নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা-৫

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১০

এবারের একুশে বইমেলায় নিজের বই বিক্রী হোক বা না হোক, কোন কোন দিনে বেশ চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। যেমন একদিন একটা নয় দশ বছরের বাচ্চা মেয়ে আমার “জীবনের জার্নাল” এর প্রচ্ছদের ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখছিলো। তার পরে কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একটা চ্যাপ্টার পড়া শুরু করলো। দুই একটা পৃষ্ঠা একনাগাড়ে পড়লো। ততক্ষণে ওর মা কয়েকবার ওকে ডেকে পাশের একটা স্টলের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। মেয়েটি বই হাতে করে দৌড়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বইটি দেখিয়ে কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করলো। কিন্তু ওর মা ওকে বললেন, এত কঠিন বই তুমি বুঝতে পারবেনা। অথচ মেয়েটি কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ে বুঝে শুনেই কিনতে চেয়েছিলো। একটু জেদের মত করাতে ওর মা চোখ দুটো বড় করে শুধু ওর দিকে তাকালেন। অমনি মেয়েটি নিষ্প্রভ হয়ে ধীর পদক্ষেপে এসে বইটি আমার হাতে ফেরত দিয়ে বললো, “আঙ্কেল, আমার আম্মা এটি কিনবেন না”। আমি ওকে বললাম, কোন দাম দিতে হবেনা, তোমার পছন্দ হলে তুমি এমনিতেই এটা নিতে পারো, আমি তোমাকে এটা গিফট করলাম। ও তখন আস্তে করে বললো, “না আঙ্কেল, আম্মা রাগ করবেন”। ওর মা যখন ওর দিকে চোখ বড় করে তাকিয়েছিলেন, তখন আমার সাথেও চোখাচোখি হয়েছিল। ঐ চোখ দেখার পর আমার আর সাহস হয়নি, মেয়েটির মাকে গিয়ে ও কথা বলি। মেয়েটি চলে যাবার পর এক যুবক বইটি হাতে নিয়ে প্রচ্ছদটার দিকে তাকাচ্ছিলো। আমি তাকে বইটি আমার লেখা বলে জানালাম। ছেলেটি কোন পৃষ্ঠা না উল্টিয়েই বললো, “আঙ্কেল, এত হাই থটের বই আমার মাথার উপর দিয়ে যাবে”। এজন্যেই বোধ হয় এ প্রবাদটি কোন এক কালে চালু হয়েছিলো, “Do not judge a book by its cover”.

জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল ওয়াহিদুজ্জামান স্যার এসেছিলেন ‘বইপত্র প্রকাশন’ এর স্টলে, মূলতঃ তাঁর এককালের ছাত্র বরিশাল ক্যাডেট কলেজের এক্স ক্যাডেট গোলাম রাব্বী আহমেদ এর অনুরোধে। তিনি আগে যখন বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রভাষক ছিলেন, গোলাম রাব্বী আহমেদ তখন তাঁর ছাত্র ছিলো। একই স্টল থেকে আমার আর ওর বই বিক্রীত হচ্ছিল। নিজ ছাত্রের বই তিনি বেশ উদারভাবে কিনছিলেন। এক পর্যায়ে গোলাম রাব্বী আমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তিনি যখন জানতে পারলেন যে আমিও এমসিসি’র এক্স ক্যাডেট, তখন তিনি বিনা প্রশ্নে আমার বইও পাঁচটা কিনে নিলেন। ধন্যবাদ, অধ্যক্ষ ওয়াহিদুজ্জামান, একজন এক্স ক্যাডেটের প্রতি আপনার এই সৌজন্য ও শুভেচ্ছা আমাকে মুগ্ধ করেছে, আমি অভিভূত হয়েছি।

