নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

হিমন

ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।

হিমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তানে হুসাইন কাদরির ফাঁসি এবং বাংলাদেশে একজন রাজাকারের মৃত্যু

১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫

অনেকবার ঘটনাটি নিয়ে লিখেছি, আবারো লিখতে হল। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী আসিয়া বিবি পাকিস্তানের পাঞ্জাবি খ্রিষ্টান কৃষাণী। ২০০৯ সালে একটি কূপ থেকে পানি খেয়ে আসিয়া বিবি পানি দূষিত করেছেন—এই অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর দুই মুসলিম প্রতিবেশী নারী। ঝগড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে তারা ব্লাসফেমির (ধর্মদ্রোহীতা) মিথ্যা অভিযোগ তোলেন। আসিয়া ঝগড়ার এক পর্যায়ে নবীজীকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন- এই হল কথিত অপরাধ। ধর্মীয় গোষ্ঠীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। পুলিশ আসিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতের তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় হয় (বর্তমানে তিনি কানাডায় আশ্রিত)।

তৎকালীন পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির শুধু বলেছিলেন, ব্লাসফেমি আইন সংশোধন দরকার এবং আসিয়া বিবি নির্দোষ, তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। জেলখানায় তাঁকে দেখতেও যান গভর্নর। এই অপরাধে (!) তাঁর নিজের দেহরক্ষী মুমতাজ হুসাইন কাদরি ২০১১ সালের জানুয়ারীতে উনত্রিশটি গুলি করে হত্যা করে সালমান তাসিরকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তাসিরকে হত্যার দুই মাসের মাথায় পাকিস্তানের তৎকালীন একমাত্র খ্রিস্টান মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে একই অপরাধে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মুহুর্তের মধ্যে খুনী কাদরি পাকিস্তানের জাতীয় বীরে পরিণত হন। ২০ জানুয়ারী ২০১১ তে লন্ডন রিভিউ অব বুকস জার্নালে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক তারিক আলী একটি নিবন্ধে বলেন, "কাদরি এখন পাকিস্তানের জাতীয় বীর হয়ে ওঠার পথে। প্রথমবার আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় ফুলবর্ষণ করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ইসলামাবাদের আইনজীবীরা। তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর পক্ষে লড়তে রাজি। কারাগারে ফেরার পথে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ তাঁকে দেয়।" এমনকি একজন মানুষকে খুন করার পর এই খুনীর নামে পাকিস্থানে একটি মসজিদের নামকরণ করা হয়। মৃত্যুর আগে জেলে থাকা অবস্থায় সাধারণ মানুষ যেত দেখা করতে, আশীর্বাদ নিতে। যে বিচারক কাদরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল প্রাণভয়ে তাকে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়েছে।

বহু সংশয় সত্বেও ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারীতে মুমতাজ হুসাইন কাদরির মৃত্যদন্ড কার্যকর হয়। খুনীর মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান গণমানুষ ভীড় করেছিল মুমতাজ হুসাইন কাদরির জানাজায়। পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর পরে এটিই ছিল পাকিস্তানের প্রায় আশি বছরের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম জানাজা। কাদরির জানাজার পর গভর্নর সালমান তাসিরের পুত্র আতীশ তাসির প্রখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমসে নিবন্ধ লিখে হাহুতাশ করেন। সেবছরের ১১ মার্চ "My Father’s Killer’s Funeral(আমার পিতার খুনীর শেষকৃত্য)" শিরোনামের লেখায় বলেন, 'জিন্নাহ ও বেনজীরের জানাজা ছিল সরকারীভাবে আয়োজিত কিন্তু কাদরির জানাজায় উপস্থিত মানুষেরা এসেছিল স্বতস্ফূর্তভাবে মিডিয়ার তেমন প্রচারণা ছাড়াই।'

কাদরির ফাঁসির পর তার হাজারো সমর্থক সুন্নী তেহরিক এবং তেহরিক-ই-লাব্বায়েক ইয়া রাসুলের ব্যানারে ইসলামাবাদে সংসদের সামনে এক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। তাদের দশটি দাবির অন্যতম হল, সারাদেশে আটক সকল সুন্নী অপরাধীকে মুক্তি দিতে হবে, সালমানের খুনী কাদরিকে শহীদ ঘোষণা করতে হবে, কাদরি যে জেলখানায় বন্দী ছিল সেই 'আদিয়া' নামের বন্দীশালাকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, ব্লাসফেমি আইনে কোন ক্ষমার বিধান রাখা যাবেনা।

অপরদিকে সালমান তাসিরের জানাজা নিয়ে হয়েছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ্য ঠাট্টা। সেই শেষকৃত্যে লোকের সমাগম ছিল হাজারে দু'য়েকের মতো। তিনি ছিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা তখনকার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির অতি কাছের মানুষ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিজেই এত ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন যে জানাজায় শরিক হননি। বহু সহকর্মী রাজনীতিবিদও সেখানে যাননি। একদল মোল্লা ঘোষণা করেছিল, কেউ যদি তাসিরের শেষকৃত্যে অংশ নেয়, তাহলে সে ব্লাসফেমির অপরাধে অপরাধী হবে।

