নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাগো যুব সমাজ

মানবতার গান গেঁয়ে যায়-তারুণ্যের প্রেরণায়

ছানাউল্লাহ

পরিবর্তনের জন্য দেশপ্রেমিক সুস্থ রাজনীতি প্রয়োজন।

ছানাউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-৮

১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:২৫


* দেশে দেশে ড্রোন হামলা

বিশ্বব্যাপী মাকিন সাম্রাজ্যবাদের সন্ত্রাসবাদের আরেক ঘৃন্য নজির দেশে দেশে ড্রোন হামলা।সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড্রোন আলোচিত একটি নাম। যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়দা ও সন্ত্রাস দমনের নামে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, বুরুন্ডি প্রভৃতি দেশে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যদিও এতে নিরীহ সাধারণ নাগরিকই বেশি নিহত হচ্ছে।এর মাধ্যমে মাকিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন মানবাধিকার লংঘন করে যুদ্ধাপরাধ করেতেছে অপরদিকে অন্যান্য দেশের সাবভৌমত্ব লংঘন করতেছে অহরহ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ উত্তর আফ্রিকায় আল-কায়দা সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় নিজেদের শক্তি সামথ বাড়ানোর অজুহাতে আরো সামরিক ড্রোন কেনার জন্য ওবামা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ড্রোন হামলায় এ পর্যন্ত অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হলেও সিআইএ ড্রোন হামলা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। শীর্ষ দুটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন পাকিস্তান ও ইয়েমেন যুক্তরাষ্ট্রের চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলার কঠোর সমালোচনা করেছে। সংগঠন দুটি বলেছে, এসব হামলায় বেআইনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং কিছু ঘটনা যুদ্ধাপরাধের শামিল। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তানে বেআইনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা যুদ্ধাপরাধের শামিল। এর জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সাম্প্রতিক নয়টি ড্রোন হামলার ঘটনা তদন্তের পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। এদিকে পৃথকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলার ছয়টি ঘটনা তদন্ত করেছে আরেক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংগঠনটি বলেছে, দুটি ঘটনায় নির্বিচারে বেসামরিক লোকদের হত্যা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির দাবি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা ও তালেবানের অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হচ্ছে ড্রোন। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এটি অব্যাহত রাখবে। পাকিস্তান ও ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে ড্রোন ব্যবহার করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে ড্রোন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৩০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং রাশিয়া সেনাবাহিনীতে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট নিশানা অনুশীলনের কাজে ড্রোনের ব্যবহার শুরু করে। তবে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে ইন্টেলিজেন্সির কাজে। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহ গেরিলাদের সঙ্গে যুদ্ধে ইন্টেলিজেন্সির কাজে ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। উপসাগরীয় যুদ্ধে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মে গোয়েন্দা কাজে ড্রোনের ব্যবহার করা হয়। তবে ৯/১১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ঘটনা ড্রোনের গতানুগতিক ব্যবহারের ইতিহাসকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন দমনের নামে ২০০২-১০ পর্যন্ত ড্রোনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। এমনকি ২০১২ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও জনগণের করের প্রায় চার মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে ড্রোন ক্রয় করতে।
বর্তমানে দেশ হিসেবে ড্রোন ব্যবসার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ড্রোন বিক্রির চুক্তি করে রাশিয়ার সঙ্গে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে ৪১টি দেশের কাছে প্রায় ১ হাজারেরও বেশি ড্রোন বিক্রি করে শীর্ষে অবস্থান করছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানি জেনারেল অ্যাটোমিকস, বোয়িং এবং এয়ারো ভাইরনমেন্ট ড্রোন তৈরির জন্য বিখ্যাত। কোম্পানিটি ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কাছে শুধু ড্রোনই বিক্রি করেছে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এয়ারো ভাইরনমেন্ট ইউএস বিমানবাহিনীর কাছ থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন এবং সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ২৩.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার পেয়েছে ড্রোন তৈরির জন্য।
ড্রোনগুলোতে রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা, যা ৩০,০০০-৬০,০০০ ফুট উপর থেকে আল্ট্রাভায়োলেট লাইট ব্যবহার করে। এমনকি অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা মানুষ বা কোনো বস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম এবং ১০ হাজার ফুট উপর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম। প্রচলিত যুদ্ধবিমানের চেয়ে দামে কম হওয়ায় ড্রোনের কদর তাই একটু বেশি। বিশেষ সুবিধা হলো কোনো পাইলটের দরকার নেই, ভিডিও গেম খেলার মতো ড্রোন থেকে মিসাইল ছোড়ার কাজটি যিনি করেন, তিনি রয়েছেন ঘটনাস্থল থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের নেভাদা ঘাঁটিতে। শত্রুর হাতে ধরা পড়ার ভয় যেমন নেই, তেমনি নিহত হয়ে সরকারকে সাধারণ নাগরিকের তোপের মুখে ফেলে দেওয়ার ঝামেলাও নেই। আর তাই তো ২০০০ সালে যে পেন্টাগনের হাতে ৫০টিরও কম ড্রোন ছিল, মাত্র ১০ বছর পর ২০১০ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০০-তে। এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে প্রতি বছর ড্রোন হামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউএস বিমানবাহিনীর তথ্য মতে, ২০০৭ সালে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলার সংখ্যা ছিল ৭৪টি। আর ২০১২ সালে বছরে ড্রোন হামলার সংখ্যা ৩৩৩টি। পাকিস্তানে ২০০৪ সালের জুন মাসে তালেবান কমান্ডার নেক মোহাম্মদকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথম ড্রোন হামলা চালায় সিআইএ। এ হামলায় নেক মোহাম্মদের সঙ্গে ৮ জন নিরপরাধ মানুষও মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে সিআইএ প্রায় ৩৫০টি ড্রোন হামলা করেছে, যাতে ৩ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এভাবে মাকি©ন সাম্রাজ্যবাদ সন্ত্রাস দমনের নামে মূলত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর বাধাহীনভাবে মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।


বিভিন্ন আগ্রাসীমূলক তৎপরতা

বিভিন্ন সামরিক আগ্রাসন ছাড়াও মাকি©ন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন আগ্রাসীমূলক তৎপরতা পরিচালিত করে। যা তাদের সন্ত্রাসবাদী কাজের অংশ হিসাবে করা হয়।এর কিছু কাজের উল্লেখ করা হলো।
১. বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক পুলিশ প্রেরিত হয়।
২. প্রতিবেশী বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদশনের উদ্দেশ্যে নৌবহর প্রেরণ।
৩. বিভিন্ন দেশে মাকিন সামরিক ঘাটি তৈরি এবং সেগুলোতে অতিরিক্ত সৈন্য প্রেরন করা হয়।
৪. মাকি©ন কমান্ডের নিয়ন্ত্রনহীন দেশগুলোতে বিভিন্ন আগ্রাসী ব্যবস্থা নেয়া হয়।
৫. বিভিন্ন দেশের বন্দীকে জিম্মি করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
৬. বিভিন্ন দেশের বিমান পরিচালনায় আমেরিকান পাইলটকে ব্যবহার করা হয়।
৭. যে সব দেশে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি, সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ ও পরামশ প্রদান কমসূচি গ্রহন করা হয়।
৮.ন্যাশনাল গাড জড়ো করেছিল।

