নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।
এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বাংলা ভাষায় যত উপন্যাস লিখিত হয়েছে সেটির তালিকায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুলনাচের ইতিকথা” অবশ্যই মাত্র কয়েকটির একটি। অতি ক্ষুদ্র আকৃতির এই গল্পে যাদব পণ্ডিত নামের এক চরিত্র আছে যিনি একাধারে আধ্যাত্মিক, সূর্যবিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ। গ্রামের মানুষ নানা বিপদে তাঁর কাছে আসে। অনেকে তাঁকে ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও ভাবে।
একদিন তিনি উপন্যাসের মূল নায়ক ডাঃ শশীকে বলেন যে তিনি কোন এক রথের দিন মারা যাবেন। শশীকে তিনি একথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন। তবু শশী একজনের কাছে তা প্রকাশ করে এবং পরে তা ছড়িয়ে পরে মানুষের মুখে মুখে। ঘটনাচক্রে কিছুদিন পরেই রথের মেলা। এদিকে এককান দুকান হতে হতে পুরো অঞ্চলের মানুষ বলতে শুরু করেছে এবং বিশ্বাস করতেও শুরু করেছে যে, আসছে রথের দিনই যাদব পণ্ডিত মারা যাচ্ছেন, আর তিনি যেহেতু বিদ্বান মানুষ তাই তাঁর কথার নড়চড় হবেনা, তিনি আসছে রথের দিনই মরবেন। শেষে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, না মরলে যাদব পণ্ডিতের ইজ্জত থাকছে না, এতদিনের অর্জিত মানুষের বিশ্বাস-আস্থা ধূলায় লুটোবার জো। তাই তাঁকে অতি গোপনে বিষপানের মাধ্যমে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সম্মান রক্ষা করতে হোল। যদিও ডাঃ শশীই শুধু তা জানলো, আর কেউ না, আর পণ্ডিতের মান রক্ষায় তিনি চিরটাকাল তা গোপন রাখার শপথ নিলেন।
এই অপ্রয়োজনীয় স্বেচ্ছামৃত্যুর মৃত্যুর সাথে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকার জরুরতের সাদৃশ্য কোথায়? বাংলাদেশের মত চিরকালীন-সমস্যাসংকুল সমাজ যদি খোদার আরশ থেকেও পরিচালিত হয়, তবু এক মেয়াদে তাকে সিংগাপুর বানানো সম্ভব নয়। হাসিনা এটি জানে আর বোঝে বলেই ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ট হয়েই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেয়। সুস্থ গণতন্ত্রে যদিও এই ব্যবস্থা একটি অসুস্থ পন্থা, কারণ একটি দেশ সবসময় জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হবে, কখনোই সেখানে অনির্বাচিত কেউ থাকবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা জ্ঞানতাপস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এই ব্যবস্থাকে জনগণের আত্ম-অবিশ্বাসের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থ্যাৎ, একটি মাত্র জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জনগণ দুটি দলকেই বিশ্বাস করেনা, তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার, অথচ দুটি দলের একটির কাছে দেশটিকে তুলে দিচ্ছে পাঁচ বছরের জন্য! আত্ম-অবিশ্বাসের এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল।
কিন্তু হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করেছেন বিশুদ্ধ গণতন্ত্র বজায় রাখতে নয়, সেটি তিনি করেছেন নিছক নিজের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতেই। যাদব পণ্ডিত যেমন স্বেচ্ছামৃত্যুকে জরুরী মনে করেছিল, আওয়ামীলীগও ভাবছে তাঁদেরই ক্ষমতায় থেকে যাওয়া জরুরী, এর নাম তাঁরা দিয়েছে 'উন্নয়নের ধারাবাহিকতা’। এটা কি যাদব পণ্ডিতের মত প্রেস্টিজ ইস্যু তাঁদের জন্য? দেশ পরিচালনার জন্যে আওয়ামীলীগ নিজেদের অবধারিত বিকল্প কেন ভাবছে? এটা ব্যাখ্যা করতে আপনাদের নিয়ে যাব ৩ হাজার ৮'শ বছর আগের ব্যবিলন শহরে, খৃষ্টপূর্ব ১৭৬৩ সালে। আজকের যে বাগদাদ শহর, সেকালে তা ছিল ব্যবিলন শহর যা সেকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে পরিচিত ছিল, জনসংখ্যা ছিল প্রায় দশলাখ। শাসকের নাম হামুরাবি। সেই কাহিনী পরের কিস্তিতে শোনাব।
৪ঠা আগস্ট ২০২৩
বার্লিন থেকে
জাহিদ কবীর হিমন
২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:১০
রানার ব্লগ বলেছেন: রাজনিতীর সুষ্ঠ চর্চা এই দেশে ১৯৭৫ এর পর থেকে ঊঠে গেছে তাই এই দশা।
৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: দূরদেশে থাকলে আমি মন খুলে বলতে পারতাম।
১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬
হিমন বলেছেন: অন্য নামে লিখুন, তবু লিখুন
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:০৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আওয়ামীলীগ মনে করে এই দেশের মালিক তারা। তাই এই দেশের ক্ষমতায় থাকাটা তাদের জন্য খুব জরুরী। নইলে মান সম্মান থাকে না তাদের। একটা ভয়ও অবশ্য কাজ করে নেতাদের মধ্যে। ক্ষমতা হারালে জীবন নিয়ে টানাটানি। জনগণকে বাইপাস করে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা তারা প্রায় করে ফেলেছে। সামনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ঠেকাতে না পারলে ধরে নিতে হবে শেখ হাসিনার মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকবে।