![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক.
আমরা যখন কোনো বই পড়ি, তখন এক ধরণের চিন্তা আমাদের মধ্যে কাজ করে । ফিকশন, নন-ফিকশনের ক্ষেত্রে এই চিন্তা আলাদাভাবে কাজ করে যদিও ; তারপরও সেই চিন্তা ক্ষেত্র অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্নভাবে আমাদের চালিত করে এবং নানাভাবে আমাদের বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করে।
খ.
আমরা যখন কোনো গল্প পড়ি তখন গল্পের চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়েই পড়ি । কখনো কখনো আমরা পাঠের মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি গল্পের চরিত্র থেকে । লেখকসত্ত্বার সাথে পাঠকসত্ত্বার এই দ্বান্ধিক অবস্থানটি আমাদের জানান দেয় পাঠক হিসেবে আমাদের জানার সীমাকে, চিন্তার সামগ্রিক অবস্থানকে । মূলত এই কারণেই আমরা গল্প থেকে ছিটকে পড়ি । এই একই বিষয়টি লেখকের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকর । অর্থাৎ স্বয়ং একজন লেখক এইসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই গল্পের চরিত্রকে দাঁড় করান নিজের সামনে । কেননা সবার একজন লেখককেই তার নিজের সৃষ্ট চরিত্রের সামনে দাঁড়াতে হয় । তাছাড়া পাঠককে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে চরিত্রটিকে তো স্বয়ং লেখককে ছাড়িয়ে যেতে হবে । তবেই তো চরিত্রটি ক্রমশ জীবন্ত হয়ে উঠবে । বেঁচে থাকবে হাজারো পাঠকের মাঝে ।
আমরা, পাঠকেরা তো সদা-সর্বদা নিজেদেরকেই খুঁজে বেড়াই গল্পের মাঝে, চরিত্রের মাঝে । নিরন্তর খুঁজে ফিরি আমাদের হারিয়ে যাওয়া চরিত্রকে, আমাদের হারিয়ে যাওয়া সময়কে, স্বপ্নকে । কখনো কখনো খুঁজে পায় আর কখনো পায় না ।
তাই তো হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকি নিজেদেরকে, এক লেখকের গল্প থেকে অন্য লেখকের গল্পের মাঝে...
গ.
উপন্যাসের জগতটা ভিন্নতর ।
একজন ঔপন্যাসিক নানা আঙ্গিকে কোনো না কোনোভাবে আমাদের মহাকালের গর্ভে ঢুকিয়ে দেন । এবং একইসাথে অতীত-ইতিহাস, বর্তমান-ঘটমান আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দোলাচালে আমাদের পরিভ্রমণ করাতে থাকেন । আমরাও ঔপন্যাসিকের দেখানো পথে তার ভাব-চিন্তাকে,মতাদর্শিক কল্পনা-জল্পনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা কাহিনীকে কিম্বা কখনো কখনো চরিত্রকে আবিষ্কার-উদ্ভাবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি । অবচেতনে ।
ঘ.
প্রবন্ধপাঠের প্রকৃতি বিষয়বস্তু সাপেক্ষে একেক জনের একেক রকম হলেও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রবন্ধের আবেদন মোটের উপর সকল পাঠকের কাছে একই রকম বলে মনে হয় । গল্প-উপন্যাস পাঠের মাঝে পাঠক কোনো কারণে পাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে কিম্বা খেই হারিয়ে ফেললে পরবর্তিতে তার পাঠ চালিয়ে নিতে তেমন অসুবিধা হয় না । কেননা লেখক কাহিনী ও চরিত্রের মাঝে পারস্পরিক যে যোগসূত্র তৈরি করে দেন তা থেকে বিস্মৃত হওয়া অংশকে খুঁজে পেতে একজন পাঠকের তেমন বেগ পেতে হয় না ।
ঙ.
কবি ও কবিতা এই শব্দদ্বয় নিয়ে শাব্দিক-ভাষিক ও ভাবমূর্তিগত একটা ধোঁয়াশা ছোটবেলা থেকেই পাঠকমনে হাজির থাকে । ফলত ছোটবেলা থেকে পাঠ্যবইয়ের কবিতা থেকে কবিতা বুঝবার এবং তার ঐশ্বরিক সৌন্দর্য্য অবলোকন করবার যে দায় থাকবার কথা একজন কবিতার পাঠকের, পরীক্ষা ও এর শিখন কিম্বা পঠনপদ্ধতিসহ আরো কিছু বিবিধ হঠকারিতার কারণে সেই দায় আর কোনোভাবেই অবশিষ্ট থাকে বলে মনে হয় না আমার মতো পাঠকদের । তারপরও কিছু কিছু কবির কবিতা শৈশবে-কৈশোরের অমলিন পবিত্র সব স্মৃতির মতো টানে ।
কিছু কিছু কবিতা মুখস্থ করে শুধু আবৃত্তি করতে ইচ্ছা করে । ইচ্ছা করে ডুব দিয়ে দিয়ে হারিয়ে যাই প্রতিটা শব্দের মাঝে । অনন্ত আকাশের মাঝে, শরতের আকাশের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকা ঐ নদীটার বুকের মধ্য দিয়ে!
চ.
আমরা যা-ই পড়ি না কেন, দিনশেষে আদতে যেটা পড়েছি সেটা থেকে কোনো না কোনোভাবে আমরা মূলত আমাদের চিন্তার রসদ যোগায় । তাই অবসরে সেসব বিষয় নিয়েই বেশি ভাবি যেসব বিষয় পড়েছি । আর আমরা যদি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি তাহলে যা পড়েছি তা আমাদের তাড়িত করে,অবচেতনে নানাভাবে আমাদের উদ্দীপ্ত করে । এবং অবশ্যই আমাদের পঠন-পাঠনকে প্রসারিত করতে, চিন্তার বিস্তার ঘটাতে এই পড়া ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।
রচনাকাল - ০৬.০৪.২০১৮ইং - ০৯.০৪.২০১৮ইং
©somewhere in net ltd.