নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারী জীবনের ভারবাহী কিছু মানুষের কথা...

১৯ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

দিনটি ছিল শনিবার, ১১ জুন ২০২২। ড্যান্ডিনং স্টেশনে নেমে আমরা অন্য লাইনের একটি ট্রেন ধরার জন্য প্ল্যাটফর্ম বদল করতে যাচ্ছিলাম। স্টেশনটি সে সময়ে মোটামুটি জনশূন্য ছিল বলা যায়। কিছুদূর এগোতেই দেখি, প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে কে যেন শুয়ে আছে। তার পাশে একজন হাটু গেঁড়ে বসে তার মাথায়, গালে পরম মমতায় হাত বুলাচ্ছে। দু’জন ইউনিফর্মধারী স্টেশন সিকিউরিটি স্টাফ উদ্বিগ্ন চেহারায় শায়িত ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে এবং মৃদু পায়চারি করছে। আরেকটু কাছে এসে দেখলাম, শায়িত ব্যক্তিটি একজন বয়স্কা মহিলা, তাকে যত্নের সাথে পরিচর্যাকারী মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিটি ছিল খুব সম্ভবতঃ একজন যাত্রী। মহিলার কপালের এক পাশে একটু ক্ষতের মত দেখতে পেলাম, সেখান থেকে কিছুটা রক্ত ঝরে চামড়ায় বসে গেছে বলে মনে হলো। সিকিউরিটি স্টাফ দু’জনের পারস্পরিক কথোপকথন থেকে যা বুঝলাম, মহিলা বোধকরি কোন একটি ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন, শক্ত মেঝেতে পড়ে কপালের পাশে কেটে গেছে। খানিকক্ষণ সেখানে দাঁড়ালাম, ইতোমধ্যে তড়িঘড়ি করে কয়েকজন পুলিশ এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করলো। আমরা আমাদের ট্রেনের খোঁজে অন্য প্ল্যাটফর্মের উদ্দ্যেশ্যে হাঁটতে শুরু করলাম।

আমার অনুমান ছিল, সেই বয়স্কা মহিলার বয়স ৭৫ এর মত হবে। গিন্নীকে জিজ্ঞেস করায় সে বললো, ৮০ বছর হবে। মহিলা শ্বেতাঙ্গিনী ছিলেন, সামান্য স্থূলদেহী, তবে বেশ লম্বা। গাল দুটো ফোলা ফোলা ছিল, চুলগুলো কাঁচাপাকা। চোখ দুটো বন্ধ ছিল, চেহারায় ছিল নিষ্পাপ শিশুর মত সরলতা। ঘুমের মধ্যে তিনি দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিলেন। যে ভদ্রলোক তার সেবা করছিলেন, তার মুখাবয়ব এবং দেহভঙ্গী দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তার মাতৃসম অসুস্থ মহিলাটিকে একটু আরাম দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সেদিন সারাটা পথ আমি ভাবছিলাম, আহা রে! এই বয়সেও তাঁকে ট্রেনে করে একা চলতে হচ্ছে! কে জানে, এই জীবনে তাঁর আপনজন বলতে কে কে আছে! স্বামী আছে কিনা, ছেলে মেয়েরাই বা কে কোথায়! এর আগেও আমি কয়েকবার অস্ট্রেলিয়ার স্টেশনগুলোতে বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখেছি। অবশ্য এখানে পুলিশের সাহায্য খুব ত্বরিত পাওয়া যায়, হাসপাতালগুলোতেও জরুরি চিকিৎসাও খুব সম্ভবতঃ তাদের জন্য ফ্রী। তবুও আমার কাছে মনে হয়েছে, এসব উন্নত দেশের সমাজে বয়স্ক লোকজনদের জীবনটা ভীষণ কঠিন, ভীষণ ভারী! পথ হাঁটতে বুড়োবুড়িদেরকে প্রায়ই দেখি, তাঁদের অন্যতম বিশ্বস্ত (কারো কারো জন্য একমাত্র) সঙ্গীঁ কুকুরটিকে হাঁটানোর জন্য হাঁটতে বের হয়েছেন। পোষা কুকুরের সাথে আনমনে কথা বলে তাঁদের দিন কাটে; কোন মানুষকে যদি শ্রোতা হিসেবে পান, কথার ডালি খুলে বসেন।

