নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশি’র দশকে জন্ম নেয়া এক আর্জেন্টিনা সমর্থকের চোখে দেখা বিশ্বকাপ ফুটবলের ক্রমধারা

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৩৪

১৯৯০ সাল। মাস্কাট, ওমান। তখন বেশ রাত। আট বছরের এক বালক টিভি’র সামনে বসে বিশ্বকাপ খেলা দেখছিল তার বাবা খায়রুল আহসান, সা’দ জিয়া আঙ্কেল আর আজমত সা’দ আন্টির সাথে, যারা ঐ সময়ে খেলাধুলার একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিলেন। আরও সেখানে ছিলেন ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের আরও অনেক ক্রীড়ামোদী, যারা সবাই তাদের সাথে সিদ্দিক আঙ্কেলের বাসায় সমবেত হয়েছিলেন। ঢুলুঢুলু চোখে সে বালক বিস্ময়াভিভূত হয়ে ফুটবল নামের সেই জাদুর খেলাটি দেখছিল। দল দুটি ছিল আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি। ছিল ডিয়েগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনা, বিশ্বের সর্বসেরা খেলোয়াড়। রেফারি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেয়। জার্মানি গোল করে ম্যাচ জিতে যায়। ম্যারাডোনা কেঁদেছিল, তার সাথে সেই বালকটিও কেঁদেছিল। সেইদিন থেকে একটা আশাহত ফুটবল দলের সাথে সেই বালকটির সম্পর্কের শুরু। যে দলটি ক্রমাগতভাবে (তার সমর্থকদের জন্য) হতাশা আর মর্মপীড়া এনে দিচ্ছিল। ব্রাজিল ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জিতে নেয় এবং আবারও ২০০২ সালেও। তখন থেকে ব্রাজিল সমর্থকদের কাছ থেকে আসা শুরু হলো ব্যঙ্গাত্মক বিদ্রূপ। ‘আমরা পাঁচবার জিতেছি, তোমরা কয়বার’? বাঁকা হাসি দেয়া, অন্য দিকে তাকানো, সবই করতো। পুনরায় নতুন করে আশার সোপান তৈরি করতো সে বালক, যে আশা মরে যেত, মারতোও।

২০১৪, ঢাকা, বাংলাদেশ। সে বালকটি এখন যুবক পুরুষ। রোযার মাস, গভীর রাত। আরেক ফাইনাল, আবারও আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি। এবারে সে একাই বসে খেলা দেখছে। এবারে আর্জেন্টিনার আরেক সূর্যসন্তান, লিওনেল মেসি। সেই কি সর্বকালের সেরা? লোকে বলে, তা হতে হলে তাকে একটি বিশ্বকাপ জিততে হবে। একটা ভগ্নপ্রায়, অতি সাধারণ মানের দলকে মেসি টেনেটুনে ফাইনাল পর্যন্ত তুললো। চূড়ান্ত এই প্রতিবন্ধকে তার দলের খেলোয়াড়েরা তাকে ছোট করে দিল। অতিরিক্ত সময়ে জার্মানি গোল করে ফেললো। ব্যস, ওটাই চূড়ান্ত ফল নির্ধারক হয়ে গেল! মেসি অসহায়ভাবে ট্রফির দিকে তাকিয়ে থাকলো। এত কাছে এসেও সেটা দূর অধরাই রয়ে গেল! সেই বালকটি (এখন যুবক) তার দলকে চ্যাম্পিয়ন দেখার আশা একেবারে ছেড়ে দিল। এবারে শুরু হলো নব্য জার্মান ভক্তদের পালা। ব্যঙ্গ বিদ্রূপ আবার শুরু হলো। আশার মৃত্যু হলো।

