নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
কোথাও কোন জানাযার নামাযে যোগদানের আহবান পেলে আমি তা পারতপক্ষে মিস করি না। চেনা হোক, কিংবা অচেনা কারো হোক, জানাযার নামায হবে শুনলেই আমি দাঁড়িয়ে যাই। আমাদের বাসার কাছে যে মাসজিদ আছে, সেটাতে প্রায়শঃই জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। মহল্লার মাসজিদ হিসেবে সেখানে যাদের জানাযা পড়ানো হয়, তাদের প্রায় সবাই পরিচিত মুখ হয়ে থাকে কিংবা তাদের নিকটাত্মীয় স্বজন। আর সেটা থেকে দূরে কোথাও হলেও, আমি চেষ্টা করি সময়মত সেখানে উপস্থিত হতে। গত চার সপ্তাহে অনেকগুলো (প্রায় ৮/৯টা) জানাযার নামাযে উপস্থিত হয়েছি, তার মধ্যে কেবলমাত্র একটি ছিল আমার নিকটাত্মীয়ের। বাকিগুলো ছিল সতীর্থ/তদীয় পত্নীদের, নিকট বন্ধুর অনুজ ভ্রাতার, এবং বাকিগুলো এলাকাবাসী এমন কারও বা তাদের পত্নীদের, যাদের সাথে একই এলাকাবাসী হয়ে থাকলেও জীবনে কখনো দেখা হয় নাই।
ছোটকাল থেকে একটা কথা শুনে এসেছি যে ‘নেক নিয়্যতে বরকত’। অর্থাৎ কোন ভালো কাজের নিয়্যৎ করলে সেটাতে অবশ্যই বরকত থাকবে। সম্প্রতি আমি দুটো জানাযার নামাযে যোগদানের ব্যাপারে এ কথাটার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছি। গত ১৬ অগাস্ট ২০২২ তারিখে এক নিকটবন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখলাম, সে ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে লিখেছে যে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা, যে একজন নামকরা প্রকৌশলী ছিল, সে কয়েক ঘণ্টা আগে ইন্তেকাল করেছে। তার ব্রেন-স্ট্রোক করায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল, সে কথা আগেই বন্ধুর পোস্ট থেকে জেনেছিলাম। ছোটভাই এর অসুস্থতার খবর পেয়ে সে আমেরিকা থেকে উড়ে এসেছিল ভাবীকে ছাড়াই, কারণ মাত্র কয়েক মাস আগেই ওরা দু’জনে বাংলাদেশে অনেকদিন ধরে বেড়িয়ে গিয়েছিল। আমি তখন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম বলে তাদের সাথে এবারে দেখা হয় নাই। যাহোক, বন্ধু তার শোক ভারাক্রান্ত পোস্টে জানালো যে তার ভাই এর জানাযা অনুষ্ঠিত হবে ধানমণ্ডি ৭ নং রোডের ‘বায়তুল আমান মাসজিদ’ এ, সকাল এগারটায়।
সেদিন আমি ফজরের নামায পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবং ঘুম থেকে ওঠারও এক ঘণ্টা পরে ল্যাপটপ খুলতেই বন্ধুর স্ট্যাটাসটা চোখে পড়লো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি হাতে সময় আছে এক ঘণ্টারও কম। অথচ আমার বাসা থেকে সকাল দশটায় এই কর্মদিবসের ভিড় ঠেলে বায়তুল আমান মাসজিদে যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লাগার কথা। এদিকে আমার গাড়িটা সকাল নয়টায় আমার অনুমতিসাপেক্ষেই অন্য একটা ডিউটিতে নিয়োগ করা হয়েছে, সেটা ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে। ড্রাইভারকে সে ডিউটি থেকে কলব্যাক করলেও তার ফিরে আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে। অর্থাৎ, এটুকু সময়ে আমার গাড়িতে করে জানাযায় যোগদান করাটা অসম্ভব ব্যাপার। তবুও ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, উবার, সিএনজি যেটাই আগে পাই, সেটাতেই চেপে বসবো। হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপে আমাদের উভয়ের কিছু কমন বন্ধুর ফোননাম্বার ছিল। কাপড় পরতে পরতে প্রথম যাকে ফোন করলাম, সে জানালো যে সে ইতোমধ্যে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে এবং সেদিন তার অফিসে না গেলে চলবে না। দ্বিতীয়জনকে করলাম, সে থাকে মিরপুর ডিওএইচএস এ। তার সাথে কথা বলে মনে একটু ভরসা জাগলো, দৈবক্রমে হলেও হয়তো আমার মনের আশাটা পূরণ হবে।
