![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
প্রাক-কথনঃ আমার এই লেখাটির প্রসঙ্গ এর ঠিক আগের পোস্টটাতে কথা প্রসঙ্গে চলে এসেছিল। পোস্টের মন্তব্যে কয়েকজন পাঠক আমার এই লেখাটিও পড়তে চেয়েছেন। যেহেতু লেখাটি এর আগে ব্লগে প্রকাশ করা হয় নাই, আজ তাদের অনুরোধে লেখাটি এখানে প্রকাশ করলাম। যারা অনুরোধ করেছিলেন, আশাকরি তারা এতে সন্তুষ্ট হবেন।
একটানা বেশ কয়েকদিন টানা গরমের পর গত দু’দিন ধরে কখনো হাল্কা কখনো ভারী বৃষ্টি হবার কারণে আবহাওয়াটা অসহনীয় থেকে সহনীয়, এমনকি রাতে আরামদায়ক পর্যায়েও নেমে এসেছে। বৃষ্টির কারণে আজ জুম্মার নামাযের সময় ছাতা নিয়ে যেতে হয়েছিল। আমি পারতপক্ষে মসজিদে ছাতা-টাতা নিয়ে যেতে চাই না, কারণ এগুলো চুরি যাওয়া থেকে সামলানো বিষম দায়। মাত্র ছয় মাস আগে এই জুম্মার দিনেই মসজিদ থেকে আমার প্রায় নতুন আইফোনটি পকেটমারের কাছে খুইয়ে আমি রীতিমত বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম। যাহোক, নামাযের উদ্দেশ্যে নীচে নেমে দেখি বেশ জোরেই বৃষ্টি হচ্ছে; ছাতা ছাড়া যাওয়াই যাবে না। কেয়ারটেকার একটা ছাতা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘স্যার যান’। আমি ছাতাটা নেব কি নেব না, দোটানায় পড়ে গেলাম। তাকে বললাম, “এই ছাতার নীচে তো দু’জন অনায়াসে যাওয়া যাবে। তুমি আমার সাথে চলো, আমাকে মসজিদে পৌঁছে দিয়ে (চার মিনিটের হাঁটা পথ) তুমি ছাতা নিয়ে চলে এসো। ফেরার সময় আমি যেভাবে পারি, আসবো”। সে জানালো, নীচে আর কেউ নেই, সবাই নামায পড়তে চলে গেছে। অগত্যা ছাতাটা নিজের হাতে নিয়েই রওনা হ’লাম।
নামাজ শেষে সুন্নত না পড়েই ছাতাটা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম, কারণ ছাতা বিষয়ক দুশ্চিন্তা আমার নামাযে মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। ছাতাটা সেই কেয়ারটেকারকে ফেরত দিয়ে আমি লিফটের দিকে যেই না পা বাড়ালাম, সে বলে উঠলো, “স্যার, এ ছাতাটা আমার নয়”। তার এ কথা শুনে আমি রীতিমত বেকুব বনে গেলাম। আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া দেখে সে বললো, “স্যার ছাতাটা আপনি কোথায় রেখেছিলেন”? আমি তাকে জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম। সে বললো, “আপনি একটু নীচে দাঁড়ান, আমি এক দৌড়ে গিয়ে একটু দেখে আসি”। একটু পরেই সে ফিরে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, “পাইছি স্যার”। আমি ভালো করে দেখলাম, সে তো আমাকে এ ছাতাটাই দিয়েছিল; আমি তো এ ছাতাটাই নিয়ে গিয়েছিলাম। আর ওর এ ছাতাটা আসলেই খুব সুন্দর। আমি যেটা এনেছিলাম, সেটাও এর কাছাকাছি, তবে এতটা ভালো ছিল না। আমি বললাম, “কোথায় পেয়েছো”? সে বললো, “আপনি যেভাবে বলেছিলেন, সেখানেই। সেখানে আপনার আনা ছাতাটা রেখে দিয়ে আমারটা আমি নিয়ে এসেছি”। