নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাদরীসের ব্লগ

শুধু তোমার জন্য প্রেমকে আমি পরিণত করেছি কবিতায়...!

নাদরীস

নেই তবু যা আছের মতো দেখায় আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি, সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায় তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি ! --নির্মলেন্দু গুণ

নাদরীস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক বাস্তববাদের আদি তাত্ত্বিক কি থুকিডাইডিস নাকি সান যু?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৩

আজকাল বিশ্বের সব নামিদামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা (যেমন KENNETH WALTZ, ROBERT JERVISH, JOHN J. MEARSHEIMER) তাঁদের লিখনীতে ফুটিয়ে তুলছেন রাজনৈতিক বাস্তববাদের আদি তাত্ত্বিক গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডিস। এরা ভুলে যান যে, থুকিডাইডিস যে সময়ে পিলোপনেসিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস লিখেছিলেন তারও প্রায় ১০০ বছর পূর্বে চীনা দার্শনিক ও সমরনেতা সান যু (TSUN SZU) রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ THE ART OF WAR ”, যাতে সামরিক কৌশল সম্মন্ধে বিস্তৃত ধারণা দেয়া হয়। থুকিডাইডিসের বিখ্যাত গ্রন্থ, “THE HISTORY OF PELOPONNESIAN WAR”, যেখানে গ্রিক ব্যবস্থার দুটি রাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে যুদ্ধকে থুকিডাইডিস চিত্রিত করেছেন অত্যন্ত বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। থুকিডাইডিসের কর্মটি মহৎ ছিল এবং এটি অনেক সনাতনও সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। তবে রাজনৈতিক বাস্তববাদের আদি তাত্ত্বিক থুকিডাইডিস এটা মানতেই আমার যত সমস্যা!



আসুন জানা যাক রাজনৈতিক বাস্তববাদ কি?



রাজনৈতিক বাস্তববাদ হল ক্ষমতার রাজনীতির উপর গড়ে উঠা একটি তত্ত্ব যা দাবী করে বিশ্ব রাজনীতি পরিচালিত হয় প্রতিযোগিতামূলক আত্ম-স্বার্থের ভিত্তিতে। বাস্তববাদী তত্ত্বে রাষ্ট্রই প্রধাণ কর্তা এবং শাসকশ্রেণীও তাই করেন যাতে রাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল হয়। বাস্তববাদ বলে যে, বিশ্বে প্রচলিত যে নৈতিকতার ধারণা বিদ্যমান তাঁকে রাষ্ট্রের ক্রিয়াকর্মের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না; কারণ বাস্তববাদ যেকোন কার্যের রাজনৈতিক পরিণাম বিবেচনা করে। বাস্তববাদী তত্ত্বে সকল রাষ্ট্রই টিকে থাকার জন্য ক্ষমতা অন্বেষণ করে, এবং ভয়ের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা করে।



আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাস্তববাদকে বিবেচনা করা হয় সর্বসনাতন ও সবচেয়ে প্রভাবশালী তত্ত্ব হিসেবে। বস্তুত রাষ্ট্র নিয়ে যখন থেকে ভাবনা শুরু হয় তখন থেকেই রাজনৈতিক বাস্তববাদের যাত্রা শুরু হয়। সুদূর অতীতের মত আধুনিককালের ক্ষমতার রাজনীতিও মূলত পরিচালিত হয় বাস্তববাদী তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই।



উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমারা দেখতে পাই যে, বাস্তববাদী তত্ত্বে---

১) রাষ্ট্রই প্রধাণ কর্তা

২) শাসককে রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

৩) সকল রাষ্ট্রই টিকে থাকার জন্য ক্ষমতা অন্বেষণ করে।

৪) সকল রাষ্ট্রই ভয়ের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা করে।

৫) আন্তর্জাতিক রাজনিতিতে নৈতিকতার কোন স্থান নেই।



উভয় লেখকের কর্ম পরিচিত:



১) সান যু, THE ART OF WAR, সময়কাল আনুমানিক ৫৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ



বিষয়বস্তুঃ ১৩ টি অধ্যায়ে বিভক্ত প্রাচীন চীনের একটি সামরিক গ্রন্থ। যা বলে যে,

১) দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে কোন দেশ উপকৃত হয়েছে এমন নজির নেই।

২) যুদ্ধে জয়লাভ করাই শ্রেষ্ঠ নৈপূণ্য নয়, যুদ্ধ না করে শত্রুকে পদানত করাই শ্রেষ্ঠ নৈপূণ্য।

