নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী। facebook.com/Lucky.Jayed.Husain

জায়েদ হোসাইন লাকী

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী

জায়েদ হোসাইন লাকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি কালের সমস্যা এবং সমাধান

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০২

মায়ের গর্ভে ভ্রুণরূপে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে মানব জীবন। এটি প্রথমে থাকে বিকাশমান এবং পরে হয় ক্ষীয়মান। ভ্রুণ থেকে শুরু করে ২৩-২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ঘটে ক্রমবিকাশ এবং তারপর থেকে ক্রমক্ষয়, যার পরিণতি মৃত্যু।

মানব জীবনকে মোটামুটি ৬ ধাপে/কালে ভাগ করা যায়-(১) ভ্রুণ/মাতৃগর্ভকাল, (২) শৈশব, (৩) কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি, (৪) যৌবন, (৫) প্রৌঢ় ও (৬) বার্ধক্য কাল। সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন এবং দীর্ঘায়ু লাভের জন্য প্রতিটি ধাপ/কাল সম্মন্ধে জানা এবং সচেতন থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে আলোচ্য বিষয় মানব জীবনের তৃতীয় ধাপ- কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি কাল।

(১) কৈশোর ও বয়ঃসন্ধিকাল প্রায় একই সময় শুরু হলেও এক নয়।

কৈশোর শুরু হয় ১০-১২ বছর বয়স থেকে। এ সময় ব্যক্তির দৈহিক বৃদ্ধির পাশপাশি মানসিক ও সামাজিক বিকাশ শুরু হয়। আমাদের দেশে ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়ারা এ সময়কালের নায়ক-নায়িকা। পরিবারের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে কার্যত মানসিক ও সামাজিকভাবে আত্মনির্ভরশীল বা স্বাধীন মানুষ হওয়ার সংগ্রামী জীবন পর্ব এটা। দৈহিক বৃদ্ধির পরিণতি বা সমাপ্তি ঘটে ২৩-২৫ বছরে।

শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তরণের পথে ব্যক্তির শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ সময় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন নামে একটি রাসায়নিক যৌগ নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের প্রভাবে অণ্ডকোষ ও ডিম্বাশয়ে পরিবর্তন হয় এবং এরা টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন তৈরি করে। এদের প্রভাবে চুল, ত্বক, হাড়, বিভিন্ন অঙ্গ ও মাংসপেশিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। একে বলে বয়ঃসন্ধি বা বয়ঃপ্রাপ্তি। বয়ঃসন্ধি কাল খুবই সংক্ষিপ্ত সময়। এর মেয়াদ মাত্র এক থেকে তিন বছর। ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়াদের জীবনে এ কালটা অতিক্রম করে। এ সময় ছেলে-মেয়েদের যৌনতার বিকাশ ঘটে। মেয়েদের পরিবর্তন শুরু হয় ছেলেদের চেয়ে এক বছর আগে। এ সময় ব্যক্তি-জীবনটা থাকে বড়ই আবেগপ্রবণ। কারণ শরীর খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। তাল সামলানো কঠিন হয় বা প্রায়ই পারা যায় না।হরমোন বৃদ্ধির কারণে মেয়েদের শরীর থেকে মেয়েলী গন্ধ এবং ছেলেদের শরীর থেকে পুরুষালী গন্ধ প্রকটভাবে ছড়াতে থাকে। উভয়ের নরম চামড়া ভেদ করে, বিশেষ করে মুখে ফুসকুড়ি বা ব্রণ উঠতে থাকে।পুরো বয়ঃসন্ধি কালেই এ পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ সময় ছেলে-মেয়েদের সাধারণ পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপঃ
ছেলেদের ক্ষেত্রেঃ দেহের উচ্চতা বাড়ে।মাংসপেশী দৃঢ় হতে থাকে।লিঙ্গ বড় ও মোটা হয়। অণ্ডকোষ ঝুলে যায় ও বড় হয়। মুখে গোঁফ-দাড়ি, বগলে, বুকে ও তলপেটে লোম এবং লিঙ্গের গোড়ায় যৌনকেশ গজায়। গলার স্বর অল্প সময়ের জন্য ভেঙে যায় ও ভারী হয়। মুখে তেল বাড়ে ও ব্রণ হয়।দেহে শুক্রকোষ তৈরি হয়।যৌন কামনা বাড়ে ও বীর্যপাত বা ‘স্বপ্নদোষ’ শুরু হয়। সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়।