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, কিন্তু মনে মনে একটা দুশ্চিন্তা রয়ে গেল, আমি যার ছাতাটা ভুলে এনেছিলাম, তিনি তারটা খুঁজে না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন নি তো? কেয়ারটেকার বললো, “স্যার, অনেক মানুষ এখনো নামায পড়ছে। যার ছাতা, তিনি নামায শেষে একই জায়গায় খুঁজলে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন”। আসরের নামাযের সময় মসজিদের খাদেমের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আজ জুম্মার নামাযের পর কেউ তার নিজের ছাতাটি খুঁজে পাননি, এমন অভিযোগ করেছেন কিনা। তার নেতিবাচক উত্তর পেয়ে মনে কিছুটা স্বস্তি লাভ করলাম।
বিকেল থেকেই আকাশটা ঝিরিঝিরি ঝরছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জল পড়ার শব্দ শুনছিলাম। নীচে নিম গাছের বৃষ্টিস্নাত সবুজ, সজীব পাতারা একটু একটু করে দোলা খাচ্ছিল। বৃষ্টিভেজা বাতাস শরীরে শীতল পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল। সামনের বিল্ডিং এর ছাদের কিনারে বসে দুটো পায়রা চঞ্চল হয়ে ওড়াউড়ি করছিল। বছর কয়েক আগে ইমারতটি যখন নির্মাণাধীন ছিল, তখন দেখতাম সন্ধ্যের পর থেকে কোথা থেকে যেন দুটো পেঁচা এসে আমাদের বাসার দিকে মুখ করে সেই ছাদের কিনারে এমনভাবে বসে থাকতো যে দেখে মনে হতো ওরা আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছে। সে সময়ে মাঝরাতে উঠেও আমি কোন কোন রাতে এভাবেই ওদেরকে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকা দেখেছি। দণ্ডায়মান গাছগুলোতে ভেজা কাক-পক্ষী আড়ষ্ট হয়ে বসে ছিল। যদিও ওদের দুর্দশা দেখে কেমন যেন একটু মায়া হচ্ছিল, তথাপি মনে হচ্ছিল যে অতীষ্ঠ গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ নিয়ে হাঁপানোর চেয়ে ওরা এ অবস্থাতেই যেন ভালো ছিল।
শয্যা গ্রহণের আগে প্রতি রাতে একবার ব্যালকনিতে এসে আমি আকাশটাকে দেখে নেই। শুক্লপক্ষের পূর্ণিমার জ্যোৎস্না স্নাত আকাশ আর কৃষ্ণপক্ষের ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশ, দুটোই আমাকে সমভাবে আকর্ষণ করে। আমাদের বাসাটা বিমান বন্দরের কাছাকাছি হওয়াতে কয়েক মিনিট পরে পরেই আকাশে উড়োজাহাজের আনাগোনা দেখতে পাই। আকাশে উড়ন্ত চিলকে কিংবা দল বেঁধে ওড়া পাখিদেরকে দেখতে যেমন আমার ভালো লাগে, তেমনি উড়ন্ত প্লেনকে দেখতেও আমার খুব ভালো লাগে। প্লেনের যাত্রীদেরকে নিয়ে, ককপিট ও কেবিন ক্রুদের নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে। আমাদের সামনের আকাশটা দিয়ে সাধারণতঃ টেক-অফ করা প্লেনগুলো উড়ে যায়। ল্যান্ডিং প্রত্যাশী প্লেনগুলো সাধারণতঃ আশুলিয়া, দিয়াবাড়ি ইত্যাদি এলাকার উপর দিয়ে ল্যান্ডিং এ্যাপ্রোচ করে। সাধারণতঃ টেক-অফ করা প্লেনের যাত্রীদের মন খারাপ থাকে, কারণ তারা স্বজনদেরকে দেশে রেখে প্রবাসে পাড়ি জমায়। ল্যান্ডিং করা প্লেনের যাত্রীরা সাধারণতঃ স্বজনদের সাথে মিলিত হবার আশায় কিছুটা আনন্দে, আর ল্যান্ড করার পর যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে কিছুটা উৎকণ্ঠায় থাকে। প্রথমোক্ত যাত্রীদের এবং তাদের স্বজনদের কথা ভেবে আমার মনে সমবেদনা জাগ্রত হয়।
