নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দড়ি বাবা

আমি একজন সাধাৱন পাবলিক যার সবকিছুই পাবলিকের কাছে সাধারন ৷

দড়ি বাবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার পিচ্চি ! (পর্ব-৩) {একটি ছোট (ভালোবাসার !) গল্প}

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৩:১৯

(২য় পর্বের পর)

৫ .



ফার্স্ট ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ার সময়টা খুব তাড়াতাড়ি কেটেছে। জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ন দু’টা বছর এভাবে চোখের পলকে কেটে যাবেভাবিনি। যত দিন গিয়েছে, অন্তির সাথে আমার আত্মিক বন্ধনতা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। এতটাই বেশি যে, আমাদের কাছে তখন আপনি, তুমি, তুই সব ডাক মিলে মিশে একাকার। কিন্তু সম্পর্কটাকে তখনো আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারিনি। হয়তোবা চাইনি।



একটা সময় আমি পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। অন্তিকে বার্থডে উইশ করতে কলেজ দেয়াল টপকে বাইরের ফোন-বুথ থেকে দোকানদারকে অন্তির বাবা সাজিয়েফোন করেছিলাম ওর কলেজে। ঐতিহাসিক ব্যাপার স্যাপার। আমিএদিক থেকে কন্ঠটাকে মধুমার্কা রোমান্টিক করে বলছি “ হ্যাপি বার্থডে, পিচ্চি”। আর ওদিক থেকেস্যারের ফোনে থাকা অন্তি বিস্ময় আর উচ্ছ্বাসভরা কন্ঠে বলছে “জ্বী আব্বু, জী আব্বু”।



একটা ব্যাপার বলে রাখা ভালো। ক্যাডেট কলেজের দেয়াল টপকানোর শাস্তি জেলখানার দেয়াল টপকানো থেকেও ভয়াবহ। আক্ষরিক অর্থে।



তখন আমার এইচ,এস,সি পরীক্ষা চলছে। পরদিন জুয়োলজি পরীক্ষা। কেঁচো, ব্যাঙ, তেলাপোকা কোনটার জানি পোষ্টিকতন্ত্র পড়ছি ব্যাপক মনোযোগের সহিত। হঠাৎ হাউস অফিসে ডাক পড়লো। হাউস টিউটর স্যার ডাকছেন। গিয়ে দেখি একটা চিঠি হাতে তিনি বসে আছেন ভাব গাম্ভীর্যের সাথে। আমাকে দেখিয়ে বললেন… “এটা কার চিঠি?”

আমি পড়ে গেলাম মহা টেনশানে। কলেজের ছ’বছরের জীবনে প্রতি সপ্তাহে রুটিনমাফিক একটা চিঠি আমি বাসায় লিখেছি। কিন্তু বাবা-মা কেউ একটারও উত্তর দেননি। চিঠি লেখা ব্যাপারটা তাদের কাছে ফাজলামো মনে হয়। আমিনির্লিপ্তভাবে বললাম… “ স্যার চিঠি তো আপনার হাতে”।



-অন্তি কে?

আমি বুঝতে পারলাম কেয়ামত আসন্ন। শুরু হয়ে গেল আমার অগ্নিপরীক্ষা। একজন আদর্শ ক্যাডেটের অন্যতম প্রধান গুনাবলির মাঝে একটা হলো “ভাবলেশহীনভাবে অনবরত মিথ্যা বলা”। আমি আদর্শ ক্যাডেট না হলেও এই গুন আমার মাঝে ভালোভাবেই ছিল।

-স্যার আমার ছোট বোন।

-আপন নাকি খালাতো মামাতো?

-আপন স্যার?



-তোমরা কয় ভাই বোন।

-দুই ভাই এক বোন স্যার…

-কে কোন ক্লাসে পড়ে…



ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়তে লাগলেন। আমি চৌকশ খেলোয়াড়ের মত মোকাবিলা করলাম। আধা ঘন্টা পর চিঠি হাতে বিজয়ীর বেশে প্রত্যাবর্তন করলাম।



অন্তি তখন ওর এসএসসি’র ছুটিতে ছিল। আমার রোগে হয়ত ওকেও পেয়েছিল। ঐ চিঠিটা আমার সারা জীবনে পাওয়া হাতে লেখা একমাত্র চিঠি। এই চিঠি আমি পরবর্তীতে হাজারবার পড়েছি। প্রতিবারই প্রচন্ড আবেগপ্রবন হয়ে গিয়েছি।চিঠির শেষ লাইনগুলো ছিল

“তুই কবে আসবি অনিক? তোকে প্রচন্ড দেখতে ইচ্ছা করে। তোর জন্য কত কথা জমিয়ে রেখেছি…তুই কবে আসবি…”





৬.



