নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয় রিয়াজ

হৃদয় রিয়াজ

নিজের সম্পর্কে বলার মত তেমন কোনো যোগ্যতা এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারি নি। যদি কখনো পারি তখন ভেবে দেখব।যেহেতু আমি কোন নিয়মিত লেখক নই কাজেই লেখায় ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কাম্য।

হৃদয় রিয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কিছু কথা (পর্ব-০২)

২৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

'দিন যায় কিন্তু কথা থেকে যায়' এই ছোট্ট লাইনটি যে কত বড় অর্থ বহন করে তা বোঝার জন্য আসলে ফিলোসফার হওয়া লাগে না। আমি আমার ছোটবেলার দিকে তাকালে এর মর্মার্থ প্রত্যেকটি লোমে লোমে অনুভব করি। নিশ্চই আরও অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ত এরকমটা হয়ে থাকে। বিশেষত যারা নাইন্টিজ কিড ছিলেন আর আমার মত একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য ছিলেন।



পরিবারের ভালবাসা কাকে বলে এই ব্যাপারটা ছোটবেলা থেকেই আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। এক্সপেরিয়েন্স করেছি একটা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির স্বপ্ন দেখার শুরুটা আর একটি ছোট শিশুকে কেন্দ্র করে সে স্বপ্নগুলোর তিল তিল বেড়ে উঠা আর পরিপূর্ণতা লাভ। আসলে সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে আমি এরকম নীল, বেগুনী, ধূসর, সাদা রঙের স্বপ্নদ্রষ্টাদের ঘরে আশার আলো হয়ে জন্মেছিলাম। অথচ এর ঠিক উল্টোটাও কিন্তু হতে পারত। হয়ত জন্মাতাম এক অঢেল ধনকুবেরের ঘরে। ডুপ্লেক্স বাড়ির বেলকুনিতে পাতা দোলনাটাকেই বানিয়ে নিতে হত মায়ের কোল। তার কিছু পরে আলাদা রুম আলাদা বিছানা। মায়ের শরীরের নাড়ীর গন্ধ শুকে ঘুমাতে যাওয়াটাকে অচিরেই বিদায় জানাতে হত। মাসের শেষ শুক্রবারটায়ও হয়ত বাবার মুখখানা দেখা হত না। ব্যবসায়িক ক্লায়েন্টদের খুশি রাখতে পড়ে থাকতেন দেশের বাইরে। আর এভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর পেরিয়ে চলে যেত আমার বাল্যকাল।



আমি লাকি আমি জন্মেছিলাম খুব সাধারণ একটি পরিবারে। আমার মাসে একটার বেশি দুইটা ডানো সেরেলাকের পট না থাকলেও আমার প্রতি সবার খেয়াল ছিল। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর কেবল আমিই ছিলাম তাদের ভুবন ভুলানো হাসির একমাত্র উপলক্ষ। আর আমার মায়ের দুইটার বেশি তিনটা শাড়ি না থাকলেও তাদের মাঝে ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা। যেখানে ছিল না কোন সন্দেহ কোন পিছুটান।



এগুলো মনে হলে এখনো নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। শত দুঃখ কষ্ট ভুলে যাই। না পাওয়ার বেদনাটা আস্তে আস্তে স্তিমিত হতে শুরু করে। কখনো নিজের অজান্তেই বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠি। বলছি একদিনের ঘটনা। তখন বয়স আর কত হবে। এই তিন কি চার। ততদিনে আমার মা আমাকে অক্ষর জ্ঞান শিখাতে শুরু করে দিয়েছেন। বাবাও তখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসতেন। সন্ধ্যা সন্ধ্যা দুইজন আয়োজন করে আমাকে নিয়ে পড়াতে বসতেন। কোন কবিতার একটা লাইন আদো আদো ভাবে বলে ফেলতে পারা মানে ঘরে রাজ্যজয়ের আনন্দ শুরু হয়ে যেত। কখনো কখনো তো পাড়া প্রতিবেশীরাও চলে আসতেন! আমরা যে বিছানায় থাকতাম তার পাশের জানালার একটা গ্রিল ছিল বেশ বাঁকা আর তার পাশেই বারান্দায় কাঠের বড় একটা টুল। সেখান দিয়ে আমি বেশ আরমসেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারতাম। একদিন সকাল সকাল বাবা মাকে ঘুমে রেখেই আমি বই হাতে ওই জানালা খুলে বের হতে যাব তখনই পা ফসকে পড়ে গিয়ে বিছানা আর টিনের বেড়ার চিপায় আটকে গিয়েছিলাম। চিৎকার শুনে আমার বাবা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামতে গিয়ে মশারি ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর আমার মা? তিনিও ততক্ষনে আমাকে সামনে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ধুম করে ঘুম থেকে উঠে কেউই ওই মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারছিলেন না কান্নার আওয়াজটা ঠিক কোথা থেকে আসছে। অবশেষে আমার বাবাই খাটের নিচ দিয়ে গিয়ে আমাকে বের করে এনেছিলেন। সেদিন আমার মায়ের সাথে সেকি ঝগড়া! কম হলেও দুই তিন দিন ঘরে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেন নাই আর আম্মার সাথে কোথা বলেন নাই।



আজ আমি ভার্সিটিতে পড়ি কিন্তু ভুলে যাই না সেই দিনগুলো আমাকে নিয়ে এক জোড়া কপোত-কপোতীর সে সুন্দর মুহূর্তগুলো। সেদিনও আম্মার সাথে স্মৃতিচারণ করছিলাম। এক পর্যায়ে এটা বলার সাথে সাথেই আম্মা হাসতে হাসতে পিঠে এক থাপ্পড় দিয়ে বলল 'শয়তানও ছিলি তুই একটা' বলে বুঝাতে পারব না তখন কি যে ভাল লাগছিল আমার। আমি নিশ্চিত তখন আম্মার চোখে হাত দিলে দেখতাম একফোঁটা অশ্রু আনন্দ অশ্রু। সেদিন বলতে গিয়েও যে কথাটা আর বলা হল না, 'ভালবাসি। তোমায় অনেক অনেক বেশি ভালবাসি আম্মা।' আর বাবাকে ফোনে, 'তোমাকে অনেক মিস করি pappa... আমাদের ছেড়ে আর কতদিন দেশের বাইরে পড়ে থাকবা। চলে আসোনা কালই'



****সবাই আমার বাবা মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া করবেন। আল্লাহ যে তাদেরকে আরও অনেকগুলো বছর বাঁচিয়ে রাখেন***

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শুভকামনা থাকলে

২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২

হৃদয় রিয়াজ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা। আপনিও ভাল থাকবেন।

২| ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৯

মশিকুর বলেছেন:
আত্নকথন খুবই ভালো লাগলো। মাঝে মাঝেই আমরা সৃতিকাতর হয়ে যাই... মনে হয় সুন্দর দিনগুলো পিছনে ফেলে এসেছি। আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা থাকলো :)

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৯

হৃদয় রিয়াজ বলেছেন: অনেক অনেক ভাললাগা ভাই। শত হতাশাগ্রস্থ থাকলেও এই স্মৃতিগুলোই কিন্তু আবারো স্বাভাবিক কর্মক্ষম করে তোলে।

আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্যও অনেক দোয়া রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.