নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বাসহীন পৃথিবী দোযখের সমান

ছন্নছাড়া বাঁধনহারা দস্যি একটা ছেলে ,, দিবানিশি ক্যামেরা চালায় আহার নিদ্রা ফেলে :) :)

আর.এইচ.সুমন

"সৌন্দর্য্য দেখতে কাউকে নিমন্ত্রণ করতে হয় না...." ওয়েব সাইট : (http://www.facebook.com/Sumontography ) ইমেল আইডি :-( [email protected] )

আর.এইচ.সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনে প্রথম বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট লিখলাম :( খুবই কষ্টের কাজ বলে মনে হইলো !

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৭

(বিঃদ্রঃ এই লেখাটি লিখতে গিয়ে আমাকে কয়েকটি পোষ্ট থেকে কিছু কিছু অংশ কপি পেস্ট মারতে হয়েছে এবং তা আবার একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার নিজের মত করে লেখা , যদিও কার কার পোষ্ট থেকে কত লাইন কপি করেছি মনে নাই । তাই যার পোষ্ট বলে মনে হবে সে নির্দিধায় ক্ষমা করে দেবেন ! ভাই বিপদে পইড়া নিতে হইলো । কাল আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে এবং এটার উপরে প্রেজেন্টেশন ও দিতে হবে :( )







আমার রবীন্দ্রানুভুতি : ভক্তি , শ্রদ্ধা , কিংবা ঘৃণার পর্যায় থেকে ।



আমার বয়স তখন সবে বারো এর গন্ডি পেরিয়ে তের তে গিয়ে পড়েছে। নবম শ্রেনীতে উঠেছি। দুনিয়াটাকে মাত্র রঙিন রঙিন লাগা শুরু হয়েছে। সেবা'রই প্রথম ছোটদের উপন্যাস, ছড়া , ছোট গল্প ছেড়ে বড়দের কাব্যের রাজপথে হাঁটাহাঁটি করতে মনস্থির করেছি।



ব্যাপারটা এমন নয় যে তখন কবিতার প্রতি ততটা ভালোবাসা জন্মেছে। আসল ঘটনা ছিলো, বাঙালীর সে বয়সের স্বাভাবিক নিয়মেই, 'তুমি-আমি', 'খাই-যাই' কিংবা 'করি-ধরি' টাইপের ছন্দবিক্ষুব্ধ কবিতা লিখবার জোর প্রচেষ্টা (অপচেষ্টা) চালাচ্ছি। কিন্তু, স্কুলের পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন একটা কবিতা পড়া না থাকায় কলম হতে লেখাই বেরুতে চায় না। কিন্তু তাই বলে হাল ছেড়ে দেবার পাত্রও নই ।



ভেবে দেখলাম কিছু কবিতা পাঠ আবশ্যক। পাশেই থাকতেন এক বাঙলা ভাষায় অনার্স পড়ুয়া বড় ভাই (যাকে আমরা মজা কে বাংলা ভাই বলে ডাকতাম) । শিল্প-সাহিত্যের সাথে তাঁর বেশ যোগাযোগ ছিল তাই, তাঁর কাছে গিয়ে ধর্ণা দিলাম, একটা কবিতার বই চাইলাম। তিনি ধরিয়ে দিলেন 'নির্মলেন্দু গুণ কবিতাসমগ্র'। 'প্রেমাংশুর রক্ত চাই' কিংবা 'হুলিয়া' পড়ে ভালো লাগলে ও সে বয়সে এ সব বিপ্লবী কবিতার মর্মার্থ উদ্ধার আমার পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব ছিল না। তার উপর ছন্দ-মাত্রার আগা মাথা নেই।



কষ্ট হলেও শেষ করে আবার গেলাম। এবার, এক কাঠি সরেস জিনিস চাই আমার ! ধরিয়ে দিলেন 'আল মাহমুদ কাব্যসমগ্র'। সন্দেহ নেই, এ কবিতা গুলো গুণের কবিতার চেয়ে ভালো লেগেছিল। 'সোনালি কাবিন' আর 'নোলক' পড়ে কী যে ভাল লেগেছিল, বোঝানো সম্ভব নয়। পুরো বইটাই গোগ্রাসে গিলে ফেললাম। যদিও ছোট ক্লাসে আগেই পড়াছিলো তারপরও নতুন একটা তৃপ্তি যেন লেগেছিলো এই নতুন পাঠপর্বে ।



