নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
’রুবাই’ শব্দটি আরবী। এর মানে ’চতুষ্পদী’। ’রুবাই’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ’আরবা’ (চার) থেকে। সোজা কথায় রুবাই মানে চার লাইন বা পংক্তির কবিতা। শব্দটি আরবী থেকে এলেও রুবাইয়ের কাব্যখ্যাতি ফারসী কবিতার কারণেই। ’রুবাই’-এর বহু বচন ’রুবাইয়াত’।
পারস্য তথা ইরানের সাহিত্যে ব্যবহৃত ফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে মহাকাব্য, মসনবী, ক্বাসিদা, গজল, রুবাই, ক্বিতা, দু’য়া বায়িত (আরেক ধরনের চার লাইনের কবিতা) ইত্যাদি। জানা অজানা বহু কবিই রুবাই রচনা করেছেন। রুবাইয়ের সূচনা মহাকবি আবুল কাশেম ফেরদৌসীর হাতে। বর্তমানে আমরা রুবাই বলতে যা বুঝি তার সাথে সে রুবাইয়ের মিল অতিসামান্য। মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী এবং শেখ মুসলেহ উদ্দীন সাদীও কিছু রুবাই লিখেছেন। রুমীর ভাবগুরু ফরিদ উদ্দীন আত্তার চার লাইন বিশিষ্ট কবিতার একটি সঙ্কলন প্রকাশ করেছিলেন। দরবেশ কবি বাবা তাহির চার লাইনের যে কবিতাগুলো লিখেছেন সেগুলো দু’য়া বায়িত বা দুবাইতি নামে পরিচিত। রুবাইয়ের সাথে এর মাত্রা সংখ্যার পার্থক্য আছে। তবে রুবাই রচয়িতা হিসাবে হাফিজ আর ওমরই বেশি পরিচিত। কাব্যবিশ্বের চোখে ওমর খৈয়ামই হলেন রুবাই জগতের কুতুব মিনার। প্রায় হাজার বছর আগে এইসব মহাকবির হাতে রুবাই কবিতার ফর্ম হিসাবে তুঙ্গ স্পর্শ করেছে।
রুবাইতে বিষয়বস্তুর ব্যাপক বৈচিত্র্যের মধ্যেও জাম/সুরা/সাকি এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। রুবাই আকারে ছোট হলেও উঁচুদরের দার্শনিক কবিতা। মূলত: সুফিবাদ এর প্রধান অনুষঙ্গ।
রুবাইয়ের আরেকটি বড়ো বৈশিষ্ট্য এর দ্ব্যর্থকতা। পড়তে গিয়ে আক্ষরিক একটা অর্থ মিলবে। এরপর ভাবের জগতে ডুব দিলে মিলবে অন্য এক গভীর অর্থ। তাই সুরা/সাকির রোমান্টিকতার আক্ষরিক রূপের পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য মানে। ফলে গুণীজনরা সাকির মধ্যে মুর্শিদকে খুঁজে পান যিনি ’জাম’(সুরা পাত্র)-এর মধ্যে মাধ্যমে আনন্দরূপ সুরা (দিব্যজ্ঞান) পরিবেশন করেন। সে সুরা পানে ভক্তহৃদয় আনন্দে আপনাতে বিভোর হয়ে যান। তাঁরা সুরার মাধ্যমে আনন্দে বিভোর হয়ে দিব্যজ্ঞানকে খুঁজে পান। স্রষ্টারূপ মদিরায় ডুবে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের অনুভূতি হয় যেন তাঁদের। যেমন হয়েছিলো মনসুর হাল্লাজের ’’আনাল হক’’ বিলাপের সময়।
