![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসের শুরু।
যে ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়,মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া বাঙালিদের অনেক গোপন অথচ বীরত্বপূর্ণ কাহিনীর কথা।
যাতে আছে রজব আলীর মতো কাপুরুষ বিশ্বাসঘাতকদের নিজের দেশের সাথে বেইমানী করার অকপট বর্ণনা।অার রফিক,ইয়াসিন,ফজলদের মতো দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধাদের বীরত্বের অপূর্ব সব কাহিনী।
তারপর থেকে ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে দিয়ে এগিয়ে চলে উপন্যাসের কাহিনী।
বাঙালির ইতিহাসের সোনালি সব অধ্যায়ের বর্ণনা মূর্ত হয়ে উঠে একজন হতভাগা মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণে।
আর গ্রামের মেটোপথে মুক্তিযুদ্ধের গল্প খুঁজতে যাওয়া একদল তরুণ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে সেসব যুদ্ধদিনের কথা।
আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করি,লেখকের মেদহীন গদ্যে জীবন্ত হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধকালে সুবীরময় সেনের মতো সংখ্যালঘুদের উপর ইউসুফ সাহেবদের মানসিক নির্যাতনের অকথ্য সব দৃশ্যপটের করুণ বর্ণনা।
রেনুকার মতো নিঃসন্তান গৃহবধূদের সামাজিকভাবে নিগ্রহীত হওয়ার;আত্মগ্লানি নিয়ে স্বামীর বুকে মুখ লুকানোর গোপন সব না বলা গল্পের কথা।
সুবীরময় সেনের স্ত্রী বিমলার মতো অনেক নারীর স্বামীর পথ চেয়ে আপেক্ষা করার অজানা সব গল্প।লেখকের দৃশ্যকল্পে চিত্রটি ধরা পরে এভাবে-
"তবু মনের ভেতর নিভু নিভু করে জ্বলে উঠে দ্বীপটি।একদিন আঁধার ক্ষয়ে ক্ষয়ে নামবে ভোর।টকটকে একটা সূর্য দেখা দেবে পুবের আকাশে।সেই সূর্যকিরণ ছড়িয়ে পড়বে চারিপাশে।বিমলা তাই আশায় বুক বাঁধেন।"
আছে তার কন্যা দীপার মতো মেয়েদের অনেক গল্পকথা।যেখানে আছে একটি মেয়ের মনে স্বপ্নের পুরুষকে নিয়ে তিলে তিলে গড়ে উঠা সম্ভাবনাময় প্রেমের অসংখ্য উপাখ্যানপর্ব।
সেই সম্ভাব্য প্রেমের সম্ভাব্য পরিণতিকে লেখক চিত্রায়িত করেছেন তার সজীব-নির্বিকল্প গদ্যশৈলীর মাধ্যমে-
"ডুবতে ডুবতেও দীপার চোখজুড়ে নেচে বেড়ায় অজানা স্বপ্ন এক।থেকে থেকে দুলে দুলে উঠে।হাওয়া লাগে নিভে যায়।নিভে যায় হাওয়া লাগে।ফুল ফুটে ফুল ঝরে।তবুও প্রতীক্ষা জীবনের।আশ্চর্য মানুষের এই টিকে থাকার লড়াই।"
বলাই বাহুল্য পুরো উপন্যাসে আংকেলের ভূমিকায় যিনি আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছেন;তিনি আর কেউ নন।উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র,হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা সুজিত।সুজিত বড়ুয়া।
যে কিনা একদিন দেশকে ভালবেসে,দেশের জন্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।কোন ধরণের প্রাপ্তির আশা ছেড়েই।
কিন্তু কখনো কখনো তার নিজের কাছে মনে হয়,মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ে একটি কোট ছাড়া প্রাপ্তি হিসেবে তিনি কিছুই পান নি! তখন আপন মনে বলে উঠেন যেটা পেয়েছি সেটাই বা কম কিসের!
পাকা জলপাই রং সেই কোটের।মাঝে মাঝে যখন হতাশা বেড়ে যায়,তখন তিনি এই জলপাই রঙের কোট গায়ে হেঁটে বেড়ান পাড়ার মধ্যে।
যেটি যুদ্ধের সময় একজন পাকিস্তানি অফিসারের শরীর থেকে খুলে নিয়েছিলেন তিনি।
কোটটি গায়ে ছড়ালেই অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করে তার মধ্যে।বুকের ছাতি ফুলে উঠে তার!
"জলপাই রঙের কোট" উপন্যাসে চট্টগ্রামের গৈরালা গ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখক তুলে ধরেছেন সারা দেশে রক্তপিপাসু হানাদার বাহিনীদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের চিত্র।
একই সাথে মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যক্ষ বয়ানে উঠে আসে একাত্তরের সেইসব বীরত্বপূর্ণ আখ্যানের কথা;যেখানে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একটি মাত্র পতাকার নিচে সমবেত হয়েছিল,
একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।
উপন্যাসের লেখকের ভাষারীতি,গদ্যশৈলী প্রাণবন্ত।যার কারণে ঐতিহাসিক উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও পাঠকের কাছে বিরক্তিকর লাগবে না।
তবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে লেখক তেমন সাবলীল নন।তাছাড়া আঙ্গিক বিচারে আখ্যান বর্ণনায় লেখকের যে প্রয়াস;তা পাঠকের মনযোগ রক্ষা করতে কতটুকু সামর্থ্য হবে?
এমন একটা প্রশ্নও শেষপর্যন্ত থেকে যায়।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা "জলপাই রঙের কোট" উপন্যাসটি একটি দালিলিক উপন্যাস হিসেবে আমাদের বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিবে।পরিশেষে একথা বলতেই পারি।
(জলপাই রঙের কোট-রবিউল করিম মৃদুল,দেশ পাবলিকেশন্স)
©somewhere in net ltd.