নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে খুঁজে ফিরি

হুয়ায়ুন কবির

হুয়ায়ুন কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ি ফেরা (কক্সবাজার থেকে)-

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৫৭




বাড়ি ফেরা (কক্সবাজার থেকে)-
(হুমায়ুন কবির)

সকাল ১০.১৫। বাস কোম্পানির দ্বিতীয় স্টপেজ। রিটার্ন টিকেট দুর্লভ হবার কারনে তের জনের দল থেকে ‘ওরা এগারোজন’ এক বাসে, আর আমাদের দুই লস্করকে (মহাত্মনদের দেয়া নামকরণ!) এক বাসে যেতে হচ্ছে। প্রথম বাসটি ‘ওরা এগারজন’ কে নিয়ে রওনা দেবার ঠিক পনের মিনিটের মাথায় আমাদের জন্য নির্ধারিত বাস ওয়েটিং রুমের সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। বাস ড্রাইভারের সময়ানুবর্তী মুগ্ধ করার মতো। ‘ইয়াহু’ বলে জোরে চিৎকার দেয়া উচিৎ। চিৎকারটা দেব কিনা ভাবছি। ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটার আগেই বয়স্ক এবং রাগী চেহারার একজন মানুষের দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকটা ভয়ই পেলাম। লোকটা ওয়েটিং রুমে ঢুকার পর থেকেই আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লোকটার চেহারা, দৈহিক গঠন, চলাফেরার ভঙ্গিতে ভয় জাগানিয়া কিছু আছে হয়ত। ভয়ের চাপে ‘মা’রে, বাবা’রে’ শব্ধ দু’টি গলায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছে। অনেক কষ্টে ওনাদের বাইরে বের হতে বাঁধা দেবার পাশাপাশি ক্যোঁৎ করে গিলে ফেললাম। আসলে দৃষ্টিটা মোটেই প্রেমময় নয়- একেবারে বিষদৃষ্টি। যুতসই করে তাকালে বিষে আমার ক্ষীণকায় শরীরটা এতক্ষণে নীল হয়ে যাবার কথা। মুখে ফেনা টেনা তুলে চিৎপটাং হয়ে থাকতাম।

বিষদৃষ্টির কারণটা কি? কারণ খুঁজতে গিয়ে অস্বস্তির ছাই উড়িয়ে সারা শরীর, মন মাখামাখি করে ফেললাম। রতন’কে খুঁজে পেলাম না। একবার মনে হয়েছিল আধঘণ্টায় তিন তিনটা সিগারেট ভস্ম করতে দেখে তিনি বিরক্ত হয়েছেন। কিন্তু না, তিনিও এর মধ্যে দু’টি সিগারেট শেষ করেছেন। বোতল বন্ধুর মতো সিগারেট খোরদের মধ্যেও একধরণের অদৃশ্য আত্মিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়। বয়সের ব্যাপারটা সেখানে অচ্ছুৎ। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে অলিখিত সংবিধানের একটা ধারা অবশ্যই মেনে চলতে হয়। আর সেটা হচ্ছে সামাজিক অবস্থানের ব্যবধানটা বড়জোর আঠার/বিশ হতে হবে। একটুও বেশি হওয়া চলবে না। বেশির কারনে পেশীর প্রদর্শন ও কুর্দন হবার প্রচণ্ড সম্ভাবনা থেকে যায়। আমার ধূমপানের ব্যাপারটা উনি যদি মেনে না নেন, সেক্ষেত্রে উনার আপত্তির কারণটা যথার্থ। বিষয়টি নিয়ে আরেকটু গভীরে ডুব দেবার চেষ্টা করলাম। আমার অপরিচ্ছন্ন পরিচ্ছদ বা কাটা চেইনের একটি মাত্র ট্রাভেল ব্যাগ দায়ী নাতো? উঁহু, মিলছে না। অন্য কিছু, অন্যকোন ব্যাপার আছে- যেটা আমার মোটা মাথায় ঢুকছে না। আচ্ছা, তাঁর সাথে কোন সুন্দরী তরুণী বা যুবতী মেয়ে নেইতো- মেয়ে বা নাতনী সম্পর্কের কেউ। মনের অজান্তেই হয়তোবা তার বা তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সে কারণেই কি আমার দিকে এমন কঠোর দৃষ্টির ঘের। চারিদিকে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে হতাশ হলাম। নাহ, এমন ক্ষতিকারক কোন তরুণী বা যুবতী মহিলা দৃষ্টিগোচর হলো না, যাদের দেখে পারিপার্শ্বিকতা ভুলে গিয়ে নিজেকে হুমকির মুখে ফেলে দেবো।

