নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সুন্দর করে সাজাও । আমি নারী তাই কথাও বলি নারীদের নিয়ে।

কামরুননাহার কলি

আমার নাম কামরুননাহার কলি, আমি একজন ভার্সিটির ছাত্রী। আমার সখ লেখালেখি আর বই পড়া। আমি দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষদের।

কামরুননাহার কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাপের প্রতিশোধ

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫



সাপ, এই প্রাণীটি আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে ভয়ংকর প্রাণী, অন্য সবার কাছে কেমন, সেটা জানিনা। তবে আমার কাছে এটি একটি ভয়ংকর প্রাণী। তবে এটা জানি যে, অন্যান্য প্রাণীকুল থেকে এরা খুব ভালো, ক্ষেপালে ক্ষেপে না হলে লক্ষি মায়ের মতো বসে থাকে। এদের অনেক গল্প শুনেছি, যদিও আমি নিজে ভয় পাই, তবুও এই প্রাণীটিকে কেনো জানি আমি খুব ভালোবাসি। জানিনা কি কারণ, তবে কারণ তো আছেই। যত ভয়ংকরই হোক এমন কিছু জিনিস আছে যাদেরকে ভালো না বেসে পারা যায় না। আমিও হয়তো তেমনি একজন। কিন্তু এই সাপ যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটা একটু সবাই কে জানাই। এটি একটি সত্যি এবং বাস্তব যা আমার চোখের সামনে ঘটেছে।
আমি তখন স্কুলে পড়ি, তখন আমার ক্লাসের এক বান্ধবীর সাথে ঘটে এক মর্মতান্ত্রিক ঘটনা। ওর নাম সুফিয়া, আমরা একসাথেই পড়ালেখা করি। আমরা এক সাথে অনেক বান্ধবী ছিলাম প্রায় ১০/১২ জন তো হবে। সবার সাথে সবার খুব ভাব ছিলো। আমাদের সবার বাড়িই কাছাকাছিই ছিলো। একদিন দেখলাম সুফিয়া ক্লাসে আসে নাই। সেইদিন আমরা দু’তিন জন বান্ধবী মিলে বিকেলে ওদের বাড়িতে যাই । যখন গেলাম তখন ওর ছোট বোন ঝুমুরের কাছ থেকে শুনতে পাই সুফিয়াকে সাপে কেটেছে। তাই ঢাকায় নিয়ে গেছে, তবে কালকের মধ্যে চলে আসবে বাড়িতে। আমরা ঝুমুরকে বললাম ঠিক আছে ,আমরা ওকে কাল দেখতে আসবো, আসলে আমাদেরকে খবর দিবে তুমি।
পড়ের দিন সুফিয়াকে নিয়ে ওর বাবা-মা চলে আসলো। তারা সবাই ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো সম্পুর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু না, সকালে ঢাকা থেকে আসলো বিকেলে সুফিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো। ঢাকার ডাক্তার ভালো ভাবেই টিটমেন্ট করেছিলেন। মোটা মোটা ইনজেক্টশন মাথার শিরার মধ্যে দিয়ে বিষক্ত রক্ত বের করে দিয়েছে। কিন্তু কতক্ষণ আর ভালো থাকলো, অবস্থা একেবারেই করুন হয়ে গেলো। এবার বলি আসল ঘটনাটি। ঘটনাটি যে ভাবে ঘটলো-
ওদের বাড়িতে ঢাকা থেকে মেহমান আসছিলো, কয়েকদিন বেড়িয়েছে। মেহমানরা যেদিন চলে যাবে সেই দিন সুফিয়া স্কুলে আসেনি, সকালে মেহমানদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে একটু দুরে বাসষ্টেশন, জায়গার নাম বটতলা সেখান পর্যন্ত গেলো। ওখানে আছে একটি বিশাল বড় বটগাছ, কবে কখন এর জন্ম তা নিদিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে সবাই ঐ স্থানটিকে বটতলা বলেই চিনে। সুফিয়ার সাথে ছিলো ওর একজন খালাতো বোন। মেহমানরা আছে বাসের অপেক্ষায়, তাই ওরা বটগাছের নিচে বসে আছে। হঠাৎ সুফিয়ারা বটগাছের নিচে একটি সাপ দেখলো, সাপটি ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, আর বার বার জিব্বা বের করছে। সুফিয়া আর ওর খালাতো বোন দু’জনি দুষ্টামীর ছলে মাটির ছোট ছোট ডিল ছুরে মারছে সাপটি গায়ে, কিন্তু সাপ ওখান থেকে যাচ্ছেনা। সাপটিও কেমন জানি, সাপ হয়তো জানে মানুষ ওদের খুব ভয় পায় তাই পালায়না। নিজেদের নিয়ে খুব গর্ব করে ওরা। ওরা ভাবে মানুষের কেনো ভয়ে পালাবে, মানুষ ওদের দেখে ভয়ে পালাবে, এটা নিয়ে হয়তো সাপ খুব গর্ব করে। যখন সুফিয়ারা দেখলো সাপ পালাচ্ছে না তখন ছেড়ে দিলো ওকে, যাহ তুই তো পালাস না তোকে ক্ষেপিয়ে কি লাভ। তবে সুফিয়ারা কিন্তু বেশ কয়েকটি মাটির ডিল সাপে গায়ে মেরেছে। যদিও ওরা খুব আঘাত করে মারেনি তারপরও হয়তো আঘাত পেয়েছে সাপটি। শুনেছি সাপের শরীর খুব নরম একটু ছোয়াতেই ওরা ব্যথা পায়। মেহমানদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে সুফিয়া বাড়িতে চলে আসলো।