সেই বন্ধুটি জানালো, সে সকালে বার্তাটি দেখেছে। একবার সে ভেবেও ছিল যে জানাযায় যাবে। কিন্তু মোহাম্মদপুরে তার কিছু কাজ আছে বলে সে জানাযায় যাবার ইচ্ছা পরিত্যাগ করে মোহাম্মদপুরে যাবার জন্য ইতোমধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে নীচে নেমে গেছে, তক্ষুণি গাড়িতে উঠবে। আমার কল পেয়ে সে সিদ্ধান্ত পুনরায় বদলালো। প্রথমে জানাযায় যাবে-এতে একসাথে দু’জনের ইচ্ছে পূরণ হবে, পরে মোহাম্মদপুরে কিছুটা সময় থেকে ফেরার পথে আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে, যদি না আমার মোহাম্মদপুরে কিছুটা সময় তার সাথে কাটাতে অসুবিধা না হয়। আমি ওর শর্তে রাজী হয়ে গেলাম। ওকে বললাম, আমার অসুবিধা হলে মোহাম্মদপুর থেকে আমি নিজ ব্যবস্থায় ফিরে আসবো, অন্যথায় ওর সাথে থেকেই গল্পগুজব করে সময় কাটাবো। ততক্ষণে বেলা বেজেছে দশটা তেইশ মিনিট। আমি ঝটপট করে ওযু করে হাতের সামনে যে কাপড় পেলাম, সেটাই গায়ে চড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বের হয়ে গেলাম। আমাকে সে বলেছিল স্টাফ রোড রেল ক্রসিং এর সামনে থাকতে। আমি রাস্তায় বের হয়েই দেখি অনেক গাড়ি লাইন ধরে যাচ্ছে, এসব গাড়ির সবগুলোকেই স্টাফ রোড রেল ক্রসিং দিয়েই যেতে হবে। আমি সামনে যেটাকে পেলাম, সেটাকেই হাত তুলে থামালাম। সে গাড়িতে কোন আরোহী ছিল না, একজন তরুণ ড্রাইভার গাড়িটি চালাচ্ছিল। আমি তাকে বললাম, ভাই আমাকে একটু স্টাফ রোড রেল ক্রসিং (আনুমানিক ৫০০/৬০০ গজ দূরত্বে) যেতে হবে, অত্যন্ত জরুরী। আমি কথা শেষ করার আগেই ড্রাইভার আমাকে উঠতে বললো, কেননা পেছনে গাড়ির চাপ ছিল।
গাড়িতে বসার সাথে সাথেই বন্ধুর কল পেলাম, আমি কোথায় জানতে চেয়ে। আমি বললাম, আমার আর দু’মিনিট লাগবে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে। সে জানালো সেও কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি আরও আশান্বিত হ’লাম। একটু পরেই আবার বন্ধুর কল পেলাম, এবারে সে আশায় ছাই পড়লো। সে বললো, তার চালক ঢাকায় একেবারেই নতুন, ভুল করে একটি ইউটার্ন নিয়ে নিয়েছে। আমি প্রমাদ গুণলাম। আমাদের কথোপকথন শুনে সেই তরুণ ড্রাইভারটি স্বেচ্ছায় আমাকে আরও কিছুদূর এগিয়ে দিতে চাইলো, আমি তাকে ধন্যবাদ আর শুভকামনা জানিয়ে তার গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই বন্ধু জানালো সে চলে এসেছে। তার গাড়িটি ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো আমার সামনে থামলে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম, কেননা যে ভুল ইউটার্নটি সে নিয়েছিল, তা থেকে ফিরে আসতে কমপক্ষে বিশ মিনিট লাগার কথা। যাহোক, আমি ত্বরিত গাড়িতে উঠে দেখি সময় আছে বিশ মিনিটেরও কম। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যা হয়, আমরা এই সুদীর্ঘ পথে ৬টা সিগন্যালের মধ্যে একটাতেও আটকালাম না। শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা নিয়ে যখন গন্তব্যে পৌঁছ্লাম, তখনও এগারটা বাজেনি, বাজতে কয়েক মিনিট বাকি ছিল।