মেয়েদের ক্ষেত্রেঃ দেহের উচ্চতা বাড়ে। কণ্ঠস্বর ভারী বা উঁচু হতে থাকে।মুখে তেল বাড়ে ও ব্রণ হয়।স্তন ও নিতম্ব আকারে বাড়ে ও ভারী হয়। বগলে লোম গজায়। মুখেও সামান্য লোম গজায়।যোনিপথের চারদিকে যৌনকেশ গজায়।দেহে ডিম্বকোষ তৈরি ও মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়। যৌনসঙ্গমে ও গর্ভধারণে সক্ষম হয়।
দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়সকালেই দৈহিকভাবে ছেলেরা সন্তান জন্মদান এবং মেয়েরা গর্ভধারণ করতে সক্ষম হলেও, পূর্ণাঙ্গ নর ও নারী কিংবা মা ও বাবা হওয়ার মতো সম্ভাবনা শক্তি তখনও সুপ্ত থাকে। দৈহিক পরিপুষ্টি, মানসিক প্রস্তুতি, আর্থিক ও সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি কোনটাই এ সময় ব্যক্তির অনুকূল থাকে না অথচ দেহে ও মনে একটা তাড়না প্রতিনিয়ত অনুভূত হয়।এজন্য মনোবিজ্ঞানী/শারীরবিজ্ঞানীরা এ সময়টাকে মানবজীবনের সবচেয়ে ‘ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ’ (storm & stress) কাল বলে গণ্য করেন ।

এসময় প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের মনে অনেক রকম প্রশ্ন ও আশংকা জাগে, ভয়-ভীতি সঞ্চারিত হয়, উদ্বেগ কাজ করে।কেন করে, তার কারণ সে নিজেও বোঝে না বা কাউকে সহজে বুঝিয়েও বলতে পারে না। অজানাকে জানতে চায়, অচেনাকে চিনতে চায়। নতুনের প্রতি কৌতুহল বাড়ে। যিনি তাকে বুঝতে চান এবং তার প্রতি সহানুভূতি দেখান, তার কাছেই সে আব্দার করে, প্রশ্ন করে বা জানতে চায়। তাই, এসময় মা-বাবা, বড় ভাই-বোন ও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে তাদের প্রতি সহজ ও সহনশীল হওয়া খুবই প্রয়োজন। কিশোর বয়সীদের এসব সমস্যার যদি সঠিক ও বাস্তব সমাধান মা-বাবা, বড় ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং চিকিৎসক/পরামর্শকের কাছ থেকে না পায়, তবে তারা কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ভুল তথ্য এবং বিকৃত চিন্তা-ভাবনার শিকার হয়। অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। এমনকি মানসিক বিষণ্ণতা রোগেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। যার প্রতিফলন ঘটে বিভিন্ন কিশোর অপরাধের মাধ্যমে-যেমন ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন, এইচআইভি সংক্রমণ, পুষ্টিহীনতা, যৌনবিকৃতি এবং সহিংসতা- যা প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখতে পাই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের বড় একটা অংশের অসুস্থতার অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা। অনেক কিশোর-কিশোরীই বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হওয়া মানসিক অসুস্থতা বয়ে বেড়ায় জীবনভর। সারা বিশ্বের মানসিকভাবে অসুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত অর্ধেকের মাঝে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায় বয়স ১৪ পূর্ণ হওয়ার আগে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। সারা বিশ্বে এখনো সন্তান জন্ম দেয়ার সময়ই সব চেয়ে বেশি কিশোরী মারা যায়। নানা কারণে আত্মহননের পথও বেছে নেয় কিশোর-কিশোরীরা। ডাব্লিউএইচও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বয়ঃসন্ধিকালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ প্রসবকালীন জটিলতা, আর তারপরই রয়েছে আত্মহত্যা।
তাই, বয়ঃসন্ধি কালে মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার পবিত্র দায়িত্ব এই উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে/ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া। তাদেরকে পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া, তাদের দেহে যে পরিবর্তন হচ্ছে বা হবে সে সম্পর্কে জানান দেয়া। তাদের সঙ্গে সহজ-সাবলীল, বন্ধুভাবাপন্ন ও সহনশীল আচরণ করা। তাদের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেয়া এবং আন্তরিক ও যত্নবান হওয়া। তাদেরকে মুক্ত পরিবেশে চলাফেরা করার সুযোগ দেয়া। খেলা-ধুলা, সাহিত্যকর্ম, বিতর্ক, আবৃতি, অভিনয়, নাচ, গান-বাদ্য, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি প্রভৃতি শিল্পকর্মে (performing arts) অংশগ্রহণ এবং নৈপুণ্য অর্জনে উৎসাহ দেয়া এবং সাহায্য করা। এ জন্য পরিবারে, স্কুলে এবং কমিউনিটিতে সাধ্যমতো খেলা-ধুলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্ম-কান্ডের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