এতবড় সূচনা লিখতে হল রাজাকার সাঈদীর মৃত্যুর পর জনসাধারণের মাঝে শোকের বন্যা দেখে। কারো মৃত্যুতে ব্যথিত হবার অধিকার সবার আছে। হৃদয়ের প্রেম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তাই মানুষ শোক প্রকাশ করবেই, প্রকাণ্ড জানাজা করে সগর্বে সেটি প্রকাশও করবে। গুনের বিচার না করে ভেড়ার পালের মত সংখ্যা দিয়ে গরিমা দেখায় নির্বোধেরা। পিনাকীর থেকে মির্জা ফখরুলের মেয়ের জামাই ফাহামের লেখা ভিডিও শতগুণে মানসম্পন্ন, কিন্তু ভেড়ার পাল কিন্তু পিনাকীরই বেশি- যদিও সেটা সেফুদা বা হিরো আলমকে অতিক্রম করতে পারেনি আজও। সালমান তাসিরের খুনী কাদরির সমর্থক বেশি বলেই সে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেনি, কালের বিচারে ন্যায়ের পক্ষে থাকার জন্যে সালমানই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবেন।

কথা সেখানে নয়, কথা হচ্ছে বাঙ্গালি মুসলমানদের সব প্রেম সব আবেগ শুধু খুনীদের প্রতি কেন? যারা একাত্তুরে গণহত্যা করেছে, পচাত্তুরের ১৫ই আগস্ট, ৩রা নভেম্বরে হত্যায় অংশ নিয়েছে, বাংলাদেশে যারা নিজেদের অপেক্ষাকৃত বেশি ধার্মিক দাবী করে তাঁরা কুখ্যাত সেইসব খুনীদের প্রতি অশেষ প্রেম দেখায়। কিন্তু ধার্মিক হলে তো অত্যাচারী আর খুনীদের বিপক্ষে থাকার কথা! তাহলে ইসলাম ধর্মই কি ওদেরকে নিষ্ঠুরতা আর নৃশংসতার সমর্থক বানিয়েছে, নাকি ওরা ধর্মটাকে ঠিক বুঝতেই পারে নাই?

১৫ আগস্ট ২০২৩
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩

ধুলো মেঘ বলেছেন: কারণ হচ্ছে প্রহসনের বিচার। রাজাকারের বিচার হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। এই আদালতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিচারক নিয়োগ দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তা না করে সরকার দলের অনুগত লোকদেরকেই বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিচারকদের যোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করা হলেও বিচারক নিজেই তার যোগ্যতা মূল্যায়ন করে বিচারক পদে বহাল থাকেন। সেই বিচার আবার হয় শাহবাগ আন্দোলনের পর। যখন কেউ ফাঁসি ছাড়া অন্য কোন রায় শুনতে একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল রায় দেবার পূর্বে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারটি বিবেচনায় নেবার।

আদালতে আবার সাক্ষী অপহরণ, গণেশ উল্টানোর মত অদ্ভুত অনেক ঘটনা ঘটে। এরকম আদালতে বিচারের মান নিয়ে সন্দেহ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তাই অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা এবং তাকে জনসম্মুখে আসতে না দেয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে এই মামলা করা হয়েছে। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তি যে আসলেই খুনী - ে নিয়ে সন্দেহের অনেক কারণ আছে।

কিন্তু তার ওয়াজগুলো যে শুনেছে, সে অবশ্যই স্বীকার করবে। কোন ব্যক্তি আক্রমণ নয়, কেবল মানুষকে ইসলামের প্রতি আকর্ষিত করার উল্লেখযোগ্য গুণাবলী তার আছে। যারা তার ভক্ত - তারা এই গুণেরই সমঝদার। অন্য কিছু নয়।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:৩০

হিমন বলেছেন: আপনার সাথে একমত! কিন্তু এর সাথে সাথে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে সেয়া বললে লেখাটি পূর্ণতা পেত :D

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

কামাল১৮ বলেছেন: দেশের ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে তারা আর মানুষ থাকে না তারা হয়ে যায় মুসলমান।তখন তারা নবীর সুন্নত পালন করতে চায়।নবী যা যা করছে সেটাকেই অনুসরণ করতে চায়। সেটা জানে তারা ওয়াজী মোল্লাদের কাছ থেকে।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:১১

কোলড বলেছেন: You are in Berlin. Are you a refugee by any chance or student? If you are the latter, then I'm sorry to say that you didn't do much homework.
Atish Taseer is NOT daughter of Salman Taseer. He is the illegitimate son of Taseer. His mom was Tavleen Singh. He is also gay and married to his American husband.

১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:৩৮

হিমন বলেছেন: ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ! লেখাটি সাত বছর আগে লিখেছিলাম, আজকে সেটার সাথে সাঈদীর ব্যাপারটা জুড়ে দিয়ে একটা সংযোগ স্পাপন করেছি। কিন্তু সেখানে এই পুত্র-কন্যা জনিত ভুলটি কিভাবে করেছিলাম আজ আর মনে পড়ছে না।

আমি এখানে পড়াশোনা করেছি, এখন কাজ করছি। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে বিলাসী জীবন যাপন করার সৌভাগ্য আমার হয়নি! ধন্যবাদ!

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৬

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এক কথায় যদি বলি তাহলে বলতে হয়।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: এর চেয়ে ভালোভাবে বলা যেত না।

৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:৩৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কিছু মানুষের ভুল কখনো ভাঙ্গেনা এটাই দুঃখজনক।

৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: ধার্মিকেরা ভুলের মধ্যেই থাকতে পছন্দ করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.