বন্ধুর ভাইয়ের জানাযায় উপস্থিত হতে না পারলে আমার খুব খারাপ লাগতো। একই মাসজিদে বছর কয়েক আগে বাদ এশা অনুষ্ঠিত তার বাবার জানাযায় আমি শরীক হয়েছিলাম। তারও কয়েক বছর আগে একই মাসজিদে তার মায়ের জানাযায়ও উপস্থিত ছিলাম। জানাযার নামাযান্তে আমি শোকগ্রস্ত বন্ধুকে কিছুটা সান্ত্বনা দেয়ার সময় বন্ধু আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার সে উপস্থিতির কথাও স্মরণ করলো। তারপর তাকে আমি বললাম কতটা শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা নিয়ে আমরা দুজন মাত্র আঠারো/উনিশ মিনিটে স্টাফ রোড রেল ক্রসিং থেকে অত্যন্ত অলৌকিকভাবে তার ভাইয়ের জানাযায় উপস্থিত হতে পেরেছি! সে সব শুনে শান্তভাবে বললো, খায়রুল, এসব এমনি এমনি হয় না। কেন হয়, তা তুমিও একটু ভেবে দেখো। আশাকরি বুঝতে পারবে। আমি খানিক ভাবলাম, এবং যা বুঝার তা বুঝে নিলাম।
দ্রুত ধাবমান সময়কে পরাভূত করে আমি অপর যে জানাযায় উপস্থিত হতে পেরেছিলাম, সেটা ছিল আমার আপন ভাতিজী-জামাই এর জানাযা। কিডনী বৈকল্যে ভুগে সে মাত্র পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সে গত ২৫ অগাস্ট ২০২২ তারিখে ইন্তেকাল করেছে। সেদিন তার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল সকাল নয়টায়, মিরপুর ১৩/১৪ নং নম্বরের ‘ব্যাটালিয়ন জামে মাসজিদ’ এ। আমার বাসা থেকে স্বাভাবিক সময়ে সেখানে যেতে অন্ততঃ চল্লিশ মিনিট লাগার কথা। তার উপর আমি ‘ব্যাটালিয়ন জামে মাসজিদ’ চিনিনা, কাছাকাছি গিয়ে সেটার অবস্থানকে খুঁজে বের করতে হবে। একজনকে পথে নামিয়ে দিয়ে আমার সেখানে যাবার কথা ছিল, তাই সময়ের বেশ টানাটানি ছিল। সে সময়টাতে কচুক্ষেত এলাকায় প্রতিদিন ভীষণ জ্যাম থাকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন কচুক্ষেতে মোটেও জ্যাম পেলাম না। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আমি সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছিলাম।
গত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ বিকেল সোয়া তিনটায় মারা গেলেন রাওয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেজর খন্দকার নূরুল আফসার (অবঃ)। ০৬ তারিখ বাদ জোহর তার নামাযে জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। উনি একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। অকাতরে মানুষের উপকার করে গেছেন, কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। আমি জানতাম, অত্যন্ত অমায়িক এবং বিনয়ী এই মানুষটির জানাযায় অনেক জনসমাগম হবে, তাই হাতে একটু সময় নিয়েই রওনা হয়েছিলাম তার জানাযায় শরীক হতে। ভাগ্যিস, সেটা করেছিলাম; নইলে আর পাঁচ মিনিট পর রওনা দিলে মাসজিদ পর্যন্ত যেতেই পারতাম না। সেদিন বহু লোক যানজটের কারণে জানাযার নামাজে সামিল হতে পারেননি, কেউ কেউ মাঝপথ থেকে ফিরে গিয়েছিলেন।