(২) কৈশোর এবং বয়ঃসন্ধি কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে না।

বেশীর্ভাগ ক্ষেত্রে কৈশোর শুরু হয় আগে। এ সময় মা-বাবা’র চোখে পড়ে যে, তাদের সন্তান ‘মুখে মুখে কথা বলে’, মা-কিংবা বাবাকে সহ্য করতে পারে না, সমালোচনা মুখর এবং অভিযোগ-মুখী হয়। বড়দের আদেশ/অনুরোধ/পরামর্শ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অমান্য করতে চায় বা করেও। মা-বাবা ভাই-বানের চেয়ে সম-বয়সী বন্ধুদের প্রতি আকর্ষণ বেশী থাকে। সবকিছুর সীমা তলিয়ে দেখতে চায়; ভাল-মন্দ ও সম্ভব-অসম্ভব নিয়ে ভাবে না। ঘর ছেড়ে দূরে চলে যেতে চায়। বৈধভাবে সুযোগ না পেলে পালায়। এগুলো কৈশোর শুরু হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। কিন্তু এর সঙ্গে যদি বয়ঃসন্ধি যুক্ত হয়, তবে আগুণে ঘি ঢালার মতো কৈশোরের রূপান্তরটা খুবই তীব্র আবেগাক্রান্ত এবং জটিল রূপ ধারণ করে।

বয়ঃসন্ধি একের ভেতর দুই সমস্যা সৃষ্টি করে। এক, দেহে যে পরিবর্তনগুলো শুরু হয়েছে, তা কিভাবে সামাল দিবে। এটি ব্যাক্তির আত্মসচেতনতাকে দগ্ধ করে। ব্যক্তিত্বকে বিচলিত ও অস্থির করে। দুই, আত্মপ্রকাশের সমস্যা- সে যে এখন বীর্যবান পুরুষ বা সোমত্ত নারী, এটা কিভাবে প্রকাশ করবে। এতকাল যারা তাকে ‘ছোট’ বা অপরিপক্ক মনে করে আসছে, তাদেরকে সে যে এখন ছোট আর নয়, এটা কিভাবে প্রমাণ করবে। আবার ‘পাকামো’ যেন না হয়, সে বদনাম কিভাবে ঘোচাবে। এ দ্বিধা-দ্বন্দ্বও তার ব্যক্তিত্বকে অস্থির করে তোলে। এটি মূলত তার একজন নারী বা পুরুষ-এর যথার্থ ভূমিকা পালন করার সমস্যা।

আত্মসচেতনতার দিক থেকে বলতে গেলে বহু ছেলে-মেয়ে/ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বয়ঃসন্ধিটা খুব খারাপ সময়। এ সময় (৯-১৩ বৎসর) শৈশবের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে সমাজে সমবয়সী বন্ধুদের মাঝে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠা পেতে তীব্র বাসনা হয়। তার দেহটা যেমন বাঁধ ভেঙ্গে উপছে পড়ে, তেমন মনও চায় স্বাধীনতার সাগরে গা ভাসিয়ে উজানে চলতে। তার এই চলার পধে যে বাধা দেয়, সে-ই হয় তখন তার শত্রু, বিশেষ করে ‘বেবুঝ ও পশ্চাদপদ’ মা-বাবা। তাই তাদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘মা, তুমি সেকেলে’, ‘এসব তুমি বুঝবে না’ বা ‘মা তুমি না, কিচ্ছু জানো না’। আর বাবা-মা/শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদেরকে বুঝতে ব্যর্থ হয়ে বলেন ছেলেটা/মেয়েটা ‘বেয়াড়া/‘বেয়াদব’, ‘out of control’ ইত্যাদি।