রাতের আকাশ দেখার সময়, বিশেষ করে তখন যদি বৃষ্টি হতে থাকে, আমার প্রায়ই ক্ববরবাসীদের কথা মনে হয়। মাঝে মাঝে ক্ববরস্থান ভিজিট করা আমার একটা ‘হবি’ বলা চলে। এমনকি বিদেশে কোথাও বেড়াতে গেলেও সেখানকার কোন একটি ক্ববরস্থানে যেতে আমি চেষ্টা করি। যেমন গিয়েছি মেলবোর্নের ‘Bunorong Memorial Park’ এ, তেমনি গিয়েছি কানাডার রিজাইনাতে অবস্থিত ‘রিভারসাইড মেমোরিয়াল পার্ক সিমেট্রি’ তে এবং তেমনই গিয়েছি আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের টাম্পা বে তে অবস্থিত ‘স্কাইওয়ে মেমোরিয়াল গার্ডেন্স’ এ। ভিন্ন নামে, ভিন্ন স্থানে এগুলো সবই একেকটা ক্ববরস্থান, যেখানে মুসলিম ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদেরকে ক্ববর দেয়া হয় এবং মৃত্যুর পরে তারা সেখানে ‘শান্তি’তে সহাবস্থান করে। সমাধিলিপি আমাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। স্মৃতিফলকের প্রতিটি কথায় আমি ভালবাসার ছোঁয়া অনুভব করি। বিদেশের সিমেট্রিগুলোতে আমি মানুষের ক্ববরের পাশাপাশি তার পোষা প্রাণীটিরও (বিশেষ করে প্রভুভক্ত কুকুরের) ক্ববর দেখেছি, যেখানে অত্যন্ত আবেগময় ভাষা দিয়ে তার জন্য এপিটাফ লেখা হয়ে থাকে। স্বভাবমত আজও আমি শোবার আগে আকাশ দেখার জন্য ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে বৃষ্টি মুষলধারে ঝরা শুরু করেছে। আমার মনে পড়ে গেল আমার দেখা দেশ বিদেশের অনেক, অনেক ক্ববরস্থানের কথা, আমাদের পারিবারিক ক্ববরস্থানের কথা যেখানে আমার মা-বাবা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফি এবং তাদের পূর্বপুরুষেরা সমাহিত আছেন। এ ছাড়াও মিরপুর বুদ্ধিজীবি ক্ববরস্থানের কথা, মিরপুর ১০ নম্বর ও শেওরাপাড়ার ক্ববরস্থানের কথা, রংপুরের নূরপুর ক্ববরস্থানের কথা, লালমনিরহাটের হাড়িভাঙ্গা গ্রামের দরগাহপারের ক্ববরস্থানের কথা, উত্তরার আশকোনার অদূরে একটি ক্ববরস্থানের কথা। এসব ক্ববরস্থানে আমার অনেক আত্মীয় স্বজন শায়িত আছেন। এ ছাড়া বনানী ক্ববরস্থানের কথা, এমনকি বিএমএতে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে কুমিল্লার বরুরায় রাতের আঁধারে এমনই একটা বৃষ্টি ঝরা রাতে ট্রেঞ্চ খোঁড়ার সময় একটি কাঁচা ক্ববরের কথা মনে পড়ে গেল! শেষোক্ত ক্ববরটির এবং ক্ববরবাসীর কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। অনুমান করলাম, এসব ক্ববরের গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে হয়তো এখন জোনাকি পোকারা আলো দিয়ে যাচ্ছে। কোনটা হয়তো শান্তির ক্ববর, আবার কোনটা শাস্তির। আকাশের উপহার এই বৃষ্টির জল কি তাদের দেহাবশেষকে এখন ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে? জানা অজানা, চেনা অচেনা সকল ক্ববরবাসীর কথা ভেবে মনের ভেতর থেকে তাদের জন্য শান্তি কামনায় দোয়া উচ্চারিত হতে থাকলো। এক সময় ভারাক্রান্ত মনটা একটু হাল্কা বোধ করলে ব্যালকনির দরজায় তালা লাগিয়ে শয্যা গ্রহণ করলাম।
ঢাকা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শব্দ সংখ্যাঃ ৯৮০
