নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

অামার মলিন মা..

১৩ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪

মা'র দিনটা শুরু হয় ফজরের নামায দিয়ে।
বাড়ি থাকলে সকালে সুরেলা কোরানের
আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে। বাবা আর মা ই
থাকেন বাড়িতে। বাবার কেমন লাগে জানিনা।
আমি বাড়ি গেলে, রাতে ঘুমোই অথবা জেগে থাকি,
সকাল বেলার ওই কোরান পাঠের শব্দটুকু না শুনলে আমার ভাল লাগে না....মা বোঝে মনে হয়। কোরআন পড়া হলে, মা এসে বিছানায় আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে তিনবার ফু দেয়। অনেকের কুসংস্কার মনে হতে পারে, আমার কাছে ওটাই জীবনী শক্তি মনে হয়...

বাড়ির সামনে বকুলের গাছ।
তেলওয়াত শেষে মা হাটেন খানিক, তারপর তাজা ফুল কুড়িয়ে টেবিলে এনে রাখেন। বকুলের গন্ধে ময়ময় করতে থাকে বাড়ি, ওটাই আমার মায়ের গন্ধ...

তারপর শুরু হয় মায়ের দিন। খুব নিষ্ঠুর দিন যায়।
ঢুকে যান রান্না ঘরে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক রান্না ঘরের টুকটাক শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসে না।
তারপর হঠাৎ ই সেই চেনা কোন খাবারের
গন্ধ নাকে ধাক্কা দিতে থাকে। আলসেমি নিয়ে গন্ধের টানে পৌছে দেখি সব তৈরী শেষ, অাম্মার কোন সাড়া শব্দ নেই। দরকার ও নেই, অামি খাদ্যে মনোযোগ দেই।

পেশায় মা স্কুল শিক্ষক, অামি খেতে বসে গেছি অনেক অাগেই, ভেজা চুল বাদে মা পরিপাটি হয়ে অাসলেন। টেবিলে বসতে বসতে হাত ও মুখের কাজ সমানে করতে হবে, অবসর নেই, কে কি করবে সারাদিন,
কে কি খাবে, কার কি কাজ, বলতে বলতে কোনদিন তার কিছু খাওয়া হয়, কোনদিন হয় না..
খাওয়া শেষে বের হয়ে যেতে যেতে ওই একই কথাগুলো
মনে করিয়ে দিতে দিতে তিনি অামারে শাসিয়ে বেরিয়ে যান। এমনই মা'র সকাল গুলো।

হোক প্রচন্ড রোদ অথবা ভীষণ বর্ষা নয়তো নিম্নচাপের শীতের সকাল, মায়ের রুটিনে কোন ব্যাতিক্রম আসে না... সকাল নয়টা থেকে চারটে ক্লাস নিয়ে, মা যখন ক্লান্ত হয়ে ধুকতে ধুকতে ফেরেন, তখন মাকে আমার দেবী মনে হয়। দুর থেকে দেখলে মনে হয় ধকলে দূর্বল তবু আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে মা অাসছে । আমি হলফ করে বলতে পারি, মা যখন ফিরেন ওই সময়টা বিকেল না হয়ে সন্ধ্যে নামলে নির্ঘাৎ ওই অলোচ্ছটা সবাই দেখতে পেতো।

মা ফিরে আসতে আসতে বিকেলটা হেলে
পড়ে। কোন রকম হাতে মুখে পানি দিয়ে
লেগে যান, সবার জন্যে সান্ধ্য জলখাবারের জোগাড়ে। সারাদিন রোদে পোড়া ফুলের গাছ গুলো অথবা আম বাগানটা নয়তো লিকলিকে মুরগীর ছানা অার গাদা গাদা পায়রা গুলো মায়ের জন্যেই চেয়ে থাকে।
কখন ফিরবেন দেবী, কখন দিবেন জল, আর ওরা আকন্ঠ পান করবে। তখনো কোন ক্লান্তি তাকে ছুতে পারে না। তবে মাঝে মধ্যে মাকে দেখে আমার গলাটা শুকিয়ে যেতো স্কুল ছুটি শেষে, অাবদার চেপে মাঠে ছুটতাম সেদিন। মা ঠিক মনে রাখতো, খেলা শেষে দেখা যেতো না বলা মনোবাসনা তৈরী সামনে।

রাত্রির আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত মায়ের ঠিকানা
আবারো বাড়ির উত্তপ্ত স্খানে।
আমাদের খাই ফরামায়েশ তৈরী করেন।
আবারো মায়ের অমৃতের গন্ধে বাড়ি ময় ময় করে।
রাত এগারোটা পর্যন্ত কি কি সব যেন পড়েন।
বাড়ি থাকলে আমার শারিরীক সমস্ত ত্রুটি তার আলোচ্য প্রধার বিষয়। কেন সিগারেট টেনে ঠোট কালো করি, পিঠে কি সব যেন উঠেছে। হাত পায়ের নখ
এত বড় কেন ? মোটা হচ্ছিস কেন?
- বলেন, তুই তোর ময়লা কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে আসতে পারিসনা ?

বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেলে প্রাচীর টপকে চুপিচুপি শব্দহীন গেট খোলা পেয়ে আমি
সিড়ি দিয়ে মেইন ফটকে আসতে আসতেই
দরজাটা খুলে যায়..
দেখি সামনে দাড়ানো, ঘুমে জড়ানো চোখ তাতে অনেক অভিযোগের প্রশ্ন - এত দেরী করিস বাবা ধরার জন্যে অপেক্ষা করে করে ঘুমিয় পড়েছে। মাথাটা কাচুমাচু করে ঢুকে পড়ি, তুমি থাকলে অামার চিন্তা কি!
শব্দহীন অাউড়ে পৃথীবীর সেরা সুখী তখন অামিই।

আমি চিন্তা করতে চাই না কোন একদিন মা
থাকবেনা। প্রচন্ড জ্বরে পানি ঢালবে না, বেহুশ হবার অাগে ওনার পাংশু চিন্তিত মুখ অামি দেখবোনা।
বাবা যখন আমাকে মারবে মা আর ঢাল হয়ে দাড়াবে না.. হঠাৎ বাড়ি গিয়ে ভোরে আর কোরানের তেলওয়াত শুনবো না। বকুলের ফুল গুলো আর কেউ কুড়োবে না। তৃষ্ণার্ত গাছ গুলো তে আর কেউ জল ঢালবে না বেলাশেষে।
এপাশ থেকে হ্যালো বললে ওপার থেকে কেউ বলবে না- কিরে তোর গলাটা ধরা ধরা লাগছে কেন,
কেদেছিস নাকি ?

শুনলেই মা সব টের পেয়ে যায় !
অার চোখ দেখলে সব বলে দিতে পারে, কিচ্ছু লুকাতে পারি নাহ আমি! অাম্মার সাথে মিথ্যে বলার চেষ্টা করতে যাইনি অামি কোনদিন, তার চেয়ে চুপ করে মানলে সব মাফ।
না থাকলে আমি কেমনে বাচবো?
দৈহিক বৃদ্ধি কিছুটা হয়েছে তবু ভিতরটা অবাস্তব এক শিশু।

লেখাটা ২০১৫' র, স্মৃতিতে ভেসে এলো....
অনেক কিছুই অার ভাসেনা।

আম্মারে দুই মাস হচ্ছে দেখিনা,
আগে বোধ কম ছিলো, তাকাইতাম না ফিরে, অামার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেই অামি ছুট, অাম্মা পিছন দিয়ে ডাকতে ডাকতে কিছু বলে যাচ্ছে সেই গদ বাধা, অামার সেসব মুখস্থ স্বত্বেও রাত করে ফেরা, কিংবা দুই বেলা শেষে অনেক রাতে অাম্মারে ঘুম থেকে তুলে হৃলিয়া জারী করেছি; গালে তুলে না দিলে রাতে ও খাবোনা! অাম্মার সারাদিনের যে ধকল তা অামার তখন মনেই অাসতোনা, মা ও কোনদিন তা বলেনি মুখ ফুটে।

এখন হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি গেলে, সকাল সন্ধ্যে সময় যাই হোক দরওয়াজা টা খুলে সামনে অাম্মা দাড়ানো সেই অাগের মতই দ্বিধা নিয়ে চেয়ে অাছে। তবে মার মুখে ইদানীং চোখ অামার আটকে যায়, চামড়ায় কেমন টান ধরা লাগে, একটু যেনো নুুয়ে পড়েছে দেহটা, চুলে পাক ধরা, অাগের মত রাগেনা মা, বকেনা অামারে, কণ্ঠে কেমন ক্ষীণতা; বোধহীন অামার পেটের ভীষণ ক্ষুধা উধাও হয়ে কেমন কান্না অাসে
কিছুই করা হয়নি মার জন্যে- তারপর কত অনাচার, অাবদার জীবন অতিষ্ট কারী অামি এখনো শিশুর মতই উপদ্রব হয়েই অাছি।
মা রে কখনো জড়ায়ে ধরে বলিনি ভালোবাসি...

অামার মলিন মা...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৪

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: মায়ের দোয়া থাকুক সব সময়, মায়ের পাশে থাকবো সব সময় ,মাকে বলিবো ভালোবাসি সব সময় ।

২| ১৩ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: মা কথাটি যতোটা অনুভবের, তার প্রকাশ করাটা ততোটাই কঠিন। বিশ্বের কোন কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর পুরোপুরি মাকে প্রকাশ করতে পারেননি তাঁদের অমর সৃষ্টি দিয়েও। আর এই অধম তো একেবারেই অক্ষম সেই প্রকাশে। মাকে নিয়ে দু'কথা লিখবো তার যোগ্য ভাষা আমার ভান্ডারে নেই। শুধু এইটুকু বলি, অনেক অনেক ভালবাসি মা।

৩| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৭:২৫

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: ভালোবাসি বলা হয়নি, মা জানে হয়তো বাসে তার নাড়ী ছেড়া ধন। মা ভালো থাকুক, মা ভালো থাকুক;

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.