![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা জামাল, জলদি উঠো, স্কুলের সময় হয়ে গেছে। ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে একচোখা ‘মা’ রহিমা বেগমকে দেখেই জামালের মনটা বিষিয়ে উঠলো। বেশ চড়া সুরে ১০ম শ্রেনীর ছাত্র জামাল তার মা’কে বললো, আমাকে নিয়ে, আমার স্কুল নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। নাস্তা দাও। বাথরুম থেকে এসে নাস্তা খেয়েই স্কুলে যাবো। বিরক্ত মন নিয়ে জামাল ভাবে, কি এক মায়ের ঘরে জন্ম নিয়েছি! যার কারনে বন্ধুদের কাছে প্রায়ই হেনস্তা হতে হয়েছে- ‘কানার পোলা, ডাইনীর পোলা ... আরও কতোরকম কটূক্তি। রহিমা বেগম জামালের স্কুলে আয়া’র কাজের পাশাপাশি দুপুরের খাবারও রান্না করে পিতৃহীন ছেলেকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। ছেলের কটুবাক্য শুনে এক চোখেই অঝোরে কাঁদতেন।
দিন, মাস, বছরগুলো কিভাবে যে পার হয়ে গেলো ! ঢাকায় গিয়ে লেখাপড়া করে জামাল আজ প্রতিষ্ঠিত। মা, ছেলের যোগাযোগ নেই আজ প্রায় পনের বছর। রহিমা বেগম ঢাকা থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ছেলের খবর নেন। ছেলে ভালো আছে শুনে রহিমা বেগমের মনের অজান্তেই এক চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পরে। ছেলে তার খবর না নিক, রহিমা বেগমের অতি আদরের সন্তান জামাল তো সুখে আছে।
রহিমা বেগম একদিন ঢাকা থেকে আসা একজনের কাছে ছেলের বিস্তারিত অবস্থা শুনে জানতে পারলেন যে, তার নাতী হয়েছে, এখন সে পাঁচ বছর বয়সী। দেখতেও নাকি রাজপুত্রের মতো। শুনে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না। লোকটির কাছ থেকে ছেলের ঠিকানা নিয়ে ঢাকায় ছেলের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বিয়ের পর রহিমা বেগম দ্বিতীয়বারের মতো নিজের গ্রামের বাইরে পা বাড়ালেন। শত মাইল দূরে থাকা নাতীকে একটিবার বুকে জড়িয়ে ধরতে, সোনা মানিক জামাল কে একবার প্রাণভরে দেখতে।
ঢাকা পৌঁছে অনেক কষ্টে ঠিকানা মতো ছেলের বাড়ির দরজায় উপস্থিত হলেন। দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দেবার পর জামাল ছেলের হাত ধরে দরজা খুলে রহিমা বেগমকে দেখতে পেলো। পাঁশে দাঁড়ানো নাতীকে দেখে নিজের অবদমিত আবেগটাকে আর সামলে রাখতে পারলেন না রহিমা বেগম। জড়িয়ে ধরার তীব্র আবেগে যেই দু’পা এগুলেন তখনি জামাল রহিমা বেগমেকে উদ্দেশ্য করে কঠিন স্বরে বলে উঠলো, তুমি ওর কাছে যাচ্ছ কেন? তোমার এক চোখ দেখলেইতো ছেলে ভয় পাবে। কি জন্য এসেছ? টাকা লাগলে টাকা নিয়ে যাও। আর কখনও এ বাড়িতে আসবে না।
তিনি তার বুক চিড়ে বের হয়ে আসা অদম্য কান্নাটাকে অতি কষ্টে দমন করে নীচু কণ্ঠে বললেন, বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ভুল করে আমার ছেলে জামালের বাড়ি মনে করে এখানে ভুল ঠিকানায় এসে পরেছি। ক্ষমা করো বাবা। আমি এখন যাই।
দেশে ফিরে আর বেশীদিন বাঁচলেন না রহিমা বেগম। স্বেচ্ছা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে চলে গেলেন পরপারে।
একদিন জামাল গ্রামের বাড়ির একজনের কাছে জানতে পারলো যে তার মা মারা গেছেন। কি বিচিত্র মানুষের মন! যে মাকে বাড়ির দরজার ভিতরে আসতে দেয়নি সেই মায়ের মৃত্যুতে ঐ রাতেই গ্রামের বাড়ি রওনা হলো জামাল। সকালে বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই কি এক অদ্ভুত অসহায়ত্ব গ্রাস করে নিল সম্পূর্ণ অন্তরাত্মাকে। পড়শি এক মহিলা এসে বললেন, তুই জামাল না? তোর মা তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গেছে। পড়তে চাইলে আমার ঘর থেকে সেটা এনে দিতে পারি। জামাল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ানোর কিছুক্ষণ পরই মহিলাটি একটা কাগজ ধরিয়ে দিল জামালের হাতে। জামাল কাগজের ভাঁজ খুলে দেখল এটা তাঁর স্বল্প শিক্ষিত মায়ের ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতের লেখা। জামাল পড়তে শুরু করলো,
