নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালবোধন

জয় মহিন

আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমাকে বিচার করতে আপনার অন্তরের মানবিকতাটাকে ব্যবহার করুন।

জয় মহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিউলিপ আতঙ্ক

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫


২০০২ জানুয়ারি মাস। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক। বেগম জিয়া সাধারণত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথাবার্তা বলেন না। চুপচাপ বসে থাকেন। আলোচ্য বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়, কিছু আলোচনা হয়। বেগম জিয়া শুধু শুনে যান। ব্যস। তাঁর নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ। জানুয়ারি মাসের ক্যাবিনেটে এলো শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রস্তাব। নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক অনুদানে বাংলাদেশে ৭ হাজার ৭০০ শিক্ষককে আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য নেদারল্যান্ডের টিউলিপ কম্পিউটার বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে। এই প্রকল্প ব্যয় ১০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ডাচ সরকার।

এব্যাপারে বাংলাদেশ- নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০০০ সালে, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডাচ সরকার টিউলিপ কম্পিউটারকে কম্পিউটার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের কাজ দেয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এটা মন্ত্রিসভায় এসেছে পুন:অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। সরকার পরিবর্তন হলেও এধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অটুট থাকে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টিউলিপ কম্পিউটার্স’ নাম শোনা মাত্র, বেগম জিয়া ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলেন। তিনি বললেন, এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাসচিব বললেন ‘নেদারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য। বছরে দেশটি বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী রেগে গেলেন বললেন ‘এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে।’ একথা বলেই তিনি ক্যাবিনেট মিটিং থেকে উঠে গেলেন।

শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব তো বেকুব। তাঁরা দুজনই দ্বারস্থ হলেন মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীর। ড. কামাল সিদ্দিকী কথা বললেন বেগম জিয়ার সঙ্গে। বেগম জিয়া ড. সিদ্দিকীকে যা বললেন তাতে তাঁর ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। বেগম জিয়া বললেন, ‘টিউলিপ’ শেখ রেহানার মেয়ের নাম। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেন কম্পিউটার কিনতে হবে?’ মুখ্য সচিব বুঝলেন এনিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। তাও বললেন ‘টিউলিপ নেদারল্যান্ডের একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান। এর জন্ম ১৯৭৯ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ রেহানা বা তাঁর পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। বেগম জিয়া বললেন ‘এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।’ ড. কামাল সিদ্দিকী নাছোড়বান্দা, তিনি বললেন এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোঁ ধরলেন, টিউলিপ নামে কোন কিছু বাংলাদেশে হবে না।

মূখ্য সচিব তাঁর ব্যর্থতার কথা শিক্ষামন্ত্রীকে জানালেন। শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এক রাশ হতাশা নিয়ে চুক্তি বাতিলের জন্য নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতকে ডাকলেন। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বিস্ময়ে হতবাক, বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার আসবে, প্রায় ৮ হাজার শিক্ষক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পাবে, আর এঁরা শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শেখাবে। এরকম একটি চুক্তি কেন সরকার বাতিল করবে? যাই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার চুক্তি বাতিল করল। টিউলিপ লিমিটেড, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চাইল। কিন্তু আবার বেঁকে বসলেন বেগম জিয়া, তিনি বললেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান বেগম জিয়াকে বোঝালেন, বোঝালেন অনেকে। কিন্তু বেগম জিয়া অনঢ়। টিউলিপ লিমিটেড মামলা করল। আদালত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল। কোর্টের আদেশও মানলেন না বেগম জিয়া। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত নেদারল্যান্ডের সহায়তা বাংলাদেশে বন্ধের আদেশ দিল। বন্ধ হয়ে গেলো বাংলাদেশে ডাচ অনুদান ও সহায়তা। বাংলাদেশের শিশু ও নারীরা ৫৬৭ কোটি টাকার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলো।

বেগম জিয়া শুধু চুক্তি বাতিলই করেননি, গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে খবর নিয়েছিলেন যে টিউলিপ এর মালিকানা কার? গোয়েন্দা সংস্থা যখন জানায় এই টিউলিপের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের কোনো সম্পর্ক নেই, ততক্ষণে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ড সরকার তার সব সহায়তা বন্ধ করে দেয়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২২

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাই আপনি কি মিটিং এ ছিলেন? :`>

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬

জয় মহিন বলেছেন: বাংলার অনেক উৎসুক চোখ দেখেছিলো, শ্রবণ করেছিলো। আমি অধমের সেই সুভাগ্য হয়নি।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বোকার ধান পোকায় খায়
তাহলে বাংলা এই প্রবাদের সত্যতা আছে ।
.............................................................................

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৯

জয় মহিন বলেছেন: নাই বললে ভুল হবে।
আরো একটি প্রবাদ আছে, শাশুড়ী বলেছে বানতে ধান, বও বাধে ঊঁদা ধান।

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: হা হা হা আগেও শুনেছি এবং হেসেছি আবারো হাসলাম।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০২

সাইন বোর্ড বলেছেন: দেশের এত বড় ক্ষতির জন্য অারো একটি কেস দেওয়া যেতে পারে, তাতে অাপনি সহ অন্য স্বাক্ষীরও নিশ্চয় অভাব হবেনা এবং মিনিমাম অারো ১০ বছর শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো যায় অনায়াশে ।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: আতঙ্কের কিছু নেই।

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনি নিশ্চয়ই এই মন্ত্রী সভায় মিটিং মিনিটস লিখছিলেন, তাইনা?

৭| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পড়লাম

৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৮

পলাশবাবা বলেছেন: শিক্ষিত মানুষের হাতে দেশ দিয়ে পোলাপান সব I AM GPA 5 হইছে। প্রডাক্ট গুলো ঢা বি তে ইংরেজিতে ভর্তি পরীক্ষা ১০০ তে ৬ - ৭ করে পাইতেছে ... উন্নতি ভালোই হইছে ... খরচ করলেই প্রশ্ন পাওয়া যায়... যাইহোক প্রোফাইলের ফটো টা কি আপনার ?? দেখে শিশু মনে হয় ... শিশু বয়সেই গাঁজা ধরেছেন //... কাজ টা ঠিক হয় নাই।

রাজীব নুর এর সাথে একমত ...... আতঙ্কের কিছু নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.