![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের পরিবারে আমরা ছিলাম পাঁচ জন। কখনো ভাবিনি ছিলাম শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় আমরা ছিলাম শব্দে প্রবেশ করেছি।
বাবা এই শব্দটিকে যে কি পরিমান ভালবাসা যায় এবং ভালবাসতাম তা কখনো বুঝিনি। যখন বোঝেছি তখন অনেক দেরি বাবা আমার খুব অভিমান করে চলে গেছে। যখন মিরপুর থাকতাম সেই ১৯৯৪ সালের কথা খুব ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যেত, গরমে ঘুমুতে পারতামনা। তখন বাবা আমাদের দুই ভাইকে পেয়ারা গাছের নিচে তার কোলে মাথা দিয়ে ঘুম পারাতেন। ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি ছিলাম, এক রাতে বললাম পোলাও ছাড়া খাব না। তখন রাত ১১টা বাজে বাবা অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন কিন্তু তাতে কি আমিতো নাছোড়বান্দা তাই বাবা নিরুপায় হয়ে এই রাত করেই পোলায়ের চাল নিয়ে আসছিল। মার্কেটে গেলে কখনো খেলনা ছাড়া আসিনি। তখন ক্লাস টু তে পড়ি, হটাত বাবা সাইকেল কিনে আনলেন চার চাকা বিশিষ্ট কি যে খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবনা। নামাজ পরার আগ্রহ সৃষ্টি করানোর জন্য বাবা ঘোষণা করলেন যদি ফজরের নামাজ পরি তাহলে প্রতিদিন ২ টাকা করে দিবেন। আর সাথে সকালের নাস্তা হোটেলে মিষ্টির সাথে পড়োটা খাওয়াবেন। বাবা ছিল আমার বন্ধুর মত সব বিসয় তার সাথে শেয়ার করতাম। জীবনে কোন কিছুতে মানা করেননি শুধু বাইক কিনতে চেয়েছিলাম না করেছিলেন যদিও পরে বাইক কিনেছি এবং বাবাকে ২ দিন বাইকে চড়িয়েছি। ক্লাস সেভেনে থাকতে একবার মেরেছিলেন একজনের সাথে ঝগড়া করেছিলাম বলে।
বাবা ছিলেন খুব ভ্রমন প্রিয় যতদিন পেরেছিলেন আমাদের নিয়ে ঘুরেছিলাম আর যখন থেকে ভ্রমন করতে পারতেননা আমাদের ভ্রমনে উৎসাহ দিতেন বলতেন ঘুরতে যা নতুন নতুন যায়গা চেনা হবে এবং মনও ভাল থাকবে।
বাবা চাইতো না আমি বিদেশে চলে যাই তিনি ভাবতেন যদি মারা যান তাহলে তাকে দেখতেও পারবনা আমি। কিন্তু তিনি এই কথা আমাকে কখনো বলেননি উলটো বি এস বি এর বাটপাড়ির কারনে যখন বিদেশ যেতে পারলামনা তখন বাবা আমার কষ্ট দেখে নিজেই কান্না করেছিলেন। এবং যেই বিরিয়ানি উনি খেতে পারেননা আমার জন্য নিজে থেকেই বললেন চল কাচ্চি খাই। আমার তখন অতি কষ্টেও হাসি পাচ্ছিল। কত টাকা নষ্ট হলো আমাকে কিছু তো বললই না উলটো সান্তনা দিচ্ছিল যে পরবর্তীতে হয়ে যাবে। একদিন বললাম বাবা শেয়ার মার্কেটে টাকা ধরা খাইছি বলল টাকার চিন্তা বাদ দিয়া লেখাপরা কর। আমার বন্ধুরা বাসায় আসলে কিভাবে আপ্যায়ন করতে হবে তা নিয়ে আমার চেয়ে বেশি যেন তার মাথা ব্যথা বেশি ছিল। বাবা মা যখন হজ্জ পালন করতে গিয়েছিল একদিকে খুব ভাল লাগছিল কিন্তু খুব খারাপও লাগছিল ২ মাস তাদের ছাড়া কিভাবে যে কাটিয়েছি জানিনা। কিন্তু একটা ভাললাগা ছিল তারা আবার আসবে আমাদের মাঝে।
বাবা অফিসার ছিল বিধায় কলনিতে একটু অন্নরকম ভাব নিয়ে চলতাম বিশেস করে কোন সিকিউরিটি গার্ড যখন ভুল বশত আটকিয়ে দিয়ে খুব রাগারাগি করতাম, কিন্তু এক হরতালের দিনে যখন কলোনির গেইট যানবাহনের জন্য অফ করে দেওয়া হয় আমি বাবাকে নিয়ে রিকশায় প্রবেশ করছিলাম। এমনিতেই দারোয়ান বাবাকে ঢুকতে দিত কিন্তু দেখলাম বাবা দারোয়ানকে বলছে আমি অসুস্থ আমি কি রিকশাটা ভিতরে নিতে পারি। আমার মত দারোয়ানও অবাক হয়ে গেছিল বাবার কথা শুনে বলল কি বলেন স্যার তা কি বলা লাগে। বাবা আমাকে শিখালো কোন মানুস ছোট নয় সৎ পথের সকল উপার্জনই ভাল। ঐদিনের পর থেকে আমিও তাদের সম্মান করতাম এবং সালাম দিতাম।
