নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

হিমন

ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।

হিমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইএসআই তালেবান আর হেফাজতের আদর্শিক মিল

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:২৭

আধুনিককালে পৃথিবীর যেসব দেশেই ইসলামী মৌলবাদিরা ক্ষমতাশালী হয়েছে সেখানেই তাদের প্রথম আঘাতের স্বীকার হয়েছে ইট পাথরের নির্জীব ভাষ্কর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, মাজার, নান্দনিক উপাসনালয় এমনকি সেটি মসজিদ হলেও। কারণ শোভা-সৌন্দর্য-সুন্দর কোনকিছুই তাদের পছন্দ নয়। তারা অন্ধকারের মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যে আগুণ ধরিয়েছে আইএসআই। পশ্চিমাদের ছত্রছায়ায় এই আগুন ছড়িয়েছে পালমিরা থেকে আলেপ্পো, সেখান থেকে মসুল হয়ে বাগদাদ অব্দি। যে ভূমিই এই জঙ্গিরা দখলে নেয় তাদের অবশ্যকরণীয় হয়ে দাঁড়ায় নারীদের শিক্ষা বন্ধ করে যৌনদাসী বানানো, এরপরই প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আর ভাষ্কর্য ধ্বংস। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি তাদের আয়ত্বের মাঝে ব্যাবীলিয়ন, পার্সিয়ান ও রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যধারণকারী সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস করে পৃথিবীর এক অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। কারণ এই তিনটি মহান যুগই বহুত্ববাদ (Pluralism) আর বৈচিত্র্যকে (Diversity) ধারণ করেছে যা আসলে ক্যালডিয়ান্স, ইয়াজিদি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির কথা বলে এবং বর্তমানে যাদের সাথে আইএসআই কোন ধরণের মানবিক ঐতিহ্য ভাগাভাগি করার তাগিদবোধ করে না। এই মৌলবাদীরা পৃথিবীর ইতিহাস শুরু করতে চায় জাহিলিয়্যাতের পর থেকে একথা প্রমাণ করবার জন্য যে এর আগে পৃথিবীতে কোন স্বর্ণালী সময় ছিল না, ইসলাম আসার পথ থেকেই এই গোল্ডেন ইরার শুরু। একারণেই ইসলামপূর্ব শান্তিবাদী ইতিহাস তাদের এত অপছন্দ। তর্জনী উঁচিয়ে, নুরানি দাড়ির মাঝের ওষ্ঠ বিগড়িয়ে, মূখনি:সৃত লালা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি আর গগনবিদারী চিৎকার করে বায়তুল মোকাররমের সামনের সড়কে মোল্লারা যে সাপ্তাহিক বয়ান জাতিকে প্রদান করে, আমার প্রশ্ন হল সেই বয়ানের কোন কোন ধারা আইএসআই বা তালেবানের মতাদর্শ থেকে ভিন্ন?

২০১৫ সালের মার্চে ইজরাইল থেকে প্রকাশিত দৈনিক হারেটজ পত্রিকায় এক কলামে আজিজ আবু সারাহ লেখেন, "কোন জাতিগত গোষ্ঠীকেই পুরোপুরি ধ্বংস করা যায় না যতক্ষণ না তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমূলে উৎপাটন করা হয়। কারণ এখান থেকেই আবার মনুষ্যকুলের যাত্রা শুরু হয়। ভবিষ্যতকে কব্জা করতে তাই আইএসআই অতীতকে ধ্বংস করে চলেছে।”

আজ বাংলাদেশের বহুত্ববাদের কলিজা ধরে টান দিয়েছে এই হেফাজত। দুগ্ধপোষ্য শিশুও বোঝে এই হেফাজতই মধ্যপ্রাচ্যের আইএসআই এর বাংলাদেশি ভার্সন। এরা আরেকটু শক্তিশালী হলে হয়ত আরও পরিষ্কারভাবে তা পরিলক্ষিত হবে, সেদিন হয়ত কিছু করার থাকবে না কারো। কিন্তু বহু মানুষ সব বুঝেও নিশ্চুপ থাকার পথকেই শ্রেয় ভাবছে। একটি দেশ চোখের পলকে জঙ্গিরাষ্ট্রে রূপলাভ করে না, কয়েকযুগ সরকারী বেসরকারি নানা সংস্থা সংগঠনের প্রচেষ্টায় সফলভাবে একটি দেশ জঙ্গিদেশে পরিণত হয়। আফগানিস্তান আর পাকিস্তান থাকতে আমাদের আর কোন উদাহরণ দরকার আছে কি? ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত 'দ্য ডন' পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের মোল্লারা ঘোষণা দেয়, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দেশের প্রাচীন ইতিহাস তথা গান্ধারা সভ্যতা, মহেঞ্জোদাড়ো-হরোপ্পা, মৌর্য্যের ইতিহাস ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের শেখানো যাবে না, এসব হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস। শিক্ষামন্ত্রী সংসদে এর বিরোধিতা করলে ইসলামী মৌলবাদীরা জানায়, "ওগুলো আপনাদের ইতিহাস, আমাদের ইতিহাস শুরু হয়েছে মক্কা-মদিনা থেকে"। ডঃ সালাম পাকিস্তানের প্রথম নোবেলজয়ী। বিশ্বখ্যাত এই পদার্থবিজ্ঞানীকে দেশ ছাড়তে হয়েছে উগ্রবাদীদের হুংকারে। স্কুলের বইয়ে এই সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি নাস্তিক মুরতাদ, তার লেখা কোন বই পড়া যাবে না। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে উনত্রিশটি গুলি করে হত্যা করেছিল তারই দেহরক্ষী হুসাইন কাদরি। খুশিতে এই খুনীর নামে মৌলবাদীরা একটি মসজিদের নামকরণ করেছে। সেই মসজিদে মহান আল্লাহ পাকের পবিত্র কোরান পঠিত হয়, নবীর (স) নামে দরুদ পড়া হয়, সত্যিকারের মুসলমানেরা ওসব সহ্য করে। মূলত সমসাময়িক পৃথিবীর সাথে মুসলমানদের তাল মিলিয়ে চলতে সাংস্কৃতিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

