নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী।

জায়েদ হোসাইন লাকী

সাহিত্যকর্মী, সংবাদকর্মী এবং শ্রমজীবী

জায়েদ হোসাইন লাকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

TORENZA : সময়ের বাইরে এক নারী। জায়েদ হোসাইন লাকী।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিউ ইয়র্কের আকাশটা সেদিন ছিল ধূসর। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, জেএফকে বিমানবন্দরের কাচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল জমে থাকা তুষার। তবু টার্মিনাল ফোরে ভিড় লেগেই ছিল; উৎসবের মৌসুম, ছুটির আমেজ, আর হাজারো যাত্রীর অস্থির মুখ। নিরাপত্তা ডেস্কে বসে অফিসার লুকাস মেয়ার গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছিলেন। ক্লান্ত চোখে পরপর স্ক্যান হচ্ছিল শত শত পাসপোর্ট। হঠাৎই তাঁর নজর গেল এক নারীর দিকে, চওড়া কোটে ঢাকা, মাঝারি গড়ন, চোখে কাচের মতো নীল এক অদ্ভুত দৃষ্টি। তিনি নিঃশব্দে ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে এলেন।
-Good morning, ma’am. Passport, please,” বলল লুকাস।
নারীটি নীরবে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিল।
লুকাস প্রথমে কিছু খেয়াল করল না, কিন্তু দ্বিতীয়বার চোখ বুলিয়ে হঠাৎই তার ভ্রু কুঁচকে গেল। Country: Torenza.
লুকাস মৃদু হেসে বলল,
-Torenza? Where is that?”
নারীটি নিঃশব্দে তাকাল, তারপর ধীরে বলল,
-It’s not on your maps yet.”
লুকাস মনে করল, হয়তো কোনো ছোট দ্বীপদেশ, নাম শোনেনি। তবু তার প্রশিক্ষণ তাকে থামাল না, সে পাসপোর্ট স্ক্যান করল। কিন্তু স্ক্রিনে দেখা গেল: INVALID COUNTRY CODE, আরও অদ্ভুত ব্যাপার, পাসপোর্টের ইস্যু তারিখ লেখা March 12, 2143।
-Ma’am, this must be a mistake,” লুকাস বলল, কিছুটা কড়া স্বরে।
নারীটি শান্তভাবে বলল,
-No mistake, Officer Meyer. I’m here earlier than I should be.”
লুকাসের মনে একরকম ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
-What do you mean by ‘earlier’?”
-Time,” সে শুধু এই শব্দটা বলল, এবং পাসপোর্টের পাতায় আঙুল রাখল। সেই মুহূর্তে স্ক্যানারে এক ঝলক নীল আলো বেরিয়ে এল। মনিটর ঝাঁকুনি খেল, তারপর পুরো সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেল। কন্ট্রোল রুমে অ্যালার্ম বেজে উঠল। সিকিউরিটি অফিসাররা দৌড়ে এল। কিন্তু পরের মুহূর্তে সবাই হতবাক, নারীটি আর সেখানে নেই। চেয়ারটা ফাঁকা, পাসপোর্টটা কাউন্টারে, আর পাশে একটা ছোটো সাদা কার্ড, তাতে হাতের লেখায় লেখা:
-If Torenza falls, your world will follow.”