২০২২, রিজাইনা, সাচকাচুয়ান, কানাডা। সেই মানুষটি কিছুদিন আগে চল্লিশ ছুঁয়েছে। আরেকটি বিশ্বকাপ ফাইনাল। এবারে সে বন্ধুদের নিয়ে জাকির মল্লিক ভাইয়ের বাসায় বসে খেলা দেখছে। আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স। এ বারের প্রতিযোগিতায় ফ্রান্সই সবচেয়ে ভয়াবহ দল। এটাই হবে মেসি’র শেষ ‘সোয়ান-সঙ’ (অন্তিম সঙ্গীত)। সে কি পারবে করণীয়টুকু করতে? এবারে তার সাথে রয়েছে এমন একটি দল, যারা শুধু তার সাথেই খেলে না, তার জন্যেও খেলে। এবারে তাদের রয়েছে একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ কোচ, যিনি একটা সাধারণ মানের দলকে অসাধারণ বানাতে পারঙ্গম। ম্যাকএ্যালিস্টার, মারটিনেজ, জুলিয়ান আলভারেজ, ডি-পল। বিশ্বকাপের আগে এদেরকে খুব কম মানুষই চিনতো। কিন্তু এখন, সবাই তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখছে। ডি-মারিয়া মেসি’র দীর্ঘদিনের গোলসঙ্গী। অনেকে বলতে পারেন যে ২০১৪ সালে তিনি ফিট থাকলে আর্জেন্টিনা সেবারে বিশ্বকাপ জিতে নিত। কিন্তু ফুটবল ‘কী হতে পারতো’ তা নিয়ে থোরাই কেয়ার করে; ‘এখন কী’ সেটাই ফুটবলের বিবেচ্য বিষয়। আর্জেন্টিনা বিস্ময়কর ফুটবল খেলে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে রইলো। ফ্রান্স দ্বিতীয়ার্ধে (৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে) পর পর দু’টি গোল করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনলো। তাদেরকে একটি ‘ভয়াবহ দল’ তো শুধু শুধুই বলা হয় না! রাজীব জামান ভাইকে লেবুর শরবত পান করতে হলো। শ্বাসরুদ্ধকর ‘অতিরিক্ত সময়’ শুরু হলো। উভয় দলই একটি করে গোল করলো। মেসি একটি পেনাল্টিসহ মোট দুটি গোল করলো। কিন্তু ফ্রান্সের তো রয়েছে এমবাপ্পা, সে সমুচিতভাবেই হ্যাটট্রিক করলো। এটাই কি বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা ফাইনাল? পেনাল্টি শুট আউট শুরু হলো। একমাত্র তানভীর চৌধুরী ভাই জয়ের বিশ্বাসে অবিচলভাবে স্থির হয়ে আছেন। সাঈদুর রহমান ঘোষণা দিয়ে বসলো সে পেনাল্টি শুট আউট দেখবে না। সুজন নূরে আলম ভাই, গোলাম সারোয়ার সবুজ, জামিল লিমন- এদের প্রত্যেকের হৎপিণ্ড যেন কণ্ঠে এসে ঠেকেছে। ব্রাজিল সমর্থক ফাহাদ আক্তার ভাই চাচ্ছেন আর্জেন্টিনা জিতুক, কেননা তারা ভালো খেলেছে। এ মুহুর্ত থেকে আজকের খেলায় কেবলমাত্র একজনই হিরো হয়ে থাকবে, সেটা হচ্ছে যে কোন একটি দলের গোলরক্ষক। এমি মার্টিনেজ নিরাশ করলো না। মুহূর্তের মধ্যে সে-ই হয়ে উঠলো আর্জেন্টিনা! বিশ্ব গোলার্ধ জুড়ে সে-ই পরিণত হয়ে গেল আর্জেন্টিনীয় সমর্থকদের প্রতীকে। (তার জন্যই) আর্জেন্টিনা জিতে গেল, বিশ্ব ফেটে পড়লো।