এখানে পথ চলতে চলতে এক বয়স্কা শ্রীলঙ্কান মহিলার সাথে পরিচয় হয়েছে। আমাদের বাসার কাছেই তার বাসা, তাই হাঁটার পথে বেশ কয়েকদিনই দেখা হয়েছে, সেই সাথে পথে দাঁড়িয়েই টুকটাক কথাবার্তা। উনি প্রায়শঃ একাই হাঁটেন, এই বয়সে যা বিপজ্জনক। হাঁটাটা বিপজ্জনক নয়, কোন কিছু হলে নির্জন পথে পড়ে থাকবেন, এটাই একটা বিপজ্জনক সম্ভাবনা। আমাদের ছেলে তাই প্রথম দিনই আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিল, “তোমরা কখনোই একটু হাঁটার জন্যে হলেও একা ঘরের বাইরে বের হবা না। যখনই যাও, দু’জন একসাথে যাবা”। মহিলার চেহারায় একটা দুঃখী ভাব, কিন্তু কথায় সেটা সহজে প্রকাশ পায় না। জীবন যখন ভারী বোধ হয়, তখন সেটাকে মানুষ শুধু বয়সের কারণেই ভারী বোধ করে না, জীবনের ঐ পথটুকু বেয়ে চলতে চলতে পাওয়া নানা রকমের দুঃখ বেদনার অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনের ভারকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। মহিলা ধর্মে হিন্দু, এক ছেলে আর এক মেয়েসহ তিনি নিজ ধর্ম-কর্ম পালন করেই এখানে বসবাস করছেন। একদিন পথে দেখা হলো আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে; আমরা যাচ্ছি, তিনি ফিরছেন। তার হাতের একটি স্বচ্ছ পলিথিন ব্যাগে দেখতে পেলাম সামান্য কিছু ফুল। তিনি জানালেন, ফুল কেনার জন্যই তিনি অদূরে একটি বিক্রয়স্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আহ্নিক পূজোর নৈবদ্য হিসেবে তিনি ফুলগুলো কিনেছিলেন। সেদিন তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তার পরলোকগত স্বামীর কথা পাড়লেন।

তার স্বামী ২০২০ এ কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার দুঃখ, মারা যাওয়ার সময় তিনি তার স্বামীর সেবাযত্ন করতে পারেন নি, কারণ হাসপাতালে করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ ছিল। এমন কি মারা যাওয়ার পরেও তিনি তার স্বামীর মৃতদেহ সৎকারে অংশগ্রহণ করা তো দূরের কথা, তার মৃত মুখটিও দেখতে পারেন নি, কারণ সে সময়ে কর্তৃপক্ষের আয়োজনেই করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের মৃতদেহ সৎকার করা হতো। সেখানে পরিবারের কোন ভূমিকা থাকতো না। পরিবারকে শুধু জানানো হতো, ব্যস এটুকুই যথেষ্ট ছিল। তার ছেলে একজন মালয়েশীয় খৃষ্টান মহিলাকে বিয়ে করেছিল, কিন্তু সে বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। মেয়েটার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, এ নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত। ঘরে তিনজন মানুষ থাকে, তিন জনই একা একা!

