![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার খুব জ্বর। গায়ের উপর কম্বল দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। চক্ষের উপর মস্ত এক লাইট জ্বলে আছে -এত্ত আলো, চোখ খুলতে পারছি না, খুব জালা করছে। আমি এপাশ ওপাশও করতে পারছি না, ভয়ে। মনে হচ্ছে একটু নড়লেই বিছানা থেকে পড়ে যাব। হাসপাতালের সাদা চাদর বিছান বিছানা গুলো পাসে খুব ছোট হয়। কিন্তু আমার এই বিছানাটাকে তারচেও বেশি ছোট মনে হচ্ছে।
আমার পাঁচ জন বন্ধু এই রুমে আছে। ওরা পাশের এটেন্ডেন্সের বিছানা আর চেয়ার-টেবিলের উপর বসে বসে বিপিএল নিয়ে গল্প করছে। আশ্চর্য, আমি চোখ বন্ধ রেখেই সবার নড়াচড়া –সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
আশপাশে আমার বাসার কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। বুঝতে পারছি না, কে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এলো? কেন নিয়ে এলো? সামান্য জ্বরের জন্যে হাস্পাতালে ভর্তি হওয়ার কি আছে, আমার মাথায় ঢুকছে না! কোন গাধা এ কাজটা করল?! এমনিতেই পাসপাতাল আমার অপছন্দের একটা যায়গা। এখানকার গন্ধ আমার বিলকুল সহ্য হয়না।
-আচ্ছা, আমার আবার অন্য কোন অসুখ হয়নি তো?!
আমি দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। ইউনুস বেলে উঠল –নীরা, এসেছ! এইযে, এখানে বস তুমি।
নীরা এসে আমার পাশে বিছানার উপর বসল। ও আমার বাম হাতটা টেনে নিয়ে দু’হাতে সক্ত করে ধরে বসে আছে। আমার বুকের ঠিক বাম পাশে, হৃদয়ের খুব গভীরে নীরার জন্য তীব্র একটা ভালোবাসা আছে। একথা শুধু আমি আর আমার সবচে কাছের বন্ধু ইউনুস জানে। তাহলে ইউনুসই বোধয় নীরাকে আমার খবর দিয়েছে। খুব ভালো কাজ করেছে সে, একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে আমার।
আমি নীরার দিকে তাকিয়ে আছি আর সে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পারছি না। জ্বরে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। কোন মতে –কষ্ট করে বললাম, ‘নীরা, কেমন আছ তুমি?’
ও আমার কথার কোন উত্তর দিল না। শুধু মাথা উঁচু করে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আজকে নীরাকে খুব সুন্দর লাগছে। যত বারই ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে ততবারই আমি নতুন নতুন ভাবে মুগ্ধ হয়েছি। নীরার চোখ গুলো বিশেষ সুন্দর –বড় বড়, নেসার মত আকৃষ্ট করে আমাকে সবসময়। আজকে ওর চোখ গুলো হালকা লাল লাল হয়ে আছে। লাল চক্ষু হয় ভূতের। লাল চোখের মানুষদের ভূতের মত লাগে। অথচ নীরাকে আজ এই লাল চোখে কী অসাধারণ লাগছে! সুন্দরীদের দিকে বেশিক্ষণ চোখাচুখি তাকিয়ে থাকা যায় না। হয় কথা বলতে হয়, না হয় চক্ষু আবনত করতে হয়। আমি তীব্র বেগে কথা খুজতে লাগলাম, কিন্তু কোন কথাই খুঁজে পাচ্ছি না বলার মত। আমার এই এক সমস্যা আছে, কোন সুন্দরীর সাথে কথা বলতে গেলে কথা হারিয়ে ফেলি।
-আমি আস্তে করে বললাম, ‘নীরা, আমার খুব জ্বর, কপাল ছুঁয়ে দেখ’।
আমি জানি, ও আমার জ্বরের কথা শুনেই হয়ত দেখতে এসেছে, তাছাড়া আমার হাতটা এখনও সে ধরে আছে। জ্বরটা আলাদা করে কপালে ছুঁয়ে দেখার কিছু নেই –তাও আমি বললাম কপাল ছুঁয়ে দেখতে।
নীরা আমার হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরল। এরপর ধীরে উবু হয়ে আমার কপালে আলত করে একটা চুমু খেল। আর কানে কানে বলল, ‘চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে’।
নীরার সাথে পরিচয়ের এই ক’বছরে আমার এত্ত কাছাকাছি সে আর কখনো আসেনি। ওর গায়ের স্বর্গীয় মাতাল করা গন্ধ আমাকে বিমোহিত করে ফেলেছে। আমার শিরায় শিরায় এক শিহরণের জন্ম দিয়েছে। গ্রীষ্মের কাঠ-ফাটা রোদে চৌচির হয়ে ফেটে যাওয়া জমিনে প্রথম পানির সঞ্চার হলে সেই জমিনের যেই অনুভূতি হয়, আমার হৃদয়ে এখন ঠিক সেই অনুভূতিটাই হচ্ছে।
আমার চোখ জ্বালা করা বেড়ে গেছে খুব, মনে হয় এই লাইটের আলোর কারনে। আমার উঠে বসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আমি কিছুতেই এইটুকু নড়তে পারছি না। সব শক্তি এক করে একটু উঠে বসার চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা –আমি নড়তেই পারছিনা।