২০০৭ সালে খুন হওয়ার আগে বেনজীর ভুট্টো বলেছিলেন, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হল আরও বেশি গণতন্ত্র। সদ্যমৃত শফির নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে মোল্লাদের হিংসা, অসহিষ্ণুতা, উন্মত্ততা শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদেরও প্রতিশোধ নিতে হবে আরও বেশি অহিংসা দিয়ে, আরো বেশি প্রেম দিয়ে, প্রীতি দিয়ে, আরও বেশি বাঙ্গালীত্ব চর্চার মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে-বাইরে উপন্যাস থেকে সত্যজিৎ রায় একই নামে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন। সিনেমার শুরুতেই নায়িকা বিমলার উক্তি, ‘আমি আগুনের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছি। যেটুকু পুড়বার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, আর যেটুকু বাকি আছে তার আর মরণ নেই।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার কর্ণকুহরে এ দাবী পৌঁছুবে না স্বত্বেও বলতে চাই, আপনার মরণ ছাড়া আর হারাবার কিছু নেই, কিন্তু বাংলাদেশকে দেবার আছে অনেক। মৌলবাদের সাথে আপস করলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বাংলাস্তানে পরিণত হবে। কন্যা হয়ে তা কী করে আপনার চাওয়া হতে পারে!


২৮ নভেম্বর ২০২০
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



রবী ঠাকুর এই বলেছেন, সত্যজিত রায় ঐ বলেছেন, ব্লা ব্লা ব্লা, আপনার কিছু বলার আছে?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১২

হিমন বলেছেন: নিজের কিছু বলার দক্ষতা নেই বলেই ওদের কথা টেনে টেনে আনি। :D

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৩২

ফটিকলাল বলেছেন: অসাধারন পোস্ট। সুপার লাইক

৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৪১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: শেখ হাসিনাই এদের লানন পালন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছেন।জাতি আছে বিরাট এক ভ্রান্তির মধ্যে।

নতুন তেতুল হুজুর বলেই দিয়েছেন আরো ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকবে এই সরকার।এই খুশিতেই বগল বাজাচ্ছে এই সরকার।
তারা ভুলে গেছে শাপলা চত্তরের আস্ফালন।

৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪১

এমেরিকা বলেছেন: আই এস কখনোই ইসলামের স্বপক্ষ শক্তি ছিলনা। তারা কখনোই কোন মূর্তি/ভাস্কর্যের ক্ষতি করেনি। যে কাজ করলে ইসলামের তথা মুসলিম বিশ্বের বদনাম হয় - বেছে বেছে তারা কেবল ঐ কাজগুলোই করেছে। তাই পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে অনেক হুমকি ধামকি দিলেও সরাসরি কোন এ্যাকশনে যায়নি।তাদেরকে নির্মূল করতে বা মুসলিম বিশ্বের মান বাঁচাতে সিরিয়া, তুরস্ক, জর্দান ও ইরানের সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হয়েছে।

হেফাজত সরকারকে অনেক হুমকি ধামকি বা লাফালাফি করে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেনা। সরকার তাদের নেতাদেরকে বহু আগেই ব্যাগে ভরে ফেলেছে। তাই তাদের জন্য ভাস্কর্যের কাজ আটকে থাকবে - এরকম মনে করার কোন কারণ নেই।

৫| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আইএসআই, তালেবান এবং দুনিয়ার সমস্ত জঙ্গি এরা অন্ধকার জগতের মানুষ। এরা সারা বিশ্বের শত্রু। এরা ভয়ানক।

৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৫

স্থিতধী বলেছেন: যদিও আই এস আই, তালেবান ও হেফাযত ঠিক এক জিনিস নয়, তবে হেফযত এ দেশে আই এস আই এর বিস্তৃতির জন্য যে
পটভুূমি প্রয়োজন সেটার সৃষ্টি করে দিতে সক্ষম, তা সত্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.