ছত্রিশ বছরের ভগ্ন হৃদয়ের ব্যথা, বেদনা, হতাশা, নিরাশা, নিমেষে সবকিছুর অবসান হয়ে গেল। জোবায়ের আলমের সাথে গত বিশ বছর ধরে ফুটবল নিয়ে আলাপচারিতা, সকলের নিরঙ্কুশ ও অটল সমর্থন, সবকিছুই প্রতিপাদিত হলো এ জয়ের মাধ্যমে। সকল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, ঠাট্টা-উপহাসের জবাব দেয়ার সময় বুঝি এলো, কিন্তু আমার অনুভূতি কেবলই আবেগের পরিতৃপ্তির, কেবলই নিবৃত্তি ও স্বস্তির, সীমাহীন আনন্দের। লিওনেল মেসি, তোমাকে ধন্যবাদ, আমার জন্য এ আনন্দধারা বয়ে আনার জন্য। ধন্যবাদ, বত্রিশ বছরের এই পথ পরিক্রমণকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য। আমি ভিন্ন ভিন্ন যুগের খেলোয়াড়দের নিয়ে তুলনা করার পক্ষে নই, তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে ২০০৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত তোমার খেলা দেখাটা আমার জন্য ছিল এক অবিমিশ্র আনন্দানুভূতি। তোমার আগমনের আগেও আমি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিয়েছি, তোমার পরেও দিতে থাকবো, কিন্তু (অনুভূতিটা) একই রকম থাকবে না। সেই শৈশব থেকে আজকের এই পরিণত বয়স পর্যন্ত একজন ফুটবল অনুরাগী হিসেবে আমার বত্রিশ বছরের পথ পরিক্রমা যেন আজ পূর্ণতা পেল, হতাশা থেকে সিদ্ধিতে পরিণত হলো। এর অতিরিক্ত সব কিছুই হবে বোনাস। এটাই হবে বিশ্বকাপ নিয়ে আমার লেখা একমাত্র পোস্ট।

লিওনেল মেসি, বয়, ইউ আর স্পেশাল!

মূলঃ আদনান আহসান খন্দকার
রিজাইনা, সাচকাচুয়ান, কানাডা
১৮ ডিসেম্বর ২০২২

ভাষান্তরঃ খায়রুল আহসান
ঢাকা, বাংলাদেশ
২০ ডিসেম্বর ২০২২

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৩

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

তিন তারার একদলই আছে 'আর্জেন্টিনা।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৪

শেরজা তপন বলেছেন: ছোট্ট একটি পোস্ট কিন্তু ৩২ বছরের পরিক্রমা করে আসলাম!
আপনার ছেলের অনুভূতি যেন আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আপনার ছেলের অনুভূতি যেন আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ" -এই একাত্মবোধের কথা জেনে ভালো লাগল। লেখায় একজন ফুটবলভক্ত সমর্থকের অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
১৯৯০ সালে ফাইনাল দেখে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছিলাম ঠিকই কিন্তু পরক্ষনে মনটাও খারাপ হয়ে যায়।
আপনার ছেলের বয়স আর আমার বয়স এক। একজন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার আরেকজন ব্রাজিল। কিন্তু আবেগ এক।


অসাধারণ লেখা পড়লাম। আমি আমার বিশ্বকাপ দর্শন নামে লেখা রেডি করছি। একদিন পোস্ট করবো।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: "একজন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার আরেকজন ব্রাজিল। কিন্তু আবেগ এক" - এ আবেগ হওয়া উচিত ভালবাসার আবেগ, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ আবেগ অনেক সময় আমাদের দেশে শত্রুতায় এবং জিঘাংসায় পরিণত হয়ে যায় এবং প্রাণহানি ঘটায়।

লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ, মন্তব্যে প্রাণিত হ'লাম। আপনার বিশ্বকাপ দর্শন নামে লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার অনুভূতির দুর্দান্ত বর্ণনা! আপনার ভাষান্তরের গুনে অনেক আকর্ষণীয় হয়েছে।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আপনার ভাষান্তরের গুনে অনেক আকর্ষণীয় হয়েছে" - আসলে আমার মনে হয়, অনুবাদের চেয়ে মূল লেখাটাই বেশি আকর্ষণীয়, কারণ আবেগটা সেখানে মৌলিক।
প্রেরণাদায়ক মন্তব্য এবন প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। +

৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:২৭

রানার ব্লগ বলেছেন: আর্জেন্টিনা ও ফুটবলে আমার জার্নীটা আপনার ছেলের সাথেই আছে । পার্থক্য সে এখন প্রবাসী আমি দেশেই আছি কিন্তু অনুভূতি একে বারে এক রকম !!!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রবাস কিংবা দেশ, যেখানেই থাকা হোক না কেন, সমর্থকদের আবেগ অনুভূতিটা একই রকম থাকে। মন্তব্যে আপনার সমর্থনের কথাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:২৮

