নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সুন্দর করে সাজাও । আমি নারী তাই কথাও বলি নারীদের নিয়ে।

কামরুননাহার কলি

আমার নাম কামরুননাহার কলি, আমি একজন ভার্সিটির ছাত্রী। আমার সখ লেখালেখি আর বই পড়া। আমি দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষদের।

কামরুননাহার কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাতেমার গল্প

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০

কামরুননাহার কলি

একজন পথশিশু, ২০১৪ সালে প্রথম ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো মিরপুর জাতীয় স্ট্যাডিয়ামে। প্রথম দিন, এসে আামাকে বলল, আপা ৫টা টাকা দেন। হঠাৎ চমকে গেলাম,দেখলাম ৭/৮ বছরের একটি মেয়ে। টাকা দেওয়ার আগে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, তারপর বললাম কি নাম তোমার? ও বললো আমার নাম ফাতেমা। ওকে বললাম কেন ভিক্ষা করো তুমি। তুমি তো কত ছোট্ট মেয়ে, পড়া লেখা করো না কেনো? ফাতেমা আমার পাশ ঘেষে এসে বসলো আর বলল, আপা আমার বাবা নাই, অন্য জায়গায় বিয়া কইরা গেছে গা আমাগোরে থুইয়া। বললাম তোমার মা, সে কোথায়, ফাতেমা বললো, মায়ে বাসায় বাসায় কাজ করে। কেমনে লেখা পড়া করুম আপা। বিশ্বাস করে নিলাম ওর কথাগুলোকে। তারপর ১০ টাকা দিয়ে ওকে বিদায় দিলাম। দিয়ে বললাম আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি, আমাকে যদি দেখো তাহলে আামর কাছে চলে এসো তুমি। হাসি মুখে মেয়েটি চলে গেলো। মনে মনে ওর জন্য খুব অনুতাপ হলো। মনে বার বার প্রশ্ন জাগে সত্যিই কি এখনো মানুষগুলো এতো কষ্ট করে। এখনো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো এতো কষ্ট করে। সেদিনকার মতো চলে গেলাম মনের সব প্রশ্ন গুলো ঝেরে ফেলে। এখন মাঝে মাঝেই ফাতেমার সাথে আমার দেখা হয়। ফাতেমা আমাকে দেখলেই দৌড়িয়ে চলে আসে আমার কাছে। ওর সাথে অনেক গল্প করি, ওকে কিছু কিনে খাওয়াই। ফাতেমাও আমাকে মাঝে মাজে গানও শুনায়। যেমন, ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না যার তার লগে প্রেম করে আমায় চিনে না। আরো কি কি জানি গান বলে মাঝে মাঝে শুনতে ভালো লাগে আবার মাঝে মাঝে ভালো লাগে না।

তবে ওর সাথে আমার যখনি দেখা হয় তখনি ওর সম্পর্কে জানতে চাই। ওদের বাসায় আর কে কে আছে। ওর মা কেমন আছে, তারা কি করে না করে সে কথা জানতে চাই। কিন্তু মেয়েটা মাঝে মাঝে কেমন জানি অদ্ভুত রকমের কথা বলে। প্রথম দিন আমার সাথে যে আবেগ দিয়ে কথা বলেছে, এখন সেই আবেগটা আর নাই। বলতে গেলে মনে হয় যেনো একটি সুখি মানুষের সাথে কথা বলছি। বুঝাই যায়না ও ভিক্ষা করে খায়। হঠাৎ করে কখনো কখনো বলে ফেলে ওর বড় বোন আছে তার বিয়ে হয়েছে সেই স্বামী নাকি ভালো চাকরিও করে। আবার বলে বড় ভাই আছে সেও চাকরি করে। ওদের ঘরে টিভি আছে ফ্রিজ আছে। মেয়েটা আমাকে একেক দিন একেক রকম কথা বলে। মিথ্যে বলেনা সত্যি বলে সেটা বুজতে পারিনা। এভাবেই ওর মুখফসকে সত্যি কথা বের হয়ে আসে মাঝে মাঝে। সেটা বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না। তবুও না বারবার মনে হয়, ওরা নাকি একে বারেই অভাবী, তাহলে সংসার এতো ভালো থাকে কি করে। তাহলে কি মেয়েটা আমাকে বোকা বানায়। তারপরও কিছু জিজ্ঞেসা করি না। কখনো কখনো ওর ওপর আমার খুব রাগ হয়। কিন্তু রাগটা ওকে আমি বুঝতে দেইনা।

