নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী
নীরা, পুরো নাম নীতুন রায়। ফাইলবন্দি সার্টিফিকেটগুলোকে বগলদাবা করে নীরা হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডি লেকের পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রচণ্ড জলের তৃষ্ণা পেয়েছে তার। সামনে ফুটপাতে মজিদ মিয়ার চায়ের দোকান। নীরা ভাবছে মজিদের দোকান থেকে কলা ও পাউরুটি খেয়ে এ যাত্রায় জীবনটা বাঁচাবে।
তাছাড়া চৈত্রের কাঠফাটা রোদে নীরা দর দর করে ঘামতে শুরু করেছে। মনটা তার প্রচণ্ড খারাপ। আজকের ইন্টারভিউটাও তার ভালো হলো না। এ জীবনে চাকরি-বাকরি কিছু একটা তার হবে কি না তা তার বোধগম্য হচ্ছে না। পকেটে যা আছে মালকড়ি তা দিয়ে আর বড়জোর পাঁচ-ছটা দিন কোনোমতে চলতে পারবে সে। এরপরে যে তার কী হবে তা আর একদমই ভাবতে পারে না নীতুন রায়। তার এই অনিশ্চয়তায় ভরা অনাগত ভবিষ্যতের কথা মনে করে ভাবতে ভাবতে নীরা মজিদের দোকানের দিকে আগায়। হঠাৎ পেছন থেকে একটি গাড়ি এসে নীরার প্রায় গা-ঘেঁষে দাঁড়াল খুব ধীরগতিতে। নীরা বেশ বিরক্ত হলো এ অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য। একটু জোরে হলে তো সে মরে যেতে পারত অবলীলায়। নীরা ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে গাড়ির ভেতরে চোখ পড়তেই দ্যাখে অপূর্ণা বসে আছে গাড়িতে জানালার পাশ ঘেঁষে। গাড়ির গ্লাস নিচে নামিয়ে অপূর্ণা নীরাকে ডাক দেয় দু-তিন বার। ইশারায় নীরাকে গাড়িতে উঠতে বলে অপূর্ণা। হন্তদন্ত হয়ে নীরা পুনরায় হাঁটতে শুরু করে খুব দ্রুতগতিতে সামনের দিকে রাস্তার ফুটপাত ঘেঁষে। অপূর্ণার হাত থেকে সে পালাতে পারলে বাঁচে। কলা, পাউরুটি খাবার ইচ্ছা এখন আর তার নেই। অপূর্ণাকে দেখার পর থেকে ক্ষুধা এখন তার পেটটাকে জ্বালাতন করছে না একদমই। অপূর্ণাকে দেখে নীরার কোনো রুচিবোধই কাজ করছে না এখন। অপূর্ণা আজ প্রায় এক বছর হলো তার পেছনে এমনভাবে লেগেছে যে, নীরা না পারছে তাকে এড়িয়ে চলতে আবার না পারছে তাকে গিলে খেয়ে হজম করতে।
বর্ণাঢ্য এক মিল মালিকের আশ্রিতা উপপত্নী হলেন এই অপূর্ণা দেবী চৌধুরী। বিত্তের গলানো পারদে রাজরানীর মতো করে সুখে প্রাচুর্যে, পরিপূর্ণতায় এখন পার করে সে নিত্যদিন। বছর দুয়েক আগে অপূর্ণার সঙ্গে নীরার পরিচয় হয় পাবলিক লাইব্রেরিতে এক সাহিত্য সভায় নাটকীয়ভাবে। ফোন নাম্বার আদান-প্রদান হয় দুজনের। মোবাইল ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে। চার মাস পরে নীরার সাথে অপূর্ণার হঠাৎ করে দেখা হয় মতিঝিলে শীতের এক হিম শীতল মেঘাচ্ছন্ন পড়ন্ত বিকেলে। নীরাকে প্রায় জোর করেই গাড়িতে তুলে অপূর্ণা পৌঁছে দেয় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়ে নীরার মেসের কাছে। গাড়িতে বসে নীরার সঙ্গে অপূর্ণার কথা হয় বিস্তর। সম্পর্কের ঘনত্ব বাড়ে। আবারো তাদের দেখা হবে, ফোনে কথা হবে বলে দুজনে কথা দেয়। এরপর থেকেই দুজনের দেখা হয়, কথা হয়। ভাব হয়, বন্ধুত্ব হয়।
বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোনো সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় নীরা অপূর্ণার সঙ্গে। নীরা জানে যে, তেল আর জলে কখনই মিল খায় না। অন্যদিকে অপূর্ণার আবার নীরাকেই চাই। সজল নামের এক বিদেশ ফেরত যুবকের রক্ষিতা ছিল অপূর্ণা। এটা নীরা কোন একভাবে জেনেছে। সে সময়ে সজল আর অপূর্ণার সম্পর্কটা ছিল অবাধ শারীরিক। সামাজিক কোনো বন্ধন ছিল না সে সম্পর্কের মধ্যে, ছিল না কোনো ধর্মের স্বীকৃতিও। অপূর্ণার বর্তমান জীবন যাপনও একই। কলগার্ল হিসেবেও নাকি তার বিশাল সুখ্যাতি আছে এই শহরময়। অপূর্ণা দেবী পুরুষ বদলায় প্রতিনিয়তই তার শাড়ি বদলানোর মতো করে খুবই স্বাভাবিক নিয়মে। অপূর্ণার চরিত্রের এই অদ্ভুত কুৎসিত সত্যটা জানার পর থেকে যতদূর সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে নীতুন রায়। অপূর্ণা নীরার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয় একদিন হুট করে। তার বর্তমান রক্ষক পুরুষটিকে বাদ দিয়ে নীরাকে নিয়ে বাস করার ইচ্ছাটা অপূর্ণা নীরাকে জানায় কাকুতি-মিনতি করে দৃঢ়ভাবে। নীরা অবাক হয়।
-আমার মধ্যে কী পেলে...? নীরা বলে।
-আমি আবিষ্কার করে নেব তোমার অন্তর্গত তৃতীয় ধারা।
-তোমার বর্তমান পুরুষটি কি তোমাকে ধন্য করে না?
-না, তা নয়। ওর স্নায়ুর সব তন্তুগুলো ঠিক আমার আয়ত্তের মধ্যে। অপূর্ণা বলে।
-কী লাভ পাও পুরুষকে দাবানলে নিক্ষেপ করে।
-আহ নীরা, এটা এক আবিষ্কারের উলাস।
-তুমি কি এইচআইভির ধারক।
অপূর্ণা অট্টাহাসিতে ফেটে পড়ে নীরার কথা শুনে। হাসতে হাসতে খেই হারিয়ে ফেলে ডুকরে কেঁদে ওঠে অপূর্ণা জল বালিকার মতো।
-আমি অন্য কাউকে চাই না নীরা। শুধু তোমাকে চাই। তুমি আমার রক্তে বুনে দাও তৃতীয় রক্তের বীজ।
-অপূর্ণা, ক্ষমা করো আমাকে। আমার পললে তুমি ক্লেদ ঢেলে দিও না।
-যদি ক্ষমা না করি।
-আমি নষ্ট হতে চাই না। যা তুমি পেরেছ অন্য পুরুষকে দখল করে পর্যুদস্ত করার মতো।
নীরা অপূর্ণার চোখের দিকে তাকাতে ভয় পায়। অপূর্ণাকে আজ তার কেমন অচেনা বলে মনে হচ্ছে। দুজন অন্যদিকে তাকিয়ে ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। নীরার মুখ দিকে কোনো কথাই বের হয় না। অপূর্ণা ও পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে আছে। এরপর অপূর্ণা দেবীর মার্সিডিজ হুইসেল দিয়ে সামনের পথ মাপে। নীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিরেট পাথর হয়ে যাচ্ছে যেন। অপূর্ণার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে নীরা ভাবে এই সভ্য সমাজে একটি শিক্ষিত মেয়ে এভাবে ফি-সন নতুন নতুন পুরুষের সাথে লিভ-টুগেদার করে কীভাবে। নীরা ভেবে পুলকিত হয়। সময়ের এক অদ্ভুত বিচ্ছুরণ নীরাকে আপ্লুত করে রাখে কিছুক্ষণ। বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের এই নোংরা ধারাটা তো এখনো এ দেশে সংক্রামিক হয়নি।
-তাহলে অপূর্ণা কী করে এটা পারে? নীরা ভাবে।
নীরা ভেবে ভেবে শিহরিত হয় বারবার। অপূর্ণার গাড়িটি দূরে যেতে যেতে ক্রমশ ছায়ার মতো যেন আবছা হয়ে বিন্দু হয়ে পথের ধুলোয় নাই হয়ে যায়।