সেদিন একটা ফুডকোর্টে আমরা কিছু হাল্কা লাঞ্চ কিনে বসার জায়গা খুঁজছিলাম। একটা টেবিলে দেখলাম বয়স্ক এক জোড়া দম্পতি বসে কিছু খাচ্ছেন। মহিলাটি আমার গিন্নীকে তাদের টেবিলে বসার জন্য ইশারা করলে আমরা সেখানেই বসে পড়লাম। সৌজন্য বিনিময়ের পর আমরা খাওয়া শুরু করলাম, একটু পরেই তাদের খাওয়া শেষ হলো। পুরুষটি বেশ বয়স্ক, বুড়ো বলা যায়। মহিলাটিকে বুড়ি না বললেও নিঃসন্দেহে প্রৌঢ়া বলা যায়। একটু পরে আমাদেরকে দেখিয়ে মহিলাটি লোকটিকে বললেন, ‘তুমি এঁদের সাথে বসে একটু গল্প করো, আমি ততক্ষণে একটু সওদা করে আসি’। এই বলে তিনি একটা ব্যাগ হাতে চলে গেলেন। বুড়ো ভদ্রলোকের সাথে কথা পাড়লাম। কথায় কথায় তিনি জানালেন, তিনি একজন ক্যাথলিক খৃষ্টান, আদি নিবাস হল্যান্ডে। গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। সাথের মহিলা একজন পাকিস্তানি, তিনিও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানে একজন খৃষ্টান ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করেছেন, সেখানে থাকা কালেই তাদের বিয়ে হবার পর সত্তরের প্রথম দিকে পাকিস্তান ছেড়ে চলে আসেন। তিনি জানালেন, তার বয়স এখন ৮৭ বছর। তার স্ত্রী এখনও মোনাশ ইউনিতে কাজ করছেন। আন্দাজে মনে হলো, তার স্ত্রী তার চেয়ে অন্ততঃ ২০ বছর কনিষ্ঠ হবেন। ভদ্রলোকের সাথে সেদিন অনেকক্ষণ কথা হলো। তিনি এখনও থিওলজি এবং ফিলোসফির উপর পড়াশোনা করেন। জীবনের প্রচুর অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে সঞ্চিত। তিনি বলে গেছেন, আমি শুনে গেছি। সেসব নিয়ে হয়তো আরেকদিন কিছু লিখবো।

মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৮ জুন ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ৮৬৬

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০

সোনাগাজী বলেছেন:



এশিয়া, আফ্রিকা ও দ: আমেরিকার সরকারগুলোর ডাকাতী ও অব্যবস্হাপনার কারণে, সেসব দেশ থেকে অনেক মানুষ পশ্চিমে চলে যাচ্ছে নতুন জীবনের আশায়; কিন্তু এদের বড় অংশ পশ্চিমের সমাজে 'প্রবাসী'।

২০ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আরও অনেক তথাকথিত 'সভ্য' দেশের সরকার আছে, যারা 'ডাকাতি'তে এদের চেয়ে কোন অংশে কম যায় না।

২| ১৯ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:১৪

লেখার খাতা বলেছেন: স্মৃতির কথামালার বিবরণ খুব ভাল!

২০ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১২:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১০:১৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বয়সের শেষ পর্যায়ে কিছু মানুষের একা হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। সামাজিক কর্পোরেট বাস্তবতা তো আছেই, উন্নত দেশে একটু বেশি দেখা যায়, যেহেতু তারা একা ঘর থেকে বের হতে পারে যানবাহন ডিসেবল দের জন্য ফ্রেন্ডলি ইত্যাদি।
আরেকটি ব্যাপার আমাদের দেশের সন্তান বেশি, উন্নত দেশে একজন বা কদাচিৎ দুইজন।
গরীব ধনী সব দেশের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের দেশেও গ্রামে শহরে অনেক বয়স্ক দেখেছি, প্রচন্ডভাবে অবহেলিত।
উন্নত দেশে তাও সোশ্যাল সিকিউরিটি আছে, বিভিন্ন রকম ভাতা আছে, চিকিৎসা আছে আমাদের দেশে তো এসব কিছুই নাই।
তবে বাংলাদেশের বয়স্কদের নামমাত্র একটি ভাতা আছে। ৫০০ টাকা।
তবে আপনি কি মনে করবেন জানিনা।
গ্রামের একটা দরিদ্র বৃদ্ধের মোবাইল একাউন্টে পাঁচশতটি টাকা অনেক বিশাল একটি টাকা। একটি বিশাল সম্মান।
গ্রামের টং দোকানে চায়ের দোকানে, কিছু না কিনলে কাউকে বসতে দেওয়া হতো না, কিছুক্ষণ বসলেই বলতো "চাচা অনেকক্ষণ তো বসলেন এইবার ওঠেন কাস্টমার আইতেছে"।
এখন বলে চাচা ও চাচা একটু বইসা যান। কি দিমু বলেন, এক কাপ চা খাইয়ে যান।