আমি ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবারপর আমার আর অন্তির সম্পর্কটা নতুন মাত্রা পেল। ও দু-আড়াই মাসপর পর বাসায় আসে। ১৫-২০ দিন আমাকে অপরিসীম ভালোবাসায় সিক্তকরে আবার উড়াল দেয়। মধ্য যুগীয় ব্যাপার স্যাপার। আমাদের এই ব্যাপারটাকে প্রেম বলা যায় কিনা জানিনা, “প্রেম” শব্দটার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে ভালোবাসা অবশ্যই বলা যায়, ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না আমাদের।



ও যতদিন কলেজে থাকে, প্রতিদিন আমি ওর ফেইসবুক একাউন্টে সুদীর্ঘ একেকটা মেইল পাঠাতাম। ছুটিতে এসে ও সবগুলো একবারে পড়ে। মাঝে মাঝে কি মনে হয়, আনাড়িহাতে ওর ছবি আঁকি। ছবিগুলো কার্টুন লেভেলেই থেকে যায়। আমার হাস্যকর ছবিগুলো দেখেও ও অনেক খুশি হয়। ভালোবাসাটা ঠিক প্রকাশ করার মতো না। ওর অভাবটা যত অনুভব করি, ভালোবাসা ততই বাড়ে। ওর একটা ছবির দিকে তাকিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে পারি।সাধারণত আমার ভার্সিটির ছুটি আর ওর ছুটি একসময়ে পড়ে না। ও যখনবাসায় আসে তখন তাই আমি থাকি না। তবুও ও বাসায় আসলে সেলফোনযোগেই আমার ছন্নছাড়া জীবনটাকে সিধা বানিয়ে দেয়। ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া, ক্লাস, গোসল, ঘুমাতে যাওয়া সবকিছু বাধ্য ছেলের মত সময়মত করি এই মেয়ের শাসনে। ছেলেরা জীবনসঙ্গিনীর মাঝে নিজের মায়ের ছায়া খুঁজে। অন্তি স্বভাবগত দিক দিয়ে আমার মায়ের কার্বন কপি।



ওর ছুটি থাকাকালীন দু’দিনের জন্য বাসায় আসি। এই দু’দিন দুজনে প্রায় আঁঠার মত লেগে থাকি। অন্তি তার জমিয়ে রাখা সব গল্প করে চোখ বড় বড় করে। আমি শুধু অবাক হয়ে চেয়ে দেখি। একটা হাসির কথা বলি। আমার মাঝে মাঝে ওকে পরী মনে হয়। একটা মানবীর চোখ এত সুন্দর হয় কিভাবে ! ওর বাচ্চার মত ছোট ছোট হাতগুলো নেড়ে নেড়ে কথা বলা দেখি। কি বলছে জানিনা, বলছে এটাই বড় কথা। সমস্যা হয় কথা শেষ করবার পর। যখন বুঝতে পারে আমি ওর কথা না শুনে শুধু ওকেই দেখছি, প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা ঢাকতে শুরু করে দস্যিপনা। আমার চুল-নাক-কান ধরে টানাটানি।



চলে আসার সময়টা খুব কষ্টের। বিবর্ণ ময়লাটে সাদা দোতলাটার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার পিচ্চিরাজকন্যাটা আমার প্রস্থানপথের দিকে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করে। ওর একেক ফোটা অশ্রুবিন্দু আমার বুকে একেকটা তীর হয়ে বিঁধে। নিজের পা দুটোকেঅসম্ভব ভারী লাগে। বিদায় সবসময় কেন এত কষ্টের?



৭.



অন্তি যখন এইচ,এস,সি দ্বিতীয় বর্ষে তখন হঠাৎ ওর বাবা মারা যান। বাবার প্রচন্ড আদুরে মেয়ে অন্তি। বাবার মৃত্যুর পর শোকে অন্তি অনেকটা জড় পদার্থের মত হয়ে যায়। ওর সাথে যে ক’বার দেখা হয়েছে, ওর চোখে ভয়ঙ্কর শূন্যতা দেখেছি। কোন আনন্দ নয়, কোন উচ্ছ্বাস নয়, দুঃখ-কষ্ট, ভয় কোন পার্থিব আবেগ ছিল না চোখদুটোতে। শুধু গভীর এক শূন্যতা। আমি অনেক চেষ্টা করি ওকে স্বাভাবিক করে তুলতে। হয়তোবা শূন্যস্থানটা সে আমাকে পূরণ করতে দিচে পারেনি। বুঝলাম ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে।



অবশেষে ঘটনাটা ঘটল। আজ থেকে ঠিকএক বছর সাত মাস এগারো দিন আগে। ওতখন কলেজ পাস-আউট করেছে। সেদিন ছুটির দিন বলেই স্বভাবগতভাবে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। সেল ফোন চেক করে দেখিইনবক্সে টেক্সট মেসেজ।



“জানিনা আমি ক্ষমার যোগ্য কিনা,পারলে ক্ষমা করিস। আর না পারলে আল্লাহ আখিরাতে আমাকে যে শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নিব। ভালো থাকিস…সবসময়”। (চলবে....)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.