বিভিন্ন দেশের জাতীয় নেতা-নেত্রী হত্যা

মাকিন সাম্রাজ্যবাদের সন্ত্রাসবাদী কাজের একটি অংশ হলো তাদের স্বাথের বিরোধী নেতা-নেত্রীদের হত্যা করা।তাদের স্বাথের জন্য বিভিন্ন দেশের শাসকদের বিভিন্ন কাজে বাধ্য হয়। প্রথমে বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয়, প্রলোভনে কাজ না হলে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাথ আদায় করা হয়। তাতেও স্বাথ আদায় না হলে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে তাদের স্বাথের পরিপন্থী কেউ হলে তাকে গোপনে না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার স্বাথ উদ্ধার হলে বা প্রয়োজন পুরিয়ে গেলেও তাদেরকেও শেষ করে দেওয়া হয় প্রমান লোপাটের জন্য। এসব নিকৃষ্ট কাযক্রমের কিছু বণনা আমরা গোয়েন্দাবৃত্তির অধ্যায়ে করেছি।তারা তাদের স্বাথ উদ্ধারের জন্য হেন কোন অপকম নেই করতে পারে না। তারা খুন মত ঘৃন্য ও অমানবিক এ কাজগুলোকে শিল্পে রুপান্তর করেছে।তারা ঘৃন্য এ কাজ গুলো এমন ভাবে করে যা কল্পনাকেও হার মানায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের খ্যাতমান বিদেশী নেতা-নেত্রী গুপ্ত হত্যা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তা নিম্নরুপঃ
এ তালিকায় মাকিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ কতৃক নিয়োজিত হয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র সদর দফতর স্থাপন করে ক্যাস্টোবিরোধী কিউবানরা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যেসব হত্যাকান্ড ঘটায় সেগুলো অন্তভূক্ত করা হয়নি।
১৯৪৯-সালে কিউকু, কোরিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা।
১৯৫৪-সালে পশ্চিম জামানীতে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে সি আই এ হত্যা করে।
১৯৫৫-সালে জোসে এন্টোনিউ রেমন, পানামার প্রেসিডেন্ট।
১৯৫০ সালে চৌ এন লাই, চীনের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৫১ সালে কিম ইল সুং, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
১৯৫০ সালে ক্লারো এম কেরুটা, ফিলিপাইনের বিরোধী দলীয় নেতা।
১৯৫৫ সালে জওহর লাল নেহরু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৫৯ ও ১৯৬৩ সালে নরোদম সিহানুকা, কম্বোডীয় নেতা।
১৯৬১ সালে ফ্রাঁসোয়া পাপডক দুভেলিয়ের, হাইতির রাজনৈতিক নেতা।
১৯৬১ সালে প্যাট্রিস লুমুম্বা, কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী।
১৯৬১ সালে জেনারেল রাফায়েল ক্রজিল্লো, ডোমিনিকান রিপাবলিক নেতা।
১৯৬৩ সালে নগো দিন দিয়েম, দক্ষিণ, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট।
১৯৬০ সালে ফিদেল কাস্ট্রো, কিউবার প্রেসিডেন্ট, ১৫ বারেরও বেশি হামলা করা হয়।
১৯৬০ এর দশকে রাউল ক্যাস্ট্রো, কিউবার প্রেসিডেন্টের ভাই।
১৯৬৫ সালে ফ্রান্সিসকো কামানা, ডোমিনিকান রিপাবলিকের বিরোধী দলীয় নেতা।
১৯৬৫ সালে পিয়ারে জেন্দানদুমওয়ে, বুবুন্ডির প্রধানমন্ত্রী।
১৯৬৫-৬৬ সালে চালস দ্যা গল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
১৯৬৭ সালে চে গুয়েবারা, কিউবার নেতা।
১৯৭০ সালে জেনারেল বেনে শ্নেইভার, চিলির সেনাবাহিনীর প্রধান।
১৯৭০ এর দশক এবং ১৯৮১ সালে জেনারেল ওমর টরিজম, রাজনৈতিক নেতা।
১৯৭২ সালে জেনারেল মেন্যুয়েল মেরি নরিওগা, পানামার গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান।
১৯৭৩ সালে সালভেদর আলেন্ডে, চিলির প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৫ সালে মুবতো সেকো, জায়ারের প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৬ সালে মাইকেল ম্যানলি, জ্যামেকার প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৩ সালে মিগুয়েল দ্যা এসকোটো, নিকারাগুয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালে নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তার, জাতীয় পরিচালনালয়ে ৯ জন কমাডেন্ট। ১৯৮০ সালে ড. জেরাল বুল, বেলজিয়ামের মোসাদ কতৃক কানাডার এই ব্যালিস্টিক বিজ্ঞানীকে গুপ্ত করা হয়।
* মুসলিম নেতা যাদেরকে গুপ্ত হত্যা করা হয় কিংবা হত্যার প্রয়াস চালানো হয়ঃ-(আংশিক)
১৯৫০ সালে সুকণ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট। ১৯৫৭ সালে জামাল নাসের, মিসরের প্রেসিডেন্ট। ১৯৬০ সালে ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাশেম, ইকারের া ১৯৮০-৮৬ সাল মোয়াম্মার গাদ্দাফি, লিবিয়ার রাজনৈতিক নেতা,বেশ কয়েকবার তার উপর হামলা ও তার চক্রান্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে আয়াত ইল্লাহ খোমেনী, ইরাকের আধ্যাতিক নেতা। ১৯৮৩ সালে জেনারেল আহমদ ফালেমী, মরোক্কোর সেনা কমান্ডার। ১৯৮৫ সালে শেখ মুহাম্মদ হোসাইন ফাদলাল্লাহ, লেবাননের শিয়া মুসলিম নেতা ঐই হামলায় ৮০ জন নিহত হয়। ২০০৬ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। ২০১১ লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার আল গাদ্দাফী। ২০১১ আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন।
মাকি©ন যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলের শিকার যারা
৪ এপ্রিল ১৯৭১ জুলফিকার আলী ভূট্টো, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা। ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়াউল, পাকিস্তানের সামরিক নেতা। ১৯৯৫ সালে মুতজা ভূট্টো, পাকিস্তানের সম্ভাব্য বিরোধী দলীয় নেতা। ২৫ মাচ ১৯৭৫ সালে সৌদি বাদশা ফয়সাল। ২৪ আগষ্ট ১৯৯৯ সালে মোল্লা মোহাম্মদ ওমর, আফগানিস্তান। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমদী নেজাদ। ২০১২ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
এ সকল ঘটনাও সাম্রগ্রিক চিত্র নয়। বিশ্ব সভ্যতায় আমেরিকার মানবতা ধ্বংসের সামান্য খতিয়ান মাত্র যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
এগুলো ইহুদী মাকিন সন্ত্রাসবাদের আংশিক বিবরণ মাত্র। নিজেরাই বিশ্ব সন্ত্রাসের গডফাদার হয়ে বসে আছে আবার তারাই নাকি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে! এ যেন ভূতের মুখে রাম রাম!! তাদের সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে পৃথিবীর মানবতা ও মানবাধিকার ভূলন্ঠিত।নিজেদের স্বাথের জন্য গোটা বিশ্বকে সন্ত্রাসের কসাইখানা বানিয়ে রেখেছে।

