![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসিব বিন শহিদ ॥
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৩৪ বার। শুধুমাত্র ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ২০০১ থেকে ২০০৬ (১৭ টাকা থেকে ৩৩ টাকা) সালের মধ্যেই প্রায় দ্বিগুণ হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপারেশন-১ শাখার এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৬ মে থেকে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯ বছরে সব সরকারের আমলেই জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। অর্থাৎ পেট্রোল ১ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৮৬ টাকা, ডিজেল ৬৯ পয়সা থেকে ৫৬ টাকা এবং কেরোসিন ৪৮ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ টাকা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপাপরেশন শাখা সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য ছিল ৩০ টাকা, প্রেট্রাল ২৮ টাকা, ডিজেল ১৭ টাকা ও কেরোসিন ১৭ টাকা। ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারিতে প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য ছিল ৩৫ টাকা, পেট্রোল ৩৩ টাকা, ডিজেল ২০ টাকা, কেরোসিন ১৭ টাকা। ২০০৪ সালের ১ মে মাসে প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য ছিল ৩৫ টাকা, পেট্রোল ৩৩ টাকা, ডিজেল ২০ টাকা ও কেরোসিন ২০ টাকা। ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরে প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য ছিল ৩৫ টাকা, পেট্রোল ৩৩ টাকা, ডিজেল ২৩ টাকা ও কেরোসিন ২৩ টাকা। ২০০৫ সালের ২৫ মে মাসে প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য ছিল অকটেন ৩৫ টাকা, পেট্রোল ৩৫ টাকা, ডিজেল ২৬ টাকা ও কেরোসিন ২৫ টাকা। ২০০৫ সালের ২৮ মে অকটেন ৩৫ টাকা, পেট্রোল ৩৫ টাকা, ডিজেল ২৬ টাকা ও কেরোসিন ২৬ টাকা। ২০০৫ সালের ২০ জুলাই অকটেন ৩৮ টাকা, পেট্রোল ৩৬ টাকা, ডিজেল ২৬ টাকা ও কেরোসিন ২৬ টাকা। ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অকটেন ৪৫ টাকা, পেট্রোল ৪২ টাকা, ডিজেল ৩০ ও কেরোসিন ৩০ টাকা। ২০০৬ সালের ৯ জুলাই অকটেন ৫৮ টাকা, পেট্রোল ৫৬ টাকা, ডিজেল ৩৩ টাকা ও কেরোসিন ৩৩ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০০৮ সালের ১ জুলাই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধি পায়। সে সময় এক ধাপেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা হয়। একইভাবে পেট্রোল প্রতিলিটারে ২২ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৮৭ টাকা এবং অকটেন ২৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ থেকে ৯০ টাকা হয়।
বর্তমান সরকার আমলে এবারই প্রথম সকল প্রকার জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে। তবে বিমানের জ্বালানি ও ফার্নেস অয়েলের দাম কিছুদিন আগে বাড়ানো হয়েছিল। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও ফার্নেস অয়েল বিক্রয়ে বিপিসি’র লিটারপ্রতি যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৪৪ টাকা, ৩২ দশমিক ৪৯ টাকা, ৮ দশমিক ০২ টাকা এবং ১২ দশমিক ৯৬ টাকা লোকসান দিচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
চলতি বছরে বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন প্রকার জ্বালানির মূল্য হলো ঃ
ফার্নেস অয়েল ঃ
চলতি বছরে জ্বালানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দাম বৃদ্ধি পায় ফার্নেস অয়েলের। এক বছরে ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধি পায় সর্বাধিক পাঁচ বার। বছরের শুরুতেই অর্থাৎ ২০১১ গত ২৪ জানুয়ারি ফার্নেস অয়েলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে ২৬ টাকা থেকে ৩৫ টাকা করা হয়। মাত্র দুই মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় ১১ এপ্রিল প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। তৃতীয় দফায় ৬ মে দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়। চতুর্থ দফায় ১৯ সেপ্টেম্বরে লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়। সর্বশেষ গত ১৯ নভেম্বর লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫৫ টাকা। ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ানোর ফলে তরল জ্বালানি নির্ভর কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দামও বেড়ে যায়।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ঃ
এক বছরে সিএনজির দাম সরকার ৭৯ দশমিক ১০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়। প্রথমে গত ১২ মে প্রতি ঘনমিটারে ৮ টাকা ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ২৫ টাকায় উন্নীত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতি ঘনমিটারে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। সিএনজির দাম বাড়ার ফলে সব ধরণের পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল ঃ
কেরোসিন ও ডিজেলের দাম গত এক বছরে তিন দফায় ২৭ দশমিক ২৭ ভাগ বাড়ানো হয়। একই সাথে তিন দফায় অকটেন ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ এবং পেট্রোল ১৬ দশমিক ২২ ভাগ বাড়ানো হয়। প্রথম দফায় গত ৬ মে সব ধরণের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় সব ধরণের জ্বালানি তেল প্রতি লিটারে ২ টাকা বেড়ে ডিজেল ও কেরোসিন ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, অকটেন ৭৭ থেকে ৭৯ টাকা ও পেট্রোল ৭৪ টাকা থেকে ৭৬ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ১৯ সেপ্টেম্বর সব ধরণের জ্বালানির দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এ সুবাদে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বেড়ে ৪৬ টাকা থেকে ৫১ টাকা হয়। আর ৭৯ টাকার অকটেন ৮৪ টাকা এবং ৭৬ টাকার পেট্রোল হয় ৮১ টাকা। সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর আবারো চার শ্রেণীর জ্বালানির দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এ সুবাদে ৫১ টাকার কেরোসিন ও ডিজেল হয় ৫৬ টাকা, ৮৪ টাকার অকটেন হয় ৮৯ টাকা ও ৮১ টাকার পেট্রোল হয় ৮৬ টাকা।
জেট ফুয়েল ঃ
গত ১৯ মে বিমানের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম লিটারে ৬ টাকা বাড়িয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্ধরের জন্য ৭৯ টাকা থেকে ৮৫ টাকা এবং চট্টগ্রাম শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য ৭৮ থেকে ৮৪ টাকায় উন্নীত করা হয়।
চলতি বছর (২০১১-১২) পর্যন্ত জ্বালানি তেলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস সেক্টরে বর্তমানে কোন ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক রয়ালিটি ধার্য না হওয়ায় খুবই অল্প মূল্যে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.