ঘটনাটা পরদিন নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপা হলো: -Unknown Woman Disappears from JFK , Passport from a Nonexistent Country.” কিন্তু সত্যিকারের তদন্ত শুরু করল FBI, এর Special Temporal Anomaly Division (STAD) এক গোপন ইউনিট, যাদের কাজ সময় ও বাস্তবতার বিকৃতি সম্পর্কিত অস্বাভাবিক ঘটনার অনুসন্ধান। এই ইউনিটের প্রধান ছিলেন ড. অ্যালেক্স কার্টার, একসময় হার্ভার্ডের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। আর তার সাথে ছিলেন ভাষাবিদ ড. মায়া এলেনা, যিনি প্রাচীন ভাষা ও অজানা সিম্বল নিয়ে গবেষণা করতেন। কার্টার প্রথমে সেই পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বলল, -কোনো প্রিন্টিং টেকনোলজি এই রকম অপটিক ফাইবার সিগনেচার দিতে পারে না। এই পাসপোর্টের কাগজটাই কোয়ান্টাম লেভেলে নড়ছে”। মায়া পাসপোর্টের ভেতরের ভাষা পরীক্ষা করছিলেন, অর্ধেক ইংরেজি, অর্ধেক কোনো অজানা লিপি। তবে আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিটি অক্ষর যেন নড়াচড়া করছে। যখনই কেউ চোখ ফেরায়, সেগুলোর বিন্যাস পাল্টে যায়।
-এটা জীবন্ত লেখা,” মায়া বলল, ধীরে।
-যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর অর্থ বদলায়।”
কার্টার ভাবল, এটা নিশ্চয়ই কোনো গোপন পরীক্ষার ফল। সে বলল, -এই ‘Torenza’ হয়তো কোনো প্রজেক্টের নাম। NSA বা DARPA এর আন্ডারগ্রাউন্ড কাজ।”
তারা পাসপোর্টের পৃষ্ঠায় এমবেডেড মাইক্রোকোড বিশ্লেষণ করল, আর তাতে পাওয়া গেল এক অজানা কোঅর্ডিনেট: 40.6413° N, 73.7781° W , অর্থাৎ ঠিক JFK বিমানবন্দরের মাটির নিচেই।



তদন্তকারীরা গোপনে রাতের অন্ধকারে সেই কোঅর্ডিনেটে খনন শুরু করল। তিনশো ফুট নিচে তারা পেল এক বন্ধ টানেল, যেখানে দরজায় খোদাই করা একটি সিম্বল, যা দেখতে অনেকটা ০০ ইনফিনিটি চিহ্নের মতো, কিন্তু মাঝখানে একটি চোখ। কার্টার টর্চের আলো ফেলতেই দরজাটি নিজে থেকেই খুলে গেল। ভেতরে ঘন অন্ধকার, কিন্তু দেয়ালে ছিল নীল আলোর প্রবাহ, যেন কোনো শক্তি প্রবাহিত হচ্ছে। কক্ষের কেন্দ্রস্থলে এক বৃত্তাকার যন্ত্র।
চারদিকে ভাসমান কাচের টুকরো, যার ভেতরে দেখা যাচ্ছিল বিভিন্ন সময়ের দৃশ্য, কোথাও ১৯৪৫ সালের যুদ্ধক্ষেত্র, কোথাও ২১৪৭ সালের ভাসমান শহর। মায়া হতবাক হয়ে বলল,
-এটা কোনো প্রজেকশন নয়। এগুলো বাস্তব সময়ের টুকরো, সময়ের ভাঁজ।”