এবার, গিয়ে ভালো মত ধরলাম। রবীন্দ্রনাথের কবিতাসমগ্র দিতে হবে! তখন পর্যন্ত, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলো এই রকম- . উনি খুব ভালো কবিতা লিখতেন। সে জন্য তাঁকে কবিগুরু বলে। . ১৯১৩ সালে 'গীতাঞ্জলী' কাব্যের জন্য উনি নোবেল পুরষ্কার পান। এ জন্য তাঁকে বিশ্বকবি বলে। . উনি অনেক ভালো ভালো গান লিখেছেন যাকে রবীন্দ্র সংগীত বলে। আমদের জাতীয় সংগীত ও একটা রবীন্দ্র সংগীত! . গান ও কবিতার পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু কঠিন কঠিন গল্প-উপন্যাস লিখেছেন যে ছোটদের বোঝার সাধ্য নেই।



এই পরিমান রবীন্দ্র জ্ঞান সম্বল করে গিয়ে যখন দেখলাম, বাংলা ভাই হাসি মুখে বিশ্বভারতীর ১৯ খন্ডের সবগুলো বের করেছেন, তখন আমার অবস্থা বুঝে দেখুন! বাংলাতে এক কথায়, চক্ষু চড়কগাছ বোধহয় একেই বলে! ও খোদা! এত কিছু লিখেছেন নাকি এ ভদ্রলোক?



যাই হোক, বুকে বল নিয়ে এগিয়ে গেলাম। কী মনে করে তৃতীয় খন্ডটা তুলে নিয়ে গেলাম। 'অনন্ত প্রেম' এর 'তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরূপে শতবার' পড়ে একেবারে দেওয়ানা হয়ে গেলাম। সেখান থেকেই আমার রবীন্দ্র প্রেম শুরু।



কয়েক দিনের ভেতর হাতে এলো সুনীলের 'প্রথম আলো'। যে এই বই পড়ে নি সে জানেই না যে, সে কী হারিয়েছে। কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের উত্থানকে একেবারে উপন্যাসের পাতায় বেঁধে ফেলে সুনীল একটা কাজের কাজ করেছেন। সে সময়ই সুনীলের একটা লেখায় পড়েছিলাম, 'রবীন্দ্রনাথের লেখা যে তন্ন তন্ন করে পড়ে নি, তার বাংলা ভাষায় কলম ধরার অধিকার নেই'। সামান্য আবেগমথিত অতিকথন মনে হলে ও রবীন্দ্রনাথের স্থান কোথায় সেটা ঠিকই বুঝে ফেলেছিলাম।



এরপরে কাব্যের জগৎ থেকে বের হয়ে রবীগুরুর আর এক আবিষ্কার তার গল্প গুচ্ছের দিকে হাত বাড়ালাম ! এক একটা যেন মাষ্টারপিস্‌। কী নেই এতে? প্রেম-বিরহ, আবেগ-উচ্ছ্বাস, থেকে শুরু করে মৃত্যু ভাবনা পর্যন্ত সবই এসেছে এখানে। এমন কি তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থার নানারুপ সমস্যা গুলোরও সুনিপুন প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় এই গল্প গুলো পড়লে !



তারপরে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় বন্ধু বান্ধবী ও স্যারদের কল্যানে পরিচয় হয় প্রেমের এক নতুন জগৎ এর সাথে ! কিন্তু এবারও আমি আশ্চর্য না হয়ে পারি না, কারণ এ জগতে যে রবীবন্দ্রনাথের বিচরণ আরও বিস্তর পরিসরে ! সবার অনুরোধেয় এবার হাতে তুলে নিলাম 'শেষের কবিতা'। যা কবিতার বই ভেবে পরে কোনদিন পড়বো বলে ছুয়ে দেখিনি আগে ! অথচ এটি পড়ার পরে প্রেম বিষয়ে এক নতুন ধরনার জন্ম নেয় মনে । তবে শেষের কবিতায় নব্য প্রেমিক প্রেমিকা বা যারা এপথে হাটার জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করতে ব্যস্ত তাদের জন্যে এই উপন্যাসটি সত্যিই আশির্বাদ হিসেবে দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ।