এর আগের প্রাসঙ্গিক পোস্টঃ লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: একেবারে নিশ্চিত হবার তো কোন উপায় নেই। তাই বিশ্বাস এবং বিশ্বাস পরবর্তী অনুমান নির্ভর এ ধারণা।
মৃত্যুভাবনা নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হবার কোন কারণ নেই, কারণ এ অমোঘ পরিণতি এড়াবার কোন উপায় নেই। এখন ট্রেন একদিকে ছুটছে। মৃত্যুটা একটা জাংশন স্টেশন। এ স্টেশন থেকে হয়তো ট্রেনটা অন্যদিকে ছুটবে। একমাত্র ভরসা ভালো কাজ করা, কারণ ভালো কাজের পরিণতি কোনদিন মন্দ হতে পারে না।
আপনার 'মানসিক পেরেশানি'র আশু অবসান হোক, এ শুভকামনা রইলো।
"সে কারণেই ব্লগে একেবারে অনিয়মিত হয়ে গেছি। সবার পোস্ট পড়ে মন্তব্য করা হয় না কিংবা নিজের পোস্টের মন্তব্যের উত্তর দেয়া হয়না সময়মত" - এটা আমি ঠিকই লক্ষ্য করেছি। এমন না হলে তো আপনার ব্লগ-বাগানে আরও ঘন ঘন বর্ণিল ফুল ফুটতো।
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: মিরপুর শ্যাওড়া পাড়া কবরস্থান অনেক ছোট।
আমাদের দেশে কবরস্থানে ফুল দেওয়া হয় না। শুধু কবর জিয়ারত করা হয়। ইউরোপ আমেরিকার কবর গুলোতে মানুষ ফুল দেয়। কিন্তু তাজা ফুল নয়। প্লাস্টিকের ফুল।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: "মিরপুর শ্যাওড়া পাড়া কবরস্থান অনেক ছোট" - সঠিক। আগে তো দানশীল ব্যক্তিদের দান করা জায়গা জমিতে কবরস্থান বানানো হতো। পরে পর্যায়ক্রমে এগুলো পৌরসভার অধীনে চলে আসে। দানকারী ব্যক্তিদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগুলোর আকার নির্ভর করতো।
এখন আমাদের দেশের কবরস্থানেও ফুল দেওয়া হয়; তবে সবসময় এবং সবগুলোতে হয়তো নয়।
আমি স্বচক্ষে দেখেছি, ইউরোপ আমেরিকার কবরগুলোতে মানুষ তাজা ফুলও দেয়, আবার প্লাস্টিকের ফুলও দেয়।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮
শেরজা তপন বলেছেন: আমি সেইভাবে বলিনি।
প্রথমত; শেষ বিচার হলে কেন কবরে আজাব বা শান্তি দুটোই হবে? ফের বলা হচ্ছে; কেয়ামতের দিন সব কবরবাসীর ঘুম ভেঙ্গে যাবে ( যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা নত করে দিবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিবে।)
আরবি কিয়াম শব্দ থেকে কেয়ামত। এর অর্থ উঠে দাঁড়ানো।
(সুরা জুমার: ৬৮) প্রথম ফুঁৎকারে আকাশ ফেটে যাবে, তারকাসমূহ খসে পড়বে, পাহাড়-পর্বত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে তুলার মত উড়তে থাকবে। সকল মানুষ ও জীব-জন্তু মরে যাবে, আকাশ ও সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁৎকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যত জীবের সৃষ্টি হয়েছিল, তারা সকলেই জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে।
আমার ধারনা কবরের আজাবের ধারনা সঠিক নয়। এই নিয়ে বাংলাদেশে 'আরজ আলী মাতব্বর' সর্বপ্রথমসিরিয়াসলি আলোচনা করেন।
