![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(৩য় পর্বের পর)
প্রথমে ভাবলাম কোন ধরনের প্র্যাকটকাল জোক। ওর নম্বরে ফোন করলাম। বন্ধ পেলাম। ওর যতগুলো নম্বর আমার কাছে ছিল সবগুলোতে চেষ্টা করলাম। সবগুলোই বন্ধ। এক ঘন্টা, দু ঘন্টা করে পুরো একটা দিন চলে গেল। আমার মাথা খারাপ হবার উপক্রম। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোও চেক করলাম। কোন আপডেট নেই। অবশেষে না পেরে ক্লাস ল্যাবের খেতা পুড়ে ভোরের ট্রেন ধরে চলে এলাম বাসায়।
কলোনীর মানুষগুলো কেউই ঠিকমত কিছু বলতে পারছিল না।কেউ বলছিল ওর আম্মু ওদের তিন ভাই বোনকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছেন, কেউ বলছিল শ্বশুরবাড়ি। আবার অনেকে অন্য কথাও বলছিল। যার কোনটাই সঠিক নয়। আমি সপ্তাহখানেক বাসায় ছিলাম। ওদের বাসার সামনে মাঠটায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। বারান্দাটা বড় শূন্য শূন্য লাগত। পৃথিবীটাই শূন্য লাগতো। এক সপ্তাহ পর ঐ বাড়িতে নতুন পরিবার উঠল।আমি ফিরে গেলাম আমার ভার্সিটিতে। সেই গতানুগতিক জীবনে।
অন্তি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমি আমার জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছি এই মেয়েকে নিয়ে ভেবে। আমাদের স্মৃতিগুলো কাগজবন্দী করলে ছোটখাটো এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবার কথা। রাতগুলো প্রচন্ড কষ্টের ছিল।মনকে অযথা প্রবোধ দিতাম, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই একদিন কখনো আসে না। এসএমএস আর কল রেকর্ডগুলো শুনতাম আর নিজের অজান্তে অশ্রু বিসর্জন দিতাম।
দিন যেতে থাকল…খুব চেষ্টা করলাম অন্তিকে ভুলতে। মনকে বুঝালাম, ও আমাকে ভালবাসলে এভাবে যেতে পারত না। ফেসবুকে “চলে গেছ তাতে কি, নতুন একটা পেয়েছি” কিংবা “I don’t care you love me or not, I love u forever.” টাইপ স্ট্যাটাস দিলাম কিছুদিন। দু’একটা এফেয়ারও করলাম।
কিছুতেই কিছু হলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে বাঁচতে হবে, এবং অন্তিকে নিয়ে। ছ’মাস খোজার পর তার হদিস মিললো। ঢাকারস্বনামধন্য একটা মেডিকেল কলেজেপড়ছে। ওর এক এয়ারফোর্স অফিসার দুঃসম্পর্কের কাজিনের সাথে নাকি বিয়েও ঠিক হয়েছে। ফোর্স থেকে ছেলেটা আগামী বছর বিয়ের পারমিশান পেলেই বিয়ে হবে।
এই মুহূর্তে ওর হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আজ পহেলা বৈশাখ। জানি ও বাইরে বের হবেই। শেষ কিছু বোঝাপড়া রয়ে গেছে। মিটিয়ে নিতে হবে।
৮.
অন্তির দেখা মিলেছে। আমি আর সে এখন বসে আছি জিয়া উদ্যানের একটাবেঞ্চের উপর। আমাকে দেখার পর প্রচন্ড অবাক হয়েছিল ও। কিন্তু কোন কথা বলেনি। আমি শুধু একটা শব্দ বলেছি… “চল”।
ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি। ও মাথা নিচু করে বসে আছে। চেহারায় পাকাপাকিভাবে একটা কাঠিন্যের ছাপ পড়ে গেছে। এছাড়া তেমন কোন পরিবর্তন নেই। হাতের আঙ্গুলগুলো তেমন পিচ্চি পিচ্চিই আছে। গালগুলো তেমন ফোলা ফোলাই আছে। চোখজোড়া এখনো ততটাই গভীর। আমিই নিরবতা ভাঙ্গলাম…
-ড্রাইভার সাহেব কেমন গাড়ি চালায় ?