মাকিন সাম্রাজ্যবাদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রকে সহায়তাকারী

আমেরিকার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রকে সরাসরি সহায়তা করছে সৌদি আরব ও কাতার।এছাড়া দুবাই, আরব আমিরাত, জডান, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের দালালখ্যাত রাষ্ট্রগুলো।আর মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশেগুলো রয়েছেই।বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ চক্র সারা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে। এর মধ্যে মালি, লিবিয়া ও সিরিয়ার সন্ত্রাসী-চক্রের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা হিসেবে দেখা হচ্ছে কাতারকে। এ নিয়ে ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স ২৪ টিভি এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলেছে- "কাতার কি মালির সংকটে উস্কানি দিচ্ছে?" ওই প্রতিবেদনে ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মেহদি লাজার বলেন, মালিতে কাতারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে কাতার তহবিল যোগান দেয় এবং এ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে ১৯৮০'র দশক থেকে। এ বিষয়ে মালির উত্তরাঞ্চলীয় গাও শহরের মেয়র সাদো দিয়ালো বলেছেন, মালি অভিযানে যে ফ্রান্স নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা ভালো করেই জানে যে, কারা সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি কাতারের নাম উল্লেখ করে বলেন, এ দেশটি প্রতিনিয়ত কথিত সহায়তা হিসেবে খাদ্য ও ত্রাণ পাঠাচ্ছে গাও এবং টিম্বুকটু বিমানবন্দরে। এ ছাড়া, পাকিস্তানে ততপর লস্কর-ই জাংভি ও লস্কর-ই তাইয়্যেবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও সৌদি-আমেরিকার সন্ত্রাসী চক্রের অংশ এবং তারা মূলত সৌদি আরব থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। এ ছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদেরকে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।(সূত্র-রেডিও তেহরান) এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুড হঠাতে মিলিটারী ক্যু আর ক্রাকডাইন ও হামাস নিমূলে ইসরাইলের ব্যাপক গণহত্যায় সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবি©ক সহায়তা দেওয়ার খবর মিডিয়ায় এসেছে। মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রের ধারক বাহকরা তাদের রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের নিকৃষ্ট দালালে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিজের দেশের জনগণের শক্র হয়ে তাদের ওপর গণহত্যা চালাতেও দ্বিধাবোধ করছে না।