“বাবা জামাল, আমার এক চোখের জন্য এই জীবনে অনেক মানুষের নিকট তোমাকে কথা শুনতে হয়েছে। পারলে ক্ষমা করে দিও। বাবা আমার, আমি এক চোখ নিয়ে জন্মাইনি। তুমি আমার পেটে থাকতে তোমার বাবা মারা যায়। তুমি আমার কোল জুড়ে আসলে। সব দুঃখ ভুলে গিয়ে তোমাকে ঘিরে আমার জীবনটাকে নতুনরূপে সাজিয়ে নিলাম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কি অদ্ভুত খেয়াল! চার কি পাঁচ বছরের সময় কোন এক গাছের ডালের খোঁচায় তোমার এক চোখ থেকে গলগলিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওরা আমাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললো। ক্ষেতি জমিজমা সব বিক্রি করে তোমাকে নিয়ে ঢাকার এক বড় হাসপাতালে যাই। ডাক্তাররা নানাভাবে পরীক্ষা করে জানালো, তুমি যে চোখে আঘাত পেয়েছ, সেটা আর কোনদিন ভালো হবে না। আমি বড় ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরে বললাম, বাবা, যেকোন কিছুর বিনিময়েই হোক আমার ছেলের চোখ ভালো করে দিন। ডাক্তার পরে জানাবেন বলে চলে গেলেন। দুইদিন পর এসে ডাক্তার সাহেব বললেন, তোমার ছেলের চোখ ভালো হবে। যদি কেই তার একটি চোখ দান করে। আর সেটা দিয়েই তোমার ছেলের চোখ ভালো করা যেতে পারে। আমি আবারও ডাক্তারের পায়ে জড়িয়ে বললাম, আমার একটি চোখ দিলে কি জামালের চোখ ভালো হবে না? ডাক্তার হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে কি যেন বললেন। আমি ডাক্তার সাহেবের কথা শুনতে পাইনি, তবে বুঝেছি তিনি রাজী হয়েছেন। কয়েকদিন পর অপারেশন করে আমার একটি চোখ নিয়ে তোমার চোট পাওয়া চোখকে ভালো করলেন। বাবা, আমিতো অনেক বছর দুই চোখে এই দুনিয়ার রূপ রঙ দেখেছি। কিন্তু তুমি আমার গর্ভের সন্তান হয়ে সারাজীবন এক চোখ দিয়ে কেন দেখবে! এক চোখা তোমার প্রতি মানুষের বিদ্বেষ কিভাবে সইবে তুমি? তারচেয়ে আমার মরে যাওয়াও ভালো। আল্লাহ্ তায়ালা’র অশেষ রহমত, তোমার একটি চোখের জন্য আমাকে দুঃখে মরতে হয়নি। শুধু নিজের একটি চোখ দিয়েছি মাত্র। আর এ কারনে কোনদিন কোন মানুষ তোমাকে এক চোখা, ভয়ানক বলে উপহাস করতে পারেনি। তোমার সুখের জন্য একটি চোখ কেন, আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক এক করে খুলে দিতে পারতাম তোমার এই মা- রহিমা বেগম। আমার শরীরেরই একটি অংশ তুমি। এই ঘটনার কথা তোমাকে কোনদিন জানার সুযোগ দেইনি পাছে তোমার কষ্ট হয়। ভালো থেকো, সুখে থেকো সোনা বাবা আমার। আবারও বলি, যদি পার এক চোখা মা’কে ক্ষমা করে দিয়ো। আমি যে পাপী। এক চোখা ডাইনীর মতো মায়ের জন্য তোমাকে কতকিছু সহ্য করতে হয়েছে।”
জামাল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। যেন পাথুরে এক মূর্তি- নিথর, নিস্তব্ধ। দু’চোখ দিয়ে শুধু বাঁধভাঙ্গা অশ্রুধারা।
....... ছায়া ........
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৪
আলমগির কবির বলেছেন: অসাধারন গল্প
১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৯
হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩২
আলমগির কবির বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২
হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: মা ...............।।