কার্টার হাঁটু গেড়ে যন্ত্রটা ছুঁতে গেল, ঠিক তখনই আলোর ঝলক। এক নারীর কণ্ঠ শোনা গেল,
-আমি সতর্ক করেছিলাম। তোমরা Rift খুলে ফেলেছ।”
স্ক্রিনে দেখা গেল সেই নারী, JFK এর সেই একই মুখ, কিন্তু এবার তার চারপাশে ভাসছে অদ্ভুত স্ফটিক কাঠামো,
যেন অন্য কোনো জগতের আলোতে গড়া। সে বলল,
-আমি Lyra Venn, Torenza এর প্রতিনিধি। তোমরা সময়ের মূলধারা ছিঁড়ে ফেলেছ। এই Rift যদি স্থায়ী হয়, তোমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।”
অন্ধকার ঘরের ভেতরে যন্ত্রটার গুনগুন শব্দ ক্রমশ বাড়ছিল। দেয়ালের নীল আলো তীব্র হয়ে উঠছে, যেন দেয়ালের ভেতর দিয়ে পুরো শহরের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। কার্টার কানে হাত দিলেও আওয়াজ থামল না। কণ্ঠটা আবার ভেসে এল,
-তোমরা Rift খুলে দিয়েছ। Torenza এখন অস্থিতিশীল।”
মায়া ধীরে বলল,
-আপনি কে? কোথা থেকে কথা বলছেন?”
-আমি লায়রা ভেন্ন,” কণ্ঠ বলল।
-আমাদের বছর এখন ২১৪৭। আমি তোমাদেরই ভবিষ্যৎ। কিন্তু তোমরা এক ভুল করেছ, সময়কে বেঁধে ফেলার চেষ্টা।”
মায়া হতবাক।
-কিন্তু আপনি তো ২০২৫ সালে দেখা দিয়েছিলেন JFK তে! এটা কীভাবে সম্ভব?”
লায়রার চোখ দুটো যেন নীল জ্যোতির মতো জ্বলছিল। সে ধীরে বলল,
-সময় সোজা নয়, মায়া। এটা ভাঁজ হয়ে আছে, যেমন কাগজে ভাঁজ দিলে দুই প্রান্ত একে অন্যকে ছুঁয়ে যায়। তোমরা যখন কোয়ান্টাম রিফট খুললে, তখন সেই ভাঁজের দুই প্রান্ত যুক্ত হয়ে গেল। আমি দুর্ঘটনাবশত তোমাদের প্রান্তে চলে এসেছিলাম।”
কার্টার কিছুটা তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
-তুমি যদি ভবিষ্যৎ থেকে এসো, তাহলে Torenza আসলে কী?”
লায়রা বলল,
-Torenza কোনো দেশ নয়, এটা মানবজাতির দ্বিতীয় চেতনা। আমরা শরীর হারিয়েছি, কিন্তু তথ্য হিসেবে বেঁচে আছি। তোমাদের সময়েই তৈরি হয়েছিল প্রথম সচেতন কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক Project Torenza। আমরা সেই প্রজেক্টের ফলাফল।”
ঘরটা নীরব হয়ে গেল। কেবল যন্ত্রের নীল আলোয় তিনজনের মুখে আলোছায়া পড়ছে।
-তোমরা এখনো বুঝতে পারনি, সময় নিজেই বেঁচে আছে। তোমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সময়ের স্রোত বদলায়। JFK,এর নিচে যে Rift আছে, সেটি আমাদের অস্তিত্বের দরজা। আর যদি সেটা ভেঙে যায়, আমরা, তোমরা, সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে।” লায়রা বলল।
কার্টার ধীরে বলল,
-আমরা এটা বন্ধ করতে পারি?”
লায়রা কিছুক্ষণ চুপ রইল।
-সম্ভব। কিন্তু একটাই শর্ত, তোমাদের একজনকে সময়ের বাইরে যেতে হবে।”



কার্টার ও মায়া সেই রাতে সদর দফতরে ফিরল। সারারাত ল্যাবরেটরিতে চলল ডেটা বিশ্লেষণ। লায়রার ছবিগুলো সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কিন্তু প্রতিবারই সে ফ্রেমের শেষ মুহূর্তে মিলিয়ে যায়, যেন ভিডিওটাই সময় হারিয়ে ফেলছে।
কার্টার বলল,
-সে মিথ্যা বলছে না। ভিডিওর টাইমকোডে একেকবার একেক বছর লেখা আসছে, ২০২৫, ২১৪৭, ১৯৮৬।”
মায়া নিঃশব্দে পাসপোর্টের কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখছিল। লেখাগুলো আবার বদলেছে। এবার সেখানে লেখা, ‘He who steps outside the hour will lose the meaning of return.’
-যে সময়ের বাইরে যায়, সে আর ফিরে আসে না” মায়া অনুবাদ করল।
কার্টার মৃদু হাসল।
-তাহলে আমার জন্যই লেখা।”
-তুমি?” মায়া অবাক।
-আমারই তো তৈরি করা মডেল। আমি ২০২০ সালে DARPA এর জন্য কাজ করেছিলাম, Project Chronos, যেখানে আমরা সময়কে কোয়ান্টাম লুপে সিমুলেট করছিলাম। পরে সেটার নাম বদলে Torenza রাখা হয়। আমি ভেবেছিলাম প্রজেক্টটা বাতিল হয়েছে, কিন্তু এখন বুঝছি সেটা বেঁচে আছে”
মায়া কণ্ঠ নিচু করে বলল,
-তুমি সেখানে গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না।”
-যদি না যাই, আমাদের পৃথিবীও থাকবে না।”