ভাইয়া আর আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরতামনা হটাত এক সোমবারে বাবা মা কে বলল তোমার ছেলেরা মসজিদে গিয়ে নামায না পরলে এই শুক্রবার থেকে তোমার হাতের রান্না খাব না। বাবা তার কথা রেখেছিলেন উনি বৃহস্পতিবার আসরের নামায পরে বাসায় এসে আম্মুর সাথে হাসিখুশি অবস্থায় ব্রেইন স্ট্রোক করেন এবং চরম অভিমান করে সোমবার আমাদের ছেরে চলে যান। আই সি ইউ তে বাবা কে কত ডাকলাম বললাম আমিতো ২ মাস আগেই সিগারেট খাওয়া ছেরে দিয়েছি শুধু তোমার জন্য আরও কত কি বললাম শেষে খুব রাগ হলো বাবার প্রতি মনে হলো তিনি আমাদের নিশ্চয়ই ভালবাসেননা যদি ভালবাসতেন তাহলে কেন ডাকে সাড়া দিচ্ছেননা। বাচ্চা ছেলে হয়ে গিয়েছিলাম তখন।
পরিশেসে বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসি আফসুস কখনো বলা হয়নি তোমায়।
সবার বাবাই তার সন্তানকে খুব ভালবাসেন। আমার বাবা যেমন আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল বাবা ঠিক তেমনি অন্যদের কাছেও তাই। শুধু আমরা বাবাদের বলিনা আমরা তাদের কত ভালবাসি আর আমরা নিজেরাও বোঝিনা তারা আমাদের জীবনে কতটা মূল্যবান। ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে মানুস তাদের বাবা মা কে বিদ্ধাশ্রমে পাঠায় অথচ আল্লাহর কাছে কতবার বলেছিলাম আল্লাহ তুমি আমাকে নিয়ে যাও আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও।
১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
ইমতিয়াজ নিঠু বলেছেন: এই প্রথম কোন রমজানে বাবা থককবেনা আমাদের সাথে ।আল্লাহ তোমায় বেহেশত নসিব করুন।
২| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৪৯
রাশফি বলেছেন: আসলেই ----আংকেল এর শেষ চাওয়া ছিল নামায , পড়ার চেষ্টা কইরেন । উনার আত্মা শান্তি পাবে । বাবার জন্য ত আর কিছু করতে পারবেন না , বাবারে নেকি সদ্গা কইরেন । ভাল থাকার চেষ্টা কইরেন ।
৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৬
ইমতিয়াজ নিঠু বলেছেন: হুম এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি শুধু বাবা দেখে যেতে পারলনা
৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:০০
আলোর সন্ধানে বলেছেন: যদিও সব ঘটনা আমার জানা বন্ধু। কিন্তু তারপরও লেখাটি পড়ে শরীরের রোম দাড়িয়ে গেছে। অনেক সুন্দর। এখান থেকে আমাদের শিক্ষনীয় এই যে আমরা যারা এখনো এই সুযোগটি পাচ্ছি তখনই বলে দেওয়া বাবা আসলেই কত ভালবাসি আমরা তোমায়।
ব্লগ পড়া+লেখার ইচ্ছে এক রকমের মরেই গিয়েছে কয়েকদিন যাবৎ। কিন্তু লেখাটি পড়ে আবার আগের মত খুব উপভোগ করলাম।
৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন:
৬| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২৯
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন
৭| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫০
েমাঃ নুরুজ্জামান মুন্না বলেছেন: বাবায় তোমায় অনেক ভালবাসি।
কোন বাবা-মাকে যেন বৃদ্ধা আশ্রমে যেতে না হয়।
৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: সন্তানের দোয়া বাবা-মায়ের জন্য বেশি কার্যকর আর সেটা যদি হয় নামাজ পড়ে। আর কবরস্থানে গিয়ে কোনও সন্তান যদি তার মা/বাবার জন্য দোয়া করে, সেটা আরও কাজে লাগে।
খালু কয় বছর আগে মারা গিয়েছেন? আল্লাহ উনার জান্নাত নসিব করুন। আমিন।
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩১
ইমতিয়াজ নিঠু বলেছেন: এ বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে আপু
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
নিরব বাংলাদেশী বলেছেন: চোখ ভেজানো ঘটনা