নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দড়ি বাবা

আমি একজন সাধাৱন পাবলিক যার সবকিছুই পাবলিকের কাছে সাধারন ৷

দড়ি বাবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার পিচ্চি ! (পর্ব-২) {একটি ছোট (ভালোবাসার !)গল্প}

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৩:০৯

(১ম পর্বের পর) দিন যায়, দিন আসে। টার্ম যায়, টার্ম আসে। জীবনটা চলছিল একটা সরলরেখা ধরেই। কলেজের দিনগুলো খুব উত্তেজনাপূর্ন কাটত। সারাবছর লেগে থাকা বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি, আম-কাঁঠাল চুরি করা, সবাইকে ধোকা দিয়ে মাঝে মাঝে পিটি-প্যারেড ডজ দেওয়া, লাইটস অফ আওয়ারের পর জানালায় কম্বল টানিয়ে লাইট জ্বালিয়ে পড়ালেখারনামে গবেষনাধর্মী আড্ডা, অতঃপর ধরা খেয়ে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে রোলিং,ক্রলিং ইত্যাদি ইত্যাদি।উত্তেজনার কোন না কোন উপকরণ ক্যাডেট কলেজ নামক এই চার দেয়ালঘেরা জায়গাটায় সবসময় থাকে।



সারাটা টার্ম অপেক্ষা করে থাকতাম কবে ছুটি হবে, কবে এই কারাগার ছেড়ে বাড়ি যাব। অবশেষে একটা টার্ম শেষ করে যখন বাড়িতে আসতাম, তখন সবকিছু কেমন ম্যাড়মেড়ে লাগত। আমার ছোট্ট শহরটায় আমার বন্ধু বলতে তেমন কেউ নেই। মাঝে মাঝে শুধু অন্তি নামের জুনিয়র মেয়েটা ফিজিক্স কিংবা ম্যাথ বুঝতে চলে আসত বাসায়। আমি কোন আইনস্টাইন কিংবা ইউক্লিড নই যে তাকে এসব বুঝাবো। এসব আমার নিজের মাথায়ই ঢুকে না। তার বদলে আমি অন্তিকে আমার কলেজের কাহিনী শোনাতাম। কিভাবে নাইটগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে একব্যাগ আম চুরি করলাম, কিভাবে গম্ভীর ম্যাথ টিচারের সাইকেলের চাকা পাঙ্কচার করে দিলাম সেসব বীরত্বের কাহিনী।



এসব কাহিনী ওকে আকর্ষন করছে কিনা ঠিক বুঝতে পারতাম না। তবুওবলে যেতাম। বলতে ভালো লাগত। মেয়েটাও বুঝতে পেরেছিল এই ছেলের কাছে ম্যাথ বুঝতে যাওয়া অর্থহীন। তবুও ছুটির দিনগুলো একটা বই হাতে করে চলে আসতো বাসায়। আমার বীরত্বগাঁথা শুনতেশুনতে মাঝে মাঝে সেও তার কলেজেরকাহিনী কিছু কিছু বলত। একসময় খেয়াল করলাম একটা ছেলে বন্ধুর সমান না হলেও একটা ভ্যাকেশান ফ্রেন্ড হিসাবে অন্তি বিশেষ খারাপ না। ভালোই।



ভ্যাকেশান শেষ করে আবার কলেজে ফিরে যাওয়া অবশ্যই একজন ক্যাডেটের জীবনে একটা অপরিসীম দুঃখময় একটা কাজ যা তাকে ছয় বছরে কমবেশি ২৫ বার করা লাগে। কিন্তু দুঃখটা ব্যাগ চেকিং পর্যন্তই। ব্যাগটা টেনে হাউসে ওঠা মাত্রই বন্ধুদের সংস্পর্শেআড্ডায় সব ভুলে যেতাম। আস্তে আস্তে আবার ফিরে যেতাম রোবটিক রুটিনমাফিক কাজকর্মে।

৩.



ক্যাডেট কলেজের রাতগুলো খুব মূল্যবান। পৌনে এগারোটায় প্রতিটা রুমের লাইট অফ করা বাধ্যতামূলক। ঘুম আসুক বা না আসুক, বেডে শুয়ে থাকা বাধ্যতামূলক। রাতের বেলা নিজস্ব আবেগগুলো হৃদয়ের ডানা মেলতে শুরু করে। খুব নিঃসঙ্গ লাগে তখন। আমি হাবাগোবা মানুষ। আমার এসব নিজস্ব আবেগ বলতে তেমনকিছু নাই। হাবাগোবা মানুষ ঘুমায় খুব তাড়াতাড়ি। আমি শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে যেতাম।

সমস্যাটা শুরু হলো এসএসসি পরীক্ষার দু’মাস আগে থেকে। আগেরমত শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসত না। কোন এক কারনে অন্তি নামক ভাবলেশহীন ঐ মেয়েটার কথা মনে পড়তো। ফিজিক্স বা ম্যাথ বই খুললেই খুব সহজে এক-দেড় ঘন্টা সময় কেটে যেত এই মেয়েকে নিয়ে ভেবে। অবাক হয়ে একদিন খেয়াল করলাম আমি আমার বইয়ের পিছনের কাভারে আনমনে ১০-১২ বার অন্তি নামটা লিখে ফেলেছি।