তিনি তার স্ত্রীকে বাসে উঠিয়ে বাসের লাগেজ স্টোরে বিশাল দু’টি ব্যাগ ঢুকানোর তদারকিতে আছেন। উনার পর আমার পালা। ট্যাগ লাগিয়ে হেল্পারকে আমার ক্ষুদ্র ব্যাগটি রাখতে দিলাম। একটু সরে গিয়ে উনি আমার কার্যকলাপের দিকে পলকহীন কঠিন চোখে তাকিয়ে আছেন। একটা লোক সারাক্ষণ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে কাঁহাতক আর ভাল লাগে। মনে মনে বলি, বুড়া পাঁঠা, তুই কি মনে করেছিস, আমি চোর, আমি তোর জিনিসপত্র চুরি করব! তোর জিনিসপত্রের উপর আমি ...............।। মন চাইছে লোকটার অস্বাভিক ভারী নিতম্বের উপর কষে একটা লাথি মারি। ক্যাঁক শব্দটা মনে হয় দুঃখ ভুলানিয়া হবে। একবার চড় মারার ইচ্ছেটাও চাগিয়ে ছিল, কিন্তু সেটা মোটেই সম্ভব না। লোকটা বিরাট লম্বা। চড় মাড়তে হলে আমাকে হাই জাম্প দিতে হবে। আমিতো আর তামিল ছবির নায়ক না- সব অসম্ভবকে অবলীলায় সম্ভব করে ফেলবো। এক লাফ মেরেই ধিরিম ধারিম লাথি, ঘুষিতে বিশালদেহী ভিলেনদের নাক, মুখ থেঁতা ভোঁতা করে দেবো। অতি সাধারনের স্বাভাবিক আচরণটাই করলাম। মাথা থেকে মারামারি, ধরাধরির পরিকল্পনাগুলো ঝেড়ে ফেললাম। সত্য বলতে কি, আমরা যা ভাবি, তা সবসময় করতে পারিনা। পারিবারিক সংস্কার বা পরিবেশের প্রভাব থেকে বের হওয়া বড় কঠিন। চুপচাপ মেকি একটা মিচকি হাসি ঝুলিয়ে বাসের দরজার প্রবেশ পথের দিকে এগুতে লাগলাম। আমার সঙ্গী আমার সাথেই আছে। ওর ভাবসাবে ব্যাপক বিনোদনের উপলব্দিটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি।

নাম না জানা রাগী লোকটা বাসে উঠে সামনের সিটের পরের সারিতে ওনার স্ত্রীর পাশে বসলেন। আমাদের সীট দুটি শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় সারিতে। সঙ্গীজন আমার আগেই বাসে উঠেছেন। পিছনে আমি। হ্যান্ডস আপ- নির্ধারিত সীটে পৌঁছানোর আগেই থাবড়া মেরে একটা শব্দ কানের ভিতর ঢুঁকে মগজে প্রচণ্ড ঝাঁকি দিল। দেখলাম, আমার সফরসঙ্গী দু’হাত উপরে তুলে ধরেছেন। উনি মাথাটা একটু ঘুরাতেই ওনার হাস্যমুখ নজরে এলো। আজিব তো! হ্যান্ডস আপ করে বগলের ঝাঁঝালো বদগন্ধ চুটিয়ে ছুটিয়ে যাচ্ছেন- এসবের মধ্যে আবার চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গে দেয়া কেনরে ভাই? ব্যাপারটা বুঝতে একটু সামনে এগুলাম। এগিয়ে যা দেখলাম তাতে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারলাম না। আট/নয় বছরের একটা বাচ্চা ছেলে পা দু’টি ওয়েস্টার্ন ছবির নায়কদের মতো ফুট খানেক ফাঁকা করে একটু কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাতের নয় আঙ্গুল মুঠো করে ধরে দশম আঙ্গুল, অর্থাৎ ডান হাতের তর্জনীটা পিস্তলের নল বানিয়ে আমার সফর সঙ্গীর দিকে তাক করে আছে পিচ্চিটা। পাশেই ওর বাবা-মা নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। আমার সফর সঙ্গী হাসিমুখে বিনীত ভঙ্গীতে ওয়েস্টার্ন হিরোকে কি কি যেন বুঝালেন। খটমট অবস্থায় অবস্থানের কারনে ওদের মধ্যে কি কি কথা হলো সেটা শুনতে পেলাম না। যতটুকু চিনি, আমার সফরসঙ্গী বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলকেই প্রভাবিত করতে পারার দুর্লভ প্রতিভার অধিকারী একজন বিশেষায়িত ব্যক্তি। ওনার প্রচেষ্টায় ওয়েস্টার্ন হিরো সাইড দিলেন। আমরা আগবাড়ানোর মতো রাস্তার দখল পেলাম এবং নিজ নিজ আসনে আসন গ্রহন করলাম। সফরসঙ্গী জানালার পাশে আর আমি তার বাঁ-পাশে। আমাদের আসনগ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় ওয়েস্টার্ন হিরো পরখ করলেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে। বুঝতে পারছি, দীর্ঘ যাত্রায় এই পিচ্চি পোলার কারনে কপালে বহুত ভোগান্তি আছে। কারন, ওদের সীটটা আমাদের ঠিক সামনেই।

