নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

হিমন

ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।

হিমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশাঃ মর্মার্থ

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩২

ফেসবুকের একটি গ্রুপ "শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)"-য় একজন প্রশ্ন করেছেন জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতার একটি লাইনের মর্মার্থ জানতে চেয়ে। আমি সেই প্রশ্ন আর আমার দেয়া উত্তরটি এখানে তুলে দিচ্ছি।

প্রশ্নঃ জীবনানন্দ দাশের লেখা পঙক্তি "চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।" এই পঙক্তিটির ভাবার্থ কারো জানা থাকলে একটু বুঝিয়ে বলুন,ধন্যবাদ

আমার দেয়া উত্তরঃ
বনলতা সেন কবিতার এই লাইনে "বিদিশার নিশা"-এর সাথে কবি বনলতার নিকষ ঘনকালো চুলের তুলনা করেছেন। বিদিশা হল প্রাচীন শহর। সেই শহরের অন্ধকার রাতের মতই নায়িকার কেশ কালো।
তবে এখানে আরো কথা আছে। কবি কী করে জানলেন বিদিশা শহরের রাত অত কালো? কেন কবি অন্য কোন শহরের রাতের সাথে বনলতার চুলের তুলনা করেননি, যেমন, হরপ্পা, ইলোরা, অজন্তা ইত্যাদি? জীবনানন্দ দাশ এই শহরের নামটি মূলত পেয়েছিলেন সংস্কৃত ভাষায় লেখা কালিদাসের "মেঘদূত" কাব্যগ্রন্থ থেকে যেখানে বিদিশার নিশার কথা বিস্তারিত উল্লেখ আছে। কবির অনুজ অশোকানন্দ দাশের লেখা থেকে জানা যায় কবি স্কুলে থাকতেই সংস্কৃত ভাষায় এই কাব্যগ্রন্থটি পড়েছেন।
এই কাব্যগ্রন্থের একটি লাইন হল, "সকল উপাচারে কামুকবৃত্তির পূর্ণফল" (বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদ)। বিদিশা মূলত দশার্ণদেশের রাজধানী ছিল। সেকালে এই নগর ছিল পাপাচারের কেন্দ্র। পেশাদার গণিকাবৃত্তিতে এই শহর নাম করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত্রি হলেই নগর চঞ্চল হয়ে উঠত, বারবনিতাদের নিয়ে পুরুষরা লাগামহীন কমোন্মাদনায় মেতে উঠত। বিদিশার নিশায় সেই বেশ্যাদের দেহ হতে ভেসে আসতো পরিমলের গন্ধ। পরিমল বলতে পেষণ-মর্দনজনিত গন্ধ। বনলতাকে উদ্দেশ্য করে কবি বলছেন, "চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা। অর্থ্যাৎ, বিদিশা নগরের নিশিকালে বেশ্যাদের দেহ হতে যে গন্ধ ভেসে আসতো, তেমনি গন্ধ বনলতার চুলে। মানে দাঁড়ায়, পাপাচারে লিপ্ত নগরীর সাথে তুলনা করতেই শুধুমাত্র কালো চুলের কথা বলা হয়নি, বেশ্যাবৃত্তির সাথে এর বেশ যোগসাজশ রয়েছে। অনেক গবেষকের দ্বিমত সত্ত্বেও, এর থেকে বহু গবেষক অনুমান করেন, বনলতা সেন কবির দুর-সম্পর্কের বোন ছিলেন না, ছিলেন মূলত গণিকা যার কাছে গিয়ে কবি "দুদণ্ড শান্তি" পেয়েছেন বলে কবিতায় উল্লেখ করেছেন।
এই তথ্যগুলো আমি পেয়েছিলাম ডঃ আকবর আলি খানের "চাবিকাঠির খোঁজে- নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন" বই থেকে।

স্বভাবতই আমার উত্তর অনেকের পছন্দ হয়নি। অনেকেই আবার পছন্দ করেছে। যারা করেনি তাঁদের বেদনা হয়ত অন্যখানে। এতকাল প্রেমিকাকে মুগ্ধ করেছেন এই কবিতা দিয়ে। বনলতার ভিন্ন পরিচয়ে নিশ্চয়ই তাঁরা আর স্বস্তিতে নেই। প্রায় নব্বই বছর পর কবিতার বিশ্লেষণ ইতিহাস চর্চার মতই। কালে কালে অনেক গবেষক আসবেন এক এক প্রকার তত্ত্ব আর তথ্য নিয়ে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করি।

২৬ জানুয়ারি
জাহিদ কবীর হিমন, বার্লিন থেকে


মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার চাকুরীতে কাজ হচ্ছে, রোবটিক্স ডেভেলপমেন্ট? আপনার রোবটিক্স কি কাজ করে?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫১

হিমন বলেছেন: গাজী ভাই, অটোমেশনের কাজ করে। আপনারও কি আগ্রহ আছে এসবে?

