাছে শোন কোন বিবরণ নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই ঘটনার একটা উল্লেখ যোগ্য তাৎপর্য আছে।
রাজনীতির পথ এমনিতেই পিচ্ছিল, জটিল, কদাকার; সেই কারনে আমাদের দেশের রাজনীতিতে ভাল মানুষেরা বিদায় নিয়ে সেখানে স্বার্থবাজ রাজনৈতিক কর্মিরা বেশি করে জায়গা করে নিচ্ছে। ১৯৮৯ সালে চবিতে ভর্তি হয়েই দেখলাম, সেখানে বাংলাদেশ ছাত্র শিবির সংক্ষেপে শিবির নামক জামাতের ছাত্রশাখা সেখানে সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। হল তাদের দখলে। অন্য কোন মতাদর্শের ছাত্র নেতারা হলে থাকতে পারেনা। যারা হলে থাকত কিন্তু শিবির করত না তাদের নানান ঝামেলা হত। কারণে অকারণে বিরক্ত করত; বিভিন্নভাবে। যারা আপোষ করে চলতে পারতা না তাদের কে হলে ছেড়ে দিত। আমাদের অনেক বন্ধু দেখতাম খুব সহজেই এদের সাথে আপোষ করে হলে খাটিয়ে দিত; যাদের অনেকেই পরে আর শিবিরের সাথে কোন ধরনের সংশ্লিষ্ট থাকত না। হলে থাকার সুবিধা নেবার জন্য ছিল এই কৌশল।
১৯৮৬ সালের পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ ছিল। একদিকে সারা দেশে তখন এরশাদ সাহেবের স্বৈরশাসন আর ক্যাম্পাসে চলে শিশিবের শাসন। প্রশাসন, শিক্ষক, ছাত্র রাজনীতি সবকিছুর মাঝে চলে শিবিরের উলঙ্গ তান্ডব। এই তান্ডবের কারণে অনেক জ্ঞানতাপস শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আর যারা থেকে গেছেন তাদের অনেকেই নিষ্প্রাণ পাথরে জীবন বেঁচে নিয়েছেন। তাদের মুখ বন্ধ, চোখ বন্ধ করে চলার মত অবস্হা। ছাত্ররা দিশাহারা। যারা প্রতিবাদি, তারা ক্যাম্পাসে যাতায়ত করতে পারেনা। শিবির কিছু হলেই ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। হরতাল ডাকে। আর যারা বাইরে তারাও মাঝে মাঝে তাদের অবস্হান জানান দিতে ক্যাম্পাসে অবরোধ করে বসে। তাদের সর্বশেষ অস্ত্র হল ক্যাম্পাসে যাতায়তের পথে, রেল ও সড়ক উভ্য় পথ বন্ধ করে দেয়া। এতে করে বাইরে থাকা ছাত্র –শিক্ষক, কর্মচারি কেউ ক্যাম্পাসে আসতে পারে না। ফলে ক্যাম্পাস অচল থাকে। দু’ রাজনীতিই সাধারণ ছাত্রদের জন্য ছিল এক বিরাট ক্ষতির কারণ। কেননা ক্লাস – পরিক্ষা না হওয়া মানেইত ক্যাম্পাসে থাকা আরো দীর্ঘায়িত করা। জাতীয় রাজনীতিতে আসতে আসতে আন্দোলন তীর্ব হচ্ছিল। সেই ঢেউ আমাদের ক্যাম্পাসেও ছড়াচ্ছিল। সাধারণ ছাত্ররা নানান আয়োজন, কবিতা, বিতর্ক, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবাদি বক্তব্য তোলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে আবাশ পাচ্ছিলাম ক্যাম্পাসে রাজনীতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। শিবির তা চাচ্ছিল না। অন্য কোন সংগঠন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করুক তা শিবির কোন ভাবেই চাচ্ছিল না।
ভিসি আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজদ্দিন (১৯৮৮-১৯৯১) দায়িত্ব নেবার পর থেকে ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আস্তে আস্তে চলছিল। তিনি ছাত্রদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে চাকসু নির্বাচন তিনির দেবেন। সেই মোতাবেক ১৯৯০ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারি চাকসু নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক করা হ্য়। এই স্যারের সাথে এরশাদ সাহেবের ভালই সখ্যতা ছিল। তবু তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার জন্য খোলে দিলেন। আমার মনে আছে ১৯৮৯ সালে প্রথম ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে ( বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন –ক্যাম্পাস শাখার) একটি মিছিল হয়। এই মিছিলটি ছিল হিরোশিমা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানানোর মিছিল। আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। পারমাণবিক অস্ত্র নিস্ক্রিয় করার দাবি ছিল সেই মিছিলে। মাত্র ৮০-৯০ জন ছাত্র অংশগ্রহন করেছিল সেই মিছিলে। কিন্তু শিবির এই শান্তির মিছিল ভন্ডূল