বাস চলতে শুরু করে। সফরসঙ্গী জানালার পাশের সীটে বসে আছেন। দিনের বেলার ভ্রমণে এসি বাসের সব জানালা ভারী পর্দায় ঢাকা। আশেপাশে লক্ষ্য করে যা বুঝা গেল, সেটা হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ছবির নায়কের সাথে ওর শুধু ওর বাবা-মা ই নন; খালা-খালু, খালাতো ভাই-বোন মিলিয়ে ওনাদের সংখ্যাটা প্রায় এক ডজন।

প্রাণপণে ঘুমহীন গত রাতের ক্লান্তিটা মুছে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। মান্না দে সাহেবের “মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, মনে হয় .........” গানের আবেশ আর এসির ঠাণ্ডা বাতাসে অল্পক্ষণেই ঘুমিয়ে পড়ি। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি কে জানে! ‘বাব্বা, বাব্বা, বাস থেমে গেছে, আমি পোলাও খামু- সবজি খিচুড়ি টাইপের কিশোর কণ্ঠের চিৎকারে ধড়মড় করে উঠে পড়ি। যতটুকু বুঝতে পারছি, গ্রামে বড় হওয়া শহরে বসবাসকারী বাবা-মায়ের ছেলেকে শুদ্ধভাবে অর্থাৎ ভদ্র ভাষা শিক্ষা দেবার প্রাণপণ চেষ্টাটা এখনও পরিপূর্ণ সফলতার মুখ দেখেনি। ওনাদের ব্যর্থতায় নিজের অভদ্র/গেঁয়ো ভাষাকে আরও বেশি ভালবেসে ফেললাম। বাস থেকে নেমে দেখি আমাদের “ওরা এগারোজন” বহনকারী বাসটি রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়ানো। ওনাদের দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ। হাতে বেশ কিছু সময় আছে। “ওরা এগারোজন” এর মধ্যে দু’একজন কে ঠোঁটে, মুখে ভেংচির ভাব ফুটিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। অভাগা দু’জনের দিকে তাকাবার সময় নেই তাঁদের। অবশ্য বাকি জনেরা অবহেলার যন্ত্রণাটা Moove এর ডলা দিয়ে সারিয়ে দিলেন। কাঁধে হাত রেখে যাত্রাপথে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। আন্তরিকতার বহমান রস তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলাম। আন্তরিকতা নামক জিনিসটা যে অতি দুর্লভ!

“ওরা এগারোজন” এর বাসটা ছেড়ে যাবার পর রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। ছোটবেলা থেকে কিশোর বয়সের শেষ সময় পর্যন্ত আমরা দুই লস্কর (!) একসাথে যাযাবর টাইপ অনেক সময় কাটিয়েছি। মাঝখানের বহু বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর ঘটনাক্রমে একসাথে ভ্রমণটা আনন্দেই কাটবে বলে বিশ্বাস। যাই হোক, রেস্তোরাঁর বেয়ারা কাছে আসতেই তিনটা নান রুটি আর এক প্লেট সবজির অর্ডার করি। আমাদের অর্ডার শুনে শালার বেটা এমন ভঙ্গিতে তাকালো, মনে হয় যেন ওর কাছে মাগনা এক চাঙ্গাড়ি ঘাস চেয়েছি। আমরা দুই ছাগল আয়েশ করে ঘাস চিবাবো। এত বড় রেস্তোরাঁয় দামি দামি, কেতাদুরস্ত কাস্টমারদের সামনে দুই দুইটা ছাগল চাঙ্গাড়ি থেকে ঘাস খাবে ব্যাপারটা মোটেই মেনে নেয়া যায় না, নেহিইই, কাভি নেহি।