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আগ্রহ করে লাভ নেই, আমি রিটায়ার্ড, এবং চোখে সমস্যা; তবে, আপনারা জানলে, আপনাদের থেকে আইডিয়া নিয়ে দেশের কিছু বছেলেমেয়েকে ইহাতে লাগানো যায় কিনা ভাবছি; করোনা শেষ হোক, আমি অবস্হা বুঝার চেষ্টা করবো।

ওখানে করোনার কি অবস্হা?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০১

হিমন বলেছেন: অবস্থা অতি ভয়াবহ! ঘর থেকেই বেরুই না। এই জন্যেই তো এত এলোমেলো লেখালেখি

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



বার্লিনে অনেক বিদেশী ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫

হিমন বলেছেন: তা তো করেই

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন। এ কবিতার প্রথম দুই স্তবকে অনেক ঐতিহাসিক স্থান/নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে, যেমন :

সিংহল সমুদ্র
মালয় সাগরে
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
বিদর্ভ নগরে;
নাটোরের বনলতা সেন।

অন্ধকার বিদিশার নিশা,
শ্রাবস্তীর কারুকার্য
দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর

আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো- একজন কবি কবিতা লেখার সময় হয়ত এতকিছু ভাবেন না, বুদ্ধিমান পাঠক/গবেষক/লেখক গবেষণা করে এতকিছু অনুমান করে থাকেন।

খুব সাধারণ ভাবে দেখলে এরকম লাগে - একজন তরুণ প্রেমিক তার প্রেমিকার অনেক কিছুতেই মুগ্ধ হয়ে থাকবেন, প্রেমিকার চোখ, চুল, আঙুল, ভ্রূ, আরো অনেক কিছু। এগুলোকে যখন উপমা দিয়ে বর্ণনা করা হয় তখন একেকজন একেকটা বস্তুকে একেকভাবে উপমিত করে থাকবেন। চুলের অন্ধকারত্ব আমারও খুব প্রিয়। চুলের গহিন অন্ধকারে নাক ডুবিয়ে দীর্ঘ গন্ধ নেয়ার অনুভূতি অনির্বচনীয়। আমার ধারণা, জীবনানন্দ দাশ- বনলতা সেনের চুলের অন্ধকারের গভীরতা বোঝানোর জন্যই বিদিশার রাত্রিকে উপমা হিসাবে ব্যবহার করেছেন, যে অন্ধকার খুব নেশাময়ও বটে। এটার ইঙ্গিত পাওয়া যায় পরের নিদর্শনগুলোর দিকে তাকালেও। প্রগাঢ় রোমান্টিসিজমকে প্রকাশ করার জন্যই এতসব নিদর্শনের উল্লেখ, যার চূড়ান্ত রোমান্টিক মুহূর্ত মূর্ত হতে দেয়া যায় যখন বলা হয় - 'থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন'।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৫০

হিমন বলেছেন: প্রথমে ধন্যবাদ জানাই মন্তব্য আর আপনার লেখাটির লিংক শেয়ার করার জন্যে। কবিতার ভাবার্থ করার অনেকের প্রচেষ্টা নিয়ে আপনার বিশ্লেষণটা আমার কাছে একবারেই অদ্বিতীয় লেগেছে, ক্ষেত্রবিশেষে মনে হল এভাবে তো ভাবিনি কোনদিন! আবারো ধন্যবাদ।

তবে আমি কবিতার বিশ্লেষণ করার প্রয়াসকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগতই জানাই। যারা করে, নিজের মত করে করলেও তা ভাল বৈ মন্দ নয়।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪০

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৫০

হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো উত্তর দিয়েছেন।
আমি এত সুন্দর করে উত্তর দিতে পারতাম না।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৫১

হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনি হলে হয়ত এর থেকেও চমৎকার উত্তর করতে পারতেন!

৭| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০৩

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ভাই আপনি পুরা কায়ানাত কে উল্টায়া দিলেন।
কোন পোলা এখন এই কবিতা দিয়া মইয়া পটাইতে পারবোনা; উল্টা মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আসে।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১২

হিমন বলেছেন: :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.