বিশ্বব্যাপী সামরিক অভুত্থান/দখনবাজি/গণহত্যা/মানবাধিকার লংঘন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক নম্বর সুপার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশ। বর্তমান পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ঘটক এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে দিয়ে। তাইতো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুবৃত্তি ও মানবাধিকার লংঘন করেই চলেছে। যেন সৃষ্টিকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর গজব হিসাবে পাঠিয়েছেন। দেশে দেশে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘন করে এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের খলনায়ক হয়ে পরবর্তীতে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তি হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, সৃষ্টি করতে হয়েছে অনেক ইতিহাস। এ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘৃণিত রুপটি, যা মানবত ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন এবং গোটা পৃথিবীকে ক্ষত বিক্ষত করুণ ইতিহাস। দস্যুবৃত্তিই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পেশা। আজ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধন সম্পদ, সহায় সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সবই বিভিন্ন দেশ থেকে জোর পূর্বক দস্যুতা ও প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা। এরা মূলত পরের ধন সম্পদের উপরই পুদ্দারী করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুতার শিকার হয়নি পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই। কিভাবে তারা মানবতা ও মানবাধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছে, সুন্দর এ পৃথিবীকে করেছে রক্তাক্ত, করছে ধ্বংসস্তুপে। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী ধ্বংসের দানব রুপে আর্বিভূত হয়েছেন। তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়নি এমন দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার উপরই খবরদারী শুরু করেছে । এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের উপরও গোয়েন্দা নজরদারী করতে দ্বিধা করেনি তারা। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তার বার্তায় উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুবৃত্তির নানা অজানা কাহিনী। তাদের আসল চেহারা পৃথিবীবাসীর সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে এ বিকল্প গণমাধ্যম। মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা সেজে মানবাধিকার ধ্বংসের মহানায়ক হয়ে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তারা চালিয়েছে তা কিছুটা হলেও তুলে ধরেছে উইকিলিকস। যা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। তারাই পৃথিবীটাকে যেমন ইচ্ছা চালাচ্ছে। তাইতো সকল দেশ তাদেরকে সমীহ করে চলে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যস্ত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ মানবতা ধ্বংসের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টগণ। যারা ইতিহাসে মানবতা ধ্বংসের জন্য কুখ্যাত হয়ে রয়েছেন। এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবতা ধ্বংস, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুতা বর্ণনা করতে গেলে একটি বিরাট আকৃতির বই হয়ে যাবে। কারণ তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সচেতন পৃথিবীবাসী ও পৃথিবী গড়ার কারিগর এ তরুণ সমাজের উদ্দ্যেশে আংশিক কুকর্মের বর্ণনা পেশ করা হল, যাতে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের নায়করা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সাম্রাজ্যবাদের শিকড়কে পৃথিবী থেকে উপড়ে ফেলে, একটি শান্তি, সুখের নির্মল পৃথিবী গড়তে পারেন।
* শ্যাময়েল হান্টিংটন একজন ইহুদী পন্ডিত। ‘সভ্যতার সংঘাত’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। পুস্তকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাশ্চাত্য সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ইসলামকে হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করা । এটাও প্রমাণ করা যে, ইসলাম ও মুসলিমের সাথে বস্তুবাদী কথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্ধ এবং সংঘাত অনিবার্য। তার এই ত্বত্ত আমেরিকা ও ইউরোপের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি। বৈদেশিক নীতি ছাড়াও আর্ন্তজাতিক যে কোন ইস্যু এবং অভ্যন্তরীন নীতি নির্ধারনে আমেরিকা ও ইউরোপ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে প্রতিপ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের তাবৎ সম্পদের সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে ইহুদী ও খৃষ্টান বলয়াধীন শক্তিগুলো । প্রায় নব্বই ভাগ মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় ইহুদীদের দ্বারা। আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো কার্যত ইহুদী খৃষ্টান স্বার্থ সংরণে শতভাগ নিষ্ঠাবান। তারা মানবতাকে পদদলিত করে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায়। তারা তখনই হিংস জানোয়ার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে কতটা হীন, ঘৃন্য, জঘন্য ও পাপিষ্ট হতে পারে শয়তানের প্রতিভূ হতে পারে, তার একটি খন্ড চিত্র নিম্নে প্রদান করা হল:
১. আফগানিস্তানে তালেবান নির্মূলে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক অভিযান এখনো চলছে ।আবু রাইহানের আমেরিকা ও ভাস্কোদাগামার ভারতে আসার নৌপথ চিহিৃত করার পর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা বিশ্বব্যাপী খৃষ্টীয় প্রধান্য বিস্তারের লক্ষে যে আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। আফগানিস্তানে হামলা তারই আধুনিক সংস্করণ।
২. মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রায়হান আল বেরুনী আমেরিকা যাওয়ার পথ আবিস্কার করার পর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা দলে দলে আমেরিকায় গিয়ে, কিভাবে আদি অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে মাদক দ্রব্য ছড়িয়ে দিয়ে তিলে তিলে তাদের শেষ করে দিলেন তা আমরা দ্বিতীয় অধ্যায় এ আলোচনা করেছি।এর পর শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাণিজ্যের নামে রণপ্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ার উদ্দ্যেশে তরী ভাসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা শুরু করে আফিম ব্যবসা যা প্রাচ্যের জাতিসংঘের কাছে গর্হিত অপরাধ হিসাবে উল্লিখিত। প্রথমে এই ব্যবসায় বৃটিশরা মনোনিবেশ করে। পরে শ্বেতাঙ্গরা এতে ভাগ বসায়। এই ব্যবসায় শতকরা ৫শ ভাগের বেশি লাভ হত। এই লাভজনক ব্যবসাকে নিরাপদ করার লক্ষে মার্কিনীরা উঠেপড়ে লাগে।
৩. শ্বেতাঙ্গ মাকি©নীরা অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আফিম ক্রয় করে ভূমধ্য সাগরে পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘূরে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে চীনের ক্যান্টনে নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও আধুনিক লিবিয়ার জলসীমা ব্যবহার করতে হত। বাণিজ্য তরীগুলো এসব দেশের বন্দর থেকে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করত। সেজন্য এসব দেশকে মার্কিন বণিকদের বড় অংকের কর দিতে হত। যা মার্কিন সরকার ১৭৮৭ সালে মার্কিন বণিকদের নিরাপত্তা বিধান ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত একটি স্বার করতে মরক্কোকে বাধ্য করে। একই ধরণের চুক্তি স্বার করতে ১৭৯৬ সালে লিবিয়াকে এবং ১৭৯৭ সালে তিউনিসিয়াকে বাধ্য করে।