৩) যদি তুমি নিজেকে এবং তোমার শত্রুকে জানো, তবে একশত যুদ্ধেও তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই।

৪) বিজয়ী যোদ্ধারা প্রথমে জিতে পরে যুদ্ধে যায়, যেখানে পরাজিত যোদ্ধারা আগে যুদ্ধে যায় পরে জেতার সুযোগ খুঁজে।

৫) সকল যুদ্ধবিগ্রহের ভিত্তি হল প্রতারণা; যখন তুমি শক্তিশালী তখন দূর্বলের অভিনয় কর, আর যখন দূর্বল তখন সবলের মত আচরণ কর!



সান যু থেকে প্রাপ্ত ধারণা, অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং বাস্তববাদী দৃষ্টি নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করতে হয়। বিনাযুদ্ধে স্বার্থ হাসিল হলে সেটাই মঙ্গলজনক। দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ যেকোন জাতি বা রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণকর। যুদ্ধে যোগদান করলে বিজয়ী হওয়ার বাসনা নিয়েই যোগদান করা উচিত। পরিকল্পিত উপায়ে যুদ্ধ না করলে পরাজয় নিশ্চিত এবং সেক্ষেত্রে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।





২) থুকিডাইডিস, THE HISTORY OF THE PELOPONNESIAN WAR, সময়কাল আনুমানিক ৪৩১খ্রিস্টপূর্বাব্দ



বিষয়বস্তুঃ গ্রিক ব্যবস্থায় দুটি রাষ্ট্র এথেন্স এবং স্পার্টার মধ্যে যুদ্ধ।

যুদ্ধের কারণঃ এথেন্সের শক্তি বৃদ্ধিতে স্পার্টার ভয়।

মেলিয়ান প্রশ্নঃ এখানে থুকিডাইডিস দেখিয়েছেন ক্ষমতার রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য এথেনীয়রা কীভাবে সকল ন্যায়বিচারকে অগ্রায্য করে মেলিয়ানদের আক্রমণ করে। আর মেলস এথেনীয়দের নিয়ন্ত্রণে আসলে স্পার্টার জন্য ভীতির সঞ্চার হবে ভেবে স্পার্টানরাও এখানে শক্তি প্রয়োগ করে।



থুকিডাইডিস থেকে প্রাপ্ত ধারণা;

১) সনাতনকালেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতাশালী জাতিরা একে অপরে উপর ক্রিয়াশীল ছিল, সকল রাষ্ট্রই ক্ষমতার রাজনীতিতে ভারসাম্য রাখতে চাইত এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে দুর্বল করতে চাইত।

২) ক্ষমতার প্রশ্নটি সনাতনকালেও ছিল। ক্ষমতার প্রয়োজন হত প্রতিরক্ষা ও আক্রমণের জন্য, নিরাপত্তার জন্য।



সিদ্ধান্ত গ্রহণের পালাঃ



উপরোক্ত দুজন লেখকের লেখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে এরা উভয়েই এক হয়েছেন। যেমন, যত যুদ্ধবিগ্রহ সবকিছুর মূলে ছিল ক্ষমতার লোভ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রশ্নকে রাষ্ট্ররা কখোনই আমলে নেয় না। দেশ, রাষ্ট্র বা জাতির নিরাপত্তার জন্যই ক্ষমতার প্রয়োজন হয়। দেখা যায় যে, রাজনৈতিক বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো এদের দুজনের লেখনীর মধ্যেই ফুটে উঠেছে। তবে সান যু যে ধরণের জ্ঞান ১০০ বছর পূর্বে দিয়েছিলেন তা শতবর্ষ পরে দিয়ে থুকিডাইডিস কিভাবে রাজনৈতিক বাস্তববাদের আদি তাত্ত্বিক হোন?



তাই বলা যায় যে, বাস্তববাদী তত্ত্বের আদি তাত্ত্বিক প্রাচীন চীনের সান যু!







তথ্যসূত্রঃ

১) Sun Tzu translated and annotated by R. L. Wing : The Art of War. Main Street Books, 1988

২) Boucher, David: Theories of International Relations: From Thucydides to the Present, Oxford: Oxford University Press,1998

৩) Cawkwell, George: Thucydides and the Peloponnesian War, London: Routledge, 1997



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৬

বোকামন বলেছেন: হূম...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.