আবার কখনো ফাতেমাকে দুষ্টামি করে বলতাম আমাকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবে। তখন ফাতেম খুব নার্ভাস হয়ে যেতে, বলতো না আপা আমাগো বাসা নাই রাস্তায় থাকি আমরা। আরে অবাক তো কথনো বলে ওদের বাসায় টিভি দেখে, ডিস লাইন আছে, ফ্রিজ আছে আর এখন বলে রাস্তায় থাকে। তখন আর সহ্য করতে পারতামা না মিথ্যে কথাটাকে। রাগে ধমক দিয়ে বলতাম মিথ্যে কথা বলো কেনো। তোমাকে কে এই সব কথা শিখিয়ে দেয় আমাকে বলো তো। ফাতেমা তখন চুপ হয়ে থাকতো। কিছুক্ষণ পর বলতো আপা রাগ করবেন না, আমাকে আমার বোন আর মা শিখিয়ে দেয়। কথাটা শুনে আমার খুবই খারাপ লাগলো। বললাম কেনো শিখিয়ে দেয়, ফাতেমা বলল তাহলে আমাকে মানুষ টাকা দিবে না মিথ্যে না বললে। ফাতেমা তুমি টাকা দিয়ে কি করো? ও বলল আমার মায়ের কাছে প্রতিদিন একশত (১০০) টাকা করে দিতে হয়। না দিলে বকা দেয়, মারে ভাত খেতে দিতে চায় না। একদিন ওর মুখ থেকে আর একটি সত্যি কথা বেড়িয়ে আসলো। হঠাৎ কি কারণে যেনো ফাতেমা আমাকে বলল ওর বাবা রিক্সা চালায়। সেই প্রথম দিন বলেছিলো ওরা বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে করে চলে গেছে। কিন্তু আজ বলে ওর বাবা ওদের সাথেই থাকে এবং রিক্সা চালায়। সেদিনও ফাতেমার ওপর আমার খুব রাগ হয়েছিলো কিন্তু কিচ্ছু বলিনি। শুধু বলেছি আর কখনো মিথ্যে বলো না মিথ্যে বলা মহাপাপ, এটা অন্যায়।
২০১৫ সালে একদিন ফাতেমা আমাকে বলেছিলো ওরা নাকি দেশে চলে যাবে। দেশে যেয়ে ঘর বানাবে, সেখানে ওরা থাকবে, তারপর স্কুলে ভর্তি হবে ফাতেমা। কিন্তু ২০১৭ সাথে মে মাসে ওর সাথে আমার আবার দেখা হয়। ওকে দেখে আমি খুবই আর্চয্য হলাম। তখন ওকে দেখে বললাম, ফাতেমা তুমি নাকি দেশে যেয়ে স্কুলে ভর্তি হবে। তাহলে এখনও এখানে কি করো, তুমি এখনো ভিক্ষা করো। ফাতেমা তুমি আবারও আমাকে মিথ্যে কথা বললে। কেনো ফাতেমা আমাকে তুমি বার বার ঠকাও, তুমি কত ছোট্ট একটা মেয়ে আর তুমি আমাকে বোকা বানাও। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি ফাতেমা মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলিয়ে নিলাম, বুজলাম ওর পরিবারই হয়তো যায়নি। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, কিরে মন খারাপ করলি কেনো, এই মেয়ে আমার সাথে রাগ করলি। দেখ ফাতেমা তুই না ভালো মেয়ে তাহলে মিথ্যে বলিস কেনো। তোর মনে আছে, প্রথম দিন আমাকে বড় একটি মিথ্যে কথা বলেছি। কি বলেছি আপু! তোর বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে, সেই মিথ্যে কথাটা মনে আছে তোর। তারপর সেই কথাটা আবার সত্যিটা বলে দিয়েছিস, যে তোর বাবা তোদের সাথেই থাকে, হু আপা মনে আছে। ঠিক আছে আর কখনো মিথ্যে বলবিনা আমার সাথে।

ফাতেমাকে আমার কাছে টেনে বসিয়ে দিলাম। আর বললাম, আচ্ছা ফাতেমা, তোর কি স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না? দেখ না তোর সমবয়সী কত ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। ওদের মতো কি তোর যেতে ইচ্ছে করে না। ফাতেমা মুখখান ছোট্ট করে বললো, করে তো আপা, করে। আমার সবসময় মনে চায় আমিও ওদের মতো স্কুলে যাই স্কুলড্রেস পরে, জুতা পরে, স্কুলভ্যানে চড়ে স্কুলে যাই। কিন্তু জানেন আপা আমার বাবা-মা অন্যদের বাবা-মায়ের মতো না। আমার বাবা-মা শুধু টাকাই চিনে, আমি যদি ভিক্ষা করে টাকা দেই তাহলে তারা খুশি হয়। আর স্কুলে যেতে চাইলে তারা তখন মন খারাপ করে বলে টাকা নাই স্কুলে পড়বি কি দিয়ে। আমরা বড় লোক না যে তোরে স্কুলে পড়াবো। এরপর আমার কি বলার আছে এই মেয়েটাকে, আমি আর ভাষা খুঁজে পাইনা। কি বলবো ফাতেমাকে, ওর দিকে তাকাতেও সাহস পাই না আমি। হঠাৎ আবার বলে উঠলো ফাতেমা, আপা জানেন, আমার না খুব স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। আমার মনে বার বার স্বপ্ন জাগে আমি আপনেগো মতো অনেক বড় হবো। আপনেরা কত সুন্দর সুন্দর জামা পরেন কত সুন্দর জুতা পরেন আপনেগো সবাই কত আদর করে। আর আমাকে কেউ দেখতে পারে না। আমি বড় হলেও তো কেউ দেখতে পারবে না আমাকে। আপা “আমার স্বপ্নটা কেমনে পূরণ করবো বলে তো”। এই ফাতেমাকে এখন আমি কি বলবো, আমি যে নিরুপায়। আমরা কি পারিনা এই ফাতেমাদের মতো হাজারও পথকলিদের পাশে দাঁড়াতে। পারিনা ওদের একটুকরো স্বপ্ন পূরণ করতে। তাহলে সত্যিই কি আমরাও ওদের মতো অসহয়, নিরুপায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.