ভয়াবহ ব্যাপার। আমি কী মারা গেছি নাকি?! শুনেছি মারাগেলে মানুষের এমন হয়, -সে সব দেখতে পায়, বুঝতে পারে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারে না।
নাহঃ আমার মারাগেলে চলবেনা। আমার উঠতেই হবে। উঠে বসে নীরার হাত ধরে আজ আমাকে বলতেই হবে ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি’। আজকের এই ক্ষণটা মিস করা যাবে না কিছুতেই। আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি একটুখানি নড়ার জন্য। জ্বরের মধ্যে এখন আমার গরম লাগছে খুব।
এর মধ্যে নীরার বোধয় যাবার সময় হয়ে গেছে। সে আস্তে করে আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়াল। অমনি আমি চোখ খুলে ওর দিকে ফিরে তাকালাম।
-আমার বিছানার পাশের নগ্ন জানালাটা দিয়ে কটকটে রোদ এসে আমার চক্ষে পড়েছে। চোখ বেয়ে পানি পাড়ছে আর জ্বলা করছে খুব। জ্বর ছেড়ে গেছে। এখন আমি দরদর করে ঘামছি। এখানে নীরা নেই, আমার বন্ধুরাও নেই। আমার ঘরে আমি শুয়ে আছি একা –একদম একা।
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৮
মধু পিয়াসী বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৫
জাহিদ অনিক বলেছেন: শেষটায় কি হল? নীরা গেল কই? সে কি অশরীরী!
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০১
মধু পিয়াসী বলেছেন: হা হা হাঃ
জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখছিলাম। বাস্তবে নীরা আছে। তবে সে এই স্বপ্নের কথা জানে না।
৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৭
রাতুল_শাহ বলেছেন: নীরার ছোঁয়াতে জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। আমার এরকম একটা নীরা থাকলে, ঘন ঘন জ্বরকে আমন্ত্রণ জানাতাম। আফসোস জ্বর হলে কাউরে কাছে পাই না। নাপা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
জ্বরও বলে, কার কাছে আইছি, কোন মজা নাই। জ্বর চলে যায়, শরীরটারে দুর্বল বানায়ে।
যাইহোক লেখা ভালো লাগলো। দোয়া করি সুস্থ হয়ে যান তাড়াতাড়ি।
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৭
মধু পিয়াসী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
আমি সুস্থ হয়ে গেছি। তবে ইচ্ছা করছে আবার জ্বরে পড়ি, নীরা আসুক আমার কাছে।
আপনাকে বলি, জ্বর এলে নাপা না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন, প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে নীরারা হাত বুলাতে আসে।
ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:২০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: খুব সম্ভব ঘোরের মধ্যে ছিলেন অথবা মারা গেছেন।
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪১
মধু পিয়াসী বলেছেন: হা হা হাঃ
শুধু নীরার হাত ধরার জন্যে জেগে উঠেছি।
৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৪৭
গালিব আফসারৗ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯
মধু পিয়াসী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৬| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫১
রাতুল_শাহ বলেছেন: যতদিন অসুস্থ থাকি, ততদিন আম্মাজানের ঝাড়ি খাওয়া লাগে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করি।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪২
মধু পিয়াসী বলেছেন: হা হাহা। সুস্থ থাকবেন। ভাল থাকবেন।
৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৯
নূর-ই-হাফসা বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগেছে ।আমি ভেবেছিলাম ভূতুড়ে হবে ।তাই অনেক খুঁজে আপনার গল্পটা বের করলাম
২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৮
মধু পিয়াসী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার প্রফাইল ঘুরে এলাম, অনেক রিচ।
আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করবে অনেক। ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৪
কালীদাস বলেছেন: ভালই তো