জুল ভার্ন বলেছেন:
চমতকার লেখনী, অসাধারণ সুন্দর অনুবাদ নয়, অনুভবের বহিঃপ্রকাশ! নস্টালজিকতা আমাদের বয়সী লোকদের একটা রোমান্টিকতাও বটে। স্মৃতিবিধুরতার ক্ষেত্রে সাধারণত কাছের মানুষের স্মৃতিই ঘুরেফিরে চলে আসে। এটি সামাজিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলে। স্মৃতিবিধুরতার সময় মাঝে মাঝে একাকিত্বের অনুভূতি চলে আসে কিন্তু এই ধরনের অনুভূতি কাছের সম্পর্কগুলো মজবুত করে তোলে। তাসত্ত্বেও একাকিত্ব মানুষকে স্মৃতিবিধুরতার দিকে নিয়ে যায় যা প্রকৃতপক্ষে সামাজিক সহযোগিতার অনুভূতি দৃঢ় করে।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: "নস্টালজিকতা আমাদের বয়সী লোকদের একটা রোমান্টিকতাও বটে" - সেটা বেশ বুঝি।
চমৎকার মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন স্যার। নস্টালজিয়ায় ভরপুর, আবেগময় লেখা।

১৯৯০ এর ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি ম্যাচটা ছিল একপেশে, পুরো ৯০ মিনিটই জার্মানরা বল চাপিয়ে রেখেছিল আর্জেন্টিনার ডি-বক্সের ৪ পাশে। কিন্তু, জার্মানি একটা পেনাল্টি পেয়ে যায়, যেটি ছিল বিতর্কিত। জার্মানি এত ভালো খেলা সত্ত্বেও বিতর্কিত পেনাল্টির জন্য তাদের জয়টা নিষ্কলুষ হয় নি। এখানেই শেষ না, রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজিয়ে নিজেই যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল, তা ম্যাচটাকে আরো বিতর্কিত করে ফেলে।

১৯৯০-এ ম্যারাডোনার একটা ফ্লায়িং কিক গোল ছাড়া বাকিটা সময় নিতান্তই নিস্প্রভ ছিল। আর্জেন্টিনার লেগ পর্ব মোটেও সুবিধার ছিল না। ১ম ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হারে ০-১ গোলে। সোভিয়েট ইউনিয়ের সাথে ২-০ জিতে, রোমানিয়ার সাথে ১-১ ড্র করে গ্রুপে ৩য় হয় এবং ১ নাম্বার সেরা ৩য় স্থান অধিকারী হয়ে ২য় রাউন্ডে যায় এবং সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ১-০ তে হারায়, যে খেলাটা আমি দেখতে পারি নি :( সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি-ফাইনালে টাই ব্রেকারে জিতেছিলে এক দুর্দান্ত গোল কিপারের কারণে, আপনি যদি খেলাগুলো দেখে থাকেন (স্যার আমি ১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে ৩টা ম্যাচ লাইভ দেখতে পারি নি - ১৯৯০ এর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা আর এবার ২টা, একটা ইচ্ছা করে দেখি নাই, আরেকটা শিডিউল ভুল করায় :) )

এবারের ফাইনাল ম্যাচের মতো শুধু ফাইনাল না, চূড়ান্ত পর্বের কোনো ম্যাচই এত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল বলে মনে হয় নি। কমেন্টেটরগণ বার বার রিপিট করছিলেন, শিউরলি দ্য গ্রেটেস্ট ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ এভার। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্সও ১৯৯০ থেকে ২০০২ পর্যন্ত এবারের ফাইনালের ম্যাচটাতেই সেরা পারফরম্যান্স।

জয়-পরাজয়ের হিসাবে একটা টিমকে তো বিজয়ী হতেই হবে, তবে, সার্বিক ভাবে এবার আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স দুদলই জিতেছে এবং সর্বোপরি জয় হয়েছে ফুটবলের।

শুভেচ্ছা রইল স্যার।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: "কমেন্টেটরগণ বার বার রিপিট করছিলেন, শিউরলি দ্য গ্রেটেস্ট ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ এভার" - আমিও তাদের সাথে শতভাগ একমত।

"বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্সও ১৯৯০ থেকে ২০০২ পর্যন্ত এবারের ফাইনালের ম্যাচটাতেই সেরা পারফরম্যান্স" - আপনার এ কথাটার সাথেও একমত। সঠিক বলেছেন।