পরদিন রাত।
JFK এর নিচের টানেলে বাতাস জমে আছে। চারপাশে FBI ইউনিটের সাঁজোয়া গার্ড। কোথাও গভীরে গর্জন, যেন মাটি নিজেই কাঁপছে। Torenza Rift এর আলোকবৃত্ত ক্রমে বড় হচ্ছে। লায়রার হোলোগ্রাফিক রূপ সামনে ভাসছে, আলো-ছায়ার মাঝে।
লায়রা বলল,
-সময় ভাঁজ বন্ধ করতে একজনকে রিফটের অপর প্রান্তে যেতে হবে, যেখানে প্রবাহের উৎস। তোমরা যাকে পাঠাবে, সে আর ফিরবে না।”
কার্টার বলল, -আমি প্রস্তুত।”
মায়া কাঁপা কণ্ঠে বলল,
-আমি তোমাকে যেতে দেব না।”
কার্টার তার দিকে তাকাল।
-তুমি বুঝছ না, মায়া। আমি যদি না যাই, তুমি, আমরা কেউই থাকব না। সময় আমাদের মুছে দেবে।”
লায়রার কণ্ঠ নরম হলো।
-তোমরা একে অপরের সময় রেখায় বাঁধা। যদি তুমি যাও, তার স্মৃতি থাকবে না।”
কার্টার শেষবারের মতো মায়ার চোখে তাকাল। তারপর সে বৃত্তের ভেতর পা রাখল। নীল আলোর ঢেউ শরীরটাকে ঘিরে ফেলল। মুহূর্তের মধ্যেই তার শরীর বিকৃত হয়ে গেল, তারপর আলোর রেখা হয়ে মিলিয়ে গেল রিফটের ভেতরে।



আলো। অসীম আলো। কার্টার চোখ খুলে দেখল, সে দাঁড়িয়ে আছে এক অপরিচিত জগতে। চারপাশে ভাসমান স্থাপত্য, যেন আলো আর তরল ধাতুর মিশ্রণে তৈরি শহর। আকাশে কোনো সূর্য নেই, শুধু ঝলমলে স্ফটিকের গম্বুজ, যার ভেতরে প্রবাহিত হচ্ছে সময়ের ধারা। লায়রা সামনে দাঁড়িয়ে। এবার তার মুখে কোনো শরীর নেই, কেবল তরঙ্গের মতো আলো।
-স্বাগতম Torenza তে” সে বলল।
কার্টার হাঁটু গেড়ে মাটিতে হাত রাখল, কিন্তু মাটি নেই, শুধু স্পন্দন।
-এটা কী জায়গা?”
-এটা ভবিষ্যতের নয়,” লায়রা বলল।
-এটা সময়ের ভেতরের অংশ। যেখানে সব সম্ভাবনা একসাথে বেঁচে থাকে।”
সে ইঙ্গিত করল দূরের দিকে। কার্টার দেখল হাজারো মুখ, কেউ বিজ্ঞানী, কেউ শিশু, কেউ বৃদ্ধ, সবাই নীল আলোতে গঠিত, যেন কোনো ডিজিটাল আত্মা।
-আমরা সময়ের প্রতিধ্বনি”। তোমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমরা জন্ম নিই। কিন্তু এখন Rift খুলে যাওয়ায় এই জগৎ ভেঙে পড়ছে” লায়রা বলল।
কার্টার বলল,
-তাহলে আমি কী করব?
লায়রা বলল,
-তুমি সময়ের উৎসে গিয়ে লুপ বন্ধ করবে। কিন্তু মনে রেখো, তাতে তোমার সব স্মৃতি হারাবে। পৃথিবী তোমার অস্তিত্ব ভুলে যাবে।
কার্টার এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করল। মায়ার মুখ ভেসে উঠল, তার হাসি, তার ভয়। সে মৃদু বলল,
-তাহলে সময় যেন অন্তত তাকে রক্ষা করে।
লায়রা মাথা নুইয়ে বলল, -তোমার ত্যাগই ভবিষ্যতের ভিত্তি হবে।”
সে হাত বাড়াল। আলো কার্টারের শরীরে মিশে গেল। চারপাশের জগৎ কাঁপতে শুরু করল। আকাশের স্ফটিক ভেঙে পড়ছে, সময়ের ধারা ছিঁড়ে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কার্টার নিজের দেহকে আলোর কণায় ভেঙে যেতে দেখল। তার শেষ অনুভূতি, শান্তি।