দিন পার হয় অনেক। পৃথিবী বদলায়। নীরার জীবনের গতিপথ বদলায় না। বদলায় শুধু তার ভাগ্যের রেখা আর নিয়তি তার রূপ বদলে নেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় নীরার বাম পায়ের হাঁটুর নিচটা প্যারালাইজড হয়ে গেছে তিন মাস আগে। এক্সিডেন্টের খরবটা নীরা জানায়নি বাড়িতে। গ্রামের বাড়িতে মা ও ছোট বোনটি একবেলা আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে নীরার জন্য। কবে সে অঢেল টাকা নিয়ে বাড়িতে আসবে রাজপুত্তুরের মতো। মেস মালিকের দয়া আর আর্থিক সহযোগিতায় এ যাত্রা কোনোমতে বেঁচে যায় নীতুন রায়। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে সে পুনরায় বন্দি হয় মেসের নান্দনিক জীবনে। শুরু হয় তার নতুন করে ক্রাচে ভর করে বাঁচার প্রচেষ্টা। প্রতিবন্ধী জীবনে শহরের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে পায়ের তলার চামড়া খুঁইয়েও কোনো কাজ জোটাতে পারে না নীরা। জীবনটাকে এখন বড় তুচ্ছ বলে মনে হয় তার কাছে। ঘেন্না ধরে গেছে তার পঙ্গু জীবনের উপরে। প্রকৃতির উপরও এখন আর তার কোনো আস্থা নেই যেন। এক একটি দিন তার আস্থাহীনতায় কাটে এখন পাথর সমান। সময় বড় দুঃসময় বলে দুহাতে কপাল চাপড়ায় নীরা। অনেকদিন হয় অপূর্ণা নীরার সাথে কোনো যোগাযোগ করে না। অপূর্ণা দেবীও এখন আর নীরাকে একদমই জ্বালায় না, বিরক্ত করে না, লিভ-টুগেদার করার কথা ও বলে না। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে দুজনের দেখা হয় পুরনো আড্ডার স্থানগুলোতে। শুধু কুশল বিনিময় ছাড়া অন্য কোনো দিকে কথার টার্ম ঘোরে না। অপূর্ণা এখন অন্য এক নতুন পুরুষের সাথে জীবনযাপন করছে মহানন্দে যাপিত জীবনে। অপূর্ণা দেবীর গাড়ির ড্রাইভার মোখলেছ এ সত্যটা প্রকাশ করেছে নীরার কাছে। এসব নিয়ে এখন আর একদমই নাক সিঁটকায় না নীরা।
ক্রমাগত দারিদ্র্য, যন্ত্রণা আর হতাশায় বিদ্ধ হয়ে নীরা নিজের ভেতরে কুঁকড়ে যেতে যেতে ক্রমশ যেন পরিবর্তিত হচ্ছে এক নিরেট পাথরে।
কষ্ট পেলে নাকি কৃষকের উর্বর মস্তিস্কও ফিকে হয়ে আসে। তেমনি যাপিত জীবনে কষ্টের ঘানি কাঁধে করে টানতে টানতে নীতুন রায় ধর্ম আর নৈতিকতা নিয়ে এখন ভাবে না একদমই। ধর্ম তো তার পেটে ভাত যোগায়নি। যেটা করেনি তার নৈতিক সভ্য বিবেকও। তার সার্টিফিকেটগুলো তাকে একবেলা পেটভরে খাবারের বন্দোবস্ত করে দেয়নি। আহত ভবিষ্যৎ তাকে তীর বিদ্ধ করে ফালা ফালা করে কষ্টের প্রকোষ্টে এখন যেন নিত্যদিন। এভাবে নীরা ধীরে ধীরে পরিবর্তত হয়। বিবর্জিত হয় ধর্ম আর নৈতিকতার অক্টোপাস থেকে। নিজেকে সে নতুন করে তৈরি করে নেয় আগামী যুদ্ধের সিপাহসালার হিসেবে। পরিবর্তনের বীজ নিজ মননে ধারণ করে নেয় এখন নীতুন রায়। কারো সাথে লিভ-টুগেদার করতে তার এখন আর একদমই আপত্তি নেই, যদি বিনিময়ে সে বেঁচে থাকার কোনো এক শক্ত অবলম্বন পায়। নীরা ছাদের ওপরে উঠে ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে হাসে। কী কুৎসিৎ, অদ্ভুত আর ভয়ানক সে হাসি। হাসতে হাসতে নীরা পাগল হয়ে যেতে চায়। তার মাথায় আজ যেন হাসির খুন চেপেছে। তার হাসির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে সময়ের ক্লেদে আপাদমস্তক মোড়ানো ভুল জীবনের তীব্র আর্তনাদ। দুহাত দিয়ে বিবেকগুলোকে নীরা ছাদ থেকে আকাশে নিক্ষেপ করে। বাম হাত দিয়ে চোখের জলকণা মুছে নিয়ে নীতুন রায় সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে নেমে আসে মেসের খুপরি ঘরে।
