নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে খুঁজে ফিরি

হুয়ায়ুন কবির

হুয়ায়ুন কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা-বাবা .....................।।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৬



মা-বাবা .....................।।
(হুমায়ুন কবির)

সোহেলের আজ ইন্টারভিউ। এমবিএ শেষ করার পর প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানির ম্যানেজার পদের জন্য বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করতেই আশ্চর্যজনকভাবে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পেয়ে গেলো। টেনশনতো একটু আছেই। জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ বলে কথা। সকাল দশটা থেকে ইন্টারভিউ। টেনশনে রাতটা নির্ঘুমই কেটে গেলো। প্রশ্নকারী কি প্রশ্ন করবেন, কেমন ব্যবহার করবেন এমনসব ভাবনাগুলি রাতের ঘুমটাকে মাটি করে দিলো। বিভিন্ন গল্প পড়ে ইন্টারভিউ সম্পর্কে অজানা একটা ভীতি আগে থেকেই ছিল। সোহেল সাধারন পরিবার থেকে বড় হওয়া একজন ছেলে। ইন্টারভিউতে গল্পের মতো করে প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরগুলি স্মার্টলি উত্তর দেবার মতো মানসিক মনোবল তার ভেতর তৈরি হয়নি।

সকাল ছয়টা থেকেই ছটফটানি শুরু হয়ে গেলো সোহেলের। তাড়াহুড়াটা এমন যেন ইন্টারভিউ অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। সোহেলের অবস্থা দেখে তার মেসের রুমমেট রসিকতা করে বলে উঠলো, কিরে তুইকি কাউকে নিয়ে পালিয়ে কাজী অফিসে যাচ্ছিস নাকি? আরে বাবা, এতো নার্ভাস হবার কিচ্ছু নেই। ইন্টারভিউ দেবার দরকার দে। চাকুরী যার হবার, তারটা অনেক আগেই হয়ে আছে। এইসব বহু দেখেছি। সোহেল মনে মনে ভাবছে, শালার ব্যাটা একটু সাহস দেবে দূরের কথা, উল্টো ভয় দেখাচ্ছে। অবশ্য রুমমেট ছামাদ মিয়ার পোড় খাওয়া জীবনটা এসব বিষয়ে তিক্ততায় ভরা।

যাক সময়মতোই ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হলো। বোর্ড প্রধানকে বেশ হাসিখুশি আর অমায়িক মনে হলো। পরিবেশটা আন্তরিক মনে হওয়াতে নিজেকে অনেকটাই হালকা লাগছে। প্রশ্নের উত্তরগুলি সোহেল মোটামুটি ভালভাবেই দিতে পারলো। সময় পার হবার সাথে সাথে আত্মবিশ্বাসের পারদটাও উর্ধ্বমুখী। প্রশ্নপর্ব শেষ হবার পর বোর্ড প্রধান তার ফাইলটি অনেকক্ষণ ধরে আবারও দেখলেন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল খুবই ভালো। প্রশ্নের উত্তরগুলিও ঠিকঠাক দিয়েছে। কিন্তু কি যেন একটা ফাঁক রয়ে গেলো! অনেকক্ষণ পর বোর্ড প্রধান (চাকুরিদাতা কোম্পানির এম.ডি.) হঠাৎ বলে উঠলেন, আপনার বাবা-মা কি করেন?

সোহেল বিব্রত কণ্ঠে বলল, আমার মা একজন গৃহিণী, সংসার পরিচালনা, গরু লালন পালন করেন। আর বাবা কৃষিকাজ করেন।

বোর্ড প্রধান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আপনি আজ গ্রামের বাড়িতে যাবেন। আচ্ছা, আপনার বাড়ি কতদূর? সোহেল উত্তর দিলো, আমার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। আমি ঢাকাতে এক মেসে থাকি।

ঠিক আছে, আজকেই আপনি গ্রামের বাড়িতে রওনা দেবেন। ওখানে গিয়ে আপনার বাবা-মা’র হাতগুলি খুব ভালো করে ধুয়ে দেবেন। আর আগামী সপ্তাহের এই দিন আমার সাথে দেখা করবেন। এখন আপনি আসুন।

জ্বী আচ্ছা বলে সোহেল বিব্রত ও হতাশ হয়ে বের হয়ে আসলো। নির্দেশ মান্য করার জন্য না অন্য কোন রহস্যময় কারনে ঐ রাতেই সোহেল গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

