নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।
ফ্রাঙ্কফুর্ট নগরীর সন্নিকটে হ্যানাও শহরে সম্প্রতি একটি শিশা বারে মর্মান্তিক যে হামলায় নয় জন মুসলিম অভিবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে জার্মানিতে ঘৃণাভিত্তিক আক্রমণের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। জার্মান সরকারের হাতে এই মুহুর্তে বারো হাজার সাতশ উগ্র ডানপন্থীর তালিকা রয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে এদেরই কেউ হ্যানাওএর থেকেও বড় দানব হয়ে হাজির হতে পারে।
ঘৃণাবাদী কাপুরুষোচিত হামলা জার্মানিতে গত এক দশকে আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে ড্রেসডেন শহরে কোর্টে শুনানি চলাকালীন ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় মারওয়া শারবিনি নামের এক মিশরীয় নারীকে। এলেক্স নামের এক রাশিয়ান বংশোদ্ভূত জার্মান তাঁকে হত্যা করে। আঠারো বছরের এক ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান ২০১৬ সালের জুলাই মাসে মিউনিখে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে দশজনকে, আহত হয় ৩৬ জন। এসেন শহরে গেল নতুন বছর বরণের রাতে পঞ্চাশ বছর বয়সী এক জার্মান ব্যক্তি তার গাড়ি তুলে দেয় কিছু সিরিয়ান-আফগান জমায়েতের উপর। মারাত্মক আহত হয় আটজন। এছাড়াও ভিন্নবর্ণ ভিন্নগোত্র বা হিজাব পড়া দেখলে নানাবিধ কটূক্তি পথে ঘাটে হামেশা ঘটেই চলেছে। নব্য নাৎসিদের স্বর্গরাজ্য ড্রেসডেন শহরে এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর গায়ে হাত তোলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল এই কিছুদিন আগেই।
এসব আক্রমণকারীদের আবার নানা আয়োজন থাকে। তারা রাজনৈতিক নেতাদের মত হামলার আগে ইশতেহার প্রকাশ করে। হ্যানাও শহরের এই খুনিও করেছে। ২০১১ সালের ২২ শে জুলাই শান্তির দেশ নরওয়ের এক ছোট্ট দ্বীপে এক খৃষ্টান জঙ্গি গুলি করে হত্যা করে ৬৯ জন কিশোর-কিশোরী সহ মোট ৭৭ জন নিরাপরাধ মানুষকে। হামলার আগে ভ্রেইভিক নামের ওই খুনি ১৫১৮ পৃষ্ঠার একটি মেনিফেস্টো প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়, ইউরোপ থেকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য(Diversity) আর ইউরোপের ইসলামীকরণ রোধ করাই ওর জীবনের ব্রত ছিল।
একাকী নেকড়েদের (Lone wolf) এরকম হঠাৎ আক্রমণ থেকে আমরা নিজেদের কিভাবে রক্ষা করতে পারি? মুসলিমরা কি তবে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিবে? লাইপজিগের পাশে হালে শহরে ইহুদি উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে, তাহলে কি ইহুদিরা সিনাগগে যেতে পারবে না? মুসলিম মহিলারা যারা হিজাব পরিধান করে, নিরাপত্তার কথা ভেবে কি তবে তারা নিজেদের স্বাধীনমত পোশাক পরবে না? পৃথিবীতে এমন কী প্রসাধনী আছে যা মেখে আফ্রিকানরা চোখের পলকে সাদা হয়ে জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হবে শ্বেত-শ্রেষ্ঠ্যত্ববাদীদের ভিড়ে মিশে?
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে এই ঘৃণ্য মানসিকতার জঙ্গিরা আসলে কি চায়। তারা চায় ভীতি ছড়াতে। সহজ কথায় বলতে গেলে, উদাহরণস্বরূপ, একজন হিজাবধারী মুসলিম নারীর উপর কেউ হামলা করলো, সেটা দেখে ভয় পেয়ে সবাই না হলেও অন্তত দশজন নারী হিজাব পরিত্যাগ করলো। এতে করে ওই হামলাকারীর জয় হলো। আপনার ধর্ম বিশ্বাস, আপনার পোশাক আপনার ধর্মীয় পরিচয়ই শুধু বহন করে না, এটা আপনার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অংশও। যারা মসজিতে যান, তারা অবশ্যই মসজিদগমন বন্ধ না করে বরং বাড়তি সতর্কতা নিতে পারেন। মুল ফটকের সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো যেতে পারে। মিশর পাকিস্তান আফগানিস্তানে মুসলিম জঙ্গিদের যেমন মূল টার্গেট থাকে একটি হামলা করেই অধিক ভিন্নধর্মের মানুষকে হত্যা করা, তেমনি ইউরোপীয় খৃষ্টান জঙ্গিদের উদ্দেশ্য থাকতে পারে এক আঘাতেই যাতে অধিক মুসলিম, ইহুদি বা বিদেশীদের হত্যা করা যায়। একারণে মুসলিমরা প্রতি শুক্রবারে নামাজের আগে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অন্তত নামাজ চলাকালীন প্রশাসনিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন। মনে রাখবেন, ধর্মবিশ্বাস আপনার মানবাধিকার। কতিপয় দুর্বৃত্তের হঠকারিতায় আমাদের কারোরই উচিত হবে না আমাদের অন্তরের বিশ্বাস, ভালবাসা আমাদের নিজস্বতার বহিঃপ্রকাশ হতে নিজেদের দূরে রাখা।
ঘৃণার পৃথিবীতে আমাদের করণীয় কি?
নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঘৃণা, জিঘাংসা আর অন্যায্যতায় পূর্ণ এই পৃথিবীতে মানুষের মনে ঔচিত্যবোধ জাগ্রত করতে আমাদের প্রতিটি মানুষের করণীয় বহু। আমাদের কার কথায় কীভাবে কোন দিক দিয়ে ন্যুনতম হলেও কোন ব্যক্তি মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের ঘৃণা- বিদ্বেষ প্রকাশ প্রায় সেটি খেয়াল করে চলতে হবে। সেই অপছন্দের মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আদর্শ নিয়ে কড়া সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু সেই মানুষের প্রতি ঘৃণা বা অসম্মান প্রদর্শন এক ক্ষমাহীন অপরাধ। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক (Inclusive) সমাজব্যবস্থার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া মানবজীবনের আর কোন সাধনাই সাধনা নয়। শুভবাদী, নীতিবাদী অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসীরা বর্ণে-লিঙ্গে-ধনী-দরিদ্রে-ধর্মে-অধর্মে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুঙ্খানু সমতা, বৈষম্যহীনতায় বিশ্বাস করে। তারা কামনা করে পৃথিবীর সর্বত্র ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা চালু হোক। হোক তা মুসলিম সংখাগরিষ্ঠ, হোক তা খ্রিষ্টান ইহুদী বা হিন্দু মানুষের দেশ। বিভাজন আর ঘৃণার মতাদর্শকে বুকে লালন করে, একটি প্রীতিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে আহত করে এই পৃথিবী নামক নীল গ্রহের বেদনাকে আরও বাড়িয়ে আমরা একদিন বিদায় নিব, তা যেন না হয়।
বিভাজন, অনৈক্য, ধর্মীয় ভেদাভেদ, লৈঙ্গিক বৈষম্য, হিংসা-বিদ্বেষ, কলুষতা ভুলে সত্য-সুন্দর-সৌন্দর্য আর শান্তির প্রতি সমর্থনের হাত সর্বদা প্রসারিত রাখা একজন আধুনিক শান্তিবাদী উদার সংস্কৃতিবান মানুষের অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব। আর এভাবেই মানুষ শুধুমাত্র একটি সুনির্দিষ্ট সীমানার নাগরিক না হয়ে, হয়ে উঠতে পারে শান্তির পৃথিবীর নাগরিক।
ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে
২২.০২.২০২০
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ঘৃনার বিপরীত হলো প্রেম।
সূফিজমের চর্চা একটা বড় নিয়ামক হতে পারে।
আত্মদর্শনের মাধ্যমে মানুষের মনূষ্যত্বের বিকাশে জোর দিতে হবে। যখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবে
সৃষ্টির প্রতি, মানুষের প্রতি, মানবতার প্রতি তার আত্মজাগৃতির জায়গা থেকেই দায়বোধ জাগ্রত হবে্
সেই দায় পূরণে হাত বাড়িয়ে দেবে প্রেম। সকলের শুভ এবং কল্যানের ভাবনায় যার যার স্থান থেকে
প্রেমানুভবে সক্রিয় থাকলেই ঘৃনা পালিয়ে যাবে।
পোষ্টে ++++
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমাদের *উচিত হবে জার্মানী দখল করে নেয়া।
৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৩
সিরাজুল হক দা রিভিউয়ার বলেছেন: খুব দুঃখজনক ঘটনা।
৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৪
একাল-সেকাল বলেছেন: ভারত, চীন, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ইস্যুতে আমরা যা করেছি, তাই করা উচিৎ।
৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
মুসলমানেরা অন্য দেশে গিয়ে, সেই দেশের ধর্ম, সংস্কৃতিকে "ভুল ও পাপ" হিসেবে ঘোষণা করে, তারা ওদের খেয়েদেয়ে ওদের সংস্কৃতিকে হেয় করে। মুসলামানদের উচিত নিজ দেশকে উন্নত করা, নিজে দেশে থাকা।
৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৩
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বর্তমানে করণীয় কিছুই নাই | শিক্ষিত হন, পরিশ্রমী হন, অন্য দেশে গিয়ে ভাতা খেয়ে সমাজের বোঝা না হয়ে ওই দেশের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করুন | স্থানীয় লোকজনের বিরূপ মনোভাব তখন এমনিতেই কমে আসবে |
৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: জঙ্গীরা এখন পৃথিবীর সব দেশে আছে। এটা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।
৯| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৮
নুরহোসেন নুর বলেছেন: মুসলিমরা বোকা।
কারন তারা সর্বদা অপরের ধর্মকে হেয় করে।
১০| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১১
রাশিয়া বলেছেন: মুসলিমরাই কেবল অন্যের ধর্মকে হেয় করে, আর অন্যেরা সব ধোয়া তুলসি পাতা। ইন্ডিয়ায় মোদী কি করছে? আমেরিকায় ট্রাম্প কি করছে? গোটা বিশ্বেই মুসলিমদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। তার জন্য কি মুসলিমরা কাউকে খুন করতে গেছে? মুসলিমরা যদি অন্য ধর্মকে হেয় করেই থাকে, তার জন্য তাদেরকে খুন করতে হবে?
চাদ্গাজী দুই নজর আমেরিকা দেখে সারা দুনিয়াকে হেয় করা শুরু করেছে।
নুর হোসের নুর নামের এই মানুষটার ধর্ম কি? মানবধর্ম?
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমাদের হবে জার্মানী দখল করে নেয়া।