জানাযার নামাযের সময় আমি সবচেয়ে বেশি অভিভূত হই যখন মৃত ব্যক্তির স্বামী/সন্তান কিংবা অন্যান্য নিকটজন তার হয়ে মুসল্লীদের কাছে ক্ষমা চান। বিশেষ করে পুত্ররা যখন মা বাবার জন্য ক্ষমা চান, তখন আমার মন থেকে উভয়ের জন্য দোয়া চলে আসে। জানাযার সময় প্রথা অনুযায়ী কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষে যদি তার পুত্র মা’ফ চাওয়ার জন্য দাঁড়ায়, সে মুখ খোলার আগেই আমি তার মা/বাবাকে মা’ফ করে দেই এবং তার জন্য দোয়া করতে থাকি। এ সময়টাতে আমার হৃদয়টা দুমরে মুচড়ে যেন ভাঙতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে সেই পুত্রটি আমার পুত্র হয়ে যায়! আমি নামাযান্তে ঘরে ফেরা পর্যন্ত নিরন্তর তাদের জন্য দোয়া করতে থাকি। জানাযার নামাযের তৃতীয় তাকবীরের পর পড়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। আমি আরবিতে এ দোয়াটি পুরোপুরি মুখস্থ করতে পারিনি, তবে এর বাংলা অর্থ জানি। আমি মনে মনে সে অর্থটিই নিজের ভাষায় বলে যাই, সেই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে মনে আসা আরও কিছু দোয়া সহ।
দোয়া চাওয়াটা শুধুই কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়। বক্তার চাওয়ার মধ্যে আকুতি থাকলে তা শ্রোতার অন্তর স্পর্শ করে যায়। আর অন্তরে দোলা লাগলে প্রার্থনা এমনিতেই ওষ্ঠে এসে পড়ে। তাই এমন আকুল আবেদন শোনার সাথে সাথে আমার কণ্ঠে অনুচ্চারিত থাকলেও অন্তরে উচ্চারিত হতে থাকে প্রতিটি স্বামীহারা পতিব্রতা বিধবা নারীর জন্য, প্রতিটি পিতৃহারা সন্তানের জন্য, প্রতিটি সন্তানহারা পিতামাতার জন্য, পিতামাতার প্রতি অনুগত সকল সন্তানের জন্য আমার আকুল, অকৃত্রিম দোয়া এবং শুভকামনা। দোয়ায় কতটুকু কাজ হয় জানিনা, কিংবা আমার দোয়ায় কারও কোন উপকার হবে কিনা সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত নই, কিন্তু জানাযার নামাযে দোয়া পড়ার পর আমার মনটা খুব হাল্কা হয়ে যায়। এজন্য আমি জানাযার নামায সাধারণতঃ মিস করি না, নিজের প্রয়োজনেই।
ঢাকা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ১৩৬৭
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, আপনি সঠিক বলেছেন। প্রথম মন্তব্যটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জানাজার নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত মুসলিম ব্যক্তির জানাযায় ঈমান সহকারে ও ছাওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাযা ও সমাধি পর্যন্ত থাকে সে দুই কিরাত নেকি পাবে। প্রতি কিরাত হচ্ছে ওহুদ পাহাড়ের সমান। আর জানাযা পড়ে দাফনের পূর্বে ফিরে যাবে সে এক কিরাত নেকি নিয়ে ফিরবে। (বুখারি, মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ৫টি হক আছে। তাহলো-
১. কেউ সালাম দিলে তার জবাব দেওয়া,
২. কেউ হাঁচি দিলে তার উত্তর দেওয়া,
৩. কেউ দাওয়াত করলে তা কবুল করা,
৪. কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং
৫. কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা।’ (বুখারি)
অসুস্থ কাউকে দেখতে যাওয়াও অনেক ফজিলতের কাজ। হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে এই ব্যাপারে -
‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক- আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে...।’ (মুসলিম)