২০ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার মনে হয় প্রত্যেক বয়স্ক লোকই চান মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্বাবলম্বী থাকতে। তারা কিছুতেই সন্তানদের উপর নির্ভরশীল থাকতে চান না। এটা বিদেশে হয়তো কিছুটা বেশি, তবে দেশেও আমাদের বয়স্ক লোকজনের মানসিকতা এরকমই। কিন্তু বয়স এক সময় ঋজু মানুষকেও বাঁকিয়ে দেয়। সমস্যাটা তখনই দেখা দিতে শুরু করে। অন্যের সাহায্যও নিতে চান না, আবার নিজ সামর্থ্যেও নিরাপদে চলাফেরা করতে সক্ষম হন না। যারা চলাচলে সক্ষম অবস্থায় পরপারে চলে যান, তাদেরকে সৌভাগ্যবান বলা যেতে পারে।

৪| ১৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১০:৪৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান,




মানুষকে তো সারাজীবনটাতেই ভার বয়ে যেতে হয়! যৌবনে সে ভার হয়তো তাকে কাবু করেনা কিম্বা অন্যেরা তা বুঝে উঠতে পারেনা। কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর!
সময়ের পড়ন্ত বিকেলে তার সে ভার হাল্কা হলেও তা বইতে তার ক্লান্তিটা বেশ নজরে পড়ে, যেমনটা আপনার কুশলী লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: "সময়ের পড়ন্ত বিকেলে তার সে ভার হাল্কা হলেও তা বইতে তার ক্লান্তিটা বেশ নজরে পড়ে" - ঠিক বলেছেন। আর এটাও ঠিক বলেছেন যে সময় বড় নিষ্ঠুর!

তারপরেও, কোন কোন অভাগাকে এ ভার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বয়ে যেতে হয়।

সুন্দর মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ১৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১১:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: উন্নত বিশ্বে তবুও বয়স্ক মানুষ গুলোর জন্য একটা ব্যবস্থা আছে । তারা নিসঙ্গ সত্য কিন্তু অন্যের গলগ্রহ হতে হয় না তাদের । রাষ্ট্র থেকেই তাদের দেখা শুনার একটা ব্যবস্থা করা আছে । কিন্তু আমাদের দেশের বয়স্ক মানুষদের অবস্থা কি একবার ভেবে দেখেছেন ? কেমন করে একেবারে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় ! এটা আমার একদম ভাল লাগে না । অথচ সামনে হয়তো আমার কপালেও এমন দিন আসবে !
এই কারণে সব সময় প্রার্থনা করি যেন একেবারে বৃদ্ধ অচল হয়ে যাওয়ার আগেই যে টুপ করে মরে যাই । অন্যের উপর যেন কোন ভাবেই নির্ভর করে বেঁচে থাকতে না হয় !

পাদ্রী মহাশয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম !

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:১৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: "তারা নিসঙ্গ সত্য কিন্তু অন্যের গলগ্রহ হতে হয় না তাদের । রাষ্ট্র থেকেই তাদের দেখা শুনার একটা ব্যবস্থা করা আছে" - কথাটা সত্য, এবং মন্দের ভালো।

"পাদ্রী মহাশয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম" - আচ্ছা দেখা যাক! অদূর ভবিষ্যতে কোন এক সময় লেখার ইচ্ছে আছে।

মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে জুন, ২০২২ রাত ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
পড়ে ভালো লেগেছে।

২০ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫১

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
তা জেনে আমারও ভালো লাগল।

৭| ২০ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৩৩

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: শেষ বয়সে এসে সবাই বয়সের ভারে ভারী হয়ে যায় বিধায় তাদের সান্নিধ্য অনেক প্রয়োজন যেটা পশ্বিচমা দেশগুলােতে নেই। তবে ইদানীং আমাদের দেশেও যৌথ সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে যেটা বয়স্কদের জন্য সমূহ বিপদের কারণ।

২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ৭:৪৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
তবে আমাদের দেশের অবস্থা এখনও ততটা খারাপ নয়, আগামীতে যদিও খারাপ হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। একাধিক সন্তানের মধ্যে কেউ না কেউ এখনও এসে বয়স্ক পিতামাতার দেখাশুনার ভার নেয়, অন্যেরাও তাকে সাহায্য করে। কিন্তু উন্নত দেশের সমাজ ব্যবস্থায় সে সুযোগ নেই। একুশ বছরের পর সন্তানরাও পিতামাতার উপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না, থাকলে তাকে বন্ধুমহলে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। মা-বাবাও তাদের সন্তানদের কাছ থেকে কোন সাহায্য আশা করে না। তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য একটা ব্যবস্থা করে নেয়, নতুবা নীরবে নিভৃতে ক্ষয়ে যায়।