কৈশোরের ‘বড় হতে থাকা’ এবং ‘অনিরাপদবোধ/নিরাপত্তহীনতা’ হাতে হাত রেখে চলে। বেশীর্ভাগ ছেলে-মেয়ে/ছাত্র-ছাত্রীর কাছে বয়সন্ধিকালটা আত্ম-মর্যাদাবোধের (self-esteem) শত্রু। যখন তার দেহ বাড়তে থাকে তখন সামাজিকভাবে সে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার মুখোমুখি হয়। দেহের আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যাবলী নাজুক বলে অনুভব করে। একান্ত সঙ্গোপনে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, বিশেষ করে বাথরুমে আয়নার সামনে। কোন পরিবর্তনটা কিভাবে হচ্ছে, কোথাও ত্রুটি রইল কিনা! বিকাশ বিলম্বিত হলে, সমাজে ‘পূণার্ঙ্গ’ নর বা নারী হওয়ার বাসনাটা তাকে ভেতরে ভেতরে অস্থির করে তোলে।
ঘরে মা-বাবাকে এবং স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনটা ‘খেলো’ ব্যাপার নয়। কিশোর- কিশোরীদের এসব পরিবর্তন নিয়ে, তাই, কখনো হাসি-তামাশা করা, বিদ্রুপ করা, খোঁচা বা খোঁটা দেয়া, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা, তাচ্ছিল্য ভাব দেখানো ইত্যাদি চলবে না। এ সময় বাড়ন্ত শরীরের কারেণে তার পোষাক ঘন ঘন বদলাবার প্রয়োজন হতে পারে, তা সহজে মেনে নিতে হবে। ছেলে বা মেয়ে ঘরের বা স্কুলের বাইরেও যদি কারো দ্বারা এ ধরনের ঠাট্টা-বিদ্রুপের শিকার হয়, তবে তাকে দোষী সাব্যস্ত বা ভর্ৎসনা না করে সে অনাহুত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হবে বা সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

কৈশোরের প্রথম দিকটা ছেলে-মেয়েদের জন্য খুবই অসহিষ্ণু সময়। এ সময় কারও কর্তৃত্ব ও নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি ছেলেদের একটা অবজ্ঞার ভাব সৃষ্টি হয়। এ সময় ছেলেরা মেয়েদের এবং মেয়েরাও ছেলেদের প্রতি আড়চোখে তাকানো, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, প্রেম নিবদেন করা ইত্যাদি ‘অসামাজিক’ আচরণ করে থাকে, তবে তা সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি সাপেক্ষ। এ সময় ছেলে-মেয়েদের সম-বয়সী বন্ধু, শিক্ষক বা বয়স্ক স্বজনদের দ্বারাও যৌন-সন্ত্রাস এবং নিষ্ঠুর সামাজিক আচরণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুবই বেশী। আত্ম-সচেতনতার সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হচ্ছে, সামাজিক নিষ্ঠুর আচরণের কারণে আত্ম-দহনে ভোগা। অর্থাৎ ‘আমার চেহারা এমন হলো কেন যে, অমুক আমার প্রতি এ রকম খারাপ ব্যবহার করলো?’ ‘আমার এটা কি একটা অসুখ?’ যৌন হয়রানি বা নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে কিশোরীরা নিজেকে সমাজে অবাঞ্চিত মনে করে। এর পরিণামে কেউ কেউ (যৗন হয়রানির শিকার হয়ে) আত্ম-হত্যার পথও বেছে নেয়। যা আমরা অহরহ সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাই।

এসময় মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুক্তভোগীকে সমবেদনা ও শান্তনা দেয়া এবং এটা বোঝানো যে, এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে সে মোটেই দায়ী নয়, দায়ী যে ব্যক্তি কু-কর্মটি করেছে সে। সে যেন কিছুতেই নিজেকে দোষী বা অপবিত্র মনে না করে।

(৩) আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সমস্যা ও সমাধান নিম্নরূপ :

ক। কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবার অর্থাৎ বাবা ও মা একসঙ্গে থাকে না বা অশিক্ষিত। এই সব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। তারা বাসায় বাবা-মা কারো সান্নিধ্য ঠিকমতো পায় না। তাই তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কারো সাথে আলোচনাও করতে পারে না। ফলে নানান সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের স্কুলে বিশেষ রকমের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকেই তাদের বাবা-মার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

