নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের বিপরীতে নৌকা ভাসানো এক বোকা মাঝি!

আহাম্মেদ সকাল জিকু

আহাম্মেদ সকাল জিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

চশমা (ছোট গল্প)

১২ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২

চশমার প্রতি আকর্ষণ আমার কোনকালেই নয়!
কিন্তু, ডাক্তারের পরামর্শে পড়া ছাড়া উপায়ও ছিলো না...
নাকের উপর চেপে থাকা এই বস্তু টাকে প্রথম প্রথম পড়তে বেশ অসস্তিই লাগতো।

অবশ্য নীরার বেশ পছন্দ ছিলো আমার সাদা গ্লাসের চশমাটাকে। তাঁরও কারন আছে...
এই চশমাটা বানাতে দিয়ে মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডে, একটা দোকানে আমাদের প্রথম পরিচয়।

সেই থেকেই চলছে।
প্রতিদিন একবার হলেও আমাদের দেখা হতো। বিশেষ করে শেষ বিকেলটাতে। কখনো বেড়িবাঁধের ওপাশে থাকা শতবর্ষি বটগাছের তলায়, কখনো বংশী নদীর ওপারে যুবক হাউজিং এর পরিত্যক্ত মাঠের এক কোনে!

ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে চলে যেত, বুঝতেই পারতাম না।
বেশিরভাগ আমিই বলতাম, আর নীরা মুগ্ধ হয়ে শুনতো।
মাঝে মাঝে তাঁকে লক্ষ্য করতাম অপলক চাহনি তে হারিয়ে যেতে। কারনটা বেশ ক'বার জানতে চেয়েও কেন যেন জানতে পারিনি। নীরা'ই এড়িয়ে যেত। প্রথমদিকে না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরে আমিও প্রসংগ পাল্টাতাম।

তবে একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছিলাম, আমার এই সাদা ফ্রেমের চশমাটার ভেতরই সে যেন কিছু একটা খুঁজতো....

-এই সকাল কি ভাবছিস!!!
অনেক্ষন ধরে তোকে ডেকেই চলছি। কোথায় হারিয়েছিলি?
দরজাটা লাগা। আমি বাইরে গেলাম। রাতে ফিরতে দেরি হতে পারে। ঝর্না আপার বাসা হয়ে আসবো। তুই খেয়ে নিস...
এক নিমিষে কথাগুলো বলেই ছুটে বেরিয়ে গেল!

নিলয়। আমার রুমমেট আবার বন্ধুও।
সেই কলেজ লাইফ থেকে দু'জনার বন্ধুত্ব।
প্রদায়ক হিসেবে একটা বিনোদন ম্যাগাজিনে কাজ করে।
চমৎকার মনের একটা মানুষ।

ছোটবেলায় এক লঞ্চ দূর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়ে, বোনের কাছেই মানুষ। ভগ্নীপতি জিসান সাহেবও যথেষ্ট ভালো মানুষ।
নিলয় কে খুবই আদর করেন। আগে বোনের বাসায়ই থাকতো সে। কিন্তু, দুই ভাগ্নে-ভাগ্নীর পড়াশুনার ডিস্টার্ব হবে ভেবে বোনের বাসা ছেড়ে এই মেস লাইফ....
যদিও বোনের এ নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি ছিলো।
কিন্তু, মা-বাবা হারা ছোট ভাই কে কষ্ট দিতে চায়নি বলে এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করেনি....

নিলয় অবশ্য সময় পেলেই বোনের বাসায় ঢু মেরে আসে।
না গেলে, ভাগ্নে-ভাগ্নীরাই ফোন করে কান ঝালাপালা করে দেয়!

বেশ ভালোই লাগে, পারিবারিক এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো।
নিলয় কে মনে মনে হিংসা করে মুখ ফুটে বলেও ফেলি!
শুনে সে নীরবে হেঁসে যায়, আর এসব কথার মোড় ঘুরাতে চেষ্টা করে। জানি, আমার মন ভালো করার জন্য, আমাকে হ্যাপী রাখার জন্য তার ব্যর্থ চেষ্টা।

নীরার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম।
বাড়ীর সাথেও তেমন যোগাযোগ ছিলো না।
ইচ্ছে করেই করিনি! বাবার দ্বিতীয় পক্ষ মানে, আমার সৎ মা মরিয়ম বেগম যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে! আমি নিজ থেকেই এড়িয়ে গেছি।
মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই কেন যেন বাবাকে সহ্য করতে পারতাম না....