নীরা তার মুঠোফোনটি বিক্রি করে মেসের ভাড়া দিয়েছে গত মাসের। বাড়ি থেকে খবর আসে বাড়িওয়ালার মোবাইল ফোনে। নীরার মা অসস্থ। পেটে তার অনবরত ব্যথা। ডাক্তার বলেছেন, তার পেটে নাকি টিউমার হয়েছে অনেকগুলো। দু’একদিনের মধ্যেই অপারেশন করাতে না পারলে নীরার মায়ের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিষয়টা প্রথমে নীরাকে জানায়নি তার মা। অসুখটা পালতে পালতে এখন প্রায় অন্তিম পর্যায়ে গড়িয়েছে। অথচ নীরা কখনই জানতে বা বুঝতে পারেনি তার মায়ের এই ভয়ানক অসুখের কথাটা। বোনটিও একবার নীরাকে বলেনি কথাটা, পিছে ভাই মন খারাপ করে এই ভয়ে। নীরা তার ছোট বোন নীলাঞ্জনার ওপরেও মনে মনে ভীষণভাবে চটে আছে মায়ের অসুখের বিষয়টি জানার পর থেকে। নীলাঞ্জনা অন্তত একবার তো জানাতে পারত নীরাকে। কী করবে সে এখন। নীরা ভেবে পায় না। চতুর্দিকে তার ধারদেনা এত হয়েছে যে,তার অন্য সব পথই এখন বন্ধ। গত মাসে সংসার খরচের তিন হাজার টাকা নীরা পাঠিয়েছিল পাসের বাড়ির হরিপদর কাছে বাড়িতে দেয়ার জন্য। হরিপদ সে টাকাটা মেরে দিয়ে আজ প্রায় এক মাস হলো গ্রাম থেকেই লাপাত্তা। খবরটি শোনার পর থেকেই নীরা নির্বাক প্রায়। নীরা কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। মায়ের অপারেশন করাতে হলে প্রাথমিক অবস্থায় অন্তত বিশ হাজার টাকা প্রয়োজন। সিটিং গাড়ির শাহবাগ কাউন্টারে একবেলা ডিউটি করে বেতন যা পায় তা দিয়ে নীরা তার জীবন চালায় কোনো মতে। মায়ের চিকিৎসার খরচের এতগুলো টাকা নীরা কোথায় পাবে ভাবতে ভাবতে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। বোনটিরও বোধহয় আর লেখাপড়া করা হবে না এখন থেকে। মাথার মধ্যে একরাশ দুঃশ্চিন্তা ঘুরপাক খায় নীরার। চিন চিনে একটি ব্যথা অনুভব করে সে তার মাথার বামপাশে কানের ঠিক উপরটায়। কয়েক মিনিট ভাবে নীরা। প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে। সিগারেটের তলায় ঠোঁট লাগিয়ে সে তাতে কড়া করে সুখটান দেয়। নাক দিয়ে ধোঁয়া বের হয় গল গল করে। চারদিকে ধোঁয়া ওড়ে। আকাশে ধোঁয়া ওড়ায়। ধোঁয়ার রিং বানিয়ে তা নক্ষত্রে নিক্ষেপ করে। অতপর ক্রাচটাকে বগলে ঠেলে দিয়ে তাতে বাঁ হাতে ভর করে উঠে দাঁড়ায় নীতুন রায় দ্রুতগিতে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে এসে দাঁড়ায় নীলক্ষেত মোড়ে। পরিচিত এক ফোনের দোকান থেকে অপূর্ণাকে ফোন করে নীরা। বাসায় আসবে বলে জানায়। অপূর্ণাকে বাসায় থাকতে বলে নীরা অপূর্ণার ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ায়।
