নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুধু দেখি আর লিখি, কী আছে আর জীবনে!

জেডিপি

লিখতে ভালোবাসি, প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী।

জেডিপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র চর্চাঃ সিটিজেন কেইন-চলচ্চিত্র ইতিহাসের আশ্চর্য সৃষ্টি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫



এক সময়ের প্রতাপশালী ‘এনকোয়ারার’ পত্রিকার মালিক চার্লস ফস্টার কেইনের বর্ণিল জীবনের ইতি এলো অসুস্থতার হাত ধরে। মৃত্যুশয্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তিনি বললেন শুধু একটি শব্দ—‘রোজবাড’। কে এই রোজবাড? সে কি আদৌ কোন মানুষ? নাকি কোন বস্তু কিংবা স্থান, যেখানে কেইন লুকিয়ে রেখেছেন তার গোপন সম্পত্তি? শুরু হল খোঁজ।

‘সিটিজেন কেইন’ চলচ্চিত্রে এক প্রভাবশালী সংবাদপত্রের মালিকের কথা বলা হয়েছে, শেষ জীবনে যার বিপুল সম্পদ আর বিত্তকে ফারাওদের সঙ্গে তুলনা করেছে গণমাধ্যমগুলো। গল্পের মতই নির্মাণশৈলীর গুণে হলিউডের মুঘল হওয়ার মর্যাদা পেয়ে গেছেন সিনেমাটির নির্মাতা ওরসন ওয়েলস। প্রশ্ন হল, কিভাবে?

গল্পের শুরুটা কেইনের মৃত্যু দিয়ে, তাও বেশ নাটকীয়ভাবে। প্রথম দৃশ্য থেকে কেইনের বাড়ির অন্ধকার চারপাশ তৈরি করে রহস্যময় আবহ। মৃত্যুশয্যায় আমরা কেইনের চেহারা দেখতে পাই না, শুধু এক্সট্রিম ফোকাসে থাকে তার ঠোঁটদুটো, যেখানে শোনা যায় সেই বিখ্যাত শব্দ—রোজবাড। ব্যস, একটি শব্দ বলেই কেইনের জীবনের ইতি আর আমাদের গল্পের শুরু।

মৃত্যুর সময় কেইনের হাতে থাকা স্নো গ্লোবটি পড়ে ভেঙ্গে যায় তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পরপরই। শুধুমাত্র মনযোগী দর্শকই বুঝতে পারবেন এই স্নো গ্লোবটি কী চমৎকার রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন পরিচালক।

কাহিনী এগিয়ে যায় নতুন উদ্যমে, আরেকটি পত্রিকা ‘নিউজ রিল’এর এক প্রতিবেদনের আলোকে। একে একে আমরা জানতে পারি কে ছিলেন চার্লস ফস্টার কেইন। জ্যানাডুতে অবস্থিত তার বিশাল বাড়ি, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির ধারণা পাওয়া যায় একটু একটু করে। পুরো সিনেমাজুড়েই চলে কেইনকে আরও বুঝার প্রচেষ্টা। তবে গল্প জমে উঠে তখনই, যখন ‘নিউজ রিল’ পত্রিকার প্রযোজক তাদের এক সাংবাদিককে দায়িত্ব দেন ‘রোজবাড’ শব্দটির অর্থ খুঁজে বের করতে।

এর পর থেকে পুরোটা যাত্রা হয় সেই সাংবাদিকের অনুসন্ধানের পথ ধরে। কাছের মানুষদের সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠে পরলোকগত কেইনের চরিত্রের নানা দিক। শুরুতেই কেইনের দ্বিতীয় স্ত্রী সুজান কেইনের সঙ্গে পরিচয়ের সিকোয়েন্সটায় রহস্যের সঙ্গে উত্তেজনার এমন মিশেল ঘটানো হয়েছে, যা দেখে আলফ্রেড হিচককের সিনেমার কোন দৃশ্য মনে হয়। যা কীনা তৈরি হয়েছে আরও অনেক পরে।

