নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
সারারাত ঘুমালাম অস্বস্তি নিয়ে। ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারছিলাম কোথা থেকে যেন একটা শব্দ আসছে, বোধহয় কান্নার শব্দ। তাও আবার যার তার কান্না নয়, বাচ্চার কান্নার শব্দ। ছোট বাচ্চারা যখন কাঁদতে চায় না, আবার কান্না আটকাতেও পারে না, তখন যে শব্দটা হয়, একেবারে সেরকম শব্দ। খুব জোরে আওয়াজ হয় না, কিন্তু কান্নাটা তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যায়।
ঘুমের মধ্যেই ঠিক করলাম সকালে উঠে এটা নিয়ে ফাইযার সাথে আলোচনা করব। ফাইযা আমার রুমমেট, একই ব্যাচে ভর্তি হয়েছি আমরা।যদিও আমাদের ডিপার্টম্যান্ট আলাদা, তাতে বন্ধুত্বেও কোন সমস্যা হয়নি।
কিন্তু সকালে উঠেই হতাশ হতে হল। ফাইযা নেই, ওর বিছানা খালি।খুব গুছানো মেয়ে ফাইযা, যাওয়ার আগে রুম গুছিয়ে গেছে।ওর শেলফে একটা চিরকুট লাগানো। ‘ল্যাব করে ফিরব। ফাইযা।’
সাইন্সের মেয়েদের নিয়ে এই এক ঝামেলা। যেখানে লাঞ্চের আগেই আমাদের ক্লাস শেষ হয়ে যায়, সেখানে ওদের প্রায়ই লাঞ্চের পর ল্যাব থাকে। ল্যাব থাকলে সাধারণত ফাইযা ক্যাফেতেই লাঞ্চ সেরে নেয়, হলে আসে একেবারে বিকালে।
আমার ক্লাস শেষ, পিএল চলছে। ভাবছি দুদিনের জন্য বাড়ি থেকে ঘুরে আসব। পড়াশোনায় এখন মন বসছে না, বাড়ি থেকে ঘুরে এসে একেবারে ফ্রেশ মাইন্ডে পড়া শুরু করব।
সকালটা এমনি এমনিই নষ্ট হল। ভেবেছিলাম পড়ব, নাহয় অন্তত চোথাপাতি গুছিয়ে রাখব-কিছুই হল না। পুরো সকালে বলার মত একটা কাজ করলাম। আগের দিন অর্ধেক দেখা হরর মুভিটা শেষ করলাম!
গোসল সেরে রুমে এসে দেখি ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন আর হলের ডাইনিং-এ গিয়ে লাভ নেই। রাইস কুকারে খিচুরী বসিয়ে দিলাম। খালাকে বললাম আমার মাংসের বাটিটা রুমে দিয়ে যেতে। খেয়েই কাথার নিচে ঢুকে পড়ব।
ভেবেছিলাম শুয়ে শুয়ে সকালে দেখা মুভিটার পরের পর্ব দেখব। কিসের কি? খিচুড়ি খাওয়ার পর থেকেই দেখি চোখের পাতা দুটো ভারী হয়ে এসেছে, মনে হল কে যেন আমার ঘাড় মালিশ করে দিচ্ছে।
দুই
ঘুম ভাঙ্গল একদম মাগরিবের আগে আগে। তাকিয়ে দেখি ফাইযা চলে এসেছে, একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মনিটরের দিকে।
-কিরে, এত মনযোগ দিয়ে কি দেখিস? উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম।
ফাইযা বোধহয় বুঝতে পারেনি আমি জেগে উঠেছি। হঠাৎ শব্দ শুনে ওর হাত থেকে প্লেটটা পরে গেল, মুড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ল ফ্লোরে।
-কিরে, কি সমস্যা? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
-নাহ, কিছু না। বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল ফাইযা, হাত বাড়াল ফ্লোরে পড়ে থেকে প্লেটটার দিকে।
দ্রুত উঠে বসলাম। চেয়ে দেখি ফাইযার চোখের নীচে কালি পড়েছে, গালে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার দাগ।
-কিরে, ঘটনা কি? কাঁদছিলি নাকি?
ফাইযা কোন জবাব দিল না, চেয়ে রইল আমার দিকে।
-আরে ভাই, কিছু বলবি তো। কাঁদছিলি কেন? কি হয়েছে?