নীরার ফোন পেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয় অপূর্ণা সেন। সমস্ত শরীরে তার কেমন যেন বিদ্যুৎতাড়িত হয়। অপূর্ণার আজ যেন মহানন্দের দিন। অনেক দিন পরে হলেও নীরা আজ তাকে ফোন দিয়েছে, নীরা আজ তার কাছে আসছে। এটা যেন তার ভবিতব্য ছিল। এটাকে তার কাছে নীরার ধরা দেয়া বা এক ধরনের আত্মসমর্পণ বলে অপূর্ণা ধরে নিয়ে আনন্দে সে আত্মহারা প্রায়। অপূর্ণা আজ নীরাকে পাবে একান্ত আপন করে দীর্ঘক্ষণের জন্য। অপূর্ণা নীরাকে নিয়ে মনে মনে ত্বরিত একটি খসড়া প্লান করে নেয়। অপূর্ণার বর্তমান আশ্রয়দাতা নতুন পুরুষটি আজ ব্যবসার কাজে ঢাকার বাইরে। ফিরতে ফিরতে তার দুতিন দিন সময় লাগতে পারে। অপূর্ণা সময়ের এই বিশাল গ্যাপটাই নীরাকে নিয়ে কাজে লাগাতে চায়।
নীরাকে হাত ধরে আদর করে টেনে বুকে তুলে এনে খাটের এক পাসে অতি যত্ন করে বসায় অপূর্ণা। আত্মহারা নারী আজ সে। মুখ দিয়ে এখন আর কোনো কথা বেরোয় না তার। অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে অপূর্ণা নীরার নীরব চোখের ভাষাহীন শব্দের দিকে। দরজাটা কায়দা করে শক্তমতো ছিটকিনি এঁটে দিয়ে নীরার বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে অপূর্ণা। অতঃপর এক এক করে খুলে ফেলে তার শরীরের বসন। শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, পেন্টি আর ব্রা একটানে খুলে ফেলে পুরোপুরি বে-আব্র“ হয় অপূর্ণা। নীরা তন্দ্রাচ্ছন্নের মতো এক দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকে অপূর্ণার নগ্ন শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে। যৌবনে নীরার আজ যেন কী এক দারুণ দামামা বাজে। দুজন দুজনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে চুমো খায়, দুজনে মিলে মিশে এক হয়ে গলে গলে জল হয়ে অতঃপর হিমোগ্লোবিন হয়ে যায়। একে অন্যকে পরিপূর্ণ করে তোলে সুখে, যৌবনের মধু দিয়ে আপ্লুত আবেশে। নীরা অপূর্ণার সাথে পান করতে থাকে নিজের জীবনের মধু। অপূর্ণাও নিজেকে বিলীন করে দেয় নীরার হাতে। এভাবে দুজনের ক’ঘণ্টা, কত লক্ষ সেকেন্ড পার হয় তা ওরা খবর রাখে না। একসময় ক্লান্ত দুজন, জীবনের স্বাদ প্রাণ ভরে নিয়ে দুজনে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। অপূর্ণা বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়। লেবু দিয়ে খুব কড়া করে দু’গ্লাস শরবত করে আনে নীরা আর নিজের জন্য। নীরার তন্দ্রাময়তা এখনো কাটেনি। অপূর্ণা নীরাকে দুহাত দিয়ে টেনে তুলে খাটের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড় করায়। বালিশের নিচ থেকে কাগজের ঠোঙ্গায় মোড়ানো অনেকগুলো টাকার একটি বান্ডিল নীরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে অতঃপর অদ্ভুত হাসিতে ফেটে পড়ে অপূর্ণা। অপূর্ণার অদ্ভুত সেই ভয়ানক হাসিতে ঘরের ছাদ যেন আছড়ে ভেঙে পড়তে চায় নীতুন রায়ের মাথার উপরে। জীবনের সমস্ত ক্লেদ অপূর্ণা দেবী পৃথিবীর সব পুরুষের উপরে দুহাতে নিক্ষেপ করে যেন পাপমুক্ত হতে চায় আজ অবলীলায়। নীরার কেমন ভয় হতে থাকে অপূর্ণার আচরণ দেখে। একটি মেয়ে পুরুষের কাছে নিজেকে বিকিয়ে এভাবে অদ্ভুত হয় কীভাবে নীতুন ভাবে। বিজয়ের দীপ্ত গৌরবে অপূর্ণা নীরার দিকে তাকিয়ে পুনরায় কুৎসিৎ ভঙ্গিতে হেলে দুলে হাসতে থাকে।
