![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কানার হাটবাজার থেকে বেহুদা প্যাঁচাল-
(জার্নি টু কক্সবাজার)
"না, না, নাআআআ ........................ আমি খামুনাআআআআআ।"
সাড়ে তিন থেকে চার বছর বয়সী পিচ্চিটার তীক্ষ্ণ প্রতিবাদী চিৎকারে ঠাসা রেস্তোরাঁর সবাই এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। মুখের কাছে থাবা ভরতি খাবার থমকে যায়, পানির গ্লাসের পানির পরিমাণ স্থির থাকে।
কিছুক্ষন পরেই সব স্বাভাবিক। সবাই গোগ্রাসে গিলতে লাগলেন।
বিব্রত মা মাথাটা একটু নিচু করলেন- হয়তো লজ্জা বা অস্বস্তিতে। বয়স আর কত হবে- ২৩ কি ২৪ বছর। দাঁড়ানো অবস্থাতেই থালায় রাখা ভাতের সাথে ডাল মাখাতে মাখাতে আমাদের সম্মুখের খালি চেয়ার দু’টির দিকে এগুতে লাগলেন। উলটোদিকে বসা আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন। দৃষ্টিতে অনুমতি পাওয়ার আবেদন। অনুমতি চাইবার দরকার ছিলনা। আমিও চোখের ভাষায় তাকে নিশ্চিন্ত করার চেষ্টা করলাম। কারন চেয়ার দু’টি আমাদের দলের কারো জন্য নির্ধারিত নয়। সবাই যার যার দখলী চেয়ারে বসে আছে।
তিনি বসলেন। বসার ভঙ্গিতে এখনও খানিকটা অস্বস্তি। ফুটফুটে বাচ্চাটি ওর পিতার কোলে বসে খুনসুটিতে ব্যস্ত। বাপ হাত মুঠো করে মেয়ের নাকে আস্তে করে ঢুঁ দিলেন, এমন করে চিৎকার করতে হয়, বোকা মেয়ে! বাচ্চাটা কলকল করে হেসে উঠলো। বাপ কা বেটি, শুধু হেসেই পিতার পরিহাসের জবাব দেবে? এটা কোনভাবেই হতে দেয়া যায় না। দুই হাত বাড়িয়ে পিতার শক্ত গাল দু’টো জোরে খামচে ধরে ফেললো। এক্কেবারে কচ্ছপ কামড়ের মতো। খামচে ধরে আছেতো আছেই। খামচির জোর বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পিচ্চিটা দাঁতে দাঁত ঘষছে। তুলতুলে গালগুলি রক্তাভ হয়ে উঠেছে। এখানে জিঘাংসা খোঁজার কোন অর্থই নেই, শুধুই খেলা- জন্মদাতার সাথে আত্মজের ভালবাসার নিষ্কলুষ, পবিত্র খেলা।
পিতা মেয়েকে মায়ের পাশে টেবিলের উপর বসালেন। মা’কে প্লেট থেকে ভাত উঠাতে দেখে আবারও চিৎকারের জন্য প্রস্তুত হলেন মহামতি পিচ্চি। আমরা যারা কাছাকাছি বসা, সকলেই অদ্ভুত এক বেপরোয়া ইচ্ছে নিয়ে প্রতিবাদের তীক্ষ্ণা আওয়াজটা শুনার অপেক্ষায় ।
মা বললেন- সোনা আমার, দেখ আঙ্কেলরা সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। যদি চিৎকার কর, আর না খাও তাহলে সবাই তোমাকে পচা বলবে। পিচ্চিটা এক লহমায় আমাদের দিকে তাকিয়ে ভেংচির মতো মুখ করল। ভাবখানা এমন যেন, এইসব আবাল পোলাপান আবার কি বলবে, হুহ!
মা মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে চাইলেন। চিৎকার না দিলেও বাচ্চাটা চিতা বাঘের ক্ষিপ্রতায় ৪৫ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘাড় ঘুড়িয়ে নিল। বার কয়েক চেষ্টার বিফলতায় অসহায় মা এবার তার মোক্ষম অস্রটা বের করলেন। বললেন, ঐ যে জানালার বাইরে অন্ধকারে বাউউ আছে। তাড়াতাড়ি খাও। খেয়েদেয়ে তাড়াতাড়ি এখান থেকে যেতে হবে। নইলে বাউউ এসে কাম্মা দিবে। রেডি, ওয়ান, টু, থ্রি, এইতো লক্ষ্মী মা আমার, কি সুন্দর করে খায়। এইতো, আরেকবার খেল সোনামণি, লক্ষ্মী পাখি আমার।
আমি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছি। অপূর্ব, অপার্থিব ভালবাসার এমন দৃশ্য এক জীবনে বহুবার দেখার সৌভাগ্য কারো হয় না। মহিলা হয়তো খানিকটা লজ্জা পেলেন। আপন মনেই বলতে লাগলেন, কাল রাত বারোটায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছি। কক্সবাজার আসতে আসতে বিকাল চারটা, আর এখন খেতে এসেছি রাত এগারটায়। আমি আশ্বাসের ভঙ্গিতে হাসলাম, যাতে লজ্জা কাটিয়ে সহজভাবে বাচ্চাটাকে খাওয়াতে পারেন। এর মধ্যে অনেকেই চেয়ারের সামনে এসে বসতে না পেরে বিরক্তিতে ভ্রুকুটি করে চলে গেলেন। রেস্তোরাঁতে সেই মুহূর্তে আমাদের সামনের দু’টি মাত্র চেয়ারই খালি ছিল।
বেশ সময় নিয়ে, তোয়াজ, ভয়, আদর দিয়ে খাওয়ার পালা শেষ হয়। বাচ্চার চোখে চোখ পড়তেই ওর চোখে অপার্থিব আনন্দের ঢেউটা দেখার সুযোগ হলো। সুন্দর কোনকিছুই দীর্ঘক্ষণ সহ্য করা যায় না। অনেকক্ষণ ধরে সুন্দরের মাঝে বসে আছি। পরিবেশটা নষ্ট করতে মন চাইছে। ভিতর থেকে বদস্বভাবের কুৎসিত জানোয়ারটা তাড়া দিচ্ছে; কিশোর বয়সে আট/দশ জন দল বেঁধে রাত-বিরাতে কুকুর দেখলে যেভাবে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলতাম, সেভাবে বিকটস্বরে চিৎকার দিলাম-
'বাউউউউউউউউ উউউউউউউউউউউউউউ ..................।।:
তীব্র চিৎকারটা কণ্ঠ ছুঁয়ে মুখ দিয়ে বের হলো না। মনের ভিতর ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে লাগলো,
'বাউউউউউউউউ উউউউউউউউউউউউউউ ..............., বাউউউউউউউউ উউউউউউউউউউউউউউ ...............।।'
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫০
হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: জার্নি টু কক্সবাজার