৪. এতেও মার্কিনীরা সন্তুষ্ট হল না। তারা উল্লেখিত দেশ গুলোর ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮০১-১৮০৫ সাল পর্যন্ত প্রথমে লিবিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করে। মার্কিন রণতরীর বহর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী অবরোধ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের অনুমোদনক্রমে যুদ্ধমন্ত্রী চিমোথি পিকারিং এর নির্দেশে তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল যথাক্রমে উইলিয়াম এটন ও জমস এল ক্যাথকাট লিবিয়ায় সামরিক অভ্যূথান ঘটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। ল্েয পৌছার জন্য তারা লিবিয়ার শাসকের ভাই মিসরে নির্বাসিত হামেদ করমানের সাথে চুক্তি করে। মতা দখলের জন্য মার্কিনীরা তাকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে এই শর্তে যে, তিনি মার্কিনীদের বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। পাশাপাশি তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল উইলিয়াম এটমকে তার সেনাবহিনীর সর্বাধিনায়ক করবে। অতঃপর এটম ও কারমনেলির সমর্থকরা মার্কিন মেরিন সেনা ও নৌ বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর সমর্থনে লিবিয়ার দেরনা শহর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় ত্রিপলীর শাসনকর্তা ইউসুফ কারমানলি মার্কিনীদের সাথে এক অসম চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হন। এটম লিবিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের পদটি দখল করে । এই কৃতিত্বের জন্য ম্যাসাচুয়েটস কর্তৃপ তাকে দশ হাজার একর ভূ-সম্পত্তি উপহার দেয়। একই কায়দায় অনুরুপ একটি চুক্তি সম্পাদনে করতে বাধ্য করা হয় মরক্কোকেও। এভাবে করে মার্কিনীরা দস্যুতার মাধ্যমে আস্তে আস্তে পৃথিবীতে সাম্র্যাজ্যবাদের কালো হাত প্রসারিত করে।
৫. লিবিয়া ও মরক্কোকে মার্কিন পরিকল্পনা সফল হবার পর তারা নজর দেয় কিউনিসিয়ার প্রতি। তিউনিসিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য সেখানকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত শাসনকর্তার সাথে ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকে। ফলে শাসনকর্তা তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হন। আর সেই অজুহাতে ১৮০৫ সালের ১লা আগষ্ট জন রজার্ট এর নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌ বহর কোন প্রকার সতর্কবানী ছাড়াই তিউনিসিয়ায় প্রচন্ড গোলাবর্ষন শুরু করে। পাশাপাশি রজার্ট তিউনিসিয়ার শাসকের কাছে একটি চুক্তির খসড়া পাঠিয়ে বলেন, এতে স্বার না করলে তার রাজধানীকে গোলার আঘাতে গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে সরকার প্রধান সে অসম চুক্তিতে স্বার করেন।
৬. ১৮১৫ সালে কমোডর স্টিফেন ডেকাডুর ও কমোডর উইলিয়াম ব্রিজের নেতৃত্বে জলদস্যু দমনের নামে দু-স্কোয়াড্রন মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আলজেরিয়ার উপকূলে এসে হাজির হয়। আলজেরিয়ার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য জাহাজে বৃটিশ পতাকা উড়িয়ে স্কোয়াড্রন দু’টি পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করে আলজেরীয় নৌ-বহরকে ধ্বংস করে দেয়। এর পর আলজিয়ার্স শহরের উপর প্রচন্ড গোলা বর্ষন শুরু করে । পাশাপাশি আলজিয়ার্সের গর্ভনর ড. ওমরের কাছে বশ্যতামূলক এক চুক্তিনামা পাঠায়, যাতে মার্কিন বণিকদের বিশেষ সুযোগ ও ভূমিসহ অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। চাপের মুখে মার্কিনীরা গর্ভনরকে সে চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
৭. এই সময় মার্কিনীরা আবারো নতুন করে তিউনিসিয়া ও ত্রিপোলী ও মৌরিতানিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়তি দাবী-দাওয়া আদায় করে নেয়।
৮. ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষে মার্কিনীরা বর্তমান ওমান ও থাইল্যান্ডকে এক অধীনতামূলক চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করে।
৯. ১৮৮২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষনের পর মিসরকে দখল করে নিতে বৃটিশকে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন স্কোয়াড্রনের চারটি যুদ্ধ জাহাজ। গোলার আঘাতে আলেকজান্দ্রিয়াকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার পর শত শত মিসরীয়দের লাশ মাড়িয়ে বৃটিশ বাহিনীর সাথে সেখানে অবতরণ করে মার্কিন মেরিন সেনা।
১০. ১৮২০ এর দশকে মার্কিনীরা সুমাত্রার উত্তর ও উত্তর পশ্চিম উপকূলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার মানসে নানা প্রকার রোগ ছড়িয়ে দেয়। যে করণে সেখানে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এতে সুমাত্রা বাসীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা যায়। মার্কিন নাবিকেরা উদ্দেমূলক ভাবে নানা ঔদ্ধাত্যপূর্ণ ও গর্হিত আচরণের মাধ্যমে এই অসন্তোষকে আরো বাড়িয়ে দিলে স্থানীয় জনগণ ১৮৩১ সালে মার্কিন বণিক ও মৈত্রী নামক একটি জাহাজে হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ গ্রহনার্থে ১৮৩২ সালে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পোটেম্যাক কুয়ালাবাটুতে ভিড়ে এবং এর নাবিকরা বন্দরে অবতরণ করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে দেড়শ মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন এবং দুইশত জন আহত হয়। মার্কিনীদের উদ্দেশ্য যাতে কোন প্রকারে স্থানীয় বাসিন্দারা টের না পায়, সে জন্য পোটেম্যাকে ওলন্দাজ পতাকা উড়ান হয়েছিল।
১১. ১৮৪২ সালে ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ বিশিষ্ট এক মার্কিন নৌ-বহরের কমান্ডার চালর্স উইলিয়াম সুলু দ্বীপপুঞ্জের শাসক সুলতান মুহাম্মদকে একটি অধীনতামূলক মার্কিন চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
১২. ১৮৫০ সালের ২৩ জুন মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি চুক্তিতে স্বার করতে ব্র“নাইর সুলতান ওমর আলীকে বাধ্য করে মার্কিনীরা। অতঃপর ১৮৯৬ সালে ব্র“নাইর উত্তরাংশের বিরাট এলাকা মার্কিনীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিতেও সুলতানকে বাধ্য করে। এরপর সুলতান বাধ্য হন আমেরিকান ট্রেডিং কোম্পানী অব বোর্ণিও’র প্রধান কর্মকর্তা টোরিকে এমবোয়ানা ও মারুদুর রাজা হিসাবে নিয়োগ করতে। সুলতান রাজাকে স্বাধীন সার্বভৌম শাসকদের মত আইন প্রনয়ন, মৃত্যু দন্ড দান, মুদ্রা তৈরি ও প্রচলন, প্রতিরা বাহিনী গঠনসহ নানাবিধ মতা প্রদানে ও বাধ্য হন।
১৩. ১৮৯৯ সালে আজকের ফিলিপাইনের তৎকালীন সুলতান জামাল উল কিরামের সাথে মার্কিনীরা এক সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার পর ১৯১৩ সালে মার্কিনীরা সকল মুসলিম এলাকা দখল করে নেয় এবং তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতিতে পরিনত করা হয়। যে কারণে ফিলিপাইন এখন একটি খৃস্টান রাষ্ট্র।
১৪. ১৯৭০ সালের মধ্যে কৌশলে ৫০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা অফিসার মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি নেয়, যার মধ্যে জেনারেল স্টোন কায়রোতে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ স্টাফ এবং কর্নেল চেইলি লঙ সুদানে মোতায়েনকৃত মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ অব স্টাফের পদ দখল করে। এরপর ইরিত্রিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিনীরা মিসর-ইথিওপিয়া যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয় এবং যুদ্ধে মিসরীয়দের পরজয় ঘটে। এই যুদ্ধে মিসর আর্থিক এবং সামরিক দিক থেকে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সে সুযোগে ১৯৮২ সালে বৃটিশ মিসরকে দখল করে নেয়। এেেত্র মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলোও বৃটিশকে সহায়তা করে। কর্নেল চেইলি লঙ এতে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি তারা ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়াকে আলাদা করে ফেলে একটি খৃষ্টান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।
