নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশুরা: ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য অধ্যায়

০৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:২৯


ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররামের ১০ তারিখ। এই দিনটি 'আশুরা' নামে মুসলিম বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা ও সংগ্রামের এক অনন্য সমন্বয় এই দিনটি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং মানবতার জন্য এক মহান শিক্ষার উৎস। আশুরার তাৎপর্য বহুমাত্রিক—এটি যেমন আল্লাহর নবীদের মুক্তির স্মৃতিবাহী, তেমনি কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় জুলুমের বিরুদ্ধে এক অনির্বাণ মশাল।

ঐতিহাসিক পটভূমি: সময়ের গর্ভে আশুরা
আশুরার ইতিহাস ইসলামপূর্ব যুগ থেকে শুরু। নবী মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তির দিন হিসেবে এটি ইহুদি ও আরব সমাজে পরিচিত ছিল। নবী মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখেন, ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখে। তিনি মুসলমানদেরও এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেন, যাতে মুসা (আ.)-এর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা সুন্নতে পরিণত হয়, কিন্তু এর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।

কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে আশুরার আরেকটি করুণ অধ্যায় যোগ হয় ৬১ হিজরিতে। সেদিন কারবালার প্রান্তরে নবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদাতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এই আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে এক আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

ধর্মীয় তাৎপর্য: বিশ্বাসের প্রতিফলন
সুন্নি মুসলমানদের জন্য আশুরা হলো রোজা, দান ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ। হাদিসে এসেছে, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহ মোচন করে। নবীজি (সা.) ৯ ও ১০ মুহাররাম রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না থাকে।

অন্যদিকে, শিয়া মুসলমানরা এই দিনটিকে শোক ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পালন করেন। ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগ তাদের কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা। তারা মাতম, শোকগাথা পাঠ ও তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে এই দিনটি স্মরণ করেন। যদিও কোনো কোনো অঞ্চলে রক্তাক্ত শোকাচার ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী।

আমল ও প্রথা: ভিন্ন রীতির একাত্মতা
সুন্নি ঐতিহ্যে আশুরার রোজা রাখা, পরিবারের জন্য অতিরিক্ত খরচ করা এবং দোয়ার মাধ্যমে দিনটি কাটানো হয়। অন্যদিকে, শিয়ারা ইমাম হুসাইনের স্মরণে মজলিস, কারবালার বর্ণনা ও জিয়ারতের আয়োজন করেন। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে তাজিয়া মিছিল এবং হালুয়া-রুটি বিতরণের প্রথাও রয়েছে।

শিক্ষা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
আশুরা আমাদের শেখায়—

ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়তা: ইমাম হুসাইনের সংগ্রাম আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয়।

ঐক্য ও সহনশীলতা: সুন্নি-শিয়া বিভেদ না করে এই দিনের শিক্ষাকে ধারণ করা প্রয়োজন।

আধ্যাত্মিক পুনরুজ্জীবন: রোজা ও তাওবার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির সুযোগ এই দিনে বিদ্যমান।

এক দিন, অসংখ্য বার্তা

আশুরা কেবল একটি দিন নয়, এটি ইতিহাসের জীবন্ত পাঠ। এটি মুসা (আ.)-এর মুক্তির কথা বলে, হুসাইন (রা.)-এর ত্যাগের গাথা কাঁদে এবং মানবতাকে ন্যায় ও সত্যের পথে চলার আহ্বান জানায়। ভিন্ন পালনরীতি সত্ত্বেও এই দিনের মূল বার্তা এক—আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ন্যায়ের বিজয়। আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মসমীক্ষা ও ঐক্যের অনন্য অবসর।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


আশুরার শিক্ষা কি টুইস্ট করা হয়েছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.