নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সুন্দর করে সাজাও । আমি নারী তাই কথাও বলি নারীদের নিয়ে।

কামরুননাহার কলি

আমার নাম কামরুননাহার কলি, আমি একজন ভার্সিটির ছাত্রী। আমার সখ লেখালেখি আর বই পড়া। আমি দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষদের।

কামরুননাহার কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন আকাশে উড়ার

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫২

কামরুননাহার কলি



“স্বপ্ন” এই শব্দটি সবার কাছেই পরিচিত। জন্মের এক দু’বছরের মধ্যে মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে। যেমন-শিশুরা স্বপ্ন দেখে বাবা আমার জন্য একটি চকলেট নিয়ে আসবে, একটি চিপস নিয়ে আসবে এটাও বাচ্চাদের একটা স্বপ্ন, তাই তো। আমরা জানি পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ স্বপ্ন দেখে। সব মানুষের মধ্যে কোন না কোন স্বপ্ন থাকে। এর মধ্যে কারো স্বপ্নপূরণ হয় আবার কারোটা হয় না।

তেমনি দুজন স্বপ্নপ্রেমী মানুষের কথা বলছি আমি। ওয়াহিদ আর রাজিব । এই দুজন স্বপ্নপ্রেমী কথাই আমি বলবো। তারা দুজনই রংমিস্ত্রী। বয়সে রাজিব আমার চেয়ে বড়ই হবে কিন্তু ওয়াহিদ আমার চেয়ে ছোট। ‘ওয়াহিদ আর রাজীব’ সকাল হলেই নেমে পড়ে কাজের উদ্দেশ্যে। ইয়া বড় বড় ৩০ তালা, ২৫ তালা, ২০ তালা, ১৫ তালা আবার ৫/৬ তালা বিল্ডিংগুলোতে ওরা রং করে। প্রতিনিয়তিই ওরা মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে এ কাজটি করে। মনে হয় যেনো মৃত্যু ওদের খেলার সাথী, তাই মৃত্যুকে ওরা ভয় পায় না। বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর থেকে দড়ি শক্ত করে বেধে তারপর বাদুরের মতো ঝুলে পড়ে নিচের দিকে। তারপর দড়ির উপর বসে বসেই রং করতে থাকে বিল্ডিংয়ের ওয়ালগুলোতে। মাঝে মাঝে নাকি ওয়ালগুলো পরিস্কার করে রং করতে হয়।

প্রতিদিনের মতো সেইদিনও ওরা রং করেছিলো আমি যে বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকি সেই বিল্ডিংটা। দিনটি ছিলো ২২-৬-২০১৭ তারিখ। আমি ওদের কে দেখছিলাম বারেন্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে, কি ভাবে রং করছে। যখন রং করতে করতে আমাদের বারেন্দার কাছাকাছি আসলো তখন ওদের আমি প্রশ্ন করলাম-

আপনাদের ভয় করে না, এই উচু উচু বিল্ডিংয়ে এভাবে ঝুলে রং করতে?
প্রথমে ওরা আমার কথা কি উত্তর দিবে খোজে পাচ্ছিলো না। তাই প্রথমে হেসে দিলো তারপর বলল না আফা ভয় করবো কেনো। এসব কাজ আমাগো অভ্যাস হয়ে গেছে এখন আর ভয় করে না। রাজীব বলল ভয়ই এখন আমাগোরে ভয় পায় আফ। কিন্তু রাজীবের কথাটির মধ্যে একটা রহস্য লুকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ থেমে থেকে

