নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গজল
গজল উর্দু কবিতার ধ্রুপদী ধারার কবিতা। গজলের সূচনা আরবি কবিতায় সপ্তম শতাব্দীতে। ক্বাসিদার কিছুটা সংক্ষিপ্ত রূপ গজল। গজল অর্থ ‘প্রেমাস্পদের সাথে কথপোকথন’। উর্দুতে গজল এসেছে প্রতিবেশী ফারসী সাহিত্য থেকে। তবে উর্দু গজল খুব দ্রুতই ফারসী গজল থেকে কিঞ্চিৎ ভিন্ন পথে চলে স্বতন্ত্র চেহারা লাভ করেছে। বিশিষ্ট গজল অনুবাদক জাভেদ হুসেন বলেছেন, 'গজলের জন্ম আরবে। এর সমৃদ্ধি পারস্যে। আর সবচেয়ে সফল সে ভারতবর্ষে'। দ্বাদশ শতাব্দীতে দিল্লী সালতানাতের প্রতিষ্ঠা এবং মরমী সুফীবাদের প্রভাবে এ উপমহাদেশে গজলের প্রচলন হয়। এর আগে পারস্যের সাহিত্যে গজলের পরিপুষ্টি ঘটে। এরপর উর্দু, তুর্কি ভাষায় এবং নজরুলের হাত দিয়ে বাংলা ভাষায় গজল প্রচলিত হয়।
গজল কতিপয় শের-এর সমাহার। প্রতিটি শের গঠিত হয় দু’টি পংক্তি বা ’’মিস্রা’’ মিলে। প্রথম পংক্তির নাম ’’মিস্রা-ই-উলা’’ আর দ্বিতীয় পংক্তির নাম ’’মিস্রা-ই-সানি’’। প্রতিটি শের একটি অভিন্ন ভাবের দ্যোতক। শের-এর বহুবচন ’’আশার’’। কিন্তু একই গজলের শেরগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্কের কোন বালাই নেই। একদম স্বাধীন, পারষ্পরিক সম্পর্কহীন অনেক শের মিলেমিশে খাসা একখানা গজল হয়ে ওঠে। গরমিলই যেন সেখানে সবচেয়ে বড়ো মিলের ভিত্তি। এ রকম ৫ থেকে ২৫টি শের মিলে হয় একটি গজল। গজল রচনায় পাঁচটি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। প্রথমতঃ গজলের সূচনা শেরকে বলে ‘মাত্লা’। মাত্লায় গজলের মূল ‘টোন’ বা সুরটি ফুটিয়ে তোলা হয়। মাত্লার গঠনের সাথে অবশিষ্ট সব শের-এর গঠনগত ও ছন্দ-সঙ্গতি থাকতে হয়। দ্বিতীয়তঃ মাত্লার উভয় লাইনের রাদীফ বা ধুয়া পরবর্তী সকল শের-এর দ্বিতীয় লাইনের রাদীফ একই হতে হবে। তৃতীয়তঃ রাদীফের আগের শব্দাবলী বা বাগধারার যে ‘কাফিয়া’ বা মিলের ধরন তা পরবর্তী সকল শের-এ বজায় রাখতে হয়। চতুর্থতঃ গজলের শেষ শের-কে বলে ‘মাক্তা’। মাক্তায় সাধারণতঃ কবির তাখাল্লুস বা কবিনাম/ছদ্মনাম (যেমন, গালিব লিখতেন-আসাদ) ব্যবহার করে সমাপনী শেরকে নতুন ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ করা হয়। পঞ্চমতঃ সকল শের-এ বিষয়-বৈচিত্র্য বা স্বাতন্ত্র্য থাকলেও একই ছন্দ ও সমান মাত্রা ব্যবহার করতে হয়। একে বলা হয় বাহ’র বা বেহের। উর্দু ও ফারসি সাহিত্যের সব রথী মহারথীই গজল লেখক হিসাবেও খ্যাতিমান। বিখ্যাত গজল রচয়িতাদের মধ্যে রয়েছেন পারস্যের মাওলানা রুমী, হাফিজ সিরাজী, শেখ সাদী (রঃ), উর্দুতে মীর্জা গালিব, মীর তকী মীর, আল্লামা ইকবাল আর বাংলায় কাজী নজরুল ইসলাম। এখানে নজরুলের একটি বিখ্যাত গজল শেয়ার করলাম, যাতে নজরুল গজল রচনার সব সূত্র অনুসণ করেছেন-
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
বিনোদ বেণীর জরীন ফিতায় আন্ধা ইশক্ মেরা কস্ গয়ি
তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায়ে আসিলো লোভী আমার মন
বেহুঁশ হো কর্ গির্ পড়ি হাথ মে বাজু বন্দ মে বস্ গয়ি
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
কানের দুলে প্রাণ রাখিলে বিঁধিয়া আঁখ্ ফিরা দিয়া চোরী কর্ নিন্দিয়া
দেহের দেউড়িতে বেড়াতে আসিয়া অর নেহিঁ উয়ো ওয়াপস্ গয়ি
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
শের
শের মূলতঃ গজলের অংশ। কিন্তু স্বতন্ত্র কবিতা হিসাবে শের রচনার প্রচলনও আছে। উর্দুতে এসব স্বতন্ত্র শেরকে বলে ফর্দ্। প্রতিটি শের দুটি মিসরা বা লাইনের সমন্বয়ে রচিত হয় (মিসরা-ই-উলা আর মিসরা-ই-সানি)। শের-এ অন্ত্যমিল থাকতে পারে আবার অন্ত্যমিল না-ও থাকতে পারে। গালিব অন্ত্যমিল ছাড়া শের রচনা করেছেন। শের বাংলা কবিতার আসরেও প্রায় শত বছর ধরে সমাদর পাওয়া অতিথি। বহু উমদা শের নানা গুণীর রত্নভাণ্ডার থেকে বাংলায় অনূদিত হয়েছে। আবার অনেক গুণী বাংলা ভাষাতেই শের এর আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। কবি রফিক আজাদতো শেরভর্তি আস্ত একটি বই লিখেছেন, নাম 'দিওয়ান-ই-রফিক'। শের প্রাচ্য সাহিত্যের এক অসাধারণ কীর্তি। আবেগ, ভালোবাসা, দার্শনিকতা আর মিস্টিক চেতনা শেরকে ঋদ্ধ করেছে। বাকচাতুর্য আর রহস্যময়তাও শেরকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