তা ছাড়া এ কথাটা না বললেই নয় যে এই বিশ্বকাপের সুষ্ঠু আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাগতিক দেশ হিসেবে কাতার এর দৃঢ় পদক্ষেপ এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনাও বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে, কিছু নিন্দুকের ছাড়া।

অনেক ধন্যবাদ পোস্ট পাঠোত্তর মন্তব্যে অংশ গ্রহণের জন্য।

৮| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: কি সুন্দর সহজ সরল করে আবেগময় লেখা লিখলেন।
হৃদয় স্পর্শ করলো।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রীত হ'লাম, আপনার এ অনুভূতির কথা জেনে। অনেক ধন্যবাদ।

৯| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৫

বাকপ্রবাস বলেছেন: ম্যারাডোনা ডোপ টেষ্টে পড়ে খেলার ইতি হল, অতৃপ্তি ছিল তাকে নিয়ে, তার খেলার শেষটা আর দেখা হলনা। মেসির ব্যাপারে পক্ষে বিপক্ষ্যে গোটা দুনিয়া যেন এক ছিল, সবাই চাইছিল কাপটা সে পাক। ম্যারাডোনার খেলা দেখতে না পারার অতৃপ্তিটা মেসি পুষিয়ে দিল যেন।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্ট পাঠোত্তর সুন্দর মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

১০| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ব্রাজিল একবার বিশ্বকাপ জিতে ছিলো মনে হয় রোনালদো তখন তাদের নামকরা খেলোয়াড ছিলো। আর তখন আমিও প্রবাসে ছিলাম । সেই দেশে ব্রাজিলের তেমন সমর্থন ছিলো না তাই তেমন শোরগোল হয়নি। এইবার পেপারে দেখলাম খেলাকে কেন্দ্র করে পনরজন মারা গিয়েছে বেশীর ভাগ বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে খেলার উম্মাদনায়। আমাদের দেশের মানুষ এতই ফুটবল খেলা পাগল।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে শোরগোলে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। দরিদ্র এ দেশের সাধারণ জনগণের জন্য বিনোদনের খুব একটা ব্যবস্থা নেই। তাই তারা সুযোগ পেলেই কোন একটা কিছুকে উপলক্ষ করে শোরগোল করে। তা করতে দিন। এক সময় ঠিক হয়ে যাবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় এত খুশি হয়েছি, বহুকাল এমন খুশি হই নি। ১৩ বছর বয়স থেকে আর্জেন্টিনা সমর্থন করি। ‘১৪ সালের হতাশা ‘২২ এ কাটিয়ে দিল। মেসি বিশ্বকাপ না জিতলেও গ্রেট থাকত। এখন তো সিল মারাই হয়ে গেছে সে গ্রেট। ৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষ। এখন বলা যাবে জীবদ্দশায় আর্জেন্টিনার কাপ নেওয়া দেখতে পেলাম।

গ্রেট ম্যারাডোনা বেঁচে থাকলে ভালো হতো।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: "১৪ সালের হতাশা ‘২২ এ কাটিয়ে দিল" - এ কথাটা আপনার মত আপনার বয়সী হাজার হাজার তরুণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে মনে করি।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৪৬

নীলসাধু বলেছেন: বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি।
আমার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ ম্যারাডোনার সেই বিখ্যাত বিশ্বকাপ। ১৯৮৬। তারপর ৯০ এ নানা কাহিনী। তারপরতো অপেক্ষার পালা।
এবারের ফাইনাল দেখেছি আমি।
আমি নিজে ব্রাজিলের সমর্থক। কিন্তু ম্যারাডোনা বা মেসি তাদের প্রতিভা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারা গ্রেট প্লেয়ার। এমন খেলোয়াড় বছর পর বছর একজন আসে।এই বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য বিশেষ একটি ঘটনা।
অভিনন্দন রইলো।

আনন্দম।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১১

খায়রুল আহসান বলেছেন: "কিন্তু ম্যারাডোনা বা মেসি তাদের প্রতিভা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারা গ্রেট প্লেয়ার। এমন খেলোয়াড় বছর পর বছর একজন আসে" - এটাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী। এভাবেই 'গ্রেট'দেরকে দেখতে হয়, তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৫৭