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব আদম সন্তানকে সেদিন কেয়ামতের ময়দানে একত্রিত করা হবে; সবাই তাদের রবের অভিমুখী থাকবে, তখন আর তাদের কোনোকিছুই গোপন থাকবে না। সেই দিনটি হবে খুবই ভয়ংকর, দুশ্চিন্তা ও কষ্টের; তারা নিজ নিজ কবর থেকে খাতনাবিহীন, খালি পা ও বস্ত্রহীন অবস্থায় দাঁড়াবে।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: যথার্থ উদ্ধৃতিসহ আপনার এ বিশ্লেষণ এর জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১২
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার লেখাটি নিছক একটি বর্ষণমুখর দিনের বর্ণনা নয়—এটি এক গভীর আত্মমগ্ন, ভাবনাপ্রবণ হৃদয়ের অন্তর্দর্শনের জানালা। দৈনন্দিন ঘটনার ছায়ায় আপনি একদিকে যেমন সময়ের অনুচ্চারিত ক্ষণগুলোকে ছুঁয়ে গেছেন, অন্যদিকে স্মৃতি, কল্পনা ও আধ্যাত্মিক ভাবনায় পাঠককে নিয়ে গেছেন এক গভীর অনুভূতির জগতে।
ছাতা-সংক্রান্ত ছোট্ট বিপত্তি থেকে শুরু করে মৃতদের জন্য দোয়া পর্যন্ত লেখার আবেগীয় ভ্রমণটি চমৎকারভাবে প্রাঞ্জল, আন্তরিক ও মননশীল। লেখার পরতে পরতে একধরনের মানবিকতা ও হৃদয়ের গভীরতা মেলে ধরে। সংক্ষেপে বলা যায়, এটি এক স্নিগ্ধ, ধ্যানী মনের বৃষ্টিভেজা দিনলিপি।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: এত সুন্দর একটি মন্তব্য যে কোন পোস্টের জন্য একটি অমূল্য অলঙ্কার। + +
অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
"ছাতা-সংক্রান্ত ছোট্ট বিপত্তি থেকে শুরু করে মৃতদের জন্য দোয়া পর্যন্ত লেখার আবেগীয় ভ্রমণটি চমৎকারভাবে প্রাঞ্জল, আন্তরিক ও মননশীল। লেখার পরতে পরতে একধরনের মানবিকতা ও হৃদয়ের গভীরতা মেলে ধরে। সংক্ষেপে বলা যায়, এটি এক স্নিগ্ধ, ধ্যানী মনের বৃষ্টিভেজা দিনলিপি" - ভাবনাগুলো দিনব্যাপী বিচ্ছিন্ন ছিল। সেগুলোকে এক বসায় একই সূত্রে গ্রথিত করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৯
সামিয়া বলেছেন: পুরো লেখাটি পড়লাম। খুব ভালো লেগেছে। কবরস্থান আমার কাছে ভীষণ মিস্টেরিয়াস লাগে, এটি যত জনবহুল পাবলিক প্লেসে কবরস্থান হোক না কেন ঠিক ওই জায়গাটা এত নিস্তব্ধ নিরব হয়ে থাকে আমি সবসময় অবাক হয়ে যাই। ঠিক ওই জায়গাটার আবহাওয়াই অন্যরকম থাকে বলে বোঝাতে পারবো না। ওখানে অন্ধকার বেশি ওখানে নীরবতা বেশি ওখানে ঠান্ডা বেশি ওখানে স্তব্ধতা বেশি ওখানে বাতাস ভারী বেশি এটা আমার ব্যক্তিগত ফিলিংস। বনানী কবরস্থান দিন দিন এত গর্জিয়াস বানিয়ে ফেলছে। আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: "ওখানে অন্ধকার বেশি ওখানে নীরবতা বেশি ওখানে ঠান্ডা বেশি ওখানে স্তব্ধতা বেশি ওখানে বাতাস ভারী বেশি এটা আমার ব্যক্তিগত ফিলিংস" - সে কারণেই বোধকরি সেখানে জোনাকি পোকারা বেশি করে দল বেঁধে নীরবে আলো জ্বালিয়ে যায়, এটাও আমার একটি ব্যক্তিগত ধারনা। কবরস্থান আর আমাদের দেশের রেল লাইনের পাশের ঝোপ ঝাড়ে জোনাকি পোকারা অধিক সংখ্যায় বিচরণ করে বলে আমি লক্ষ্য করেছি। যে স্থান যত বেশি অন্ধকার এবং নীরব, সে স্থান এ ক্ষুদ্র পতঙ্গদের তত বেশি পছন্দের বলে আমার ধারণা।
এ পোস্ট পড়ার জন্য আগ্রহ আপনিই প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। পোস্টে এসে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৬| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৭