এমনি করে জীবনের পদে পদে রবীন্দ্রনাথের এমন ছোয়া পেয়েছি বলেই উনার সৃষ্ট ও শৃজনশীল শিল্পকর্ম এতটা আপন হয়ে আছে। হাসি-কান্নায়, বিরহ-বেদনায়, প্রেম-ভালবাসায়, একাকী প্রহরে, সমাজ সচেতনাতায় কিংবা একেবারে কোন কিছু ছাড়াই শুধুমাত্র মনের সাময়িক প্রশান্তির জন্যেই ওনার সাহিত্যকর্ম গুলো পাশে পেয়েছিলাম। এই অর্থে আমি একজন রবীন্দ্র ভক্ত।



জীবনে বহুবার বিজ্ঞান বইতে পড়েছি নিউটন তার গতিসুত্রে একটা কথা বলে গেছেন " প্রত্যেক কিৃয়ারই একটি বিপরিত ধর্মী প্রতিকিৃয়া আছে "। আমি নিউটন সাহেবের এই কথাটার শক্তি অনুভব করেছি যখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিশেষ করে ওনার জীবনী নিয়ে একটু আধটু পড়তে ও জানতে শুরু করেছি । তবে আমার ক্ষেত্রে একটি না হয়ে অনেকগুলো প্রতিকৃয়ার সৃষ্টি হয়েছে !



বিশেষ করে কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে জানার পরে কখনও উনার উপরে অনেক রাগ ও ঘৃণা জন্মেছে আবার কখনও বা ওনার প্রতি বেশি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার মত ক্ষেত্রও সৃষ্টি হয়েছে , অনেক সময় সহানুভুতিও জন্মেছে । যদিও এমন সাহসিকতা আমার মানায় না ! তবে মানুষ হিসেবে আমি এই অধিকারটুকু বহন করি । আর যে কোন সুন্দর ও সৃষ্টিশীল কর্মেরই সমালচনা করার জন্যে কিছু কিছু মানুষ থাকে এবং এই সমালচনার জন্যেই সেই কর্ম গুলো আরও পুর্নতা পায় !



এবার তেমন কিছু বিষয় নিয়ে কয়েকটি কথা বলার প্রয়োজন অনুধাবণ করছি -



অনেক সমালচনাকারী পুর্বে উল্লেখ করে গেছেন , রবীন্দ্রনাথ নাকি পাশ্চাত্য সাহিত্যের ভান্ডার থেকে চুপিসারে রোমান্টিসিজম এর কিছু রসাদ এনে তার এই সাহিত্যকর্মে প্রাণ সঞ্চার করেছেন । কিন্তু তার ফলে উন্নতি কার হয়েছে বেশি ? রবিন্দ্রনাথ না বাংলা সাহিত্যের ? আর যেখানে অনুকরণ বা আধুনিক কপি পেষ্ট তো সব কিছুরই অংশ হয়ে দাড়িয়েছে । কেউ একজন প্রথমে কিছু একটা আবিষ্কার বা উদ্ভাবণ করেন এবং তার ফল ভোগ করেন তিনি সহ আশে পাশের অন্যান্য মানুষেরাও । সেই দিক বিবেচনা করলে পাশ্চাত্যের উদ্ভাবিত রোমান্টিসিজম উনি যদি এনেই থাকেন তাতে তো দোষের কিছু দেখি না ! আর শুধু পাশ্চাত্যের মানুষই যে রোমান্টিসিজম এর চর্চা করতেন তা তো নয় ! আমরা বাঙালীরা কি রোমান্টিক ছিলাম না কখনো ?? এই জন্যেই ওনার প্রতি একটু সহানুভুতি জাগে মনে এই ভবে যে " উনি তার সৃষ্টিকর্মের যোগ্য সন্মান পেলেন না এখনও কিছু মানুষের কাছে " ।