১৫. রুশ গবেষক বনদারেভস্কি তার ‘মুসলিম জনগণের শক্রর স্বরুপ’ বইতে লিখেছেন, এক হাতে বাইবেল আর অন্যহাতে ডলারের হালি নিয়ে মার্কিন উপনিবেশবাদীরা তাদের পশ্চিমা প্রতিযোগিদের মধ্যে এবং মুসলিম শাসকদের মধ্যে বিরোধ বিবাদ জাগিয়ে তোলে, তারা অস্ত্র শস্ত্র বিক্রি করে এবং অস্ত্রের হুমকি প্রদর্শন করে এভাবে তারা অটোমান সাম্রাজ্য, পারস্য উপসাগর, জাঞ্জিরার দ্বীপ ও সুলু দ্বীপ মালায় ঘাঁটি গেড়ে বসার চেষ্টা করে, এটা ছিল মার্কিনীদের প্রথম পর্যায়ের আগ্রাসন মূলক তৎপরতা। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে চাপানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মার্কিন আগ্রাসনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে রুশ, ফরাসী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট একটি জোট গঠিত হয়, যা মিত্রশক্তি নামে পরিচিত লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝি সময় মিত্রশক্তি যখন ইউরোপের পরাজিত জাতিগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে ব্যস্ত, তখন মার্কিনীরা এদের অগোচরে জাপানে পারমানবিক বোমা হামলা চালায়। এই হামলা করা হয় শরীকদের না জানিয়েই। ৬ ও ৯ আগস্টের এই বোমা হামলায় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসিকা শহর দুটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে লাখ লাখ লোক প্রাণ হারায় ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। বোমা হামলার ক’দিন পর ১৪ আগস্ট জাপান বিনা শর্তে সে অঞ্চলের মার্কিন সমর অধিনায়ক ডগলাস ম্যাক আর্থারের কাছে আত্মসমর্পন করে। ফলে ম্যাক আর্থার জাপানের ভাগ্য নিয়ন্ত্রা হয়ে যান। অন্য মিত্রদের সেখানে নাক গলানোর কোন সুযোগ ছিল না। ফলে সেখানে মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। একটানা ৬ বছর জাপানকে স্বীয় নিয়ন্ত্রনে রেখে সকল প্রকার শোষন শেষে ১৯৫১ সালে শান্তি চুক্তির নামে জাপানীয়দের মার্কিন অধীনতামূলক এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জাপানের বোনিন ও রিউকু দ্বীপ দু’টিতে মার্কিন নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাপানে মার্কিন সেনা ঘাঁটি স্থাপিত হয়। চুক্তির শর্তানুসারে জাপান এখনো শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
১৬. ইন্দোচীন ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান একে দখল করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর একদিকে ইন্দোচীন স্বাধীনতার দাবী তোলে, অন্যদিকে ফ্রান্স সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ অবস্থায় ইন্দোচীনকে উত্তর ভিয়েতনাম, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস এই চারটি রাষ্ট্রে ভাগ করা হয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামে ফ্রান্সের পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমতাবস্থায় দক্ষিণ ভিয়েতনামবাসীরা স্বাধীনতার জন্য এবং উত্তর ভিয়েতনামবাসীরা উভয় ভিয়েতনামকে একত্র করার জন্য আন্দোলন শুরু করে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের পুতুল সরকার মার্কিন মদদে সে আন্দোলন দমনের প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর্যায়ে মার্কিনীরা সেখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। বিশ্বব্যাপী এর প্রতিবাদ জানান হয়। এমনকি খোদ মার্কিনীরা পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন সকল প্রকার প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সেখানে মার্কিন সৈন্য প্রেরণ করতে থাকে। সর্বমোট পাঁচ লাখ মার্কিন সৈন্য সেখানে জড়ো করা হয়। তারা ভিয়েতনামের পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে এবং পাইকারী ভাবে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সহ এক কোটিও বেশি মানুষ হত্যা করে। মার্কিনীরা নির্বিচারে বোমা মেরে হাসপাতাল, শিশুদের স্কুল, ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে। বেসামরিক এলাকায় নাপাম বোমা ফেলে নিরপরাধ নারী-পুরুষকে হত্যা করে। ১৯৬৫ সাল থেকে মোট ৭০ লাখ টনের ও বেশি বোমা ভিয়েতনামে ফেলা হয়; যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বোমার তিনগুনেরও বেশি । মার্কিন হিসাব মতে, এক লাখ ভিয়েতনামবাসী কেবল এই বোমার আঘাতে আগুনে পুড়ে মারা যায়। ধ্বংস হয় দু’শ হাসপাতাল ও সাতশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কথিত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঠেকানোর সেই মার্কিনীদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে মার্কিন হিসাব অনুযায়ী ২৩ লাখ লোক প্রাণ হারায়। অবশ্য আমেরিকাও কম মূল্য দেয়নি। তাদের পাঁচ হাজার বিমান ও প্রায় দু’হাজার হেলিকপ্টার এই যুদ্ধে ধ্বংস হয়। হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য প্রাণ হারায়। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরুধী প্রতিবাদ তীব্র হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক চাপের কারণে হাজার হাজার মার্কিন সৈন্যের লাশ ভিয়েতনামে রেখে আমেরিকা সে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
১৭. কম্বোডিয়ায় অন্তদ্বন্দের সুযোগে মার্কিন সৈন্য সেখানে প্রবেশ করে এবং মার্কিন বিরুধীদের উপর পাইকারী হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা লাখ লাখ কম্বোডিয়ার জনগণকে হত্যা করে। শেষ পর্যন্ত তারা বিশ্বনিন্দা মাথায় নিয়ে পরাজয়ের গ্লানি মুখে মেখে কম্বোডিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
১৮. কোরিয়াকে বিভক্ত করা এবং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যে তিক্ততা, তারও নাটোর গুরু এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদেরই কলকাঠি নাড়ানোতে কোরিয়ার লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ অকাতরে প্রাণ হারায়। তাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার মানুষকে এখনো সীমাহীন কষ্টের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
১৯. ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিষ্ট বিপ্লব ঠেকানোর নামে মার্কিনীরা সেখানে সামরিক অভ্যূথান ঘটিয়ে সুহার্তোকে ক্ষমতায় বসায়। সুহার্তো নিষ্ঠুরতার সাথে মার্কিন বিরুধী হিসাবে পরিচিত লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে । কিন্তু এই মার্কিন পদসেবককে একটি দৃঢ খৃষ্টান রাষ্ট্র হিসাবে পূর্ব তিমুরকে স্বাধীনতা না দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ অবস্থান নিলে তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে চিহিৃত করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে চলৎশক্তিহীন আব্দুল ওয়াহিদকে ক্ষমতায় বসায়। মার্কিন পদলেহী আব্দুল ওয়াহিদ বিনা বাক্যব্যয়ে পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা দিয়ে দেন। কিন্তু তারপরও তার শেষ রক্ষা হয়নি। কলার খোসার মত তাকেও ছুঁড়ে ফেলা হয়।
২০. শ্রীলংকায়ও কথিত কমিউনিষ্টদের বিপ্লব ঠেকাতে মার্কিনীরা সেখানে এক সামরিক অভ্যূথান ঘটায়। এই সামরিক সরকার কমিউনিষ্ট দমনের নামে মূলত নিরপরাদ মার্কিন বিরুধী জনগণকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে। এ সময় লাখ লাখ লোক প্রাণ হারায়। এখনও সেখানে তামিল বিদ্রোহ লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
২১. ১৯৫৮ সালে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে আমেরিকা আইয়ুব খানকে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসায়। কিন্তু আইয়ুব খান স্বাধীন পররাষ্ট নীতি গ্রহণ করলে কৌশলে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পাক-ভারত যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়। আবার পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির শোষণ থেকে লাভের জন্য আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করার নামে প্রতারকের ভূমিকা পালন করে এবং হানাদার বাহিনীর গণহত্যাকে সমর্থন জানায়।