পাশের বড় টেবিলে ওয়েস্টার্ন হিরো, সবজি খিচুড়ি ভাষাতত্ত্ববিদ এগারো/বারো বছর বয়সী কিশোর সহ দশজনের বিরাট একটি দল। হিসাবের ফলাফলে ২ কম হওয়াতে মনটা একটু খারাপই হলো। দলটির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, যার সন্তান সবজি খিচুড়ি ভাষায় কথা বলে তাকে পরিবারের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ববান মনে হলো। পিচ্চি-পাচ্চিদের নানা আবদার রক্ষা করতে নিজের খাবার টেবিলে রেখে রেস্তোরাঁর এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছেন। বায়নার যে কত ধরন আর যন্ত্রণা সেটা সেদিন একটু ভালমতো অনুভব করতে পারলাম। ওয়েটারের অসহনীয় আচরণ ভুলে অন্তর মাঝে ভদ্রলোকের জন্য আহা উঁহু জাতীয় শব্ধের পদচারনা অনুভব করছি- আমার জুতা নেই, আর এ ভদ্রলোকের তো দু’টি পা’ই নেই জাতীয় সহানুভূতি।

রুটি, সবজি খেতে খেতে নজর পড়লো ওয়েস্টার্ন হিরোর দিকে। নায়ক সাহেব দুই হাত দিয়ে ধরে বেশ বড় সাইজের বার্গার কামড়ানোর চেষ্টা করছেন। চোখে চোখ পড়তেই বার্গার সরিয়ে বিশাল হা করা মুখ থেকে জিহ্বাটা যতটা সম্ভব বের করে ভেংচি কাটলেন। বেয়ারার বেয়াড়া আচরণের জ্বালা, পরে ভদ্রলোকের প্রতি সহানুভূতির সুখানুভব, তারপর পিচ্চি পোলার ত্যাঁদড়ামির যন্ত্রণা- কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়। আমি ওর চোখে চোখ রেখে ডান হাতের তর্জনীটা ওর প্যান্টের দিকে তাক করলাম। ও নীচের দিকে তাকিয়ে যেই না প্যান্ট ঢাকতে গেল, ওমনি হাত থেকে বার্গারটি প্রচণ্ড বেগে ভূপাতিত হলো। বিষয়টি পরিবারটির অনেকের গোচরে আসলেও ছেলের ত্যাঁদড়ামি, বাঁদরামির জন্য বিন্দুমাত্র লজ্জিত হতে দেখা গেলোনা কাউকে। ছেলেটার মা’তো প্রথম থেকেই এসব খেয়াল করছেন। তার ফর্সা গালটা যদি শরমে সামান্য লাল আভা ছড়াতো, সেটাকে না হয় স্বান্তনা বা স্বস্তি হিসাবে মেনে নিতাম। ভাবসাবে মনে হচ্ছে- এতো অল্প বয়সী পুত্রধনের বেশি বেশি স্মার্ট হয়ে যাওয়াতে আম্মাজান যারপরনাই প্রীত।

রেস্তোরাঁর মাইক থেকে সুপারভাইজার সাহেব বাসে উঠার জন্য তাগাদা দিতে লাগলেন। খাবার শেষে সিগারেট না খেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাসে উঠা অসম্ভব। সফরসঙ্গীকে বিল মেটানোর দায়িত্ব দিয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে সিগারেট ফুঁকতে লাগলাম। দ্রুত একটা, দু’টা শেষ করে তিন নম্বরটা ধরাতে গিয়ে দেখি লোকজন বাসে উঠা শুরু করে দিয়েছে। লম্বা দুই টান দিয়ে অর্ধাঅর্ধি সিগারেটের দিকে বিমর্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই মনে হলো- বিচ্ছেদের দৃষ্টিতে তাকানোতে সময়টা নষ্ট না করে আরও দু’টা টান দিলে কি এমন ক্ষতি হতো! যতোই চিন্তা করছি, নিকোটিনের চাহিদাটা আরও বেশি বেশি অনুভব করছি। কিচ্ছু করার নেই। চলছে গাড়ি মহাখালী।