শের-এর চলনের সাথে বাংলা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের চলনের মিলই বেশী। আমার বিবেচনায় বাংলায় শের-চর্চার জন্য অক্ষরবৃত্তই সবচেয়ে মোক্ষম ছন্দ। তবে শের চর্চার সময় মাত্রাবৃত্ত আর স্বরবৃত্ত ছন্দকেও শের-এর বাহন করে তোলা হয়েছে। এটা কবিপ্রতিভার ঐশ্বর্যের ওপর নির্ভরশীল। শের অন্ত্যমিল ছাড়া লেখা হয় আবার অন্ত্যমিল রেখেও লেখা হয়। অন্ত্যমিলসহ আর অন্ত্যমিল ছাড়া দু'টি শে পেশ করছি-
খসরু দরিয়া প্রেম কা উল্টি ওয়া কি ধার
যো উতরা সো ডুব গ্যায়া জো ডুবা সো পার - আমির খসরু
খসরু প্রেমের নদীর ধারাই উল্টো রকম
যে পার হলো সে ডুবে গেলো যে ডুবলো সে-ই পার হলো
সর্দ মেহরি পর জাফর তুম ইশক কি মাত যাইও
রাখতা ইস সরদি মে আতিশ কা শারারা ইশক হ্যায় - বাহাদুর শাহ জাফর
প্রেমের নির্দয়তায় তুমি ধোঁকা খেও না জাফর
এই শীতলতার আড়ালে ফুলকি রাখে প্রেম
২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:২৮
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ওমরের নাম আসেনি। কারণ গজল বা শের রচনায় উনি হাত দেননি। শুধু রুবাই লিখেছেন। পাঠের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
২| ২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে জানলাম।
শের আমার খুব পছন্দ। আর গজল মানেই যেন ধর্মীয় সংগীত।
২৫ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৯:১২
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ধর্মীয় সঙ্গীত ইসলামে দুই রকমের। আল্লাহর শানে রচিত সঙ্গীতের নাম হামদ আর নবীর শানে রচিত সঙ্গীতের নাম না'ত। পাঠের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:১১
আহমেদ জী এস বলেছেন: এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল,
জেনে রাখার মতো একটি পোস্ট।
১ নম্বর প্রতিমন্তব্যে বলেছেন - ওমর খৈয়াম গজল বা শের রচনায় হাত দেননি। যা লিখেছেন তা রুবাই।
তাহলে এতোদিন ওমর খৈয়ামের রুবাইগুলিকেই কি ধরে নিয়েছি শের হিসেবে ? কারন শের বললেই খৈয়ামের নামটিই আগে মনে পড়ে।
২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:২৮
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: শের দুই লাইনের কবিতা। যার বর্ণনা এই লেখাতেই আছে। রুবাই চার লাইনের কবিতা। ওমরের রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থ। ওমর ছিলেন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ গনিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কবি এডোয়ার্ড ফিটজেরাল্ড ওমরের রুবাই ইংরেজিতে অনুবাদ করার পর ওমরের কবিখ্যাতি সারা দুনিয়ায় কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে যায়।
পাঠের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৪| ২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৩৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল,
প্রতিমন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
খৈয়াম সম্পর্কে আপনার বলা কথাগুলো জানি। তবুও কেন যেন "শের" শুনলেই খৈয়ামের কথাটিই মনে আগে চলে আসে। মনে হয় অজ্ঞতা !
আগেই প্রিয়তে নিয়েছি।
২২ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:১৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: মনে হয় ওমরের প্রতি ভালোবাসর কারণে সেটা মনে আসে। মনে হয় যেখানে যা কিছু তাতে তাঁর অবদান আছে। ভালো থাকবেন।
৫| ২২ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মনে হচ্ছিল, কোনো পরীক্ষার পড়া পড়ছি কারণ, প্রায় প্রতিটা বাক্য একাধিকবার পড়েছি বোঝার জন্য
অনেক তথ্যবহুল, জ্ঞানোদ্দীপক ও প্রজ্ঞাদীপ্ত পোস্ট।
৬| ২৪ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:২৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে প্রেরণা যোগাবে। ভালো থাকবেন সবসময়।
৭| ২৪ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১০
খায়রুল আহসান বলেছেন: অত্যন্ত চমৎকার একটি আলোচনা। একটি ধ্রুপদী বিষয়ের উপর ধ্রুপদী পোস্ট। ভালো লেগেছে। + +
০৮ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:০৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১১:২৬
শেরজা তপন বলেছেন: দারুণ তথ্যবহুল পোষ্ট। কিন্তু এখানে কি ওমর খৈয়ামের কথা এসেছে? তাঁর নাম চোখে আসল না যে!!!