অবশ্য এটা অন্যদের প্রভাবেও হতে পারে। আমার দু’জন ক্লোজ ফ্রেন্ড সদ্য রিলেশানে ইনভলভড হয়েছে। তাদের প্রেমকাহিনী শুনতে শুনতে এই প্রতিক্রিয়া হয়তো। বইয়ে নাম লেখা ব্যাপারটা নিশ্চিতভাবে অভ্রর প্রভাব। অভ্রর যে মেয়েটার সাথে রিলেশান,তার নামের অদ্যাক্ষর “S”. অভ্র তার চেয়ার-টেবিল, বেড, কাবার্ড, প্রতিটা বই এমনকি টেবিল টেনিস ব্যাটেও ডিজাইন করে “S” লিখে রাখে।



যদিও জানতাম প্রেম ব্যাপারটা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। প্রেম করতে হলে প্রপোজ করা লাগে। আর সেটার জন্য সাহস লাগে।এই সাহস থাকে শুধুমাত্র অসাধারন ছেলেদের। আমি ভীতু এবং সাধারন একটা ছেলে। তবুও কিভাবে কিভাবে একসময় সম্ভব হয়ে যায়। সেখানেই আমার সর্বনাশের শুরু।



৪.



কিছু কিছু সময় প্রিয় কোন মানুষের উপস্থিতির থেকে তার অনুপস্থিতিটাই তার অস্ত্বিত্বকে প্রকটভাবে জানান দেয়।আমার ক্ষেত্রেও এটা ঘটল। এস.এস.সি পরবর্তীকালীন তিন মাস ছুটিতে। অন্তি মেয়েটা যে আমার জীবনে বিশেষ কিছু, সে বিষয়ে আমার সকল সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গেল এই তিন মাসে। আমি ছুটিতে থাকলেও অন্তি তখন কলেজে। আমি আগেই বলেছি, আমার ছোট শহরটায় আমার তেমন কোন বন্ধু নেই। আর তখন সেল ফোন কিংবা সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোও কিশোর-কিশোরীদের হাতের নাগালে এত বিস্তৃতভাবে ছিল না।



অন্তির শূন্যতাটা প্রকটভাবে অনুভব করতে লাগলাম। সারাদিন বারান্দায় বসে পাশের গাছে চড়ুই পাখিটার অস্থির উড়াউড়ি দেখতাম, ছাদে দাঁড়িয়ে দূর দিগন্তে সবুজ সরলরেখার পিছনে ক্লান্ত লাল সূর্যটাকে হারিয়ে যেতে দেখতাম।শুনেছি চিড়িয়াখানার জন্তুদেরকে মুক্ত করে দিলেও তারা চিড়িয়াখানায় ফিরে যেতে চায়। আমার মন চলে যেত চারদেয়ালের গতবাঁধা ঐ জীবনটায়, সবুজ সমতল কার্পেটের মত ঐ মাঠটায়, ক্লান্তিহীন ঐ ব্যাস্ততায়।



মনের শূন্যতাটুকু কাটাতে একটা কাজ করতাম। প্রতিদিন একটা করে চিঠি লিখতাম কল্পনার অন্তিকে। চিঠিগুলো আমার ড্রয়ারেই রয়ে যেত। একটা চিঠি যত্ন করে খামে ভরে রেখেছিলাম ওকে পাঠাবো বলে। সাহস হয়ে ওঠেনি। ক্যাডেট কলেজে সকল চিঠি ডেলিভারির আগে পড়ে দেখা হয়। অন্তি সমস্যায় পড়ে যাবে। চিঠিটা কখনো পাঠানো হয়নি। কিন্তু এই চিঠি সে পড়েছিল। আমার বইয়ের ভিতর থেকে দূর্ঘটনাক্রমে পেয়ে গিয়েছিল। সে আরেক ইতিহাস। ওর এক বান্ধবীরকাছে পরে শুনেছিলাম এই চিঠি প্রতিদিন সে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমাতে যেত। সেটা অনেক পরের কাহিনী।



আড়াই মাস কচ্ছপের গতিতে কেটে গেল। অন্তিও বাসায় এল। আবার সবকিছুতে প্রান খুজে পেলাম। এর মাঝে আমার রেজাল্ট হল। বেশ ভাল রেজাল্ট করলাম। আমার রেজাল্টে আমার থেকেও অন্তির খুশি ছিল অনেক বেশি। বাকি দিনগুলো স্বপ্নের মত সুন্দর কাটল। এবং খুব দ্রুত কাটল। ফিরে যাবার দিনচলে এল। যাবার আগে শেষ যখন দেখা হল খুব খারাপ লাগছিল। নিজেকে নিজেকে অবাক করে দিয়ে ওর এক গালে হাত রেখে বলেছিলাম “ভালো থাকিস, পিচ্চি”।ও মাথা নিচু করে শুধু বলেছিল “আমি পিচ্চি না”। (চলবে...)

[১ম পর্ব পড়তে Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:০০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পড়েছি আগেই

২| ০৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

দড়ি বাবা বলেছেন: জ্বী ওখান থেকেই কপি পেস্ট করা । নতুন একাউন্ট খুলছি তো তাই সামান্য কপি পেস্টের অশ্রয় নেয়া হয়েছে । পর্যবেক্ষন থেকে সরানো হলেই আশা করি নিজের মেধা কাজে লাগাতে পারব । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.