৮| ২০ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:০২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: উন্নত দেশগুলোতে মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব না থাকলেও নিঃসঙ্গতার ভার নিজেকেই বহন করতে হয়।
আমাদের দেশ বর্তমানে যে ধারায় যাচ্ছে, আমাদের অবস্থা আরও ভয়বহ হবে বলেই মনে হয়। নেট এর কল্যাণে উন্নত বিশ্বের সুবিধা গুলো না দিতে পারলেও সমস্যাগুলো ভালোই আত্মীয়করণ করেছি :(

২১ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: "নিঃসঙ্গতার ভার নিজেকেই বহন করতে হয়" - এটা ওসব দেশে তো সত্যই, আমাদের দেশেও সত্য হতে চলেছে। পরিবার ছোট হয়ে আসাতে এবং উন্নত শিক্ষা ও রুটি রুজির সন্ধানে ছেলেমেয়েদের প্রবাসে পাড়ি দেয়ার কারণে বয়স্কদের জন্য এই ভার বহন দিনে দিনে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। ওরা যেভাবে কুকুর বেড়ালকে আপন করে নিয়ে ওদের সাথে কথা বলে দিন কাটায়, আমাদের দেশে তো আর সেটা সম্ভব নয়, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে। তাই বুড়োবুড়িদেরকে একে অপরকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। মনের মিল না হলে দু'জনকেই দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

বরাবরের মত সুন্দর মন্তব্য আর প্লাস দিয়ে উৎসাহিত করে গেলেন, এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৯| ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:১৩

জুন বলেছেন: আমাদের দেশেও এই অবস্থা আসতে বেশী দেরি নেই খায়রুল আহসান। বেশিরভাগ পরিবারেই এক বা দুই সন্তান যারা উন্নত জীবনের আশায় প্রবাসী। বৃদ্ধ বাবা মা কাজের লোকের উপর নির্ভরশীল। ইদানীং শুনলাম ইনসুলিন পুশ করার জন্যও লোক পাওয়া যায় যারা মাসিক ভিত্তিতে বাসায় বাসায় গিয়ে অচল মানুষদের ইনসুলিন দিয়ে আসে।অত্যন্ত ভয়ংকর এক ভবিষ্যৎ আমাদের অপেক্ষায়। হৃদয়গ্রাহী লেখা।
+

২২ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আমাদের দেশেও এই অবস্থা আসতে বেশী দেরি নেই" - আমিও সেটাই ভাবি। জীবনটা যতই সুন্দর আর মধুর হোক, কেন জানি মনে হয় দিনশেষে সেটাকে একসময় ভারীই মনে হবে। আগেভাগে কিছুটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে হয়তো ভারটাকে বহন করতে কিছুটা হাল্কাও মনে হতে পারে।
পোস্টে আসার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত হ'লাম।

১০| ০৫ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৩৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বয়স্ক বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতা বর্তমান বিশ্বের এক জলন্ত সমস্যা। শহরের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ক্যারিয়ারের জন্য বিদেশে গমন করায় বাবা-মায়েরা একা থাকতে বাধ্য হয়। অর্থের লোভে বহু ক্ষেত্রেই বাড়ির পরিচালিকা বা কল মিস্ত্রিরা বহুক্ষেত্রে ওনাদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে স্থির করে।
আপনি পোস্টে তিনটি ঘটনার মাধ্যমে সুন্দর করে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। প্রথমজন সত্তরোর্ধ্ব ভদ্রমহিলা যিনি স্টেশনে ট্রেন বদলের কারণে আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। দ্বিতীয় জন করোনায় স্বামীকে হারানো শ্রীলংকান ভদ্রমহিলা এবং সবশেষে আপনাদের সঙ্গে ফুড কোর্টে দর্শন পাওয়া বিদেশি বয়স্ক যুগলের বর্ণনা নিঃসন্দেহে চলমান বিশ্বের নিঃসঙ্গতার এক জলন্ত প্রমাণ।
তবে যদি কোন একজন গত হন বা একা থাকেন তার পক্ষে বেঁচে থাকাটা বোধহয় অধিক যন্ত্রণার হয়। যে হারে বৃদ্ধাশ্রম বাড়ছে সেটাও রীতিমতো উদ্বেগের। হয়তো ক্যারিয়ারের জন্য সব সন্তানের পক্ষে সব সময় বাবা মাকে কাছে রাখা সম্ভব হয় না তবুও বলবো সন্তানদের পক্ষে বাবা-মাকে দূরে রাখাটা আমার কাছে কখনোই মনোভূত নয়।
শুভেচ্ছা স্যার আপনাকে।