বইমেলায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আরেকটা উপলব্ধি হলো, মানুষ গল্প শুনতে চায়। বইএর গল্পে মানুষ তাদের জীবনের গল্পের প্রতিফলন দেখতে চায়। কেউ তা খুঁজে পায়, কেউ তা না পেয়েও সন্তুষ্ট হয়েই অন্যের গল্প শোনে। তাই বইমেলায় গল্প উপন্যাসের কাটতি প্রচুর। কিন্তু সে তুলনায়, কবিতার বই এর জৌলুষ অনেকাংশে নিষ্প্রভ। কাউকে কবিতার বই দেখিয়ে দিলে একটা কমন ডায়ালগ শোনা যায়, “আমি কবিতা একটু কম বুঝি”। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়া তো দূরের কথা, বই হাতে নিয়ে দেখতেই যেন তাদের ঢের আপত্তি। তাই আমি কাউকে আমার কবিতার বই “গোধুলীর স্বপ্নছায়া” সম্পর্কে কিছু বলতে অত্যন্ত নিরুৎসাহিত বোধ করতাম। আর এটা একটা আবেগের ব্যাপারও। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, গল্পের চেয়ে কবিতায় বুঝি লেখকের আবেগ অনুভূতি একটু বেশীমাত্রায় জড়িয়ে থাকে। নিজের সৃষ্টিকে অবমূল্যায়িত দেখতে কেই বা চায়! তাই আমি শুধু দাঁড়িয়েই থাকতাম, কেউ সামান্য একটু আগ্রহ প্রকাশ করলে তবেই সাধারণতঃ আমি উৎসাহী হয়ে দু’কথা বলতাম। এরকম এক পরিস্থিতিতে একদিন সন্ধ্যায় আমি যখন ‘জাগৃতি প্রকাশনী’ এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন লক্ষ্য করলাম এক দম্পতি এসে ঐ স্টলের বইগুলো দেখছেন। ভদ্রলোকটি দুই একটা বই নেড়ে চেড়ে দেখছিলেন, ভদ্রমহিলা তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিলেন। তাঁদেরকে দেখেই আমার কেন যেন একটা অনুমান হলো, তাঁরা কবিতা পড়েন। আমি একটু আগ্রহভরে আমার বইটির প্রতি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভদ্রমহিলা বইটির প্রচ্ছদে লেখা আমার নামটি দেখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বইটির দিকে তাকালেন। এবারে একটু হেসে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি অমুক ব্লগে লেখেন না? আমি আপনাকে চিনি ভাইয়া”। শুরু হলো বই ছেড়ে অন্যসব আলাপচারিতা। আলাপে মনে হলো, উনি ব্লগের বেশ নিয়মিত পাঠক। ব্লগের আরো অন্যান্য কয়েকজন লেখক সম্বন্ধেও কিছু আলাপ হলো। ব্লগের মাধ্যমেই উনি আমার “জীবনের জার্নাল” এর সাথে পরিচিত ছিলেন। ওটার কথাও তিনি জিজ্ঞেস করলেন। জাগৃতি থেকে “গোধূলীর স্বপ্নছায়া কেনার পর ওনারা এলেন “বইপত্র প্রকাশন” এ, “জীবনের জার্নাল” সংগ্রহ করতে।

আলাপচারিতায় জানলাম, ভদ্রমহিলার নাম সেলিনা, পেশায় একজন প্রকৌশলী। ভারতের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে কিছুদিন বুয়েটের ফ্যাকাল্টিতেও ছিলেন। তবে এই পরিচয়ের চেয়ে তাঁর অন্য একটা পরিচয় আছে। যখন তিনি জানালেন যে তিনি এমজিসিসি’র এক্স ক্যাডেট, তখন সাথে সাথেই এই স্বল্প পরিচয়ের পরিসরেও তাঁর সাথে আলাপচারিতাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তাঁর স্বামী আকাশও প্রকৌশলী, বুয়েট থেকে পাশ করা। তাঁরা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে দুজনাই সপ্তাহ দুয়েকের জন্য দেশে এসেছেন। এর মাঝেই প্রাণের টানে সময় করে নিয়ে একদিন বইমেলায় আসা। সেলিনা ও আকাশ, সেদিন আপনাদের সাথে অত্যন্ত অল্প সময়ের আলাপচারিতাটুকু ভালো লেগেছে। আমার বই দুটোর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রবাসে আপনারা ভালো থাকুন, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করে দেশেরও মুখ উজ্জ্বল করুন, এই কামনা ও দোয়া রইলো।

ঢাকা
১৪ মার্চ ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ এর অধ্যক্ষ জনাব ওয়াহিদুজ্জামান এর সাথে......