বাসে উঠতে গিয়ে সেই বয়স্ক এবং রাগী লোকটির মুখোমুখি হলাম। মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। আমার দিকে তার অগ্নি দৃষ্টিটা এতোটুকু মলিন হচ্ছে না কেন? মনে মনে বলি- ভাইরে, আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ির সীমানার মধ্যে যে গাব গাছটির জন্য ঝামেলা বেঁধে আছে, ওটা বাড়ি ফিরে গিয়েই কুড়াল দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে গাঙ্গে ভাসিয়ে দেব। শুধু একটা গাব গাছের ডাল সবসময় হাতে রাখবো। একবার জোরে লাথি মারার প্রতিবাদস্বরূপ যে কুত্তাটা আপনার বাড়ির সামনে সারাক্ষণ ঘেই ঘেউ করে ওটাকে গাব গাছের লাঠি দিয়ে কুত্তামারা মাইর দেবো। ক্ষমা করুন হুজুর, আর কিছুক্ষন আপনার অগ্নিদৃষ্টি আমার উপর নিক্ষিপ্ত হতে থাকলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবো। শালার, মানুষ সারাক্ষণ এমনতর দৃষ্টি ধরে রাখে কিভাবে? আর আমাকেই কেন বলির পাঁঠা বানাবেন, এক কোপে ধড়টা ধরণীতে নিক্ষেপ করে বীর বাহাদুর হতে চাইবেন?

দাঁড়িয়ে থেকে একবার দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে যে, লোকটা তার পাশে বসা স্ত্রীর দিকেও সারাক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকেন কিনা? সম্ভব হলো না। পিছনের লোকদের ঠ্যালা, গুঁতা খেতে খেতে আমার নির্ধারিত সিটের দিকে অনিচ্ছায় এগুতে লাগলাম। সামনের সিট এখনও খালি। ওয়েস্টার্ন হিরোর আর তার দলটা এখনও বাসে উঠেনি। ওনারা ছাড়া সবগুলি সিটই ভরে গেছে। অনেককে বিরক্তপূর্ণ মন্তব্য বলতে শুনা গেলো- ‘রাক্ষস নাকি, খেতে এতক্ষণ লাগে। রেস্তোরাঁর সব খাবার শেষ করে আসবে নাকি?”

এর মধ্যেই গান বেজে উঠলো। উঠতি গায়ক-গায়িকা ডুয়েট গাইছেন। গায়কীর ঢং শুনে মনে হচ্ছে ওনারা একই তাল, একই লয়ে হলরুমে বসে হাত-পা ছড়িয়ে কিছু একটা বলতে চাইছেন। গাতক-গাতকীর কণ্ঠের চেয়ে ড্রামের ডেব ডেব ডেব আর কীবোর্ডের প্যাঁ প্যাঁ পোঁ আওয়াজটাই কানে বাজছে। কই মান্না দে সাহেবের “মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় .........” মায়ার আবেশ, আর কই ডেব ডেব ডেব আর কীবোর্ডের প্যাঁ প্যাঁ পোঁ শব্দের যন্ত্রণা। একবার সুপারভাইজারকে চেঁচিয়ে বলতে চাচ্ছিলাম, “বন্ধ করেন আপনার “ডেব ডেব ডেব আর প্যাঁ প্যাঁ পোঁ।” বলে কি লাভ? অনেকেই আনন্দচিত্তে সুরাস্বাদন অথবা বাদ্য-বাজনার ডেব ডেব ডেব আর কীবোর্ডের প্যাঁ প্যাঁ পোঁ তে মজে গেছেন। এর চেয়ে আরামের একটা ঘুম দেয়া যাক।

সমুদ্র দর্শনের স্মৃতি চাগিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করতে লাগলাম। আমাদের হোটেলটা একটু দূরে হওয়ায় সমুদ্রের বিশাল বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বেশ খানিকটা হাঁটতে হয়। মোটামুটি লম্বা ছুটিতে দুনিয়ার মানুষজন সমুদ্র সৈকতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। হাঁটতে হাঁটতে মানুষের গিজগিজে ভিড় দেখছি। কই আমার সমুদ্র? শুধু মানুষের মাথা আর মাথা।