করে দেয়। লাঠি সুটা নিয়ে সাঁড়াশি আক্রমন করে মিছিলে। মিছিলের প্রথম বর্ষের যেজন তরুন এখানে অংশ গ্রহন করেছিল আমি ছিলাম তাদের একজন। ছোটখাট –হালকা পাতলা চেহারার কারণে নিঃশ্বাস বন্ধ করে যে দৌড় দিয়ে ছিলাম এখন মনে হয়, উসাইন বোল্টের সাথে হয়ত পাল্লা দিতে পারতাম। আসলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে যে দৌড় তার সাথে কি অন্য কোন দৌড়ের তুলনা হয়। যাক সে কথা, এই সময়টা ছিল ১৯৮৯ সালের আগষ্ট মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কেটেছে মাত্র কয়েক মাস, সবকিছু ভাল করে বুঝ উঠতেই পারছিনা। যাক বেঁচে গেলাম সেই যাত্রা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বদলে যায় ক্যাম্পাস। সব ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আসতে থাকে, মিটিং মিছিল চলতে থাকে। নাটক চলছে, পথ নাটক, পথ সভা ইত্যাদি। শিক্ষকরা অনেক উজ্জিবিত। নানা সেমিনার –সিম্পজিয়াম আয়োজন করছেন। পুরো ক্যাম্পাস একটা অনন্য মাত্রা পায়। ১৯৯০ সালের প্রারম্ভিক সময়টা ছিল এমনি এক দূরন্ত, প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস; চারদিকে সরব মিছিল আর জ্বালাময়ি সব মিটিং। এই সব মিটিং এর ছাত্র নেতারা তাদের বাক্মিতার পরিচয় দিচ্ছিল। তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছিল। অনেক ছাত্র নেতা যাদের বক্তব্য শোনার জন্য অনেক শিক্ষক পর্যন্ত অপেক্ষা কর দূরে দাঁড়িয়ে তাদের দুএক জনের নাম না বললেই নয়। তাদের মাঝের বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ, শিবিরের তৎকালীল ছাত্র নেতা হামিদ হোসাইন আজাদ, ছাত্র ইউনিয়নের নাজমুল করিম সহ আরো অনেকেই। এই সময় ক্যাম্পাসে বি এন পি অঙ্গ সংঘগঠন জাতীয়তাবাদি ছাত্র দলের বড় কোন নেতা ছিল না। তবে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে তাদের অনেক সমর্থক ছিল। তথাপী বেগম জিয়া ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। এই সময় ছাত্র সংঘঠন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা, যেমন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ( বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) আমানুল্লাহ আমান ( বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি ছাত্র দল),বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সহ অনেকেই এসেছেন। সবাই স্বৈরাচার আর জামাত বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন। জ্বালাময়ী বক্তব্যে উদ্বেলিত করেছেন। তাদের বক্তব্য থেকে অনেক কিছু জানা যেত। সমসাময়িক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, তার মেরুকরণ নিয়ে তাদের সেই সব বক্তব্য ছিল অনেক উচুমানের। পরবর্তী প্রজন্মের ছাত্র নেতাদের মাঝে এই ধরনের প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে দেখিনি। আজপর্যন্ত আর কোন নেতা পাইনি যারা সেই ভাষা, জ্ঞান অথবা প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পেরেছেন। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতির বর্তমান পরিস্হিতির কথা আর নাই বললাম। যাক আসল কথায় আসি।
চাকসু নির্বাচনে শিবির কে মোকাবেলা করা জন্য সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করা হল। শিবির একা নির্বাচন করল। তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল তারা একার জিতে যাবে। আসলে এককভাবে অন্যদল নির্বাচন করলে আসলেই শিবির জিতে যেত। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের মাঝে ছিল ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ফেডারেশন সহ আরো অনেক ছোট খাট দল। ছাত্রলীগ অনেক কনসেশন দিয়ে সেদিনের এই ঐক্যের ফর্মুলা বাস্তবায়ন করে।