আমার বই "গোধূলীর স্বপ্নছায়া" হাতে প্রকৌশলী সেলিনা আর তাঁর স্বামী প্রকৌশলী আকাশ। তাঁরা উভয়ে আমেরিকা প্রবাসী, বইমেলা চলাকালে কিছুদিনের জন্য স্বদেশে এসেছিলেন।


আমার বই "গোধূলীর স্বপ্নছায়া" এবং "জীবনের জার্নাল" হাতে প্রকৌশলী সেলিনা আর তাঁর স্বামী প্রকৌশলী আকাশ, আর আকাশের পাশে বিসিসি'র এক্স ক্যাডেট গোলাম রাব্বী আহমেদ, যার বই "প্রার্থনা ও প্রেমে কোন শরিক রাখতে নেই" একই প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। বইটি আকাশের ডান হাতে ধরা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৭

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: আপনার ঘটনা এগিয়ে নেওয়ার প্রতিভায় আমি মুগ্ধ। এমনি ভাবেই মুগ্ধ হোক অগণিত হৃদয়। শুভ কামনা রইল।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার এই উদার প্রশংসা আর শুভকামনার জন্য, রায়হানুল এফ রাজ।
শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৫৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: হা হা অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে দেখছি। :)

তবে এই টা বেশি মজার-- :D
একদিন একটা নয় দশ বছরের বাচ্চা মেয়ে আমার “জীবনের জার্নাল” এর প্রচ্ছদের ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখছিলো। তার পরে কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একটা চ্যাপ্টার পড়া শুরু করলো। দুই একটা পৃষ্ঠা একনাগাড়ে পড়লো। ততক্ষণে ওর মা কয়েকবার ওকে ডেকে পাশের একটা স্টলের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। মেয়েটি বই হাতে করে দৌড়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বইটি দেখিয়ে কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করলো। কিন্তু ওর মা ওকে বললেন, এত কঠিন বই তুমি বুঝতে পারবেনা। অথচ মেয়েটি কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ে বুঝে শুনেই কিনতে চেয়েছিলো

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, মহা সমন্বয়। বইমেলায় ভালোমন্দ উভয় প্রকারের অভিজ্ঞতাই হয়েছে। আমি শুধু ভাল আর 'মজার' ঘটনাগুলোর কথাই লিখে যাচ্ছি। আশাকরি এর আগের পরের গুলোও পড়ে দেখবেন।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। আনন্দ আর নিরানন্দ ঘটে যাওয়া বইমেলার সবকিছুই আপনার অভিজ্ঞতা থেকে লিখতে পারেন।
ভালো থাকুন।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম -- ধন্যবাদ অপর্ণা, লেখাটা পড়ার জন্য।
বইমেলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতাম, অনেক কিছু নিয়েই লিখবো। বাড়ী ফিরে আর সেসব নিয়ে লিখতে ভালো লাগতোনা।
তবে স্মৃতিতে ধারণ করে রেখেছি সবই, দেখা যাক।
আপনার বাবুই কী কী বই কিনলো এবারে মেলা থেকে? আর আপনিই বা কী কিনলেন?

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: এবার বাবুইকে অনেক বই কিনে দিয়েছি। বেশিরভাগই রকিব হাসানের গোয়েন্দা আর এডভ্যাঞ্চারের গল্প। শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা দুইটা বই। আমি কিনেছি চারজন ব্লগারের বই। এর বাইরে অপরিচিত লেখকের দুইটা। আরেকতা কিনেছি মুন্নী সাহার। আর মাহমুদ আর মামুনুর রহমানের বইটা কুরিয়ারে নিয়েছি। আরো কিছু বই কিনব পরে, লিস্টে আছে। এরমাঝে একটা বই পড়ে শেষ করলাম। পড়তে আলসেমি, রিভিউ লিখতেও আলসেমি। আমি এমন ছিলাম না :( সেই সাথে আবার ব্যস্ততা বেড়েছে অফিসের।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: যাক, অনেক বই কিনেছেন তাহলে সবাই মিলে। আশাকরি ব্যস্ততা আর আলসেমির মাঝেও, ভালো লাগা দুই একটা বই এর উপর আলোকপাত করবেন এই ব্লগে, আগামীতে কখনো। ঠিক রিভিউ না হলেও চলবে, শুধু ভালো লাগার অংশটুকুর সার সংক্ষেপ, আর কেন ভালো লেগেছে তা জানিয়ে।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৯

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: আপনার লেখাগুলো সব সময় জীবন থেকে নেয়া তাই পড়তে অনেক ভাল লাগে । এবার বইমেলায় যেতে না পারার জন্য আফসোস রয়ে গেল । বাবুরা ছোট থাকতে প্রতিবারই যেতাম ।ভাল থাকুন সব সময় ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: এই ছোট্ট মন্তব্য দিয়েই অনেকখানি আনন্দ দিয়ে গেলেন, দৃষ্টিসীমানা। নিজের লেখার প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে? তাই,
তাই পড়তে অনেক ভাল লাগে -- জেনে অনেক খুশী হ'লাম। আর আমার বই দুটো সংগ্রহে নেবার জন্যে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভকামনা রইলো...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.