![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী
ভূমিকা:
২০২৫ সালের ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ১৬০ জনের বেশি আহত হন। মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় একদল শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়, পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়। এই ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা ছিল না; এটি হয়ে ওঠে একটি জাতীয় মানসিক-সামাজিক সঙ্কটের প্রতীক। বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মানুষ এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং সেটি রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ, সমাজের অনুভূতি ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে।
১. সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্র্যাজেডির প্রতিচ্ছবি
শোক ও সমবেদনার বিস্ফোরণ:
দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফেসবুক, টুইটার (বর্তমানে X), ইউটিউব, এবং টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিও ও ছবি। #MilestoneCrash এবং #PrayForStudents হ্যাশট্যাগগুলো ট্রেন্ড করে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
ব্যবহারকারীদের আবেগ-প্রকাশ:
হাজার হাজার মানুষ তাদের পোস্টে ব্যক্ত করে গভীর শোক, অনুশোচনা ও আতঙ্ক। মা-বাবারা সন্তানদের জড়িয়ে ধরে স্ট্যাটাস লেখেন: "আজ আমার সন্তান স্কুলে গেল, ফিরেও আসতে পারতো না!"
ফেক নিউজ ও বিভ্রান্তি:
একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য,যেমন দ্বিতীয় বিস্ফোরণের গুজব, ভুলভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম। পরে অনেকেই ক্ষমা চান ভুয়া তথ্য শেয়ার করার জন্য।
২. রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া ও জনমত
সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ:
সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত হয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার আলোচনা:
সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, স্কুলের অতি-ব্যবসায়িক মনোভাব, এবং দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা। এই দাবিতে রাস্তায় নামে কিছু ছাত্র সংগঠন এবং অভিভাবক ফোরাম।
রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় পরিবর্তনের চাপ:
অনেকেই দাবি তুলেন,স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চার্টার্ড বিমান বা ঝুঁকিপূর্ণ ট্যুর বন্ধ করতে হবে, ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভ্রমণ অনুমোদনে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার।
৩. সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
ট্রমার ছায়া শিক্ষার্থীদের ওপর:
অনেক শিক্ষার্থী যাদের বন্ধুরা এ দুর্ঘটনায় মারা গেছে, তারা PTSD (Post-Traumatic Stress Disorder)-এর লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। ফেসবুক পোস্টে এক ছাত্র লিখে: "আমার পাশে বসে যে ছেলেটা ছিল, এখন তার খালি বেঞ্চটা দেখলে আমি কেঁদে ফেলি।"
প্যারেন্টিংয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
অনেক মা-বাবা এখন সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়েছেন। স্কুলভিত্তিক ভ্রমণ, গেম শো, কিংবা ইনডাস্ট্রিয়াল ট্যুর,সবকিছুতেই তারা দ্বিধান্বিত।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা:
সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা। “সাইকোথেরাপিস্ট” শব্দটি ট্রেন্ডিং হয়। স্কুলগুলোতে কনসেলার নিয়োগের দাবি ওঠে।
৪. সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
নাগরিক সাংবাদিকতা ও গণচাপ:
এই ঘটনার পর থেকে দেখা যায়, মানুষ আর শুধু সংবাদপত্র বা টিভি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করে না। প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিও, পোস্ট, লাইভ,সবকিছু মিলিয়েই তৈরি হয় "নাগরিক প্রতিবেদন"।
নীতিনির্ধারণে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব:
রাষ্ট্র এখন বুঝে গেছে, একটি ইস্যুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তা প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়াতেই মোকাবিলা করতে হবে। মিডিয়া মনিটরিং ইউনিটগুলোর কাজ বেড়ে যায় বহুগুণে।
ফিউচার থিংকিং ও শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন:
এই দুর্ঘটনার আলোকে শুরু হয় আলোচনা,"আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোন নিরাপত্তা দিচ্ছি?" প্রশ্ন উঠে,শিক্ষা শুধু পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের ঝুঁকিও বিবেচনায় আনতে হবে।
উপসংহার:
মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি একটি দুর্ঘটনা হলেও, তা বাংলাদেশের সামাজিক, মানসিক ও রাষ্ট্রীয় চেতনাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া যেমন শোকের প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে, তেমনি হয়ে ওঠে দাবি, প্রতিবাদ এবং পরিবর্তনের হাতিয়ার। এই ঘটনার শিক্ষা হলো,ভবিষ্যতে শিক্ষা ও ভ্রমণ নীতিমালায় মানবিকতা, সুরক্ষা এবং সংবেদনশীলতা যেন সর্বাগ্রে বিবেচিত হয়।
জায়েদ হোসাইন লাকী
(লেখক, গবেষক, সাংবাদিক)
সম্পাদক, ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত পত্রিকা
ঢাকা, বাংলাদেশ
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯
রিফাত হোসেন বলেছেন: মূল কথা বললে খুশি হতাম, বিমান বন্দর এর আশে পাশে এত এত জনবহুল এলাকা তৈরী অনুমোদন দেওয়া উচিত হয় নি। আশে পাশে ২-৫ কি.মি. জায়গা খালি রাখা উচিত ছিল। এমন দূর্ঘটনা আবারো ঘটতেই পারে।