রবীনদ্রনাথকে অনেকেই মানবতাবাদী বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি তার জীবনের উপার্যিত টাকা পয়সা খরচ করে মানুষের শিক্ষা সংস্বৃতিকর উন্নয়নের জন্যে নান রকম উদ্যোগ গ্রহন করেছেন ! এছাড়া উনার উদ্যোগে ১৮৯৫ সালে গড়ে উঠেছিলো কৃষিব্যাংক । কারণ উনি জানতেন বাঙালী জাতীর মূল চালিকা শক্তিই কৃষির উপর নির্ভরশীল । আর তাই এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেই তিনি প্রমান করেন যে তিনি মানবতার সপক্ষে কাজ করতে অনেক উৎসাহী ছিলেন !

এছাড়া আমরা তার লেখনিতে ফুটে উঠতে দেখেছি সমাজের নানারকম বৈশম্য ও অনাচার , কুসংস্কার এমনকি তৎকালীন সামাজিক ব্যাধি বাল্য বিবাহ , সমাজে নারীজাতির অবস্থান , এই সব স্পরশকাতর বিষয় গুলো ।এই সব দিক বিবেচনা করলে স্বভাবতই তার প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়াটাই স্বাভাবিক ।



আবার অনেক সমালোচক বলে থাকেন " রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন এবং এই জমিদার রবীন্দ্রনাথ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রেনীস্বার্থকে জয় করে সাধারণ প্রজাদের কাছাকাছি নেমে আসতে পারেন নি। . সেই দৃষ্টিকোণ হতেই সম্ভবতঃ তিনি বঙ্গভঙ্গ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং এই বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক রুপ দিতে রবীন্দ্রনাথ "আমার সোনার বাংলা" রচনা করেছিলেন। যা আজ আমাদের জাতীয় সঙ্গিত! আর ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিরোধিতা করায় প্রশ্ন ওঠে - "এই বিরোধিতা করা হয়েছিলো কি কি পুর্ব বাংলার চাষাভুষাদের শিক্ষিত হয়ে যাবার আশংকায় নাকি সমসাময়িক বিশ্বভারতীতে ছাত্র ভর্তি কমে যাবার আশংকায়।" ইংরেজ শাসনের প্রতিও তাঁর নিরব সমর্থনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যদিও পরে তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন।

এসব জানার পরে একজন বাঙালী মুসলমান হয়ে উনার উপরে রাগ বা ঘৃনা জন্মানোটা দোষের কিছু নয় বলেই মনে করি !



পরিশেষে বলতে পারি, ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। রবীন্দ্রনাথ ও মানুষ বৈ অন্য কিছু ছিলেন না। তাঁকে গুরুদেব আখ্যা দিয়ে মহামানবের পর্যায়ে তোলার কী দরকার? তাঁর জমিদারি কিংবা রাজনৈতিক সত্ত্বা, কখনো তাঁর কবি সত্ত্বাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না, এরা তাঁর কবি মানসের উপর তেমন একটা প্রভাব ফেলেছে এমন ও নয়। রবীন্দ্রনাথ বাঙলা সাহিত্যের আকাশে সেই সূর্য যার কিরণকে অস্বীকার করে কেবলমাত্র অল্প কিছু দূর্লভ প্রতিভাবানই এখানে স্থান করে নিতে পেরেছেন। সুতরাং, তাঁর কবি সত্ত্বার সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে না ফেলাই উত্তম। এতে আমরা অন্ততঃ রবীন্দ্রের সৃষ্টি হতে বঞ্চিত হব না, হতে চাই ও না ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪১

দুরন্ত জেসি বলেছেন: ভালো হয়েছে।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৫

আর.এইচ.সুমন বলেছেন: সত্যিই !!!!!! :-* :-* :-* :-/ :-/ :-/ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ !!

আমার এই অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়ে কোন আইডয়া নাই !! কেমন করে লিখতে হয় সেটাও জানি না ভাল করে !! ফাকিবাজি করে করে বিরাট চিপাই পড়ে গেছি :( !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.