নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবহমান

খুরশীদ আলম

আইনবিদ ও রাজনীতিক

খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ

০৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:১৮



বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, দেশ তখন রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ষড়যন্ত্র চলছিল, সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যায় উপনীত। আওয়ামীলীগ পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যে জনমত গড়ে তোলে তার ভিত্তিতে ও প্রতিফলনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু সংগঠিত হয়। এবং আওয়ামীলীগ উক্ত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দেশ শাসনের অধিকার অর্জন করেন। কিন্তু শাসতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ষড়যন্ত্র শুরু করেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনে জয়লাভ করেই বঙ্গবন্ধু ছয়দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ণ ও উপনিবেশবাদী শাসন অবসানের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা ও আওয়ামীলীগ ঠেকানোর ষড়যন্ত্র। একদিকে অধিবেশন ডাকার মিথ্যা ঘোষণা অপরদিকে পর্দার অন্তরালে আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি কেনার ষড়যন্ত্র। কেন্দ্রীয় ৩১৩ আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৬৭, বাকি ১৪৬ আসন তাই মাত্র ১১ জন প্রতিনিধি চক্রান্তকারীরা পক্ষে নিতে পারলেই আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করতে পারবেনা। বঙ্গবন্ধু চক্রান্ত বুঝতে পেরে হুশিযারি উচ্চারণ করেন, বাংলার মাটির সাথে যারা বেঈমানি করবে তাদের করুণ পরিণতি হবে। চক্রান্ত ব্যর্থ হলে ইয়াহিয়া বারবার অধিবেশন পেছাতে লাগলেন এবং উপায় খুজতে লাগলেন বাঙালিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার। ইয়াহিয়া খান সমঝোতার জন্য সময়ের প্রয়োজন অজুহাতে ১লা মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে সারা দেশ ক্ষোভে জ্বলে উঠে। শুরু হয় অঘোষিত হরতাল ও অসহযোগ, মিছিলে মিছিলে মুখরিত বাংলা, বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। ৬ই মার্চ টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পূর্ব বাংলায় পাঠানো হলে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত হয়ে যান সংঘর্ষ অনিবার্য।

পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তৎকালীন মুসলিমলীগ নেতা সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ও নির্দেশে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছেন পাকিস্তান দাবির আন্দোলনে। ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে মুসলিম লীগ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃতে ১১৩ টি আসনে জয়ী হয়ে সমগ্র ভারতে একমাত্র বাঙলায় সরকার গঠন করেন এবং পাকিস্তান দাবির যৌক্তিকথা প্রমাণ করেন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালির প্রতি সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য যেমন বাঙালির হৃদয়ে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করে তেমনি স্বাধিকার ও মুক্তির আকাঙ্খাকে আরও শাণিত করে তুলে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ গঠনের পরবর্তী পর্যায়ে বাংলার পথে প্রান্তরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গণমানুষের আশা আকাঙ্খা চেতনাকে ধারণ করেছেন। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে লালন করার চেতনাবোধ উপলদ্ধি করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে নির্যাতন নিপীড়ন ভোগ করেছেন। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে তিনি বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে একেঁছেন দৃপ্ত পদচিহ্ন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল হাজার বছরের নির্যাতিত নিপিড়ীত বাঙালির মুক্তির সনদ। তাই সেদিনের ৭ই মার্চ গণমানুষের প্রত্যাশার ব্যাপ্তি ছিল আকাশছোয়া। ছাত্র ও যুবনেতাদের প্রচন্ড আকাঙ্খা স্বাধীনতার পতাকা উড়বে রেসকোর্সের আকাশে। জনগণের আকাঙ্খাকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিল শাণিত চেতনার অধিকারী, দূরদর্শী, স্বপ্নদ্রষ্টা, যে জানত হাজার বছরের বাঙালির স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ। গণমানুষের আকাশছোয়া আকাঙ্খায় পূর্ণ হয়ে যায় সেদিনের রেসকোর্সে উদ্যানের সমস্ত প্রকৃতি। হরতাল চলার পরও সারা দেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমবেত হয় গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী ১০ লক্ষ মানুষ। উত্তাল স্লোগানে মুখরিত অগ্নিঝরা ক্ষণে বঙ্গবন্ধু উঠে এলেন ইতিহাসের পাতা হতে, দুঃখ ভরাকান্ত বজ্রকন্ঠে বলে গেলেন হাজার বছরের বাঙালির উপর শোষণের ইতিহাস, নির্যাতন নিপিড়ন অত্যাচারের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি শব্দ বাক্য হয়ে উঠেছিল রেসকোর্সে উপস্থিত প্রতিটি বাঙালির, সারা বাংলার কণ্ঠস্বর। বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খা তাঁর কণ্ঠে অবিরত অনুপ্রেরণায় সিক্ত করছিল গণমানুষের চেতনা। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সংকটের কথা বললেন, পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখে বললেন, ছয় দফা জনগণের সম্পদ, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলার জনগণের উপর হত্যা নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে সামরিক জান্তাকে সুস্পষ্ট শর্ত দিলেন ঃ
১। মার্শাল’ ল সামরিক আইন উড্র করতে হবে।
২। অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৩। গণহত্যা বন্ধ ও তদন্ত করতে হবে।
এরপর হুশিযারি উচ্চারণে শত্রু চিহ্নিত করে নির্দেশ দিলেন অফিস আদালত কোর্ট কাচারি অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার এবং জনগণকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার আহবান। গরীবের কষ্টের দিকে যেমন খেয়াল করলেন তেমনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অবাঙালি রক্ষার দায়িত্ব দিলেন জনগণকে। প্রত্যেক গ্রামে মহল্লায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিঠি গঠনের আহবান জানিয়েছেন। কেননা বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট উপলদ্ধি ছিল সংগ্রাম ভিন্ন বাঙালী জাতির মুক্তি নাই। তাই তিনি যার যা আছে তাই নিয়ে রক্ত দেবার প্রস্ততির ডাক দিয়েছেন। সবশেষে আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাসে, আল্লাহর সাহায্য কামনায় আত্মপ্রত্যয়ে বাঙালির মুক্তির আশ্বাসে বলেছেন, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ই্নশাল্লাহ।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য এই যে, তাঁর ভাষণের প্রতিটি শব্দ, বাক্য, নির্দেশ বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব বাঙলায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বিকল্প শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৪ই মার্চ ভূট্টো পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিব ও পশ্চিম পাকিস্তানে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের দ্বিধাবিভক্তি পরিস্কার ফুটে উঠেছিল।। তাই ৭ই মার্চের পর পাকিসস্তানের এই দ্বিধাবিভক্তিকে জোড়া লাগানোর প্রয়াস ছিল না, ছিল অস্ত্রের জোরে বাঙালিকে প্রদানত করার ঘৃণিত প্রচেষ্টা। মূলত: মাচের্র প্রথম থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুচ্চারিত রয়ে যায়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ২৫শে মার্চ রাত্রে পাক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চ ওয়ারলেশ’র মাধ্যমে প্রচার করেন। কিন্তু ৭ই মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের সুস্পষ্ট পথরেখা একেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে নিপিড়ীত মানুষের আর্তনাদ এমন মহিমাময় ভঙ্গিতে প্রকাশিত যা তাকে করে তুলেছিল হাজার বছরের মহানায়ক। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালির ৭ই মার্চের ভাষন বাঙ্গালির হাজার বছরের বঞ্চনার ইতিহাস ও বাঙ্গালির জাগরণের মূলমন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ, অদম্য সাহসী মনোভাব, মহিমাময় ভঙ্গিতে প্রতিটি বাঙালি হয়ে উঠেছিল সাহসী বীর যোদ্ধা, মনোবল হয়ে উঠেছিল শত্রুকে পরাজিত করার সংকল্পে অটল। হাজার বছরের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে পুর্নজম্মে প্রতিষ্ঠিত করেন বাঙালি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যতদিন বাংলাদেশ রবে থাকবে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের অনুরণন :

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ২:৫৭

গরল বলেছেন: বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি সমস্ত বাঙালীকে এক করতে পেরেছিলেন, আর কেউ তা করতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামিলীগ বঙ্গবন্ধুকে জাতীয় নেতা না রেখে নিজেদের নেতা বানিয়ে ফেলেছে।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৫:২১

কলাবাগান১ বলেছেন: খুব দু:খ হয় যে ইন্টারনেট এর আগে জনগন সব সময় রাস্ট্রের প্রচারিত গন মাধ্যম থেকে যা প্রচার হত তাই বিশ্বাস করতে হত। তাই 'জয় বাংলা' কিভাবে হয়ে যায় 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' কেউই টের পায় নাই, বাংলাদেশ বেতার হয়ে যায় রেডিও বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এর নাম নিশানা মুছে ফেলা হয় গন মাধ্যম থেকে ১৯৭৫ এর পর।

এখন কার উন্মুক্ত ইন্টারনেট থাকাতে জনগন নিজের মত করেই ধারনা করতে পারে স্বাধীনতার সংগ্রামে কার কি অবদান ছিল....

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটা ভাষন। এই ভাষন যতবার শুনি ততবার মুগ্ধ হই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.