২২. সুদান যাতে একটি মুসলিম দেশ হিসাবে টিকে থাকতে না পারে, সেজন্য স্বাধীনতার শুরুতেই সেখানকার খৃস্টানদের বিদ্রোহ করার জন্য উস্কিয়ে দেয়া হয়। নন্দিত সরকার সুদানে ইসলামী আইন চালু করলে মার্কিনীরা বিদ্রোহীদের উস্কে দেয়। কিন্তু তারা মার্কিনীদের আশা পূরণ করতে না পারায় মিথ্যা অজুহাতে সুদানকে একঘরে করে রাখা হচ্ছে। সেখানে এখনো গৃহ যৃদ্ধ চলছে। এযুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ লোক প্রাণ হারায় এবং ৬০ লাখ উদ্বাস্তোতে পরিনত হয়েছে। খৃস্টান বিদ্রোহীদের কাজে লাগিয়ে মুসলিম দেশ সুদান কে দু’ভাগ করে দক্ষিণ সুদান নামে একটি খৃস্টান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়েছে ২০১০ সালে। আর মার্কিন সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে হেগের আর্ন্তজাতিক অপরাথ ট্রাইবুনালকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারির পরওয়ানা জারী করা হয়।
২৩. ইরাক মুসলিম বিশ্বের একটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। তার আর্থিক ও সামরিক শক্তি মার্কিন-ইসরাঈলের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। মার্কিন মদদে ইসরাঈল একদিন কোন রুপ ঘোষনা ছাড়াই ইরাকের পারমানবিক চুল্লির উপর হামলা চালায় এবং তা ধ্বংস করে দেয়। এরপরও ইরাকের সামরিক শক্তিতে শংকিত মার্কিনীরা ইরাককে ইরানের সাথে যুদ্ধে বাধিঁয়ে দেয়। দীর্ঘ আট বছর এই যুদ্ধ চলার পরও দুটি মুসলিম শক্তি সম্পর্কে শংকামুক্ত হতে না পেরে ইরাককে কুয়েতের প্রতি লেলিয়ে দিয়ে তার সামরিক শক্তি ও স্থাপনা ধ্বংস করার অজুহাত দাড় করায়। কুয়েতমুক্ত করার নামে মার্কিনীরা ইরাকের সকল সামরিক শক্তি ও স্থাপনা ধ্বংস করে। দু’লাখ ইরাকী সৈন্যকে ট্যাংকের নিচে পিষে মারে। ইরাকের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাকের কোটি কোটি শিশু খাদ্য ও ঔষুধের অভাবে মারা যায়। তাছাড়া এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বার বিমান হামলা চালিয়ে ইরাকের হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়। আজকে ইরাক আগ্রাসনের কথা সবারই জানা। বিনা যুক্তিতে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ব জনমতকে তোয়াক্কা না করে লাখ লাখ মানুষ কে হত্যা করল, ইরাক জীবন্ত কবরস্থানে পরিনত করল, হাজার হাজার বাড়ী ঘর বোমায় উড়িয়ে দিল। এই সব দস্যুবৃত্তির পক্ষে কি কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে
২৪. দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইঙ্গ-মার্কিন প্রত্য সহযোগিতায় আরব বিশ্বের হ্রদপিন্ডের উপর বিষফোঁড়া সদৃশ ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়। অতঃপর এই রাষ্ট্রের অস্থিত্ব রা, স্থিতি ও বিকাশের জন্য মার্কিনীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা আরব নিধন ও ভূ-খন্ড দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। মার্কিন ভেটোর কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ও কিছু করতে পারছে না। প্রকৃত অর্থে প্রতিটি আরব শিশুর রক্তে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত রঞ্জিত, তাদের ইঙ্গিতে এখনো সেখানে রক্ত ঝরছে।
২৫. ১৯৫৬ সালে মিসর সুয়েজ খাল জাতীয় করণ করলে বৃটিশ ও ফরাসীরা ইসরাঈলকে মিসরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ইসরাঈল মিসরের সিনাই এলাকা দখল করে নেয়। মার্কিন মদদে ইসরাঈল ১৯৬৭ সালে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম সিরিয়ার গোলান মালভূমি, মিসরের গাজা ও সিনাই এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সালে ইসরাইল আবারও মিসর ও সিরিয়া হামলা চালালে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের কর্মীরা সর্বশক্তি দিয়ে মিসর ও-সিরিয়ার সৈন্যদের সাথে মিলে ইসরাইলে হামলা প্রতিহত করে। প্রতিরোধ বাহিনী ইসরাইলের প্রতিরা লাইন ভেদ করে তেল আবিবের দিকে অগ্রসর হলে মার্কিন চাপে মিসর যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কর্মীদের সামরিক প্রশিণ ও সাহসে ভীত হয়ে মার্কিনীরা প্রমোদ গোনে । ভবিষ্যতে এরা মিসরের মতা দখল করবে এ ভয় দেখিয়ে মিসরীয় শাসকদের দ্বারা তাদেরকে হত্যা ও দেশছাড়া করায়। এ অবস্থায় মিসরীয় শাসকরা মার্কিন সেবাদাসে পরিনত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের স্বার্থবিরোধী কাজে মার্কিনীদের সাহায্য করে চলেছে। সাম্প্রতিক আরব বিশ্বের জাগরণের ঢেউয়ে ভেসে যায় মার্কিন সেবাদাস মোবারক সরকার। এরপরও মার্কিন ষড়যন্ত্র থেকে নেই। ইখওয়ানুল মুসলিম কে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয় এবং সিসি নামের এক ইহুদী মাকি©ন দালালকে ক্ষমতায় বসায়। মুসলিম ব্রাদারগুডের বদৌলতে হযরত মুসা (আঃ) এর সেই স্মৃতি ফিরে এসেছিল মিসরে কিন্তু ফেরাউনের অনুসারীদের ষড়যন্ত্রে আবার ফেরাউনী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হলো।
২৬. স্বাধীনতার শুরু থেকেই আলজেরিয়ার জনগণ সেখানে ইসলামী শাসনব্যবস্থার চালু করার দাবী জানিয়ে আসছে। কিন্তু পাশ্চত্য তা হতে দেয়নি। গত নির্বাচনে জনগণের ভোটে ইসলামপন্থীদের মতায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে মার্কিন ইন্ধনে সেখানে ইসলাম বিরোধী সাময়িক অভ্যুথান ঘটিয়ে সামরিক জান্তা ইসলাম পন্থীদের ওপর বেধড়ক নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল জুলুম ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার লোক নিহত হয়েছে।
২৭. স্বাধীনভাবে চলার অপরাধে হত্যার উদ্দেশ্যে মার্কিনীরা লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফীর তাঁবুতে পেনাস্ত্র হামলা চালায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে গাদ্দাফী বেঁচে যায়। অতঃপর প্রামনহীন সন্ত্রাসের অভিযোগে লিবিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এখন সেই লিবিয়া মাকি©ন আগ্রাসিত এক বিধ্বস্ত জনপদ। হাহাকার আর বোমা বারুদের চিহৃ ছাড়া আর কিছু্ই সেখানে খুঁজে পাওয়া না। আর সেই গাদ্দাফীও কুখ্যাত মাকিনী কুত্তাদের পেঠে হজম হয়ে গেছে।
২৮. ১৯৯৭ সালে ইসলামী বিপ্লব সংগঠিত হবার পর মার্কিন গুপ্তচররা বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ইরানে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ ৭০ জন শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে হত্যা করে সেখানে প্রতি বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা চালায়। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। অতঃপর ইরানের একটি যাত্রীবাহী বিমানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়ে ২৯০ জন যাত্রীকে হত্যা করে, যার মধ্যে ৫০ জন শিশু ছিল। আর্ন্তজাতিক আদালত এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সাত কোটি ডলার জরিমানাও করে।
২৯. কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই মার্কিন দূতাবাসে হামলার অভিযোগে আমেরিকা ৯৯ সালে সুদানের ঔষুধ কারখানায় ও আফগানিস্তানের বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়। আফগানিস্তান থেকে রুশ সৈন্য চলে যাওয়ার পর সেখানে যাতে ইসলামী শাসন বা কোন স্থিতিশীল সরকার হতে না পারে সেজন্য গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখা হয়। তালেবানরা তা অনুগত রাখতে চেষ্টা করে। তালেবানরা আপোষহীন হতে থাকতে চাইলে লাদেন অজুহাতে তাদের উপর নেমে আসে যুদ্ধের বিভীষিকা ।
৩০. মার্কিন অস্ত্রবাজার চাঙ্গা রাখার জন্য আমেরিকা আরব, ইসরাইল, চেচনিয়া, বলকান, কুর্দি, কাশ্মির, কুর্দি, আফগান, আরাকান, মিন্দানাও প্রভূতি সংকটের স্থায়ী রুপ দিতে চায়। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে এবং পেন্টাগনে বিমান হামলার পর আমেরিকান সকল কোম্পানীর শেয়ারের দাম পড়ে গেলেও অস্ত্র কোম্পানীর শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আফগানিস্তানে পর ইরাকে এতবার হামলা হলে অস্ত্র কোম্পানীগুলোর যে আয় হবে, তা দিয়ে কয়েকটি বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র গড়া যাবে।
এসব ঘটনাও সামগ্রিক চিত্র নয়।

বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্য
অস্ত্র বাণিজ্য মাকিন সাম্রাজ্যবাদের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। বিশ্বব্যাপী মাকিন অস্ত্র বাণিজ্য চাঙ্গা রাখার জন্য সংকটগ্রস্ত অঞ্চলসমূহের সংকটকে স্থায়ীভাবে রুপ দিতে চায় মাকিন সাম্রাজ্যবাদ। বিশেষভাবে মুসলিম বিশ্বের সংকটগুলোকে অবলম্বন করে সে তার অস্ত্র বিক্রি বাড়াতে চায়। কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট অস্কার অরিয়াস স্যানচেজ বলেছিলেন, ‘যখন একটি দেশ শিক্ষা, গৃহায়ন, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ না করে অস্ত্র ক্রয়ে মনোযোগী হয় তখন পুরো একটি জাতির উন্নয়ন ও সুখকে উপেক্ষা করা হয়। আমরা প্রতি ১০ জনের জন্য একটি অস্ত্র তৈরি করতে পারছি কিন্তু পৃথিবী থেকে দারিদ্র দূর করার কথা ভাবছি না।’ ১৯৮৭ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী অস্কার অরিয়াস স্যানচেজের কথা এখনো সমান ভাবে সত্য। জাতিসংঘ চিৎকার করে অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের কথা বলছে, কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোই সে কথায় কান দিচ্ছে না। অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক অন স্মল আর্মস এবং অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল ২০০৩ সালে যৌথভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রচারাভিযান শেষে প্রতিবেদনে (শ্যাটার্ট লাইভস) জানিয়েছে যে, জাতিসংঘের প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের ৫ স্থায়ী সদস্য (যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) বিশ্বের সুলভ অস্ত্রের ৮০ শতাংশ রপ্তানী করে। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, অস্ত্র বিশ্বের দারিদ্র এবং মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ ৩টি ব্যবসার একটি অস্ত্রবাণিজ্য। অস্ত্র ব্যবসার দুর্নীতি প্রসঙ্গে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট নিল্ড বলেছেন, ‘স্নায়ু যুদ্ধের প্রতিযোগিতা অস্ত্রবাণিজ্যে দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছে।’
পর্যবেক্ষকদের মতে, আফগানিস্তানে পর ইরাকে হামলা হলে অস্ত্র কোম্পানীগুলোর যে আয় হবে, তা দিয়ে কয়েকটি বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র গড়া যাবে। তাই দেশে দেশে সামরিক আগ্রাসন আর মানবতাধ্বংসের কাজের সে অস্ত্র বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্নায়ু যুদ্ধ সময়কালে (১৯৯০ সালে শেষ হওয়া) সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই অস্ত্র রপ্তানীকে অন্য দেশের ওপর, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করতো। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব অস্ত্রবাণিজ্যে কিছুটা ধ্বস নামে। তবে ২০০৩ সাল থেকে অস্ত্রবাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সবচেয়ে বেশি। সেই ধারাবাহিকতায় আবারো পৃথিবী স্নায়ু যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় ১৯৫০-২০০৯ সাল পযন্ত মোট ৪৮৩,৮২৯,৫৭৪,০০০ ২৩০,৪৪০,৯০৬,০০০ মাকি©ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে। রিচার্ড এফ গ্রিমেটের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানী করেছে ১৬৬. ২৭৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র (যা বিশ্ব অস্ত্র বিক্রির ৪০ শতাংশ) মার্কিন নাগরিকদের হাতে প্রায় ২শ ৭০ মিলিয়ন বন্দুক রয়েছে, অর্থাৎ প্রতি ১শ জনের জন্য ৯০টি বন্দুক! পৃথিবীতে প্রতিবছর যে ৮০লাখ বন্দুক উৎপাদন হয় তার ৪৫ লাখ কেনে আমেরিকানরা। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রধারী নাগরিক বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে মোট ৬০ বিলিয়ন ডলারের এয়ারক্রাফ্ট বিক্রি করতে যাচ্ছে। মর্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এটা মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির ঘটনা। এয়ারক্রাফ্টগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৮৪টি বোইং এফ-১৫ ফাইটার, ৭০টি বোইং এ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৩৬টি হালকা ওজনের হেলিকপ্টার ইত্যাদি। (২০ অক্টোবর, ২০১০ - আল জাজিরা, কাতার)
‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৯ সালে অস্ত্র রপ্তানীকারক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্থানে ছিল। তারপর যথাক্রমে রাশিয়া, জার্মানী, ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেন, চীন, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইউক্রেন, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া।
একই বছর আমদানীকারক হিসাবে শীর্ষে ছিল ভারত। তারপর যথাক্রমে, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, গ্রিস, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, আলজেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়া।
২০০৮ সালে ১৪.৩ বিলিয়ন থেকে ৩২.৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় চুক্তি হয়েছে এবং ২০০৬ সালে পৃথিবীর শীর্ষ ১শ অস্ত্র উৎপাদক কোম্পানী ৩শ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর গবেষণা অনুযায়ী ২০০৮ সালে অস্ত্র কিনতে রাষ্ট্রগুলো ১ হাজার ৩শ ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। গবেষণা বলছে, ২০০৮ সালে সামরিকখাতে বাজেট নির্ধারণে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র (৬শ ৪ বিলিয়ন ডলার)।
যুক্তরাষ্ট্রে বারাক ওবামার শাসনামলে অস্ত্র বিক্রি সাংঘাতিক পরিমাণে বেড়ে গেছে । যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল এ্যাসোসিয়েশন চার বছর আগে দেশটির ইতিহাসে বারাক ওবামাকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিরোধী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছিল কিন্তু এখন বাস্তব ঠিক তার উল্টো । চাহিদা এত দ্রুত বাড়ছে যে অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তা সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না । বার্তা সংস্থা এপির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত কুড়ি বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মত অস্ত্রের ডিলার সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে । বাড়ছে লাইসেন্সের সংখ্যাও । তবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নতুন করে অস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষেও নয় । তিনি পরামর্শ দিয়েছেন সন্ত্রাস মোকাবেলা অস্ত্রের ব্যবহার যত কম করা যায় ততই মঙ্গল । এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব এ্যালকোহল, ট্যোব্যাকো, ফায়ার আর্মস এন্ড অস্ত্র এবং এক্সপ্লোসিভস বলছে ২০১০ ও ২০১১ সালে ৫০ হাজার ৮১২ টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে । অস্ত্র ব্যবসায়ী ফ্রেডরিক প্রিন এক বছর আগে ছোট একটি দোকান দিয়ে শুরু করার পর এখন বলছেন, ব্যবসা ভালই চলছে । ওয়াউসাউতে তার দোকানে কর্মচারি বাড়াতে হচ্ছে আট জন আর স্পেস বাড়াতে হয়েছে দ্বিগুণ । যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেছিলেন (১৯৭৬), ‘আমরা একই সঙ্গে দুপথে চলতে পারি না। আমরা একই সঙ্গে বিশ্ব শান্তির নায়ক এবং অস্ত্র রপ্তানীকারক হতে পারি না।’ আমরা জানি সামরিক শক্তির অস্বাভাবিক উন্নতি জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথকে প্রশস্ত করে। তবুও শাসক শ্রেণী সামরিক শক্তিবৃদ্ধি করতে ব্যস্ত থাকে। আসলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কটে ঠেলে দিয়ে অস্ত্র ক্রয়ে বাধ্য করে অস্ত্র উৎপাদক রাষ্ট্রগুলো। অস্ত্রবাণিজ্য ও অস্ত্রসমস্যা একটি চক্র, অস্থিতিশীলতা অস্ত্রের চাহিদা বাড়ায়, চাহিদা পূরণ হলে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.