শুধুমাত্র আলো-ছায়ার খেলা আর আবহ অনুযায়ী সঠিক শব্দ ব্যবহার করে একটি সাধারণ মুহূর্তকে কী পরিমাণ রহস্যময় বানানো যায়, তা এই সিকোয়েন্সটা দেখেই বুঝা সম্ভব।

একই রীতির পুনরাবৃত্তি ঘটে দ্বিতীয় সিকোয়েন্সে, যখন সাংবাদিক জেরি লাইব্রেরীতে গিয়ে কেইনের প্রয়াত পালক পিতার গোপন জার্নাল পড়া শুরু করেন। লো কী লাইট আর ফ্রেমের গঠন দেখে মনে হয় না যেন কি গোপন তথ্য পড়ে ফেলছেন তিনি!

কেইনের শৈশবের দৃশ্য থেকে শুরু হয় ডিপ ফোকাসের জাদু। সম্পূর্ণ এক শটে, কোন রিটেক ছাড়াই নির্ধারিত হয় ছোট্ট কেইনের ভবিষ্যৎ।

২৫ বছর বয়সে পালক পিতার কাছ থেকে ‘এনকোয়ারার’এর মালিকানা নেয়ার পর দর্শকের সামনে ভেসে আসে কেইনের চরিত্রের বেপরোয়া ভাব। শুরুর দিকে এই উদ্দাম জীবনযাত্রা কেইনকে সাফল্য এনে দিলেও তা বেশিদিন টিকেনি। যা টের পাওয়া যায় শুধুমাত্র নাস্তার টেবিল থেকে! প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কেইনের সম্পর্ক কীভাবে একশো থেকে শূন্যে পৌঁছায়, তা নাস্তার টেবিলের দুই মিনিটের সিকোয়েন্সে বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।

গল্পের দ্বিতীয়াংশে দ্বিতীয় স্ত্রী সুজান কেইনের সংগীত ক্যারিয়ারের মতই সংগ্রামী হয়ে উঠে কেইনের জীবন। ক্ষমতা ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা তাকে করে তোলে অতি মাত্রায় কর্তৃত্বপরায়ণ।

ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে নিজের বানানো বিশাল মহলের করিডর দিয়ে যখন হেঁটে যান কেইন, তার নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ অবতারের অনেকগুলো প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে আয়নায়। শৈশব থেকে এই লোকটির উত্থান ও পতন যেন এক কাতারে উঠে আসে প্রতিবিম্বে। এই বিশেষ দৃশ্যটি আজও সিনেমার জগতে অন্যতম স্মরণীয় দৃশ্য হয়ে আছে, যা একবার দেখলে ভুলবে না কেউ।

‘সিটিজেন কেইন’এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক ওরসন ওয়েলস নিজেই। ২৫ বছরের টগবগে যুবক থেকে এক হতাশ-নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সংবাদ সম্রাটের পরিণতি তিনি জান্তবভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার অভিনয়ে, তাকে সাহায্য করেছে বাস্তবধর্মী মেইকআপ। ওয়েলসের প্রভাবশালী অভিনয়ের সামনে অন্য কারও অভিনয় মনে ধরবে না দর্শকের।

চলচ্চিত্র জগতের আশ্চর্য সৃষ্টি ‘সিটিজেন কেইন’এর অন্যতম আশ্চর্য ব্যাপার হল, এর বেশীরভাগ কলাকুশলী ছিল একদম নতুন। আর যাই হোক, এদের অভিনয় দেখে তা মনে হয়নি!

‘সিটিজেন কেইন’এর প্রথম দৃশ্য থেকেই দর্শকের যা চোখে পড়বে, তা হল এর ফিল্মি উপস্থাপন। হ্যাঁ, ‘সিটিজেন কেইন’ পুরোই ফিল্মি। সংলাপ, চিত্রায়ন, প্রতিটি ক্যামেরার বাঁক, চরিত্রগুলোর চলাফেরা—সবই সিনেম্যাটিক। আক্ষরিক অর্থে সিনেমার স্বাদ দেয় এটি। মূলত এই নাটকীয় উপস্থাপনের কারণেই ‘সিটিজেন কেইন’ আজও সেরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.