ক্যাম্পাসের এই সরব রাজনীতি শিবিরের ভাল লাগছিল না। তারা কোন না কোন অজুহাত খুঁজছিল। নির্বাচনের মাত্র তিন চারদিন আগে, ক্যাম্পাসে মিছিলে মুখরিত। সব দলেই ( জোট) তাদের ফাইলান সোডাউন করছিল। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল করছিল। এই সুযোগে শিবির তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বেছে নেয় সবচেয়ে ছোট দল। ইসলামি ছাত্র সেনার একটি ছোট্ট মিছিলে শিবিরের ক্যাডার বাহিনী হামলা করে।এই হামলা ছিল তাদের পূর্ব পরিকল্পিত। এই হামলা করে তারা বুঝাতে চেয়েছিল যে, যাতে অন্যরা থেমে যায়। তবে সম্মিলিত ছাত্র জোটের ব্যানারে নির্বাচন করছিল তারা এই হামলার জন্য শিবির কে দায়ি করে তার বিচার চাচ্ছিল। তারা সবাই মিলে একটি সিদ্ধান্ত নেয় যে ভিসি কে অবরোধ করবে। বিচার হলে অবরোধ তোলে নেবে না। এই রকম একটি অচল অবস্হার মাঝে দায়িত্বশীল আচরণ করতে না পারলে ক্যাম্পাসের রাজনীতির মাঝে আবার দুর্দিন নেমে আসতে পারে। সেই অবরোধের অচলাবস্হার কাটিয়ে নির্বাচনের জন্য কাজ করার তাগিদ যিনি দিয়েছিলেন তিনি এই ফজলে হোসাইন স্যার। ছাত্র সংগঠন গুলোকে যখন তিনি পরামর্শ দিচ্ছিলেন তখন আমি সেখানে উপস্হি্ত ছিলাম। প্রথম বর্ষের ছাত্র, কোন নেতা নই একজন উৎসাহী ছাত্র মাত্র। আমার কাছে স্যারের সেই সিদ্ধান্ত যে কত উপযোগী ছিল তখন ভাল করে না বুঝলেও এখন বুঝি কত দায়িত্ব আচরণ ছিল সেই দিনের সেই পরামর্শ।
ছাত্র সেনার মিছিলে হামলা হলে সেইদিন সম্মিলিত ছাত্র ঐক্যের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভিসি স্যারের অফিস ঘেরাও করা হয় বিকেলের দিকে। ভিসি স্যার তখন বসেন পুরানো অফিসে। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের উপরের দিকে ( সম্ভবত এখন সেখানে ল ফেকাল্টির অফিস)। যথারীতি ছাত্র ঐক্যের নেতারা সেখানে যায়। ভিসি স্যার কে ঘেরাও করা হ্য়। অফিসের সিঁড়িতে ছেলে মেয়েরা বসে থাকে। কাউকে আসা যাওয়া করতে দেয়া হচ্ছে না। ভিসি স্যারের অফিসে যারা ছিলেন এবং চেম্বারে যারা তারা সবাই প্রায় আটক। এক দম বন্ধ অবস্হা। স্যার হয়ত খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করতে পারছেন, বাসা থেকে খাবার দাবার পাঠানো হলে অবরোধ কারিরা রেখে দেয়। দিনের শেষে রাত নেমে। আলোচনা করে কোন সুরাহা হবার নাম নেই। অবরোধ চলছেই। রাতে স্যার অসুস্হ হয়ে পড়েন। না খেয়ে কতক্ষণ থাকা যায়। ডাক্তার সাহেব, স্যারের প্রেসার চেক করার জন্য কাল ব্যাগে করে যন্ত্রপাতি একজন সহকর্মি সহ সেখানে এলেন। কিন্তু ছেলেরা অনুমান করছে যে সেখানে খাবার আছে। যেই কথা সেই কাজ। ব্যাগ খুলা হল। দেখা গেল সেখানে সেদ্ধ করা ডিম আছে। পানি আছে। ডিম আর পানি রেখে দেয়া হল। ডাক্তার খালি হাতে স্যারের রুমে গেল। আমরা যারা অবরোধ কারি দলে আছি। তারা পালাক্রমে বাইরের থেকে খেয়ে আসছি। আবার প্রয়োজন হলে চা বিস্কিট খাচ্ছি। হাটাহাটি করছি। আবার চলছে গান, হাততালি। চিৎকার চেঁচামেচি।মাঝে মাঝে শ্লোগান বিচার চাই করতে হবে; শিবিরের চামড়া তোলে নেব আমরা । ক্যাম্পাসে শান্তি চাই, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই ; এই সব শ্লোগান। ছোটখাট নেতাদের বক্তৃতা প্রতিযোগীতাও চলছে। কেননা নেতার গলার আওয়াজ ঊচূ হওয়া চাই, অনর্গল কথা বলার প্রেক্টিস চাই। এই সব করার জন্য উপলক্ষ লাগে। আর ভাল উপলক্ষ পাওয়া যায় না। বড় অনুষ্ঠানের সিনিয়রদের জন্য। আর এই সব রাত বিরাইতের কাজে ছোট নেতারা ভাল কাজ করে। অন্ধকারে কারো মুখ না দেখে কথা বলা যায়।
এই রকম একটি আনন্দঘন রাতে যেখানে ভিসি স্যার অবরোদ্ধ সেখানে মাঝরাতে এসে হাজির হলেন ফজলে হোসাইন স্যার। সাথে আরো কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক। আমি স্যার কে চিনতাম না। উনারা পাহাড়ের উপর রাস্তার শেষ অংশে এসে গাড়ী থেকে নামলেন। তারপর আসপাশের এলাকায় একটু হাটাহাটি করে ছাত্র নেতাদের সাথে কথা বলার আগ্রহী হলেনে। কিন্তু এখানে কারা উনি জানতেন না। আমি কার কয়েকজন বন্ধু সাথে সেখানে ঘুরাঘুরি করছিলাম।
উনি ডাক দিলেন এই ছেলে এই দিকে আস? এখানে কি কর? আমি কাছে গেলাম।
আমাকে জিজ্ঞেস করেন তুমি কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়?