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: আমার মনে হয় কবরস্থান সবার ই মাঝে মাঝে যাওয়া উচিত। আমি নিজেও যাই, বড় কোন কবরস্থান থাকলে। এতে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, আত্ন-অহংকার, হিংসা-গরিমা কিছু সময়ের জন্য কমে যায়। যখন কবরের নাম ফলক গুলি পড়ি এখানে শায়িত আছেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্যাদি। একদিন পরিচিত এক ডাক্তার আংকেল কে দেখলাম, দিন-দুপুরে ওনার মায়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল কুরআন শরীফ পাঠ করছেন। বিষয়টি দেখে মনে খুব দাগ কেটেছিল। কত ভাগ্যবান ওনার মা!!!
মালয়েশিয়াতে কেপং এ একটা চাইনিজ সিমেট্রি দেখতাম অনেক বড়, কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নাই। রাতের বেলা এর পাশ দিয়ে আশা-যাওয়ার অভিজ্ঞতা ও বেশ ভয়ংকর, "গা ছমছমে"। রাতে অনেকগুলো কুকুর দেখতাম একসাথে বসে থাকতো।
আবার কোরিয়ান সিমেট্রিগুলো বেশ মনোমুগ্ধকর,পরিপাটি। আমি নিজে ও কয়েকবার গিয়েছি। কিছু সিমেট্রিগুলোতে সন্ধ্যার পর অবস্থান না করতে কঠোর বিধিনিষেধ আছে। তাঁদের আচার-অনুষ্ঠান কিছুটা ব্যাতিক্রম। আমরা যেমন কবর জিয়ারত করি, কোরিয়ানরা খাবার-দাবার কবরের পাশে দিয়ে যায়। সজু (কোরিয়ান মদ) কবরের পাশে ৩ বার ছিটিয়ে দেয়, তারপর সিজদা করে। তাঁদের বিশ্বাস আত্নারা এসে এই খাবারগুলো খায়। কনফুসিয়াস দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাকি, চায়না-কোরিয়ানরা এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আসছে।
অনেক কথা লিখলাম। সাদা-শুভ্রতায় ভরা আপনার লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগলো।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪২
খায়রুল আহসান বলেছেন: কথায় আছে, A graveyard is a great leveler. যদিও আজকাল কবরস্থানেও বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। কারওটা এসএস রেলিং দ্বারা বেষ্টিত এবং শ্বেতপাথরে এপিটাফ খচিত, কারওটা এপিটাফহীন, শুধুমাত্র বাঁশের বেড়া দ্বারা বেষ্টিত আবার কারওটা একেবারে উন্মুক্ত, নাম ঠিকানাবিহীন। তবে ভেতরে সবাই একই পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা আবৃত হয়ে যায়; সবার ড্রেসকোড এক! ঘরের ভেতরের পরিমাপ এবং ফার্নিচারও সবারই একঃ বাঁশ-চাটাই।
৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:১১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মেদহীন ঝরঝরে একটি লেখা। এক কথায় মনোমুগ্ধকর।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪০
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। প্রশংসায় প্রীত হ'লাম।
৮| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: ওকে।
৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭
নীল-দর্পণ বলেছেন: কবরস্থান বলতেই ভয়ের একটা জায়গা বলেই মনের ভেতর জেগে উঠতো! হয়ত ছোট বেলায় দেখা কবরস্থান গুলো ঝোপঝাড়ে এবং তাকে ঘিরে নানান গল্প শোনায় এমনটা মনে গেঁথে গেছে। নিজে প্রথম কবরস্থানের ভেতরে গিয়েছি সন্তানদের কবর দেখতে। এরপর কখনো আর যেতে সাহস করতে পারিনি বাসার কাছে হাঁটা পথ হলেও। গত বছর কোরবানীর ঈদের পর কোন এক কারনে সেখানে যাওয়া হলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল খুব সুন্দর জায়গা এটা! তেজগাঁও এর রহিম মেটাল মসজিদ মাদ্রাসা কম্প্লেক্সের কবরস্থানটা আমার মনে স্থান করে নিয়েছে সাড়ে চার বছর যাবত। আল্লাহ তাঁর রহমতের শীতল ছাড়ায় রাখুন সকল কবরবাসীকে।
বরাবরের মতই সুখপাঠ্য আপনার লেখা।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫০
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেকের কাছেই কবরস্থান ভয়ের একটা জায়গা। আমার কাছে কখনও সে রকম মনে হয় নাই।
তেজগাঁও এর রহিম মেটাল মসজিদ মাদ্রাসা কম্প্লেক্সের কবরস্থানেও আমার এক বাল্যবন্ধু, যে আমার অন্যতম বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল, চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তিনি সামুদ্রিক জাহাজের চীফ ইঞ্জিনীয়ার ছিলেন, ২০১২ সালে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগে মারা যান।
যদিও আমি এইমাত্র বললাম যে কবরস্থান ভয়ের একটা জায়গা, আমার কাছে কখনও সে রকম মনে হয় নাই, তথাপি বলছি যে আমার সেই বন্ধুকে ক্ববর দেয়ার জন্য যেদিন সেখানে গিয়েছিলাম, সেদিন মনে ভয় ধরানোর মত একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম, যা আমার দীর্ঘদিন মনে থাকবে। সে কাহিনী নিয়ে না হয় আরেকদিন আরেকটি পোস্ট লিখা যাবে, যদি মনে থাকে।
১০| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: বর্ষা আমাদের ভাবনার জগতে প্রায়শই বেশ প্রভাব ফেলে, আমিও তেমন একজন।
আপনার ভাবনাগুলো নিয়ে লেখা ভালো লেগেছে।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: ছোটবেলায় আমাদের পাঠ্যপুস্তকে একটি প্রবন্ধ ছিল, "মানব মনে বর্ষার প্রভাব" বা এ ধরণের একটি শিরোনামে। প্রবন্ধটি আমার খুবই পছন্দের ছিল। বারবার পড়তে পড়তে সে সময়ে প্রায় লাইন বাই লাইন মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
"বর্ষা আমাদের ভাবনার জগতে প্রায়শই বেশ প্রভাব ফেলে" - আপনার এ কথাটা নিয়েই সে প্রবন্ধের অনেকটা রচিত ছিল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৫৭
শেরজা তপন বলেছেন: বিভিন্ন দেশে আপনার কবরস্থান পরিভ্রমণের গল্প পড়েছি।
আপনি কি নিশ্চিত কবরস্থান শেষ নিদ্রায় শায়িত ব্যক্তিদের 'শান্তির বা শাস্তির' জায়গা?
আপনি খুব গভীরভাবেমৃত্যু নিয়ে ভাবেন আর সেই সাথে অন্তর দিয়ে পৃথিবীকে উপভোগ করেন। বেশী মৃত্যু ভাবনা পেলে হতাশাগ্রস্থ হন অনেকেই, আপনি তেমন নন।
অফটপিকঃ আমি বিশেষ একটা কাজে ব্যাস্ততা ও মানসিক পেরেশানির তুঙ্গে আছি, সে কারণেই ব্লগে একেবারে অনিয়মিত হয়ে গেছি। সবার পোস্ট পড়ে মন্তব্য করা হয় না কিংবা নিজের পোস্টের মন্তব্যের উত্তর দেয়া হয়না সময়মত।