সুফিয়া দুপুরে গোসল করার জন্য খালে ঝাপিয়ে পড়লো বন্ধুদের সাথে। কিন্তু ওর সাথে একটি সাপও ঝাপ দিলো খালের পানিতে। গ্রামের বাড়ি মানুষ কলে বা বাথরুমে খুব কমই গোসল করে। বাড়ির পাশে খালে, কুয়ায়, অথবা পুকুরেই সবাই গোসল করে। আর গ্রামের ছেলেমেয়ারা সবাই মিলে একসাথে গোসল করার মজাই আলাদা। এটা যারা না করেছে তারা হয়তো বুঝতে পারবেনা, কতটা আনন্দের সব ছেলেমেয়েরা মিলে একসাথে পুকুরে গোসল করা। সুফিয়া সাপটিকে দেখেছিলো কিন্তু বুঝতে পারেনি এটি কেনো এবং কোন সাপ। এরপর গোসল সেরে, খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বাড়ির পাশে বান্ধবীদের সাথে বিলের মাঠে ঘুড়তে গেলো। সুফিয়া যখন কথা বলছিলো ওর বান্ধবীদের সাথে, তখনও একটি সাপ সুফিয়ার পায়ের সামনে, ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে আছে। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসলো। কিন্তু তখনও সুফিয়া বুঝলো না এটা কোন সাপ, আর কেনোই বা ওর পিছু নিয়েছে।
কিন্তু যখন রাত হলো তখনি ঘটলো কান্ড। মাগরিবের আযান দেওয়ার পর সুফিয়াকে ওর মা বলল ঘরটা একটু ঝাড়ু দিতে। সুফিয়া যখন ঘর ঝাড়ু দিয়ে ময়লাগুলো ঘরের বেড়ার ফাকা দিয়ে হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ই ওর হাতের দুটি আঙ্গুল কামড়িয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিসে যেনো। সুফিয়া যখন চিৎকার করছিলো তখন ওর মা দৌড়িয়ে এসে হাত ধরে টানছে যখন টেনে নিয়ে আসলো তখন সাপটির মাথাও চলে আসলো অর্ধেক। কিছু বোঝার আগেই সাপটি দৌড়িয়ে পালালো ওদের চোখের সামনে দিয়ে। তারপরের দিনই সুফিয়াকে ঢাকায় নিয়ে গেলো।
ঢাকা থেকে আসার পর বিকেলে আমরা বান্ধবীরা মিলে সুফিয়াকে দেখতে গেলাম। যেয়ে দেখি ওদের বাড়ি ভর্তি মানুষ, আমরা বুঝতে পারছি না কি হলো ওর আবার। ভয় পেয়ে যাই সবাই। দৌড়িয়ে যেয়ে দেখি সুফিয়া কথা বলতে পারে না, মুখ থেকে সাদা সাদা লালি পড়ছে, দুই কেজির মতো সরিষা তৈল বটিতে নিয়ে তিন চারজন মহিলা ওর সারা শরীরে মাখছে ঘরের মেঝেতে বসিয়ে। সুফিয়াকে বসিয়ে রাখা হয়েছে, শুইতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ সাপের সব বিষ ওর মাথায় উঠে গেছে। তারপর বরিশাল থেকে একজন ওঝা এনেছে, ওঝা সুফিয়ার সব থেকে ছোট আঙুলে সাথে সুতার এক মাথা পেচিয়েছে অন্য মাথা বাহিরে উঠানের মাঝে মাটিতে কলা গাছ গেথে তার সাথে পেচিয়ে দিয়েছে। উঠান ভর্তি গ্রামের সব মানুষ এসে ওদের বাড়িতে জমছে। সবার হাতে স্টিলের থালা কাসের থালা বাটি দিয়ে বেটাচ্ছে। যখন জানতে চাইলাম এই সব কেনো পিঠানো হচ্ছে তখন একজন বলল ওঝা যে মন্ত্র পড়ে সেগুলো যাতে কেউ না শুনে। পুরো একটানা তিন দিন ওদের বাড়িতে এই অবস্থা হলো। সবার ঘরের কাসের থালা-বাটি, পিতলের বল, কলস, স্টিলেরর বল, থালা পিটিয়ে পিটিয়ে ভেঙেছে মানুষ। একটাই উদ্দেশ্য ওঝার মন্ত্র যাতে কেউ না শুনে। সবার হাত ব্যথা হয়ে যেতো থালা-বাটি পিটাতে পিটাতে। সাথে তো সবার বাড়ির মুরগীর বাচ্চা মরছে। সুফিয়ার হাতের সাথে কোন মুরগীর বাচ্চা ছোয়ালেই বাচ্চাটি সাথে সাথে মারা যেতো।
ওঝা বলেছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত এই কলা গাছ ঝড়ে না পড়বে ততক্ষণ এই সব চলতে থাকবে। কলা গাছ ঝড়ে যাওয়ার কারণ হলো সুতার সাথে সুফিয়ার ছোট আঙ্গুলটি বেধে কলাগাছের সাথে পেচিয়ে দিয়েছে। সব বিষ নাকি কলাগাছে চুষে খাবে।
হয়তো সেটাই হয়েছিলো, সেই কারণেই সুফিয়া সেই দিন বেচে গিয়েছিলো। যেই মেয়েটিকে সবাই দেখে বলেছে মেয়েটি মারা যাবে আর বাচবে না, সেই মেয়েটি ঐ ওঝার এই সব কাজের জন্য বেচে গেছে তিনদিন পর। আর ঠিক তিনদিন পরই কলা গাছটি ঝড়ে পড়ে গেছে, সুফিয়াও বেচে গেছে।
তাহলে সাপও প্রতিশোধ নেয়! ঐ একটু আঘাতের জন্য একটি সাপ কি ভাবে মানুষের উপর প্রতিশোধ নিলো, আমি এটাই ভাবি এখন।
এটি কোন গল্প নয় একেবারেই সত্যি ঘটনা, পুরো লেখাটাই সত্যি ঘটনা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৫