খ। কিছু কিছু বাবা-মা আছেন যারা তাদের ছেলে-মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন নানান সমস্যা নিয়ে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ফলে ছেলে-মেয়েদের সমস্যার সমাধান করতে সহজ হয়। আবার কিছু কিছু বাবা-মা এটা কিছুতেই মানতে চান না যে, তাদের ছেলে-মেয়ের কোন রকম সমস্যা রয়েছে। তারা উল্টো স্কুলকেই এসবের জন্য দায়ী করেন। এই ধরনের বাবা-মায়ের সমস্যাই আগে দূর করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচান করার জন্য মিটিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

গ। কোন কোন ছেলে-মেয়ে বাসায় একরকম এবং স্কুলে অন্যরকম আচরণ করে। ফলে যখন স্কুল থেকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে তাদের নামে রিপোর্ট যায় তখন তাদের বাবা-মা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চান না যে এটা তাদের সন্তান করেছে। কারণ তাদের ছেলে-মেয়ে বাসায় কখনোই এমন আচরণ করেনা। এক্ষেত্রে আগে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে যে তার সমস্যা আসলে কোথায়? কেন সে এমন আচরণ করে?

ঘ। কিছুদিন পর পরই বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে ছেলে-মেয়েদের নানারকম সমস্যা নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করতে হবে।

ঙ। বর্তমানে দেখা যায় এমন অনেক বাবা-মা আছেন যে তারা তাদের নিজেদের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে তাদের ছেলে-মেয়ে কি করছে বা তাদের কি কি সমস্যা হচ্ছে তা তারা দেখেনই না। দায়িত্ব পালন হিসেবে ছেলে-মেয়েরা যাতে স্বাধীনমতো চলতে পারে তাই তাদের টাকা দিয়ে দেন। এর ফলে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে। এসব ক্ষেত্রেছেলে-মেয়েরা বাজে নেশার দিকেও ঝুঁকতে পারে। তাই তাদের বাবা-মাকে আগে ব্যাপারটা বোঝাতে হবে।

চ। অনেক বাবা-মা আছেন যারা নিজেরা অতোটা শিক্ষিত না। যে কোনভাবে হোক অর্থ উপার্জন করেছেন। তারা এটাই ভাবেন যে ছেলে-মেয়ের জন্য স্কুলে এত মোটা অংকের টাকা দিচ্ছেন তাই সকল দায়িত্ব স্কুলের। তাদের কোন দায় দায়িত্ব নেই। বাবা-মাকে এটা বুঝতে হবে যে ছেলে-মেয়েদের প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব স্কুলের চাইতেও বেশি।

ছ। বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আগে এটা জানতে হবে যে ছাত্র-ছাত্রীর মেধার ঝোঁক কোন দিকে বেশি। যেদিকে ঝোঁক বেশি সেদিকেই তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে তারা আর বিরোধীতামূলক আচরণ করবে না।

জ। একটা বয়সে যে ছেলে-মেয়েদের শারিরীক পরিবর্তন হয় এটা তাদেরকে আগে ভাগে জানাতে হবে। তাহলে এসব নিয়ে তাদের মনে ভয়-ভীতি কাজ করবে না। তারা পরিবর্তনটাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করবে। এই দায়িত্ব হচ্ছে বাবা-মায়ের। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাও এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি কালের সন্তান/শিক্ষার্থীকে সামলানো বা তার সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব হলে, দেরী না করে অবশ্যই মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসক-এর পরামর্শ নেয়া উচিত।
(চলবে)


সম্পাদনা
জায়েদ হোসাইন লাকী
হেলথ প্রফেশনাল, ইউএসএআইডি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট।
আপনার আগের পোষ্ট এ বাইক প্রীতি দেখে ভালো লেগেছে।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৭

জায়েদ হোসাইন লাকী বলেছেন: লাভ ইউ কবি

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১০

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ভালো পোস্ট

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৫

অনল চৌধুরী বলেছেন: বিএড পাস করা শিক্ষক-শিক্ষিকা নামধারীরা এসব পড়ে-জেনেও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে চামাড়ের মতো অাচরণ করে।

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

অক্পটে বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। শিক্ষনীয় অনেক গুলো ব্যপার আছে এখানে যা এই বয়সের ছেলে মেয়েদের সাথে আচরণগত পার্থক্য দূর করবে ও তাদেরকে সহায়তার মানসিকতা তৈরী করবে। সবারই লেখাটা পড়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.