বহুদিন পর ছেলে বাড়ি ফেরায় বাবা-মা যেন হাতে চাঁদ পেলেন। চারিদিকে খুশির আমেজ। সন্ধ্যায় সোহেল তার বাবা-মা কে ডেকে নিজে তাঁদের মাঝখানে বসলো। পাঁশে পরিষ্কার পানি ও নূতন গামছা। প্রথমেই সে মায়ের দু’টি হাত ধরে ভেজা গামছা দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলো। এই প্রথম অনুভব করলো মায়ের হাতটি কেমন যেন রুক্ষ, খসখসে। হাতের তালুর এখানে সেখানে কিছু ক্ষতচিহ্ন। মা’কে ক্ষতের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, বাবারে, লাকড়ি দিয়ে রাঁধতে গিয়ে মাঝে মাঝে খোঁচা লাগে। এ এমন কিছু না। সোহেল খুব যত্ন করে মায়ের হাত পরিষ্কার করে দিলো। পরিষ্কার করতে গিয়ে ক্ষতের উপর ভেজা গামছা পরতেই খুব নীচু কণ্ঠে ‘আহ’ করে উঠলেন হামিদা বানু। বাবা, ফজল মিয়া’র হাত পরিষ্কার করতে গিয়ে একই অবস্থা। খসখসে হাত, এখানে সেখানে কাঁচা ক্ষত চিহ্ন। সে রাতে খাওয়া শেষে বাবা, মা ও ছেলে তিনজন মিলে প্রচুর গল্প করলো।

পরদিন সকালে বাবা-মা দু’জনের কঠোর নিষেধ উপেক্ষা করে ক্ষেতে গিয়ে বাবার সাথে প্রায় সমান তালে কাজ করে দুপুরে হামিদা বেগমের দেয়া পানিভাত, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ বাপ, বেটা ঘরে ফিরে আসলো। বাড়িতে থাকা তিনটি দিন কি এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্য দিয়ে একইভাবে একই কাজ করে গেলো সোহেল।

নির্দিষ্ট সময় বোর্ড প্রধান তথা কোম্পানির এম.ডি. সাহেবের কামরায় প্রবেশ করলো। বিশাল কামরায় এম.ডি. সাহেব সম্পূর্ণ একা, যেন মহা সাগরে ভাসমান ছোট একটা ডিঙ্গি। চোখগুলি কেমন যেন উদাস। বোর্ড প্রধান মৃদু হেসে সোহেলকে বসতে বললেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার, এ কয়দিন কেমন কাটলো? নূতন কোন অভিজ্ঞতা হয়েছে নাকি?

উত্তরে সোহেল বলল, “আমি প্রতিদিন আমার বাবা-মায়ের হাতগুলি পরিষ্কার করে দিয়েছি। ক্ষেতে গিয়ে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করেছি। ঐ চারটি হাত মাত্র তিনটি দিনেই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আমার বাবা-মায়ের জন্যই আজ ‘এই আমি’। তাঁদের খসখসে, রুক্ষ আর ক্ষতচিহ্ন ভরা হাত দিয়ে যা কিছু অর্জন সেটা শুধুমাত্র আমার জন্যই ব্যয় করেছেন। বাবা-মা ছাড়া আমি একটা শূন্য মানুষ। এই তিনটি দিন আমাকে শিক্ষা দিয়েছে একজন সন্তানকে বড় করতে, তার সাফল্যের জন্য বাবা-মা কি যন্ত্রণাটাই না হাসিমুখে মেনে নেন। স্যার, আমার চাকুরী হবে কি হবে না সেটা জানতে আপনার কাছে আসিনি। আমি এসেছি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে। কারন আপনার সেই নির্দেশটা না পেলে হয়তো কোনদিনই বাবা-মায়ের আবেগ, অনুভূতি, ত্যাগ, ভালবাসাটা উপলব্দি করতে পারতাম না।” কথাগুলি একটানা বলতে বলতে সোহেল শব্দহীন কান্নায় ভেঙে পড়লো। দু’চোখে বাঁধভাঙ্গা কান্নার জল- শব্দহীন।

এসি চালানো রুমের শীতল শব্দহীন কামরাটি আরও গভীর নিস্তব্ধতায় ডুবে গেলো। কতক্ষণ এভাবে গভীর নিস্তব্ধতা বিরাজমান ছিল দু’জনের কেউই টের পাননি। বোর্ড প্রধান এর কথায় নিস্তব্ধতার অবসান হলো। তিনি বললেন, সোহেল সাহেব, যে লোক তার সাফল্যের জন্য অন্যের অবদান বুঝতে পারে এমন একজনকেই এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসাবে রাখতে চেয়েছি- যে বুঝতে পারবে অন্যান্য শ্রমিক-কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রমেই এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতি। এম.ডি. সাহেব নির্মল হাসিমাখা মুখে সোহেলকে জিজ্ঞেস করলেন, “কবে থেকে চাকুরীতে জয়েন করছেন সোহেল সাহেব? বেতন কতো দিতে হবে বলবেন না।”

(ছায়া)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: মা-বাবা .....................।।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

আলমগির কবির বলেছেন: চমৎকার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.