০৬ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: "বয়স্ক বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতা বর্তমান বিশ্বের এক জলন্ত সমস্যা" - অবশ্যই, বিশেষ করে আমাদের মত দেশের বয়স্কদের, যেখান থেকে তরুণ প্রজন্ম উন্নত জীবনযাপন এবং সুযোগ সুবিধার প্রত্যাশায় গণহারে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলতে চাই, আমার লেখাটা আপনার এতটা মনযোগ লাভ করেছে দেখে আমি অত্যন্ত প্রীত হয়েছি। সুবিবেচিত মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

"তবুও বলবো সন্তানদের পক্ষে বাবা-মাকে দূরে রাখাটা আমার কাছে কখনোই মনোভূত নয়" - ব্যাপারটা আমারও মনঃপুত নয়, তবুও মেনে নিয়েছি, কারণ সব মা-বাবাই চায়, তাদের সন্তান নিরাপদে থাকুক, সুস্থ পরিবেশে জীবন যাপন করুক!

অনেক, অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। আপনার ভাঙা হাড়ের অবস্থা এখন কেমন?

অফ টপিকঃ বাংলাদেশের বন্যার্তদের জন্য আপনার সমবেদনা এবং দ্রুত ও উদার অনুদানের কথা ধন্যবাদ জানিয়ে স্মরণ করছি।

১১| ০৫ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৪৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: ঘটনাগুলো পড়ে বেশ ভাল লাগলো খায়রুল আহসান ভাই। বৃদ্ধ বয়সের নিঃসঙ্গতা খুব বেদনাদায়ক।

কিছুদিন আগে পরিবারের সাথে IKEA তে গিয়েছিলাম কিছু বজার করতে। সেখানে কাউন্টারে যখন জুনিসপত্রের দাম পরিশোধ করতে গেলাম দেখি লাইনের কাছে একপাশে একটা ডেস্কে হেলান দিয়ে একজন বেশ বয়স্ক মহিলা দাড়িয়ে আছেন, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না তিনি কি লাইনে, নাকি লাইনের বাইরে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম তিনি লাইনে কি না, তিনি বললেন, "না , না আমি লাইনে নই, ঐ দেখ আমার ছেলে ওখানে দাড়িয়ে, আমাকে সে সাহায্য করছে।" তার গলায় কি যে একটা খুশি, উচ্ছ্বাস আর গর্ব! আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেই অভিভূত হলাম মহিলার এই উচ্ছ্বাসে। আমার মনে হলো, মহিলা হয়ত কোন একটা ওল্ড হোমে থাকেন, আজ ছেলে এসেছে তার সাথে দেখা করে কিছু বাজার সদাইয়ের কাজে মাকে সাহায্য করতে।

বৃদ্ধ বয়সে সব বাবা-মায়েরাই যেন বলতে পারেন "ঐ দেখ আমার ছেলে ওখানে দাড়িয়ে" এই কামনা করি ।

০৬ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:০১

খায়রুল আহসান বলেছেন: "বৃদ্ধ বয়সের নিঃসঙ্গতা খুব বেদনাদায়ক" - কোন দ্বিমত নেই। আমি যখন তরুণ ও যুবা ছিলাম, বয়স্কদের দেখলে কিছুটা সময় তাদের সাথে বসে আলাপ করে নিতাম। তাদের প্রায় সবাই এখন গতায়ু, কিন্তু তাদের অনেকের চেহারাই এবং কথাও এখনো আমার মনে ভাসে।

বৃদ্ধ বয়সে সব বাবা-মায়েরাই যেন বলতে পারেন "ঐ দেখ আমার ছেলে ওখানে দাড়িয়ে" এই কামনা করি - আপনার এ কামনার সাথে একাত্মতা বোধ করছি।

পোস্ট পড়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতার কিছু কথা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমি নিজেও প্রায়শঃ এ রকম করে থাকি এবং অন্য কেউ আমার পোস্টে করলেও ভীষণ প্রীত ও অনুপ্রাণিত হই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.