আহাম্মেদ নগরের প্রাইমারি স্কুল লাগোয়া এই ৬ তলা বিল্ডিং টার একদম উপরের দিকে কোনার ফ্ল্যাট টায় আমাদের দু'জনার বাস। কস্মিনকালে গ্রাম থেকে চাকুরির খোঁজে আসা
দু'একজন বন্ধু যদি আসে তবেই বাড়তি কিছু মানুষের দেখা মেলে। নচেৎ নিলয় আর আমিই প্রায় বছর পাঁচেক ধরে এইখানে অনেকটা একাকীত্বের জীবন।


নিলয় যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে আবার ভাবনা পেয়ে বসলো। আজ অনেকগুলো বছর পরে ভূত দেখার মতোই চমকে উঠলাম রীতিমত !

নীরা ফিরে এসেছে এই শহরেই। সাথে বয়স্ক কেউ একজন ছিলো সেই সাদা ফ্রেমের চশমাপরা। ভদ্রলোক তার দ্বিতীয় হাজব্যান্ড নয়তো! হতেও পারে, আবার নাও পারে!

বছর দশেক আগে তার সাথে শেষ দেখা। একদিন হুট করে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো। পরে শুনেছিলাম আমার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ারও আগে তাঁর আরও একজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো। সেই ছেলেটাকেই বিয়ে করে কানাডা অথবা ইউরোপের কোন দেশে স্থায়ী হয়েছিলো!

বিয়ের দু'বছরের মাথায় ছেলেটি এক থাই তরুনির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিলো।

এরপর থেকে আর কোন খবর পায়নি সে। যদিও সেই চেষ্টাটাও করেনি। কেনইবা করবে??
সে তো তাকে ঠকিয়েছে। কখনো বলেনি তাঁদের সম্পর্কের কথা। অথচ তাঁর সাথে কত স্বপ্নের আদান প্রদান হয়েছিলো ওই সময়গুলোতে!

বছরখানেক আগে কার মাধ্যমে যেন দ্বিতীয় বিয়ের খবর পেয়েছিলো সে। কিন্তু অতোটা ডিটেইলস জানা হয়নি। নীরার চেহারাটা আগের মতো থাকলেও বেশ মুটিয়েছে মনে হলো! ভদ্রলোক অবশ্য নীরার তুলনায় কিছুটা বয়স্কই বলা যেতে পারে! অবাক বিষয় হলো, এই ভদ্রলোকের চোখেও সাদা ফ্রেমের চশমা! আশ্চর্য হয়েছিলাম।

আজ এতোগুলো বছর পরেও তাঁকে দেখে যেন সব এলোমেলো লাগছে। নিলয় অবশ্য সবই জানে।
শুধু আজকের বিষয়টাই জানানো হয়নি।

আচ্ছা, নীরাকে নিয়ে কেন এতো ভাবছে সে??
কেন পুরোনো কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে! "
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পেলো না।

কলিং বেল বাজার শব্দে আচমকা ভাবনায় ছেদ পড়লো।
কে এসেছে দেখি গিয়ে। অবশ্য এই সময়টাতে বুয়া'ই আসে।

দ্রুত দরজা খুলে গিয়ে দেখে, হুম বুয়া'য় এসেছে রান্না করতে।

-কি মামা?
-ঘুমায় ছিলেন নাকি??
-এতোবার বেল বাজাই, কোন শব্দই নাই আপনার!!

-কি রাঁনতে হইবো ঝটপট কইয়া পালান।
আজকে আমার এট্টু তাড়া আছে....

বুয়া কে সব বুঝিয়ে দিয়ে, ঝটপট তৈরি হয়ে নিতে হবে।
কাল যে একটা নিউজ এজেন্সী তে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছিলো, সেখানে আজও যাওয়ার কথা।
দুপুরেই রাসেল ভাই ফোন করে জানিয়েছেন, ইমার্জেন্সি যেতে হবে। ভুলেই গিয়েছিল সে!!

এতোদিন নীরা কে ভুলে সবকিছু ঘুচিয়ে নিলেও আজ থেকে মনে হচ্ছে আবার সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!
সেই সাদা ফ্রেমের চশমা, সেই নীরা.....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.