এবারও ফাইযা কোন জবাব দিল না।
হঠাৎ কেন যেন মনে হল, গতকাল রাতে যে কান্নার শব্দটা শুনেছি ওটা কোন বাচ্চা মেয়ের কান্না নয়, ফাইযা-ই কেঁদেছে সারারাত জুড়ে।
-এই ফাইযা, সাব্বিরের সাথে ঝগড়া হয়েছে?
ফাইযা না-সূচক মাথা নাড়ে।
-আচ্ছা, একটা কথা বল। গতকাল রাতে কি তুই নিঃশব্দে কেঁদেছিলি?
এবার হ্যা-সূচক মাথা নাড়ে ফাইযা।
-কেন?
-ভয় পেয়েছিলাম।
-ভয়? কিসের ভয়?
-ওই জিনিসটাকে দেখে।
-কোন জিনিসটা? ফাইযার কথার মাথা মুন্ডু আমি কিছুই ধরতে পারি না।
-তুই ঘুমিয়ে পড়লে যেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
-আমার দিকে তাকিয়ে থাকে? কে? মানে কি?
এবার ফাইযা আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। ওই যে, তোর কাবার্ডের ওপর বসে থাকা আগুনে পুড়ে যাওয়া লোকটা!!!
তিন
পনের মিনিট পর।
আমি ধাতস্থ হতে একটু সময় নেই।
-তাহলে আমার কাবার্ডের ওপর একটা আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষ বসে আছে?
-হ্যা।
-আর কি করছে সে?
-তোর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মুখ হাসি হাসি।
-আর লোকটা আমাদের রুমেই আছে কেন? অন্য রুমে যেতে পারে না? ধর, শামার রুমে। ওতো আমার চেয়েও সুন্দরী।
-না।
-কেন? কারণ অতিসস্তায় পেয়ে আনন্দে গদগদ হয়ে গার্ড মামার কাছ থেকে যে কাবার্ডটা তুই কিনেছিস সেটার আদি মালিক ছিল ওই লোকটাই।
-তুই কিভাবে জানলি?
-আজ সারাদিন এই খবরগুলোই নিয়েছি।
-ক্লাস বাদ দিয়ে শার্লক হোমসগিরি করছিস? গার্ড মামাকে জেরা করেছিস নাকি?
-করলে করলাম। তথ্যগুলা গুরুত্বপূর্ণ।
-আর কোন তথ্য জেনেছিস যা আমার জানা দরকার?
-হ্যা, লোকটা একটা মেয়েকে ভালবাসত। সেই মেয়েটা থাকত আমাদের হলেই। লোকটা প্রপোজ করেছিল মেয়েটাকে, মেয়েটা সবার সামনে চড় মেরেছিল লোকটাকে।
আমার হাসি পায় ফাইযার গল্প শুনে, খুব কাঁচা গল্প দিয়ে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।ভয় দেখানোর এই আইডিয়াটা কার হতে পারে?
নায়লার?
সম্ভাবনা বেশি।
-তো তারপর কি হল?
-লোকটা আত্মহত্যা করেছিল নিজের শরীরে আগুন দিয়ে, আমাদের হলের সামনে।
-বলিস কি? তা লোকটা আমার মত আর্টসের ছাত্রীর দিকে তাকায় কেন? তোর মত সাইন্সের ছাত্রীদের দিকে তাকাতে পারে না? আচ্ছা, ওই আপুটাও কি সাইন্সের ছাত্রী ছিল?
-জানি না। তবে উনার নাম জেনেছি।
-কি?
-ইশিতা। তোর নামে নাম।
এবার আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। অনেক হয়েছে, এবার থাম ভাই। আর কত নাটক করবি? ভয় দেখানোর আইডিয়াটা কার? নিশ্চয়ই নায়লার? ওরা কোথায়? দরজার কান লাগিয়ে শুনছে নাকি? ডাক সবকয়টাকে।
-ইশিতা।
-কি?
-আমি নাহয় ওদের ডাকলাম। কিন্তু তোর কাঁধের ওপর থাকা এই কালো দাগটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবি?
আমি আমার কাঁধের ওপর চোখ ফেরাই। কারও হাত দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু স্পষ্ট অনুভব করছি একটা হাত আমার কাধ চেপে ধরেছে, আমার টপের ওপর ধীরে ধীরে ছাপ ফুটে উঠছে সেই কালো হাতের!!!
