![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
বাংলা ভাষায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পাহাড়ের উপরে কেন নিয়মিত মেঘ সৃষ্টি হয় ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়?
উপরের প্রশ্নটি আপনি কিছুটা পরিবর্তন করে বলতে পারেন যে বাংলাদেশের সুনামগন্জ জেলার ছাতক ও সিলেট জেলার কোম্পানিগন্জ উপজেলায় অন্য ৬২ টি জেলা অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয় কেন?
পাহাড়ের উপরে নিয়মিতভাবে মেঘ গঠনের প্রধান কারণ হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যাকে বলা হয় Orographic lifting বা ভূ-আকৃতিজনিত বায়ু উত্তোলন। এই প্রক্রিয়ায়, উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস যখন কোনো পাহাড় বা মালভূমির ঢালের সাথে সংঘর্ষে আসে, তখন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সে বাতাস ওপরে উঠে যায়। উপরে উঠতে থাকায় বাতাস ঠাণ্ডা হয় এবং তার ভেতরের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়, যা পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে—ভূ-মধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থল জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছে, জিব্রাল্টার পাহাড়ের পাশে ঠিক এই প্রক্রিয়ায় মেঘ গঠিত হচ্ছে। একই প্রক্রিয়ায়, ভারতের মেঘালয় পর্বতের উপর নিয়মিতভাবে মেঘ তৈরি হয়। বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী মৌসুমে এবং বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।
ছবি: ভূ-মধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থল জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছে, জিব্রাল্টার পাহাড়ের উপরে সৃষ্টি হওয়া মেঘ।
মেঘালয় পর্বত বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন আশীর্বাদ, অন্যদিকে তেমনি দুর্ভোগের কারণ। এই মালভূমি না থাকলে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অস্তিত্ব থাকতো না। এই মালভূমির ঢালের চারপাশ থেকে—হাওর এলাকা, তিস্তা নদী, ও ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে—উদীয়মান জলীয় বাষ্প উপরে উঠে মেঘ গঠন করে।
সকালবেলায় সূর্য ওঠার পর পাহাড়ের চূড়ায় বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যায়, ফলে নিচের দিকে বায়ুশূন্যতা তৈরি হয়। আশপাশের শীতল বাতাস সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে ঢালের উপর দিয়ে উপরে উঠে যায়, এবং এই প্রবাহ সারাদিন চলতে থাকে। ফলে মেঘের ঘনত্ব বাড়ে, এবং যখন মেঘ জলীয় বাষ্পে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, তখন বৃষ্টি শুরু হয়।
মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা—এর প্রধান কারণ হলো এই অঞ্চল জুড়ে সারা বছরব্যাপী জলীয় বাষ্পের অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ। কারণ, সিলেটের হাওর অঞ্চল বছরের ৮–৯ মাস পানির নিচে থাকে এবং বড় নদীগুলোর প্রবাহও স্থায়ী থাকে।
আপনি যদি সিলেটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, বা লালাখাল ঘুরে থাকেন, তাহলে লক্ষ্য করেছেন—সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়গুলোর ওপর প্রায়ই মেঘ জমে থাকে। এই মেঘগুলো ঠিক এই "Orographic lifting" প্রক্রিয়ায়ই তৈরি হয়, যা আমাদের আঞ্চলিক আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২| ১৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
আপনি ঠিক বলেছেন, পাহাড়ের উপরে নিয়মিত মেঘ সৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিপাতের প্রধান কারণ হলো ওরোগ্রাফিক প্রভাব (Orographic Effect)। তবে সংক্ষেপে বললে এটি নিম্নরূপে কাজ করে:
বায়ু প্রবাহ ও উচ্চতা: পাহাড়ের দিকে আর্দ্র বায়ু (সাধারণত সমুদ্র থেকে আসা) প্রবাহিত হলে, পাহাড়ের ঢাল বায়ুকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভূ-আকৃতিজনিত বায়ু উত্তোলন বা Orographic Lifting।
তাপমাত্রা হ্রাস ও ঘনীভবন: উপরে ওঠার সাথে সাথে বায়ুর তাপমাত্রা কমে যায়, কারণ উচ্চতা বাড়লে বায়ুর চাপ কমে এবং বায়ু প্রসারিত হয়। এই ঠাণ্ডা বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে।
মেঘ সৃষ্টি ও বৃষ্টিপাত: ঘনীভূত জলীয় বাষ্প যখন মেঘে পরিণত হয়, তখন পাহাড়ের উপরে বা ঢালে ভারী মেঘ জমা হয়। এই মেঘ থেকে প্রায়ই ভারী বৃষ্টিপাত হয়, কারণ পাহাড়ের ঢালে বায়ু দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে জলীয় বাষ্পকে বৃষ্টির ফোঁটায় রূপান্তরিত করে।
পাহাড়ের অবস্থান: পাহাড় যদি সমুদ্রের কাছে বা আর্দ্র বায়ু প্রবাহের পথে থাকে, তবে এই প্রক্রিয়া আরও তীব্র হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
অন্যান্য কারণ: পাহাড়ের উচ্চতা, ঢালের ধরন, এবং স্থানীয় আবহাওয়ার ধরনও মেঘ সৃষ্টি ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ করে। উচ্চ পাহাড়ে বায়ু বেশি ঠাণ্ডা হয়, ফলে বৃষ্টি বা তুষারপাত বেশি হয়।
উদাহরণ: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বা সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় এই ওরোগ্রাফিক প্রভাবের কারণে মৌসুমী সময়ে ভারী বৃষ্টি হয়।
এককথায়, পাহাড়ের উপরে বায়ুর উত্তোলন, ঠাণ্ডা হওয়া এবং জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে মেঘ সৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিপাত ঘটে।
৩| ১৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৬
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার উপস্থাপন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪১
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।