নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে খুঁজে ফিরি

হুয়ায়ুন কবির

হুয়ায়ুন কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশার প্রদীপ।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৪



সংসার বলতে পিতা-পুত্র এ দু'জনই। খুবই অল্প বয়সে মা মারা যাওয়ার পর পিতা-মাতা দু’জনের ভিন্ন আঙ্গিকের মায়া, আদর, ভালবাসার কোন ঘাটতিই রাখেননি বাবা।

সারাদিন দিনমজুরের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে যা পেতেন তা দিয়েই বাজার করতেন। নিজ হাতে রান্না করে রাতে বাপ, ব্যাটা একসাথে খেতে বসতো। সারাদিনে এই একবেলাই দু’জন একসাথে খেতেন। খাবারের অবশিষ্টাংশ রেখে দিতেন পরবর্তী সকাল আর দুপুরের খাবার জন্য। রাতের খাবারটা মোটামুটি চুপচাপ হয়ে যেত। পিতা, পুত্রের অব্যক্ত কথাগুলি চোখের ভাষায় বলা হয়ে যেত। বাবা কি এক ঘোরের মধ্যে থেকে মাঝে মাঝেই নিজের থালা থেকে একমুঠো খাবার ছেলের মুখে তুলে দিতেন। ঘোর কেটে গেলেই মাথাটা ঘুরিয়ে ফেলতেন; হয়তো লজ্জাটা আড়াল করতে।

তবে রাতের খাবারের সময় পিতা তার পুত্রকে শুধু একটা কথাই বলতেন, “আমার কষ্ট দেখে তোঁকে কষ্ট পেতে হবে না। তোঁকে যে অনেক বড় হতে হবে, অনেক বড়।” এসব কথা তিনি সাধারনত মাথা নিচু করেই বলতেন, যাতে বুকের গভীরের অদম্য কান্নার চাপে চোখের কোণে জমে উঠা জল দৃশ্যমান না হয়। ছোট ছেলে- বুঝেও নিশ্চুপ। মাঝে মাঝে ছেলেটির মন চায় পিতাকে জড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠে, বাবা আমি তোমাকে হতাশ করবোনা।

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, যুগ যায়। বাবা’র কঠোর পরিশ্রম আর ছেলের একনিষ্ঠ লেখাপড়া চলতে থাকে। ছেলে এখন পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রস্তুত। সন্তান বড় হয়েছে, মানুষ হয়েছে। ভালো বেতন, এখজন নিখাদ যুবক। ছেলে তার বাবাকে গ্রামের বাড়িতে একা না রেখে শহরে নিজের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে এলো। বাপ, ব্যাটার সংসার। আর ঘরের কাজকর্মের জন্য বাইরের একজন বয়স্ক মহিলা।

একদিন রাতের খাবারের জন্য ছেলে তার বাবাকে শহরের নামকরা এক রেস্তোরায় নিয়ে গেলো। রেস্তোরাটি আজ যেন একটু বেশিই জনাকীর্ণ। পিতাকে নিয়ে ছেলে একটি খালি টেবিলে বসে খাবার অর্ডার দিল। বাপ, ছেলে খাবার খাচ্ছে। বাবা বয়স্ক মানুষ। কাঁপা কাঁপা হাতে মুখে খাবার তুলতে গিয়ে খাবারের কিছু কিছু অংশ তাঁর জামায় পড়ে যাচ্ছে।

আশেপাশের টেবিল থেকে লোকজন পিতা-পুত্রের খাওয়া দেখছে আর মিটিমিটি হাসিতে উপভোগ করছে বৃদ্ধের কাণ্ডকারখানা। ছেলে আড়চোখে সব দেখছে, কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মিটিমিটি হাসিটা যখন শব্দের রূপ নিয়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করলো, তখন ছেলে নিজ হাতে তার পিতাকে খাওয়াতে শুরু করলো।

খাবার শেষে ওয়াশ রুমে নিয়ে বাবার জামায় লাগা খাবারের অংশগুলি খুব যত্নসহকারে পরিস্কার করে দিল। চশমাটি ভালভাবে আঁটকে দিয়ে পরিপাটি অবস্থায় আবার টেবিলে ফিরে আসলো।

পুরো ঘটনায় রেস্তোরাঁটি কবরের নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে। বিল দিয়ে ফিরে আসার সময়, জনৈক বয়স্ক ভদ্রলোক ছেলেটিকে ডেকে বললেন, বাবা, তোমার কি মনে হয়না তুমি কিছু ফেলে রেখে গেছ? উত্তরে ছেলেটি বলল, জ্বী না স্যার। আমি কিছু ফেলে যাইনি।

ভদ্রলোক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, হ্যাঁ বাবা, তুমি তোমার বয়সী ছেলেদের জন্য অনুকরনীয় শিক্ষা আর আমার মতো বৃদ্ধদের জন্য আশার জ্বলন্ত প্রদীপটা রেখে গেছো।

------- ছায়া -------

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫

হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: আশার প্রদীপ।

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩০

আলমগির কবির বলেছেন: আশার প্রদীপ এভাবেই কেউ না কেউ জ্বালিয়ে রাখবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.