রুবাই রচয়িতাগণ জীবনের গভীর দর্শণকেই মূল অবলম্বন হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তবে রুবাইয়ের নানা শ্রেণীকরণও করা হয়েছে বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে। বিশেষ করে ওমরের রুবাইকে গুনীরা ৬ ভাগে ভাগ করে থাকেন - ১। শিকায়াত-ই-রোজগার (অদৃষ্টের প্রতি অনুযোগ), ২। হজও (ভণ্ডদের প্রতি বিদ্রুপ), ৩। ফিরাফিয়া ও ওয়াসালিয়া (প্রিয়ার বিরহ/মিলনাত্মক), ৪। বাহরিয়া (বসন্ত ও এর অনুষঙ্গ বিষয়ক), ৫। কুফরিয়া (ধর্মশাস্ত্রকে সমালোচনামূলক) ও ৬। মুনাজাত (প্রার্থনামূলক)
রোমান্টকি বাংলা কবতিার ধারায় বৈষ্ণব পদাবলী ও তার সমকালীন কবতিার একটি স্বতন্ত্র ও গভীর তাৎর্পয আছ। তার সাথে ফারসী রুবাই এবং র্উদু শের-এর বাংলা অনুবাদ নতুন মাত্রা যুক্ত করছিলো। রসিক পাঠক মাত্রই এগুলোর খাঁটি সমঝদার। কেননা, এদশেরে গান ও কবিতাপ্রিয় মানুষের মনে তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং তীব্র আবেগের মিশেলে রোমান্টকিতা, আধ্যাত্মকিতা আর মরমিয়াবাদ গলাগলি করে আছে।
ইউরোপীয় রোমান্টকিতা আধুনিক বাংলা কবিতায় বহুল চর্চিত। বাংলা কবিতারর সকল রথী মহারথীর হাতেই এর পরিপুষ্টি ঘটেছে। তারপরও সব কালেই রুবাই এবং শের-এর বাংলা অনুবাদের প্রতি পাঠকের আলাদা টান লক্ষ করা গেছে। কান্তি ঘোষ, নরেন দেব প্রমুখ ওমরের রুবাই ফিটজেরাল্ডের ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং কক খখ অন্ত্যমিল ব্যবহার করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম রুবাই অনুবাদ করছেনে মূল ফারসী থেকে এবং মূল কবিতার অনুরূপ কক খক অন্ত্যমিল ব্যবহার করেছেন। কেউ কেই রুবাইকে ফর্ম হিসাবে বাংলা ভাষা মৌলিক রুবাই রচনা করেছেন।
অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদকের নিজস্বতার ছাপ দেখা যায়। ওমরের একটি রুবাই অনুবাদ নমুনা হিসাবে পেশ করা যায়। ওমরের মূল রুবাইটি হলো-
"মা ল'বতেগানীম ও ফলকে ল'বতেবায
আয রুয় হাকিকাতি নাহ্ আয রুয় মজায
এক চান্দ দর ইন বেসাত বাজী কারদিম
রফতিম বেহ সন্দুকে আদম এক এক বায।
ইংরেজ কবি এডোয়ার্ড ফিটজেরাল্ড অনুবাদ করার সময় মূল অন্ত্যমিলের নিয়ম মেনেছেন-
Tis all a Chequer-board of Nights and Days
Where Destiny with Men for Pieces plays:
Hither and thither moves, and mates, and slays,
And one by one back in the Closet lays.
কান্তি ঘোষ ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ অবলম্বনে অনুবাদ করার সময় বাক্যগুলো ভেঙেছেন এবং ককখখ অন্ত্যমিল ব্যবহার করেছেন-
ছকটি আঁকা সৃজন ঘরের
রাত্রী দিবা দুই রঙের,
নিয়ৎ দেবী খেলছে পাশা
মানুষ ঘুঁটি সব ঢঙের;
প'ড়ছে পাশা ধ'রছে পুনঃ,
কাটছে ঘুঁটি, উঠছে ফের—
বাক্সবন্দী সব পুনরায়,
সাঙ্গ হ'লে খেলার জের ৷
কাজী নজরুল মূল ফারসি থেকে অনুবাদ করেছেন এবং মূল অন্ত্যমিল বজায় রেখেছেন-
আমরা দাবার খেলার ঘুঁটি, নাইরে এতে সন্দ নাই!
