নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী। facebook.com/Lucky.Jayed.Husain

জায়েদ হোসাইন লাকী

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী

জায়েদ হোসাইন লাকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরুষ নারীর কাছে কী চায়: মনস্তাত্ত্বিক, সমাজতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ। জায়েদ হোসাইন লাকী।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৬



ভূমিকা
মানুষের সম্পর্ক জটিল, বিশেষ করে দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্কে প্রত্যাশা সবসময় একরকম থাকে না। নারী যেমন ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও যত্ন চান, পুরুষও তার সঙ্গীর কাছ থেকে কিছু নির্দিষ্ট চাহিদা রাখেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, পুরুষ আসলে কী চান? নিঃশর্ত ভালোবাসা, স্বার্থহীন সমর্পণ নাকি নিরঙ্কুশ মনোযোগ?

১. পুরুষের আবেগীয় চাহিদা
মনোবিজ্ঞানের মতে পুরুষেরও তিনটি মৌলিক আবেগীয় চাহিদা আছে,
• ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা → তাকে যেমন তিনি আছেন, সেভাবে গ্রহণ করা।
• স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি → ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করা।
• নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব → বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল সম্পর্ক।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অনেক পুরুষ প্রথমে স্ত্রীর অবিরাম যত্নে মুগ্ধ থাকেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন স্ত্রীর খোঁজখবর নেওয়া বা সারাদিনের খবরদারি একরকম অভ্যাস হয়ে যায়, তখন অনেক পুরুষ সেটাকে ভালোবাসা না ভেবে নিয়ন্ত্রণ বা ‘অতিরিক্ত নাক গলানো’ মনে করেন।

২. মনোবিশ্লেষণভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
ফ্রয়েডের মতে, পুরুষের মনে দুই বিপরীত টান কাজ করে,
• আশ্রয় খোঁজা → মায়ের যত্নের পুনরাবৃত্তি।
• স্বাধীনতা খোঁজা → নিজের পরিচয় ও কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা।
বাংলাদেশি পুরুষরা বেড়ে ওঠেন এমন এক সমাজে, যেখানে ছোটবেলায় মায়ের অবিরাম যত্ন পান, আবার বড় হলে সামাজিকভাবে শেখানো হয় ‘পুরুষ মানেই শক্তিশালী, স্বাধীন’। ফলে স্ত্রীর অতিরিক্ত যত্ন পুরুষকে প্রথমে মায়ের মতো সান্ত্বনা দেয়, পরে সেটিই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
• পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষকে শৈশব থেকেই শেখানো হয় কর্তৃত্বশীল হতে।
• বিয়ে হয়ে গেলে অনেক পরিবারে আশা করা হয় নারী সবকিছু ছেড়ে দিয়ে স্বামীকেন্দ্রিক জীবন যাপন করবেন। এতে পুরুষের মনে দ্বৈত অনুভূতি জন্মায়,
• একদিকে স্ত্রী যেন সর্বক্ষণ পাশে থাকেন।
• অন্যদিকে স্ত্রী যেন তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করেন।
• আধুনিক শহুরে সমাজে দেখা যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্মের পুরুষরা বন্ধুসুলভ সঙ্গী (companionate partner) খোঁজেন, যেখানে ভালোবাসা, বোঝাপড়া আর ব্যক্তিগত পরিসর সমান গুরুত্ব পায়।

৪. বাংলাদেশি বাস্তব উদাহরণ

১. গ্রামীণ প্রেক্ষাপট:
গ্রামে সাধারণত বিয়ের পর নারীকে শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব নিতে হয়। সেখানে পুরুষ চান স্ত্রী যেন তাকে ‘ঘরের কর্তৃত্ব’ বজায় রাখতে সাহায্য করেন। কিন্তু স্ত্রীর অতিরিক্ত প্রশ্ন বা স্বাধীন মতামতকে অনেক পুরুষ অপমান হিসেবে দেখেন।

২. শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবার:
ঢাকায় কর্মজীবী দম্পতির উদাহরণ নিলে দেখা যায়, স্বামী অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীর যত্ন চান,গরম খাবার, খোঁজখবর। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি চান স্ত্রী যেন তার ব্যক্তিগত সময়কে সম্মান করেন, যেমন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা শখের কাজ।

৩. নবীন প্রজন্ম:
আজকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা নতুন কর্মজীবী দম্পতিরা চাইছেন সমান সম্পর্ক। এখানে পুরুষরা আর শুধু ‘সমর্পিত স্ত্রী’ খোঁজেন না, বরং চান একজন সহযোগী, সহযাত্রী ও মানসিক সমর্থনদাতা।

৫. বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বাস্তবতার মিল
• John Gottman এর গবেষণা বলছে সম্পর্ক টিকে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও সহমর্মিতার ওপর।
• বাংলাদেশি দাম্পত্যজীবনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যে পরিবারগুলোতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একে অপরের স্বাধীনতাকে সম্মান করেন, সেসব সম্পর্কে সন্তুষ্টি বেশি।
• অন্যদিকে যেখানে পুরুষ মনে করেন স্ত্রী ‘অতিরিক্ত কর্তৃত্ব’ করছেন, সেখানে সম্পর্ক ভাঙনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৬. টান অক্ষুন্ন রাখার উপাদান
বাংলাদেশি পুরুষ দীর্ঘমেয়াদে যে বিষয়গুলো নারীর প্রতি টান হিসেবে ধরে রাখেন,
• পারস্পরিক শ্রদ্ধা → মতামতকে মূল্য দেওয়া।
• আবেগীয় সমর্থন → সংকটে সঙ্গী হিসেবে পাশে থাকা।
• ব্যক্তিগত পরিসর → তার স্বাধীনতাকে সম্মান করা।
• বিশ্বাস → সন্দেহ বা অযথা নজরদারি নয়।

উপসংহার
পুরুষ নিঃশর্ত ভালোবাসা, স্বার্থহীন সমর্পণ বা নিরঙ্কুশ মনোযোগের মধ্যে কোনো একক জিনিস চান না। তিনি চান একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক,
• যেখানে ভালোবাসা আছে, তবে শ্বাসরুদ্ধকর নয়।
• যত্ন আছে, তবে স্বাধীনতা নষ্ট হয় না।
• মনোযোগ আছে, তবে তা নজরদারিতে পরিণত হয় না।
বাংলাদেশি সমাজে সম্পর্কের এই বাস্তব দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট। তাই বলা যায়, পুরুষকে টিকিয়ে রাখে বোঝাপড়া, সম্মান ও স্বাধীনতার সমন্বয়; নারীর সমর্পণ নয়।


সূত্র (References)
• Freud, S. (1925). The Standard Edition of the Complete Psychological Works of Sigmund Freud. London: Hogarth Press.
• Gottman, J. (1999). The Seven Principles for Making Marriage Work. New York: Crown Publishing.
• Hendrix, H. (1988). Getting the Love, You Want: A Guide for Couples. New York: Henry Holt & Company.
• বাংলাদেশের পারিবারিক ও সামাজিক গবেষণা প্রতিবেদন, বাংলাদেশ সমাজতাত্ত্বিক সমিতি, ঢাকা (২০১৮)।
• Rahman, M. (2020). ‘Changing Patterns of Marital Relationships in Urban Bangladesh.’ Journal of Social Studies, University of Dhaka.

জায়েদ হোসাইন লাকী
সম্পাদক, সাহিত্য দিগন্ত পত্রিকা
ঢাকা, বাংলাদেশ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:




কিসব গার্বেজ লেখেন, লোকজন পড়ে না।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



ইডিওটিক লেখায় আবার রেফারেন্সও যোগ করেছেন? আপনি ফ্রয়েড পড়লে বুঝেন?

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২

বিজন রয় বলেছেন: আপনি কেমন আছেন? অনেক দিন পর আপনার লেখায় আসলাম। আগে অনেক কথা হতো আপনার সাথে।

এটি একটি সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লেখা।

আরো এমন লেখা চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.