আমার লেখা আরো কিছু পিশাচ কাহিনীঃ
রক্তখেকো ডাইনী
অন্ধকারে বিলীন
আমাদের নতুন পুরানো ঘর
হোটেল একশ তলা
একশ তলায় আবার
রাতের আঁধারে
কন্ঠ
অতিথি
শয়তানের পাল্লায়
খোলা দরজা
নির্ঘুম রাত
একটি ফটোগ্রাফ
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩৬
আমি তুমি আমরা বলেছেন: যেহেতুর এই গল্পের সাথে কোন ভয়ানক সাউন্ড এফেক্ট যোগ করার সুযোগ নেই, তাই এই ছবিটাই সম্বল। ভৌতিক গল্পের সাথে একটা ভয়ংকর ছবি না থাকলে ঠিক ভাব আসে না, কি বলেন??
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩৮
হাবিব বলেছেন: হুম ঠিক বলেছেন
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩৯
আমি তুমি আমরা বলেছেন: ধন্যবাদ। আশা করি গল্প ভাল লেগেছে।
৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: গার্ডমামার ওই লোকের ঘরের আসবাব-পত্র বিক্রি করাটা ঠিক স্বাভাবিক ব্যাপার না। এটাও গল্পের একটা হরর পার্ট।
ইশিতার ভাগ্য দেখছি খুব খারাপ! পোড়া লোকের সাথে এখন প্রেম করতে হবে!
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৩
আমি তুমি আমরা বলেছেন: গার্ডমামার ওই লোকের ঘরের আসবাব-পত্র বিক্রি করাটা ঠিক স্বাভাবিক ব্যাপার না। এটাও গল্পের একটা হরর পার্ট।
এভাবেতো ভেবে দেখিনি। আপনার মনযোগী গল্পপাঠ দেখে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ ভাই
৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: ভয়াবহ।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১০
আমি তুমি আমরা বলেছেন: গল্প? নাকি ছবি?
৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৭
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পিচাশ দেখতে কেমন মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫৬
আমি তুমি আমরা বলেছেন: একজন মুসলমান হিসেবে আমি জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি, তবে ভূত কিংবা অন্যকোন পিশাচের অস্তিত্বে নয়।
৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:০৬
অজ্ঞ বালক বলেছেন: পোড়া মন পার্ট থ্রি ছবির স্ক্রিপ্ট মনে হইলো। বেশ সুন্দর হইসে। কাহিনীর ফ্লো টা ভালো আসিলো।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৩৮
আমি তুমি আমরা বলেছেন: তাও ভাল অন্তত একজন আমার গল্পকে মুভি স্ক্রীপ্ট হওয়ার যোগ্য ভাবছে।
গোপন একটা কথা জিজ্ঞেস করিঃ আপনি কি কোন চলচ্চিত্র পরিচালক কিংবা প্রযোজক?
৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:৪৭
ইনাম আহমদ বলেছেন: গল্পটা ভালো।
লেখক বলেছেন: একজন মুসলমান হিসেবে আমি জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি, তবে ভূত কিংবা অন্যকোন পিশাচের অস্তিত্বে নয়।
যতদিন না বিশ্বাসের উর্ধ্বে যেতে পারবেন, আপনার লেখার মানের উন্নতি হবেনা। সাদামাটা লেখার ধরণ দিয়েই জীবন পার করতে হবে।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৪১
আমি তুমি আমরা বলেছেন: প্রথমে বললেন গল্পটা ভাল, তারপর আবার বললেন বিশ্বাসের ওপর না উঠতে পারলে সাদামাটা লেখা দিয়েই জীবন পার করতে হবে।
এখন আমি কি বুঝব?
গল্পটা সাদামাটাভাবে ভাল? নাকি ভালভাবে সাদামাটা?
কনফিউজ করে দিলেন
৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১৫
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ভয় পেলাম না। সাধারণ প্লট কিনা
সময় পেলে আমার ব্লগে ঢু মারতে পারেন।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫০
আমি তুমি আমরা বলেছেন: আমার কোন ভৌতিক গল্প পড়েই ভয় পাবেন না। বীভতস কোন দৃশ্যের বর্ণনা আমি ইচ্ছা করেই দেই না, ভাল লাগে না। গল্প আমার কাছে বিনোদনের ব্যাপার। গল্প পড়ে ভয় পেলেতো বিপদ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩০
হাবিব বলেছেন: কি ভয়ানক ছবি......