জি স্যার।
কিসে পড়?
বললাম সমাজতত্ত্ব বিভাগে।
এখানে কেন আসছ?
ভি সি স্যার কে ঘেরাও করার জন্য সবাই আসছে। আমিও আসলাম। দেখি করে।
উনি বললেন, নেতাদের কে চেন?এখানে কারা কারা আছে। গিয়ে বল ফজলে হোসাইন সাহেব আপনাদের কে ডাকে। আমি ঘেরাও করার জায়গায় গিয়ে বড় নেতাদের কে বললাম। সেখানে ছিল, নাজমূল করিম ( ছাত্র ইউনিয়ন), শামীম ভাই ( ছাত্রলীগ) জাতীয়াবাদি ছাত্র লীগ সহ ছাত্র দলের আরো অনেকেও। জাসদ ছাত্র লীগের দু’এক জনে ছিল সেখানে। সবাই একত্রে মিলে ফজলে হোসাইনের স্যারের সাথে কথা বলার জন্য যাচ্ছে। আমিও পিছু নিলাম। কেউ আমাকে মানা করেনি। সবাই স্যারের কাছে যেতেই স্যার কয়েকটা উচু স্বরে উচ্ছারণ করলেন। রাজনীতি কি জিনিস কিছু বুঝ নাকি? এখানে তামাশা বানিয়ে রাখছ কেন? স্যার কে আটক রাখার উদ্দেশ্য কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছাত্র নেতারা কিছু বলার আগেই উনি বললেন, এখন যদি শিবিরের ক্যাডাররা দা বডি নিয়ে আসে, লাঠীশুটা নিয়ে আসে; মিছিল করে এখানে তোমাদের কে ঘেরাও করে আচ্ছা করে একটা ধুলাই দেয়। কি করবে তোমরা ? ফিরাতে পারবে ? তারপর শিবিরের ছেলের স্যার নিয়ে বাসায় দিয়ে আসবে। তোমাদের কে ক্যাম্পাস ছাড়া। আবার ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ হবে। পুলিশ পাহাড়া দিবে। তোমরা ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে ট্রেন, বাস, রিক্সা, ঠেলা অবরোধ করবে। ক্যাম্পাস অচল। আবার আমরা ফিরে যাব আগের জায়গায়। নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে। তোমরা কি চাও, তাই হোক? স্যার নেতাদের কে কোন কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছেন না। শেষে বললেন, এখন যাও, সবার সামনে দাঁড়িয়ে গলা উচু করে গিয়ে বক্তব্য দাও। গিয়ে বল, শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের ফলপ্রশ্রু আলোচনা হয়েছে। উনারা আমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা শান্তি বজায় রাখা হবে।নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে। দূষি ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। এই শর্তের আলোকে আমরা অবরোধ তোলে নিলাম। স্যারের শেখানো কথাগুলো নেতারা এসে বলল! সবাই হাত দিল। অবরোধ নেই। ভিসি স্যার মুক্ত। ফজলে হোসাইন স্যার ভিসি স্যারের কাছে গেলেন। স্যার নিয়ে উনারা চলে গেলেন আমরাও যে যার মত চলে এলাম।
অতঃপর যথা সময়ে নির্বাচন হল। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য চাকসু সহ প্রায় সব হলে সকল আসলে বিজয়ী হল। শুধু এফ রহমান হলে শিবিরের নেতারা বিজয় লাভ করে। সাধারণ ছাত্ররা শিবিরের বিরুদ্ধে ভোট দেবার কারণেই এই ফলাফল হতে পেরেছিল। আর নির্বাচনের কোন অঘটন ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়। আমার মনে আছে। ভোট দিতে গিয়ে ভোর চারটায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নির্বাচনে ছাত্রঐক্য বিজয় লাভ করায় সকলের মাঝে একটা আলাদা আনন্দ বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনীতির পথে কত জটিল তা আগামী সংখ্যায় লেখা হবে। লেখা হবে অবরোধের ভোরের কাহিনী।
এখানে ফজলে হোসাইন স্যারকে ধন্যবাদ। একটা জটিল জিনিস কে কত সহজে সমাধান করে দিলেন। স্যারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। উনি যেন জান্নাতবাসী হন। আল্লাহ উনার মঙ্গল করুক।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.