নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

হিমন

ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।

হিমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কীভাবে পৃথিবীর নাগরিক হওয়া সম্ভব?

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:০৬

ঘৃণা, জিঘাংসা আর অন্যায্যতায় পূর্ণ এই পৃথিবীতে মানুষের মনে ঔচিত্যবোধ জাগ্রত করতে আমাদের করণীয় বহু। মানুষের পক্ষে কতখানি ন্যায্য হয়ে উঠা সম্ভব এবং তার জন্যে যে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অতি দামী গুণাবলীর অধিকারী হতে হয় তা হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়ার বস্তু নয়, একদিনে তা অর্জন তো সম্ভবই নয়। এর জন্যে প্রয়োজন যুগ যুগ ধরে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা।

কীভাবে সেই প্রচেষ্টা মানুষ করতে পারে তা নিয়ে নিরীক্ষা এ জগতে কম হয়নি। সভ্যতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সূতিকাগার যদি ইউরোপকে ধরি তবে সে নিরীক্ষা এ অঞ্চলে হয়ে আসছে অন্তত ষোড়শ শতাব্দী হতে। অধুনা শান্তি ও গণতন্ত্রের ছবকধারী এই ইউরোপজুড়ে গৃহযুদ্ধ চলেছে এক হাজার বছর ধরে। শেষকালে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। প্রাণহানি আর ক্ষতিবৃদ্ধির চূড়ান্ত। এবং এরপরই এরা কিছু মৌলিক ব্যাপারে একমত হয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল ব্যক্তি ও ধর্মীয় চূড়ান্ত স্বাধীনতার যা ধর্মান্ধতার দরুণ হাজার হাজার বছর মানুষের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

মানুষ হয়ে জন্মানোর স্বার্থকতা এই যে, তাঁর জন্মের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারার সক্ষমতা অর্জন করা। ইউরোপে গত কয়েকযুগের স্থিরাবস্থা থেকে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে তারা পৃথিবীতে মানুষের আগমনের কারণোপলব্ধি করতে পেরেছে। ব্যক্তি ও ধর্মীয় পরিচয়, বিভিন্ন জাতি, লিঙ্গ, বর্ণের পরিচয় ছাপিয়ে সবার উর্ধ্বে মানুষকে শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারাই সেই কারণ। এই উপলব্ধি অর্জন সম্ভব খুবই সহজ কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জিনিস দিয়ে, তার নাম ভালবাসা। যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন গোত্রের যেকোন বিশ্বাসের মানুষকে ভালোবাসার অক্ষমতা এক ক্ষমাহীন অপরাধ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

ভালোবাসতে পারার মত মহান অথচ সহজ গুণাবলী অর্জন করার জন্য সংস্কৃতিবান মানুষ হওয়া জরুরী। শিল্পের সাথে সম্পর্কহীন মানুষ সংস্কৃতিবান নয়। রুচিশীল শিল্পের সাথে জড়িত পক্ষে উগ্র হওয়া কঠিন। শিল্প আর সংস্কৃতি মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। ফ্রান্স থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে যে রেনেসাঁ পৃথিবীব্যাপী বিস্তারলাভ করেছে তার মূল বানীই হল এই সংস্কৃতি। প্রেমময় সমাজ নির্মাণে সংস্কৃতিবান মানুষ তৈরি তাই জরুরী। একাজ মূলত করে থাকেন বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবীরা। রেনেসাঁসও এসেছে তাঁদেরই হাত ধরে। মধ্যযুগের পর ইউরোপ মহাদেশে শিক্ষা-দীক্ষা, মানবিক আচরণ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও শিল্পের নানা ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয় যা রেনেসাঁ হিসেবে চিহ্নিত। মধ্যযুগের ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার এবং জীবনের গতানুগতিকতার বাইরে এই নবজাগরণের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার আঁধার শিক্ষালয়গুলোর।

জিওর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০) ১৫৮৪ সালে ভয়ঙ্কর এক বই লিখেছিলেন De l’Infinito Universo et Mondi নামে, যার বাংলা করলে দাঁড়াবে – ‘অনন্ত মহাবিশ্ব এবং বহু বিশ্ব’। এই বইয়ে তিনি অস্বীকার করলেন বাইবেলে লেখা পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বকে, ঘোষণা করলেনঃ ‘পৃথিবী তো সৌরজগতের কেন্দ্র নয়ই, এমনকি এই মহাবিশ্বের সংখ্যাও একটি নয়, বরং এর সংখ্যা হতে পারে অনন্ত অসীম।‘ এই বক্তব্য এবং বইয়ের কারণে চার্চ তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। ইতালির ক্যাম্পো ডি ফিওরির ঠিক যে জায়গাটায় ব্রুনোকে ১৬০০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, প্রায় তিনশত বছর পর ঠিক সে জায়গায় উন্মোচিত হয় ব্রুনোর একটি দীর্ঘ ব্রোঞ্জমূর্তি। এমন উদাহরণ হাজারো। জ্ঞান ও ভালবাসা বিস্তারের পথে ধর্মান্ধতা বরাবরই এক বাঁধা।

দুর্দশাগ্রস্ত বর্তমান এই জমানায় অজ্ঞানতা আর বুদ্ধিহীনতার চর্চা এমন এক স্থানে এসে থেমেছে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণও আমাদের বহুজনের পক্ষে আজ আর সম্ভব নয়। একটি সমাজের সবচেয়ে করুণ অবস্থা কখন হয়? যখন মানুষ ভালবাসার অধিকার হারায় বা ভালবাসতে অক্ষম হয়। নষ্ট সমাজের বৈশিষ্ট্য হল ধর্মের অন্যায় অপব্যাখ্যা চর্মচক্ষে দেখেও কখনো মুর্খতা, কখনো নির্বুদ্ধিতা, কখনো অন্ধ দলবাজি, কখনো হিংসা, কখনো নিজের মত নিজের বিশ্বাসকে অযৌক্তিকভাবে হলেও শ্রেষ্ঠ্য প্রমাণের উদগ্র বাসনা- ইত্যাদি কারণে চুপ থাকা, প্রতিবাদ না করা। বিভাজন, অনৈক্য, ধর্মীয় ভেদাভেদ, লৈঙ্গিক বৈষম্য, হিংসা-বিদ্বেষ, কলুষতা ভুলে সত্য-সুন্দর-সৌন্দর্য আর শান্তির প্রতি সমর্থনের হাত সর্বদা প্রসারিত রাখা একজন আধুনিক শান্তিবাদী উদার সংস্কৃতিবান মানুষের অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব। আর এভাবেই মানুষ শুধুমাত্র একটি সুনির্দিষ্ট সীমানার নাগরিক না হয়ে, হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর নাগরিক।


ধন্যবাদান্তে,
জাহিদ কবীর হিমন
আখেন, জার্মানি

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:০০

আলুমিয়া বলেছেন: অনেক মানুষ আপনার মত ভাবে।

Imagine there's no heaven
It's easy if you try
No hell below us
Above us only sky
Imagine all the people
Living for today... Aha-ah...

Imagine there's no countries
It isn't hard to do
Nothing to kill or die for
And no religion, too
Imagine all the people
Living life in peace... You...

John Lennon
"Imagine"

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৫৬

হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আপনি কষ্ট করে সময় নিয়ে পড়েছেন তাই ভাল লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.