বিটপি বলেছেন: আমি আর্জেণ্টিনার ডাই হার্ড সমর্থক ছিলাম ২০১৪ পর্যন্ত। সেই পর্যায়ে এসে আমার মনে হয়েছিল আর্জেন্টিনার আসলে যোগ্যতাই নেই চ্যাম্পিয়ন হবার। এই দেশের মানুষ হুদাহুদিই লাফায়। কিন্তু ২০২২ সালে এসে যে লেভেলের ডেডিকেশন, কনফিডেন্স, হার না মানার মানসিকতা লক্ষ্য করলাম, তাতে এদের জন্য কাপ না জেতার কোন কারণই নেই। তবে ফাইনাল খেলায়ও আর্জেন্টিনার যথেষ্ট ভুল দেখেছি। ৮১ মিনিটে পেনাল্টি খাওয়ার পর আর্জেন্টিনার উচিৎ ছিল পুরোপুরি ডিফেন্সিভ মুডে চলে যাওয়া। তা না করে এম্বাপ্পেকে সুযোগ দিয়েছে পুরোপুরি ফাঁকার মধ্যে গোল করে খেলায় সমতা ফেরানোর।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টে এসে আপনার মতামত এখানে তুলে ধরার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:৪৬

সোহানী বলেছেন: বুঝলাম বাবা ছেলে সব আর্জেন্টিনার ভক্ত ;)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিকই বুঝেছেন।
আপনার বাসায় কে কার ভক্ত?

১৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গোটা লেখাটা পড়ে উপসংহারে আমার এটাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আর্জেন্টিনা সহ বিশ্ববাসীর পক্ষে মধুরেণ সমাপয়েৎ। চমৎকার অনুভূতি শেয়ার করেছেন। স্যার আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম ওপারে আপনারা মারাদোনাকে যেভাবে কষ্ট করে ম্যারাদোনা বলেন যে শুনতে ভালো লাগে না। যাইহোক এবার আমরা মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে মনোপ্রাণে বিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু এমবাপে যে খেলা দেখিয়েছেন তাতে হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আমরা আশাবাদী হয়ে বলতেই পারি, আগামীতে আমরা আরও এক রাজপুত্র পেয়ে গেলাম।
শুভেচ্ছা স্যার আপনাকে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: "গোটা লেখাটা পড়ে উপসংহারে আমার এটাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আর্জেন্টিনা সহ বিশ্ববাসীর পক্ষে মধুরেণ সমাপয়েৎ" - অবশ্যই আপনার এ ইচ্ছেটা যুক্তিযুক্ত। চ্যাম্পিয়ন দল এবং আয়োজক দেশ, এ দুয়ের জন্য বিশেষ করে কথাটা যথোপযুক্ত।
এমবাপে'র জন্য আমারও শুভকামনা রইলো। নিকট ভবিষ্যতে সে বিশ্বফুটবলের বরপুত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে, এ আশাটা অত্যাশা নয়।
সুন্দর মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

১৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৫৩

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: ১৯৯০ এর বিশ্বকাপের স্মৃতি আমার অতটা মনে নেই, কিন্তু ১৯৯৪ এ প্রথম ম্যাচে গ্রীসের সাথে ৪-০ গোরে জেতার পর ম্যারাডোনার ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। কলম্বিয়ার এন্ড্রে এসকোবার আত্মঘাতী এক গোল করে দেশে ফেরার পর গুপ্তঘাতকের গুলিতে নিহত হবার খবরটিও মনে দাগ কেটে ছিল। ফাইনালে রবার্টো ব্যাজিও দের টাইব্রেকারে হারটিও অনেক কষ্ট দিয়েছিল। পরবর্তী বিশ্বকাপ গুলি ফলো করে গেছি। এখন যদিও আর সেই ডাই হার্ড টাইপ সাপোর্টার নই, তবে অন্য সবার মতো চাচ্ছিলাম এই বিশ্বকাপটা মেসি জিতুক ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্ট পড়ে আপনার ফুটবল স্মৃতি এখানে তুলে ধরার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত হ'লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.