সমুদ্রের কাছে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি- আমার প্রাণের সমুদ্র। সাঁতরে সমুদ্রের মাঝখানে চলে যেতে চাইছি। কোন এক মহিলা কণ্ঠ চিৎকার করছে- লোকটা তো ডুবে যাবে? আমার সফরসঙ্গীর মতো একটা কণ্ঠ বলে উঠলো- না, এই বেটা ডুববে না। আমি সাঁতরে যাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচণ্ড অবসাদ আমার সমস্ত অস্তিত্বকে গ্রাস করা শুরু করে দেয়। অবসাদের এই প্রচণ্ডতাতেও কি যে আনন্দ! আমি যে আমার প্রাণের সমুদ্র সন্তরণে ব্যস্ত। না সাঁতরে নিজেকে শুধু ভাসিয়ে রাখছি। বেশি দূর যাইনি। সমুদ্রের ঢেউগুলি আমাকে ঠেলে ঠেলে তীরে ভিড় করে থাকা স্বজাতির কাছে ফেরত পাঠাচ্ছে। কেমন ঘুম ঘুম লাগছে। ভেসে ভেসে কি ঘুমানো যায়? প্রায় আচ্ছন্নের মতো হয়ে পড়েছি। তীরটাও খুব নিকটে এসে গেছে। মানুষজনের আনন্দ, চিৎকার ভেসে আসছে- ‘এই, এমনে লাফ দে, তাহলে ছবিটা ভালো আসবে। আরে বাবা, আলোর দিকে মুখ করে তাকা, নাহলে তো চেহারাটা স্পষ্ট আসবে না।’ এরা কি সমুদ্র দেখবে বলে এসেছে, নাকি ফটো সেশনের জন্য দীর্ঘ ক্লান্তিকর পথ পেড়িয়ে এখানে আসা? এমনি সময় কি একটা যেন ‘মিয়াও’ করে উঠলো। সমুদ্রের মধ্যে বিড়াল কি করছে? আবার ‘মিয়াও, ‘মিয়াও’ করে ডাক চিৎকার করছে? ব্যাপারটা কি? শান্ত সমুদ্র। গর্জনটা তীব্র হবার কথা নয়। তারপরেও ‘মিয়াও, ‘মিয়াও’ ডাক ছাপিয়ে সমুদ্রের আক্রোশ ভরা গর্জনে ঘুম ঘুম ভাবটা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। চোখ মেলতেই দেখি ওয়েস্টার্ন হিরো তার বাপের সিটের উপর দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ‘মিয়াও, মিয়াও’ করছে। আর দুই ভায়রা ভাইয়ের নাসিকা গর্জন সমুদ্রের আক্রোশ হয়ে এতো বড় বাসটিকে দুর্বিষহ করে রেখেছে। দীর্ঘ পথযাত্রায় ভায়রা ভাইয়ের সম্পর্কটা আন্দাজ করে নিতে পেরেছি। ভায়রা ভাইদের একজন হচ্ছেন ওয়েস্টার্ন হিরো ওরফে ‘মিয়াও, মিয়াও’ বিড়ালছানার জন্মদাতা। আরেকজন হচ্ছেন সবজি খিচুড়ি টাইপের কিশোর কণ্ঠের অধিকারীর বাপ।

ওয়েস্টার্ন হিরো ওরফে ‘মিয়াও, মিয়াও’ বিড়ালছানার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকালাম। ভয় খাবার বদলে মিয়া সাব ফুর্তিতে ফোকলা দাঁত দেখাতে লেগে গেলো। আমি সফর সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, তোর কাছে কলা আছে?’ আমার সঙ্গী অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়- কলা দিয়ে কি করবি? ক্ষুধা লেগেছে? কিছুক্ষণ পরেই বাস থেকে নেমে পরবো। আমি জবাব দিলাম, রাখ তোর ক্ষুধা। বান্দরকে ঠাণ্ডা করার জন্য কলা ঘুষ দিতে হয়। আমার কথায় পিছনের সিটে বসা একটা তরুণী কণ্ঠ খিলখিল করে হেসে উঠলো। আমার কথায় হাসির কিছু আছে কিনা বুঝে উঠতে পারছিনা।

বাঁদরের বাঁদরামি, বাবার মোবাইল ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি, চিৎকার, সমুদ্রের গর্জন, বেকায়দা কিসিমের জ্যামে বসে থেকে থেকে এতোটাই বিরক্ত হলাম যে, হাতের কাছে কল্পনার গাব গাছের লাঠিটা থাকলে, গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে ভায়রা ভাই দু’জনের মাথায় ঠাশ ঠাশ করে স্রেফ দু’টা বাড়ি মারতাম- যা করে আল্লাহ্‌ মাবুদ। আর খালাতো দুই ভাইকে ন্যাংটা বানিয়ে নীল ডাউন করিয়ে বাকি পথটুকু পার করতাম।