আসমানী সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই ৷
এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব
খেলা শেষে তুলে মোদের রাখবে মৃত্যু-বাক্সে ভাই!
এ পর্যন্ত শতাধিক গুণী ওমরের রুবাই বাংলায় অনুবাদ করেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী নজরুলের রুবাই অনুবাদ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।
অনেক গুণী বাংলায় মৌলিক রুবাই লিখেছেন। ড. সৈয়দ আজিজ লিখেছেন-
'দুইয়ে দুইয়ে চলছে খেলা নিরবধি
দুইয়ের স্রোতে একই ধারায় বইছে নদী
দেহের ভিটা উথলে উঠে ভাঙছে শুধু
মুক্তি হবে যুক্তি এসে কাঁদায় যদি।’
২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:০৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: মন কথনিকা কথাটি বুঝতে পারিনি।
লেখাটি ভাল লেগেছে জেনে ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন।
২| ২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৫
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: রুবাই লিখা একটা নেশার মত । দুঃসহ সময়ে রুবাই লিখে আরাম পাই । আপনার পোস্টটি ভালো লাগলো । এটা ঠিক রুবাই উঁচুদরের দার্শনিক কবিতা !!
এই যে দুটো রুবাই
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৪৩
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার রুবাই পড়ে আপনার পোস্টে মন্তব্য করেছি। ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৩| ২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩
এইযেদুনিয়া বলেছেন: আমার ভালো লাগে জাপানি ফর্মেটের রুবাই-- মানে হাইকু লিখতে। তিন লাইনে, ১৭ মাত্রায়। যদিও মাত্রা ঠিক থাকে না আমার। তিন লাইন ঠিক রাখার চেষ্টা করি খালি।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৫১
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনার ব্লগ ঘুরে কোনো হাইকুর দেখা পেলাম না। রুমি আর ফ্রস্টের অনুবাদ পেলাম কিছু। রুবাই পাঠ এবং রুবাই নিয়ে আপনার মতামত ভালো লাগলো। পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৪| ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: রুবাই আমার কাছে ভালো লাগে না।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৫২
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: রুবাই নিয়ে আপনার মতামত ভালো লাগলো। পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৫| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৩:০০
আহমেদ জী এস বলেছেন: এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল,
আগের পোস্টটি নিয়েছি প্রিয়তে যেমন
এটিও রেখেছি যতনে তেমন,
জানার নদীতে দেয়া ভালো স্নান
মন বাগানের ফুল তাতে হয়না ম্লান।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:৫৫
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হাহাহা। প্রায় রুবাই হয়ে ওঠার চেষ্টা দেখছি মন্তব্যে। রুবাই নিয়ে আপনার মতামত ভালো লাগলো। পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৬| ২৭ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রুবাই সম্পর্কে সুন্দর পোস্ট। এসব তো কিছুই জানতাম না
অনুবাদটা পড়ে আমারও মনে হচ্ছিল, নজরুলের অনুবাদটাই সেরা।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: রুবাই নিয়ে আপনার মতামত ভালো লাগলো। পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৭| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮
কবীর হুমায়ূন বলেছেন: রুবাই সম্পর্কে জানলাম। শুভকামনা রইলো।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছিলাম বলে জবাব দিতে দেরি হলো। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।
৮| ০৮ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৫:১৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: রুবাই এর আদি-অন্ত সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা হলো।
"কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী" - নজরুলের রুবাই অনুবাদ প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলীর এ মন্তব্যটা মনে গেঁথে র'লো।
রুবাই নিয়ে কত কিছুই অজানা ছিল ভাই,
লিখে গেলেন বলেই আমরা জানলাম সবাই।
গুণী জনের এসব কথা আবার পড়তে হবে,
তুলে রাখলাম ‘প্রিয়’ তে লেখাটি আপনার তাই।
হয়েছে?
০৮ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৯
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন। ব্লগে সময় দিতে পারি না। তাই আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে দেরী হলো। দুঃখিত।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:২৭
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমি লিখি মন কথনিকা
সুন্দর পোস্ট