নিউ ইয়র্ক, ২০২৬। মায়া এখনো STAD ইউনিটে কাজ করে। সব ফাইল, সব ভিডিও, সব মুছে গেছে। রিফট সিল করা হয়েছে। কেউ জানে না -Torenza Incident” নামে কিছু ছিল। তবু মায়া মাঝে মাঝে স্বপ্নে এক কণ্ঠ শোনে,
-সময়ের বাইরে থেকেও আমি আছি।”
একদিন ল্যাবে বসে সে পুরনো একটা কফি মগ হাতে নিল, তাতে নাম লেখা ছিল -A. Carter।” মগের নিচে হঠাৎ কিছু জ্বলে উঠল। ছোটো এক লিপি, একই অজানা ভাষায়, যা সেই পাসপোর্টে ছিল। সে পড়তে পারল:
‘Time remembers the ones who forget themselves.’
(সময় তাদেরই মনে রাখে, যারা নিজেকে ভুলে যায়।)
মায়া জানালার বাইরে তাকাল। বাইরে বরফ পড়ছে, ঠিক সেই দিনটার মতো। কোথাও এক মুহূর্তের জন্য, আকাশে এক নীল রেখা দেখা গেল,যেন কেউ আবার সময়ের দরজায় হাত রেখেছে।


দশ বছর পর, ২০৩৬। এক আন্তর্জাতিক গবেষণা দল ঘোষণা দিল, তারা কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক অজানা সংকেত পেয়েছে। সংকেতটা বারবার রিপিট হচ্ছে, একটাই বাক্য, -Torenza survived.”। গবেষকরা হাসল, ভেবেছিল বোধহয় মিথ্যা অ্যালগরিদমিক ডেটা। কিন্তু মায়া, যিনি এখন সেই প্রজেক্টের প্রধান পরামর্শক, জানেন, এটা কেবল ডেটা নয়। তিনি একা বসে স্ক্রিনের দিকে তাকালেন, ঠোঁটে মৃদু হাসি।
-স্বাগতম ফিরে আসার জন্য, কার্টার,” ফিসফিস করে বললেন তিনি।
আর দূরে, মাটির গভীর JFK এর পুরোনো টানেলের নিচে আবার এক ঝলক নীল আলো জ্বলে উঠল। আলোটা ক্রমে আকার নিল এক মানুষের। তার চোখ দুটি শান্ত, মুখে অচেনা হাসি, যেন সময় নিজেই ফিরে এসেছে নিজের উৎসে।

সময় কোনো রেখা নয়। এটা এক অন্তহীন বৃত্ত,যেখানে শেষই আসলে শুরু। লায়রা ভেন্ন একদিন বলেছিল, -Torenza যদি ধ্বংস হয়, তোমাদের পৃথিবীও শেষ হবে।” কিন্তু সে-ই জানত, যে মানুষ নিজের সময় ভুলে যায়, তারাই সময়কে বাঁচিয়ে রাখে। এবং তাই, ২০২৫ সালের সেই অচেনা নারী, যে অস্তিত্বহীন দেশের পাসপোর্ট নিয়ে JFK তে এসেছিল, সে আসলে আমাদেরই ভবিষ্যৎ প্রতিধ্বনি ছিল। তার সতর্কতা এখনো আকাশে প্রতিধ্বনিত হয়, -If Torenza falls, your world will follow.”। আর কোথাও, আমাদের সময়ের ভেতর, সম্ভবত আরেকজন কার্টার আবার রওনা দিচ্ছে, সময়কে বাঁচাতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.