আমার প্রশ্ন শুনে ও বিস্মিত হয়েআমার দিকে তাকালো। আমি আবার বললাম…
-প্রশ্ন বুঝিস নাই? ড্রাইভার সাহেব কেমন গাড়ি চালায়? লাইসেন্স টাইসেন্স আছে তো?
এবার মনে হয় বুঝল।
-ড্রাইভার না পাইলট।
-ঐ হলো। রিকশাচালকও ড্রাইভার, প্লেন চালকও ড্রাইভার। একই কাহিনী।
-ফালতু কথা বলবা না।
-এহ ! পজেসিভ খুব না? আমার সাথে তো কখনো এরকম ছিলি বলে মনে পড়ে না।
-তোমার সাথে আমার পজেসিভ হবার মত কিছু ছিল না।
-থাপ্পড় দিয়ে দাঁত খুলে নিব ২-৪ টা। আমি তোর “তুমি” কবে ছিলাম রে? তুমি তুমি করতেছিস কেন?
মেয়ে চুপ।
-আর ড্রাইভার রে নিয়া ব্যাপক পার্ট না? শালা এমন প্লেন বানাবো যাতে কোন পাইলটই না লাগে। শালারা যাতে না খেয়ে মরে।
-তুই জব করছিস এখন?
-না এখনো পড়তেছি। বাচ্চাকালে ড্রাইভারি করার শখ নাই।
-বড় আসছে…বাচ্চা।
-ঐ হলো…
-আদু ভাই নাকি তুই? তোর না পাশ করে যাবার কথা? ফেল মারছিস?
-স্কলারশিপ নিয়ে যাচ্ছি কলোরাডো ইউনিভার্সিটি। Aerospace Engineering এ MS করবো মিশন : ড্রাইভারবিহীন এয়ারক্রাফট বানানো।
রাজকন্যা এবার হেসে দিল কিছুটা। ওর সেই রোদ্দুর হাসি। হৃদয় ভাঙ্গা হাসি। মানুষের হাসিতে এত মায়া থাকে কিভাবে কে জানে।
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ ছাড়াও আজকের দিনের আলাদা একটা মাহাত্ম্য আছে আমার কাছে। পিচ্চি রাজকন্যার জন্মদিন আজ। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমি বললাম
-হ্যাপি বার্থডে লিটল প্রিন্সেস।
ও আমার দিকে একবার তাকালো। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো “আমি লিটল না”।
আমি বললাম “এদিকে তাকা”।
-কি?
-বিয়ে করবি আমাকে?
ওর মুখের অভিব্যাক্তি এবার পরিবর্তন হয়ে গেল। প্রচন্ড রেগেমেগে ও উঠে চলে যেতে চাচ্ছিল। আমি পিছন থেকে ওর হাত চেপে ধরলাম।
-উত্তর দিয়ে যা। বিয়ে করবি আমাকে? বলে পকেট থেকে আংটি বের করলাম একটা। ও অবাক হয়ে আংটিতারদিকে তাকিয়ে আছে।
-তাকিয়ে আছিস কেন বেটি? রাজি হয়ে যা। ৭৫,০০০ টাকার রিং। টাকাটাই জলে যাবে না হলে।
ও এবার ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে প্রচন্ড আক্রোশে আমার বুকে কিল ঘুষি মারতে লাগল। শার্টের কলার ঘরে টেনে দু’টো বোতাম ছিড়ে দিল। আমি ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরি। দ্বিগুন আক্রোশে আমার বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। অনেক্ষন। অতঃপর ব্যার্থ হয়ে আমার বুকে ওরমাথাটা রেখে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়। বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বলে “আমি কখনো পাইলটকে ভালোবাসিনাই রে। আমি আম্মুকে কষ্ট দিতে পারতাম না”।
ওকে কখনো কেঁদে কথা বলতে শুনিনি। ওর অশ্রুকনা আজো আমার বুকে তীরের মত বিঁধে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই শুধু। কি বলবো জানিনা…আকাশে কালবোশেখীরকালো মেঘ। জানি আজ প্রচন্ড ঝড় আসবে। পৃথিবীর বুকে, আমার বুকে।
আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে অন্তি। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাব। আশেপাশের মানুষজন মজা দেখছে। কেউ কেউ কুৎসিত কমেন্টও ছুড়ে দিচ্ছে। দিক। আমাদের লজ্জা লাগছে না। ক্যাডেটদের এত লজ্জা থাকলে চলে না।
(সমাপ্তি)
———--0--———
©somewhere in net ltd.