বিশ্রী অসহ্য অবস্থাটা বোধহয় অনন্তকাল চলতেই থাকবে। ঝিম মেরে বসে থাকা অবস্থাতে সমুদ্রের অপার্থিব, প্রায় স্বর্গীয় অনুভূতির কাছাকাছি দৃশ্যটা কল্পনায় আনার চেষ্টা করছি-

আগের রাত বারোটার দিকে সুগন্ধা বীচে গেলাম। কিছুটা মুগ্ধতার আশায়। মানুষের কোলাহল থেকে দূরে রাতের নিস্তব্ধতায় সমুদ্রের গর্জন শুনতে কেমন লাগে কে জানে? কিসের কি, সব জায়গায় মানুষ আর মানুষ। কিছু তরুণের মাতাল কণ্ঠের অশ্লীল কথাবার্তায় নির্জনতা পছন্দ করা মানুষগুলি বিব্রত হচ্ছে। আমি বিব্রত না হলেও মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো। সুগন্ধা বীচ এর একটু সামনে থেকে লাবণ্য বীচ পর্যন্ত দূরত্বটার দিকে তাকাতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। প্রায় জনশূন্য। আমি হাঁটতে শুরু করলাম। শান্ত সমুদ্র, কিছুটা অন্ধকারময়। হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর গিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। কয়েক গজ দূরে হুট করেই সাদামতো কিছু একটা ভেসে উঠলো। সাদা, হ্যাঁ একেবারে ধবধবে সাদা। সাদামতো জিনিসটা উঠেই পাড়ের দিকে আসতে শুরু করছে। খুব দ্রুত দুইদিকে নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেন দু’টি হাত কোন কিছুকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় দুইদিকে প্রসারিত করে যাচ্ছে। সামান্য দূরে আরেকটা এমনই সাদা কিছু ভেসে উঠে ঠিক একইভাবে নিজেকে দুইদিকে প্রসারিত করে যাচ্ছে। ঐতো আরেকটা, আরেকটু দূরে আরও একটা। বেশ কয়েকটা পরপর উঠে নিজেদেরকে দু’দিকে প্রসারিত করতে করতে ধরে ফেললো। অবশেষে তীরে এসে সবাই মিলে একযোগে আছড়ে পরে মিলিয়ে গেলো। এমন অদ্ভুত খেলা দেখতে দেখতে সময়গুলি কিভাবে কখন যে পেড়িয়ে গেল! আচ্ছা মানুষের জীবনের সাথে এ খেলার কি কোন মিল আছে? দীর্ঘ সময় একজন আরেকজনের হাত ধরার জন্য ছুটে ছুটে যখন হাত ধরা ফেলে, তখনই আবেগ, অনুভূতিগুলি কি এভাবেই মিলিয়ে যায়? অথবা হাত ধরার পর নিজেরাই মিলিয়ে যায়, অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন সবাই?

মাইকে সুপারভাইজারের ভরাট কণ্ঠ ভেসে এলো, বাস এখন সাইনবোর্ডের কাছাকাছি। যারা নামার আছেন তারা যেন গেইটের সামনে চলে এসে ট্যাগ স্লিপগুলি ওনার হাতে দেন। আমার সঙ্গী আমাকে কনুই দিয়ে হালকা ঠ্যালা দিলো। আমি বিরক্তি নিয়েই বললাম, তুই যা। আমি শেষ সময়ে নামবো। আমি চোখ মুদে বসে রইলাম। কয় ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট হয় গুনতে শুরু করে দিলাম। সুপারভাইজার কি পাঁচ মিনিট সময়ের কথা বলেছিলো?