-জানেন নীতুন বাবু, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার কুমারী কিশোরী মাকে তিন মাস ধরে ক্যাম্পে আটকে রেখে গণধর্ষণ করেছিল রাজাকার আর পশ্চিমা হারামিরা। আমি সেই রাজাকারের জারজ রক্ত এখন বয়ে বেড়াচ্ছি নিজের শরীরে ধারণ করে।
-জানেন, আমার এই শরীরের কোনো আইডেন্টিটি নেই।
অপূর্ণা নীরার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে আর হাসে। অপূর্ণা হাসতে হাসতে কেঁদে ওঠে ক্ষ্যাপার মতো করে। অপূর্ণার হাসিকান্নার খেলা দেখে নীতুন রায়ের হাত থেকে ফস্ করে টাকার প্যাকেটটি ছিটকে পড়ে যায় তার পায়ের নিচে। অপূর্ণা নীরার এই ভড়কে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কান্না থামিয়ে পুনরায় হেসে ওঠে খলবলিয়ে। একজন নষ্ট নারীর কাছে নীতুন রায়ের আগলে রাখা নৈতিকতা বিসর্জনের প্রক্রিয়া দেখে অপূর্ণা হাসে, হাসতে হাসতে মরে যেতে চায়। মনের গহিন থেকে উঠে আসা কষ্টের হাসিগুলো অপূর্ণা দিল খুলে নীরাকে উপহার দেয়।। নীরা দুহাত দিয়ে টাকার প্যাকেটটি তুলে নেয় পায়ের নিচ থেকে। ধীরে ধীরে টাকাগুলো পকেটবন্দি করে নীরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নেমে আসে অপূর্ণার ফ্ল্যাট থেকে সদর রাস্তায়। বাইরে কী অপূর্ব মৃদুমন্দ বাতাস। টাকার প্যাকেটটি দুহাতে আঁকড়ে ধরে নীরা। টাকাগুলো এখন ভীষণ প্রয়োজন তার। তাছাড়া টাকার গায়ে তো আর লেখা থাকে না যে, কোনটা বেশ্যার আর কোন টাকাটা ভদ্র লোকের।
নীরা ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে গলির মুখে এসে দাঁড়ায়। সিগারেট জ্বালায়। পেছনে দোতলার ফ্ল্যাট থেকে এখনো ক্ষীণ কণ্ঠে ভেসে আসছে অপূর্ণার সেই ভূতের হাসি। বাম হাতে ক্রাচ আর ডান হাত দিয়ে বুক পকেটে আগলে রাখা টাকার বান্ডিলে হাত রেখে নীতুন রায় হাঁটতে থাকে টলতে টলতে। যেতে হবে তার অনেক দূর। মা এতক্ষণে বেঁচে আছেন কি না?
২| ২২ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে একটা গল্প দিলেন।
আমি তো ভেবেছিলাম আপনি শুধু কবিতা লিখেন।
২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪০
জায়েদ হোসাইন লাকী বলেছেন: লাভ ইউ বন্ধু
৩| ২২ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২১
ওমেরা বলেছেন: এই গল্পটা তো আপনি গত কালকেই পোষ্ট দিয়েছিলেন
?
২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪০
জায়েদ হোসাইন লাকী বলেছেন: হ্যাঁ। কারেকশন করে পুনরায় পোস্ট দিয়েছি
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৫৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শেষের শারিরিক মিলনের বর্ণনাটুকু আটপৌড়ে না হয়ে নান্দনিক হলে গল্পটা দারুন ক্লাসিক হতে পারত!
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কি আসে যায়! লালন গুরুর গানের ছায়া যেন বারবার ঘুরে ফিরে আসে জীভনে!