আবার প্রশ্ন করলাম-
আচ্ছা যখন ৩০/২৫ তালার উপর থেকে এভাবে নিচের দিকে নামেন তখন কি নিচের দিকে তাকালে মনে হয় না এই বুঝি পড়ে গেলাম?
মুখে একচিলতি হাসি নিয়ে ওয়াহিদ জবাব দিলো- আফা মনে তো হয়ই, তবে প্রথম প্রথম একটু বেশিই করছিলো এখন আর করে না। রাজীব বলল আফা নিচের দিকে তাকাইলেই ভয় করে তাই তাকাইনা। একটা দির্ঘনি:স্ব ছেড়ে বলল, কি করুম বলেন খেলাপড়া করিনি মা-বাবার অভাবের সংসার ছোটবেলা থাইকাই কাজ করি। জীবনে কত ধরনের কাজ করলাম, কিন্তু কোনো কাজেই শান্তি নাই আফা সব কাজেই কষ্ট আছে। তাই সব কাজ বাদ দিয়া শেষ পর্যন্ত এই কাজই বাইছা নিলাম। জানেন আফা এই কাজ এতোই ভয়ের যেকোন সময় পইড়া মইরা থাকতে পারি কেউ দেখারও না। তারপরও এই চিন্তা করি না চিন্ত করি টাকার, কাজ করলে টাকা আসবো। আর বইসা থাকলে টাকা পামু কই। কেউ তো আর ঘরে টাকা দিয়া যাইবো না আফ আমাগোরে।

এই জন্যই মৃত্যুকে ভয় পাইনা আফা। তারপর দুষ্টামির সুরে বললাম-
এভারেস্ট জয় করতে পারবেন?
ওরা দুজনই আমার প্রশ্ন শুনে ব্যাভাচেকা হয়ে গেলো। ওরা বুঝলোই না এভারেস্ট কি, আফা এটা আবার কি? এটা পাহাড় একটা ৫০/৬০ তলা বিল্ডিং এর চেয়েও উচু বরফের পাহাড় সেটাকেই বলে এভারেস্ট। হু আফা পারুম, পারুম না কেনো উচু উচু বিল্ডিংয়ে উঠতে পারলে ওখানেও পারুম। আমি বললাম, সেখানে তো পড়ালেখা করে তারপর যেতে হয় তাদের বলে বিজ্ঞানী। তারা বিজ্ঞানী নামে পরিচিত। ও আফা এই কথা তাদের সাথে কি আর আমাদের তুলনা তারা বিজ্ঞানী আর আমরা কাজ করি খেটেপুটে খাই। আমি বললাম কেনো পারবেন না তারা পারলে আপনেরা কেনো পারবেন না। তারাও মানুষ আপনেরাও মানুষ। এই টুক বলে ওদের খুশি করে শান্তনা দিলাম, কি আর বলবো ওদের। এরপর একটা শেষ প্রশ্ন করলাম-

আপনারা এই কাজই করবেন, নাকি অন্য কোন স্বপ্ন আছে?
এবার ওয়াহিদের চোখে মুখে ঝিলিক পড়লো- বলল নাহ, আফা এই কাজ করুম না আর বাহিরে চইলা যামু। রাজীবও বলল আফা আমিও চইলা যামু বিদেশ। দেশে আর থাকুম না। আমি বললাম সেখানেও তো খুব কষ্ট হয় কাজ করতে। এবার ওয়াহিদের কণ্ঠস্বর ছোট্ট হয়ে গেলো বলল- লেখাপড়া করিনি কষ্ট তো করতেই হবে। থাক আফা কষ্ট হলেও ভালো। যে কষ্ট করবো তার মূল্যও পাবো, ওখানের মানুষেরা মানুষে কষ্ট বোঝে, মানুষ বলে গণ্য করে। আমাদের দেশের মানুষের মতো এতো অমানুষ না আফা। শত কষ্ট করলেও আমাগো কষ্টের কোন দামই দেয় না। পারলে কাজ শেষে টাকার বদলে লাথি মেরে তারিয়ে দেয়। এদেশের মানুষ গুলোকে কি আপনে মানুষ মনে করেন আফা। এদেশের মানুষগুলো বড় নিষ্ঠুর আফা। লেখাপড়া করিনি দেখে কি আমাদের এতো অবেহেলা এতো অনাচার। এদেশের মানুষগুলো, গরিবের দুঃখ কখনোই বুজবে না আফা। আমরা কত কষ্ট করে কাজ করি মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে তার বেতন দেয় আমাগো অল্প কয়টা। এই কষ্ট যদি বাহিরে করি সেখানে এর দ্বিগুণ বেতন পামু আফা। সেই জন্য আফা আমাগো দু’জনেরি স্বপ্ন বিদেশ যাবো, প্লেনে চড়ে। ওয়াহিদ হেসে বলল আফা তবে আমার একটা স্বপ্ন “আমি প্লেনে চড়বো ঐ দূর আকাশে উড়বো আর আকাশ দেখবো।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.