অবশেষে সীমানার দেখা পেলাম। পরিচিত রাস্তাঘাট, একেবারে ফাঁকা। আর মিনিটখানেক পরই বাস থেকে নামতে হবে। আমার সঙ্গী দরজায় দাঁড়ানো। আমি তড়িঘড়ি করে দরজার কাছাকাছি যেতেই বয়স্ক এবং রাগী চেহারার লোকটাকে আরামসে ঘুমাতে দেখলাম। চেয়ার প্রায় বিছানার মতো চিৎ করে মাঝখানের চলাচলের জায়গার উপর প্লাস্টিকের টুল বসিয়ে ওটার উপর পা তুলে কি আরামের ঘুম; নির্মল, নিশ্চিত, নির্বিঘ্ন, সুখী মানুষের ঘুম। মুখে কেমন শান্তি শান্তি একটা অভিব্যক্তি। ঘৃণা, বিদ্বেষ, আক্রোশ, হিংস্রতা কিছুই নেই। এখন লোকটাকে একজন প্রেমিক স্বামী, স্নেহময় পিতা অথবা খুব বড় অফিসের অতি আপন বড়কর্তা। বড্ড বেখাপ্পা দৃশ্য।

এতো কিছু ভাবার কোন কারন নেই। নিজকেই প্রবোধ দেবার অনিচ্ছাকৃত ইচ্ছেটা ঝেড়ে ফেললাম। প্রতিশোধ চাই, প্রতিশোধ। উল্টোদিকে রওনা দিলাম। ভাবটা এমন- ভুল করে জরুরী কিছু একটা ফেলে এসেছি। দীর্ঘ ঘণ্টাগুলি যেখানে বসে ছিলাম সেই চেয়ারের কাছে গিয়ে শুধু শুধুই আঁতিপাঁতি করে কিছু একটা খুঁজলাম। আমার তাড়াটা আশেপাশে জাগ্রত যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁদের চোখেমুখেও আমার হারানো অলীক কিছুর জন্য কষ্ট প্রতিফলিত হচ্ছে। বুঝতে পারছি, অভিনয়টা ভালোই চালিয়ে যাচ্ছি।

এই, তোমার কিছু হারিয়েছে? শিশু কণ্ঠের শব্দগুলি কানে যেতেই মৃদুস্বরে বললাম, চুপ কর ডারউইনের নাতীর ঘরের পুতী। আরেকটা শব্দ বের করবিতো এক্কেবারে গাইরালামু, বাকি দুধ দাঁতগুলি থাবড়াইয়া ফালাইয়া দিমু ............। অনেক আগে শুনা খিলখিল শব্দের হাসিটা আবারও কানে এসে বাজলো। হাস্যমুখিকে একবার তাকিয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছেটা দমন করলাম। বাহ, খুব সহজেই দমন করতে পারছিতো। কল্পনা ফেনিয়ে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে দিলাম- সাবাস বেটা, সাবাস।

মুখে মলিনভাব ধরে রেখে দরজার দিকে ছুট দিলাম। যেমনটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে বেশি জোরেই টুলের সাথে পূর্বনির্ধারিত এবং অনিবার্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পরলাম। টুল আমার পায়ের ধাক্কায় হাত দুয়েক দূরে গিয়ে ত্যারা হয়ে পড়ে রইলো আর আমি কোনমতে হুমড়ি খেতে খেতে দাঁড়িয়ে গেলাম। লোকটা চমকে উঠলো। বুঝতে পারছি, এক্ষুনি অপ্রীতিকর কিছু ঘটে যাবে। দীর্ঘ পরিকল্পনা, তাই সবকিছুর জন্যই আমি প্রস্তুত। অথচ আমাকে অবাক করে দিয়ে ভদ্রলোক ব্যথিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। সে চোখের ভাষায় পড়তে লাগলাম, এই ছেলে- বয়সতো আর কম হলো না, পোলাপানের মতো এতো দৌড়ঝাঁপ করছ কেন? একটু ধীরেসুস্থে নামো। এমন করলে আরও বড় কোন অঘটন ঘটে যাবে কোন একদিন। সাবধানে চলাফেরা করো। বাবারে, সাবধানের কোন মার নেই।

আমি সাবধান হয়ে গেলাম। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে খুব ধীরলয়ে বাসের দরজায় দাঁড়ালাম। প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছে, রহস্যময় এই মানুষটাকে একবার ঘুরে দেখি। ঘুরে দেখার দরকার নেই; আমার প্রতি তার অসীম স্নেহের দৃষ্টিটা অনুভব করতে চাচ্ছি। অবচেতন মনের চেতনার ধরন ধরতে পারার অদ্ভুত এক স্থিতি। স্থিতাবস্থা কাঁটিয়ে সামনে যেতে হবে। আরও অনেক দূর, অনেক পথ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

হুয়ায়ুন কবির বলেছেন: বাড়ি ফেরা (কক্সবাজার থেকে)-

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.