ভালো নিয়তে কিছু করার চেষ্টা করলে আল্লাহর সাহায্য চলে আসে।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের প্রতিটি কথা খুব সুন্দর করে লিখেছেন। আশাকরি, এতে অনেকে উপকৃত হবেন। বিশেষ করে চিকিৎসাধীন অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়াটা একটি অত্যন্ত নেক আমল। এটা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৮
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ব্লগে এত এত এত পোস্ট আসে, রাসুল সঃ এর জানাজার সঠিক বিষয়টি নিয়ে কেউ লিখেন না। ইউটুব ওয়াজে একেক বক্তা একেক রকম কথা বলেন।
পোস্ট ভালো লাগলো।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: ''পোস্ট ভালো লাগলো'' - অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কারো জানাজায় শরিক হলে নিজের
মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক বলেছেন। এ ছাড়াও, জানাযার নামায হচ্ছে একজন মৃত ব্যক্তিকে সম্মান ও বিদায় জানানোর এবং তার জন্য দোয়া এবং শুভকামনা প্রকাশের শেষ আনুষ্ঠানিকতা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: আমার আবার একদম উল্টো । আমি সব সময় মৃত মানুষ, মৃত বাড়ি যানাযা থেকে অনেক দুরে থাকি । আমাদের এলাকাতে একটা রীতি প্রচলিত আছে । কেউ মারা গেলে শুনলেই মানুষ দুর দুরান্ত থেকে মৃত বাড়ি গিয়ে হাজির হয় । হয়তো দেখা যাবে কোন দিন সেই মানুষটাকে সে দেখেও নি তবুও সে হাজির হবে । রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে ভ্যান কিংবা রিক্সা করে, যদি শোনে বাড়িতে কেউ মারা গেছে তখন রিক্সা থামিয়ে মৃতের বাড়িতে ঢুকবে ।
আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমি শেষ মৃত মানুষের মুখ দেখেছিলাম । আমার নানীর এক বোন মারা গিয়েছিলো । সেই তার জানাজা পড়েছিলাম । কিন্তু তখন থেকেই একটা ভয় এসে আমার মনে জড় হয়েছে । তারপর আমার নানা মারা গেল । আমার নানা বাড়ি আমাদের বাড়ির ঠিক পরের বাড়িটাই । আমি দিনভর সেই বাড়ির ধারে কাছেও গেলাম না । যদিও জানাযা পড়েছিলাম । তারপর আর সর্বশেষ আমি জানাযা পড়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের । এই শেষ । আর কখনও কোন মৃতের ধারে কাছে যাই নি । যেতে পারি না । মনের ভেতরে কেমন একটা অস্বস্তি লাগে।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার মত আমারও ছোটবেলায় কোন মৃত মানুষের মুখ দেখতে কিংবা জানাজায় যেতে ভয় লাগতো। পরিণত বয়সে এসে যখন মাসজিদে যাওয়া শুরু করলাম, তখন সে ভয়টা কেটে গেল, কারণ স্থানীয় মুসল্লীদের কেউ মারা গেলে তাদের জানাযা মাসজিদেই পড়ানো হয়। দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে সয়ে গেছে।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:০৮
কাছের-মানুষ বলেছেন: পৃথিবীতে এক-দেড়শ বছর আগে বর্তমান পৃথিবীর মানুষ কেউ ছিল না এবং আজ থেকে ক-দেড়শ বছর পরের পৃথিবীতেও বর্তমান পৃথিবীর কেউ থাকবে না! এটাই বাস্তবতা!
ভাল লাগল দিনলিপি।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, আপনি বাস্তব সত্যটাকেই তুলে ধরেছেন।
দিনলিপি ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হ'লাম।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা....
৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার জীবনের সব চাইতে বড়ো আফসোস, আমি আমার সব চাইতে প্রিয়জন যারা তাদের কারোরই জানাজায় উপস্থিত থাকতে পারিনি।
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রবাসে থাকার কারণে আমিও আমার মা ও বাবা, উভয়ের জানাযায় অনুপস্থিত ছিলাম। তবে উভয়ের জন্য দূর থেকে দোয়া করেছি অনেক, অনেক! কবুলের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আ-লামীন। বাবার মৃত্যু সংবাদটাই পেয়েছিলাম দাফনের পর। সে সময়ে সংবাদ আদান প্রদান মোটেই এখনকার মত এতটা সহজ ছিল না।
৮| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:০৮
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: জানাজায় অংশগ্রহন- খুবই গুরুত্বপূর্ন; কারন এতে নিজের মৃত্যুর জন্য তৈরী হওয়া যায়।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০১
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক বলেছেন, একমত।
৯| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৫২
বিটপি বলেছেন: হে আল্লাহ, আমাদেরকে মাগফিরাত (ক্ষমা ও হিদায়াত) দান কর, আমাদের মধ্যে যারা
জীবিত ও মৃত
এখানে উপস্থিত ও অনুপস্থিত
ছোট ও বড়
পুরুষ ও মহিলা।
যাদেরকে জীবিত রেখেছ, ইসলামের উপর জীবিত রাখ।
যাদেরকে মৃত্যু দিয়েছ, ঈমানের সঙ্গে তা দিও।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: আমীন! চমৎকার দোয়া।
১০| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯
শেরজা তপন বলেছেন: মেজর নুরুল আফসার - আফসার গ্রুপের মালিক তাই না? ব্যবসায়িক কাজের সোর্সে একসময় ওনার সাথে আমার বেশ ভাল পরিচয় ছিল -বেশ সজ্জন মানুষ। ভগবান অথচ নিরহংকার এবং উদার মনের মানুষ ছিলেন। আমি জানতাম না উনি মারা গেছেন আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসিব করুন।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, তাই। আপনার মূল্যায়ন সঠিক এবং যথার্থ-- "বেশ সজ্জন মানুষ"।
১১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪১
শেরজা তপন বলেছেন: সরি টাইপো হয়েছে ওখানে ভগবান' না ধনবান হবে
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: বুঝতে পেরেছি, যদিও প্রথমে একটু ভড়কে গিয়েছিলাম!
১২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কি অদ্ভুত একদিন আমার লাশ নিয়েও মানুষ এমনি দৌড়িয়ে জানাযার নামাজে দাড়াবে।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪১
খায়রুল আহসান বলেছেন: অদ্ভুত? সেটা হলে আপনি সত্যিই হবেন ভাগ্যবান।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
১৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২
কামাল৮০ বলেছেন: আটশো কোটি লোকের মাঝে একশ বিশ ত্রিশ কোটি লোকের জানাজা হবে।বাকি লোকদের কি হবে।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: 'বাকি লোকদের কি হবে' - তা আমার বিশ্বাস মতে যেমন আমি জানি, আপনিও তেমনি আপনার বিশ্বাস মতে জেনে থাকবেন।
যার ইচ্ছায় সবকিছু হয়, এটা জানার বা বলার এখতিয়ার কেবলমাত্র সেই সর্বশক্তিমানেরই।
১৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমার জীবনে আমি একটা জানাজা নামাযে অংশ নিয়েছি ! সেটা ছিল দুবাই মসজিদে ঈদের নামাজের পর। ঘোষণা ছিল আরবিতে প্রথমে বুঝতেই পারি নাই। তাছাড়া নিয়ম ও জানতাম না, পাশের জন কে দেখে শেষ করেছিলাম। আবর দেশগুলোর এই সুবিধা টা আমার ভালো লাগে।
চমৎকার পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, পোস্ট পড়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা এখানে শেয়ার করে যাবার জন্য।
প্লাসে প্রাণিত।
১৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান,
উপলব্ধি থেকে ঠিকই বলেছেন- নিয়ত যদি ভালো হয় তবে সে নিয়ত পুরন হয়েই যায়। আজ অথবা কাল।
যে বিষয় নিয়ে লিখেছেন তাতে আপনার ভেতরের "মানুষ"খানাকেই আবার দেখলুম।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার দৃষ্টিভঙ্গী অনেক উদার, তাই আপনি এত সুন্দর করে মানুষের ভেতরের "মানুষ"কে দেখতে পান এবং তার প্রশংসা করতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ, এই চমৎকার মন্তব্যটির জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০১
পোড়া বেগুন বলেছেন:
জানাযার নামাজ ইসলাম ধর্মের লোকেদের জন্য ফরযে কেফায়া। সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্থাৎ কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ
থেকে অবশ্যই জানাযার নামাজ পড়তে হয়।