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভাল লাগলো

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৮

মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: আমি সাপে ভয় পাই না!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩৯

কামরুননাহার কলি বলেছেন: কেনো! সাপ যদি কখনো আপনাকে ভয় দেখায়?
আচ্ছা ধরেন, একটি সাপ আপনাকে দৌড়াচ্ছে তখন কি করবেন!

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

ওমেরা বলেছেন: আমি সাপকে খুব ভয় পাই এমন কি ছবি দেখলেও গা শির শির করে ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯

কামরুননাহার কলি বলেছেন: হুম আপি সাপ আমিও খুব ভয় পাই ।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সত্যি ঘটনা নিয়ে সত্যিই সুন্দর লিখেছেন কলি । =p~

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১০

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সত্যিই ঘটনাটা মর্মান্তিক।

সাপ থেকে আমাদের সবার সাবধান থাকা উচিৎ।

ধন্যবাদ।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৪

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া, তবে হুম সাপ থেকে সাবধান :-*

৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: সত্যি ঘটনা নিয়ে অসাধারন সাপের গল্প। পুরোটাই মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। ধন্যবাদ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৪

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য।

৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

বেদুঈ৭৮৬ বলেছেন: গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে। শিরোনামটাও চমৎকার। একটি কথাটা বাদ দিয়ে কিন্তু বাংলা ছবির জন্য খুব সুন্দর একটা নাম হয়ে যেত। যাই হোক সব মিলিয়ে একদম বেশ লেগেছে।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭

কামরুননাহার কলি বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ওকে ‘একট ‘ কথাটি বাদই দিয়ে দেই, আমার কাছেও পছন্দ হয়নি প্রথম থেকেই । তাই আপনে বলাতে এখন কাজটা করেই ফেলি। আবারও ধন্যবাদ।

৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

আটলান্টিক বলেছেন: সাপ আর মাকড়শা এই দুইটা বস্ত দেখলে আমার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।তবে শীতে সাপ-খোপ একদম বাইরে আসে না তাই রক্ষা।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০১

কামরুননাহার কলি বলেছেন: মাকড়শা দেখলে পয় পান! হাহাহাহাহা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.